অণুগল্প// মন নাকি শরীর// ফখরুল হাসান

ক্লান্তি জড়িয়ে আছে পৃথিবীর দেহ ও মনে। শিউলি যেহেতু এই দুনিয়ারই অংশ তাই সেও ক্লান্ত, শিউলি ট্রেনে। জানালায় মাথা রাখলে ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। প্রকৃতির ছুটে চলা দৃশ্য চোখের জমিনকে ব্যস্ত রাখে। মনে প্রশান্তি আসে।। শিউলি, গ্রামের বাড়ি ফিরে যাচ্ছে ঢাকা থেকে। গতকাল রাতে রায়হানের সাথে প্রচন্ড ঝগড়া হয়েছে। শিউলি, ক্ষিপ্ত হয়ে বলে কী ভেবেছ তুমি আমাকে? আমি তোমার টাকা, গাড়ি বাড়ি দিয়ে কি করবো? আমাকে আদর করা তো দূরের কথা, ছুঁয়ে ও দেখতে পারো না। তার আগেই সবশেষ হয়ে যায়। শিউলি আজ সবকিছু ভুলে শুধু শরীরের জন্য পাগল হয়েছে! শরীর কি তাহলে সব, ভালোবাসা কিছুই নয়? শরীর যখন কথা বলে, তখন সেখানে ভালোবাসা কি এতোটাই গৌণ হয়ে যায়?
অনেকটা না পাওয়ার বেদনা নিয়ে পলায়ন করার মতো। মনে পরে যায় রায়হানের সঙ্গে অতীতের দিনগুলো। হঠাৎ ট্রেনের জানালা ভেদ করে বাতাস এসে চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে বারবার। প্রকৃতির ছুটে চলার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। তবুও হৃদয় কপাট খুলে আনন্দের বারিধারা বর্ষণ হয় না। বারবার রায়হান-কে মনে পড়ছে। শিউলি-কে নিজের করে মনেপ্রাণে চাইতো রায়হান। চৈত্রের খড়ায় যেভাবে বৃষ্টি চায় প্রাণীকুল। শিউলি ভালো নেই জানলেই রায়হানের চোখ জলে ভরে ওঠতো। এসব মনে ভীর করতেই চক চক করে চোখ দু’টো। বেদনাক্লিষ্ট মন। এখনো চোখে ভেসে আছে সুখমাখা স্মৃতি। এতো বছর যন্ত্রণা বয়ে হৃদয়ের গোপন দেয়ালে ফাটল ধরতে শুরু করে। যেখানে শুধুই অতৃপ্তি, রায়হানের অসহায়ত্বের ঘটনাগুলোই মুড়ে রাখা হয়েছে। মুড়ে রাখার কারণ, এগুলো কখনো ভেঙ্গে ফেলা যায় না। হারিয়ে ফেলার মতো কোন স্কোপ নেই। তবে মাঝে মাঝে ময়লা পড়ে মাকড়সার জালের মতো এক রকম আবরণ পড়ে থাকে। তা আবার পরিস্কার হয়ে যায় এমনি করে। তবে ব্যথা বেড়ে যায়। এ ঘা পরিস্কার না করাই ভালো। পরিস্কার করলে উপশম না হয়ে বরং যন্ত্রণা হয়। কারণ একটাই, রায়হানের শারীরিক ব্যর্থতা। যুগে যুগে দাম্পত্য সংস্কৃতি পরিবর্তিত হয়েছে। দাম্পত্যর বিষয়টি একেক সমাজে একেকভাবে অনুশীলন করা হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে এই যুগে দাম্পত্যর ব্যাপারটি নানা দিক থেকে আধুনিক হয়ে উঠেছে। এই সময়ে দাম্পত্যর পাশাপাশি দাম্পত্যর ক্রীড়াতে নানা পরিবর্তন ছন্দ যোগ হয়েছে। অথচ সেসব থেকে বঞ্চিত সে। রায়হান যেন বিদ্যুৎহীন ঘরে মোমবাতি, অল্প বাতাসে নিবে যায়। শুরুতে রায়হান এমন ছিলো না। হিংস্র বাঘের মতো চাহিদা ছিলো তার। রায়মার জন্মের পর থেকে ধীরে ধীরে বদলে যায় রায়হান। রায়মার জন্মের পর তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। রাজনৈতিক মহলে বেড়ে যায় তার ব্যস্ততা। পার্টির কিছু প্রভাবশালী নেতার সুপারিশে পেয়ে যায় সম্মান জনক পদ। রাতারাতি পরিবর্তন আসে তার জীবনে। ঘরে ফিরে গভীর রাতে। মাঝে মধ্যে গভীর রাতে মোবাইলে কল আসে মেয়েদের। সময়ের পরিবর্তন এতোটাই হয়েছে। ঘরে যে বউ আছে, তারও কিছু চাহিদা। সেটা ভুলে গেছে রায়হান। অথচ সব ভালবাসার পেছনেই আছে যৌনতা। ভালোবেসে যে মানুষ বিয়ে করতে চায়। তারও ইচ্ছে থাকবে বাসর রাতে কখন তার প্রিয় মানুষটির সাথে দেহ খেলায় মেতে উঠবে। এরেঞ্জন্ড ম্যারেজ হোক আর লাভ ম্যারেজ সবার চাহিদা শরীরটাকে ঘিরে। শারীরিক সম্পর্ক নাই হোক, কিছু ভালো কথা যে শান্তি এনে দিতে পারে, রায়হান সেটি কখনোই বোঝেনি। বোঝা উচিত ছিল। না বুঝতে বুঝতে আজ যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তাতে শিউলি সেই উত্তাল ভালোবাসা কবে শেষ হয়ে গেছে, যা পড়ে আছে তাকে প্রেম বলে না। কী বলে তাও জানা নেই শিউলির, মানসিক সম্পর্কটা, খুব শক্ত হলে সেখানে শারীরিক সম্পর্কটা অনেকটা গৌণ হয়ে যায়। কিন্তু মানসিক প্রশান্তি যখন ঠিক থাকে না, তখন সবকিছুই বিরাট প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *