কিশোর উপন্যাস

সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।।শেষ পর্ব

সায়েন্স ফিকশন “পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স’’ আহমেদ রিয়াজ


এল টু তবু হাসছে। ফিলফিলের সমস্ত ঘর জুড়ে এল টুর ঝনঝন হাসির শব্দ আরো বেড়ে যাচ্ছে। ফিলফিলের কপালে তিনটি ভাঁজ পড়ল। ভুরু ঠেকল চুলের কাছে। গলার স্বর অত্যধিক গম্ভীর।
‘ও এম জাতের রোবট তুমি এল টু। ও এম মানে জানো তো। অয়েলিং মেশিন। বিজ্ঞানীদের অয়েলিং অর্থাৎ তোষামোদ করাই হচ্ছে যাদের কাজ। এল টু তুমি আমার কমান্ড শুনছ না। তোমাকে শেষ বারের মতো বলছি হাসি থামাও। মুখটাকে মলিন করো। আই স্ক্রিন দিয়ে নোনাজল ঝরাও। আমি চাই আমার বিমর্ষ ভাবের সঙ্গে তুমি একাত্ম হয়ে যাও। এটাই নিয়ম। এল টু তুমি কি আমার কমান্ড শুনতে পাচ্ছ?’
অনেকক্ষণ পর এল টু তার সাউন্ড সিস্টেম চালু করল। ‘হ্যাঁ স্যার আপনার কমান্ড আমি শুনতে পাচ্ছি।’
‘তাহলে হাসি থামাও। কান্না আনো আই স্ক্রিনে।’
এল টু তাও হাসতে হাসতে বলল, ‘স্যার আমার হাইড্রোজেন তৈরির যন্ত্রটা কাজ করছে না। তাই আই স্ক্রিন দিয়ে পানি
বের করতে পারছি না। মেরামত করতে হবে স্যার।’
এল টুর হাসিটা অসহ্য লাগছে ফিলফিলের কাছে। তবু তিনি মহা বিরক্তি নিয়ে রোবটটার পেছনের ছোট ডালাটা খুলে বসলেন। ওখানেই ও এম রোবটদের হাইড্রোজেন তৈরির যন্ত্র থাকে। খবর পেয়েই মিস্টার ফিলফিলের কাছে ছুটল ‘এন আর সিক্স’। এন আর মানে নিউজ রোবট। জি আর রোবটের কাছ থেকে তিন সেকে- আগে খবরটা পেয়েছে সে। গোয়েন্দা রোবট খবর দিয়েছে জার্নালিস্ট রোবটকে। তারপর নিউজ রোবট খবরটা পাওয়ার চার সেকেন্ডের মাথায় ফিলফিলের কাছে ছুটল। খবর শুনলে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করবে ফিলফিল। প্রথমবার ফিলফিলের হার্ট অ্যাটাক হয় তোষামোদে রোবটদের নিয়ে ঐতিহাসিক আইন বাতিল হয়ে যাওয়ায়। এবং সে খবরটা এন আর সিক্সই দিয়েছিল ফিলফিলকে। শোনামাত্র হার্ট অ্যাটাক হয় বেচারার। সেজন্য মানুষ না হয়ে জন্মানোয় নিজেকে ধন্যবাদ দেয় এন আর সিক্স। এর কারণও আছে। রোবটদের সেলে এ ধরনের তথ্য ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে ওরা কখনো মানুষের চেয়ে নিজেদের ছোট ভাবতে না পারে। ফলে রোবট বিদ্রোহ ঘটার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। এর আগে দু’বার বিশ্বে রোবট বিদ্রোহ ঘটে গেছে।
ফিলফিলের ঘরে ঢুকেই এন আর সিক্স বলল, ‘স্যার ভীষণ ব্যাপার ঘটে গেছে।’
ফিলফিল বললেন, ‘পরে শুনব।’
‘কিন্তু স্যার ব্যাপারটা খুবই জরুরি।’
এল টুর পেছনের ছোট্ট নাটটাকে অনেকক্ষণ ধরে খোলার চেষ্টা করছিলেন ফিলফিল। বারবার খুলতে চেষ্টা করেও পারছিলেন না। প্রচণ্ড বিরক্তিতে চেয়ে গেছে তাঁর চোখমুখ। এল টুর খোলা অংশটা থেকে চোখ ঘুরিয়ে এন আর সিক্স এর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এল টুর হাইড্রোজেন তৈরির যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এটা ঠিক করার চেয়ে অন্য কিছু এখন জরুরি হতে পারে না।’
তারপর আবার স্ক্রুটা খোলার চেষ্টা করতে করতে এল টুকে বললেন, ‘স্ক্রুগুলোতে তেল দিয়ে রাখতে পারো না?’
‘এল টু বলল, ‘কম দামের স্ক্রু হলে এমনই হয় স্যার। বেশি দামের মেটাল দিয়ে স্ক্রু বানালে আর এই সমস্যাটা হত না।’
ফিলফিল বললেন, ‘তুমি কি বলতে চাইছ তোমার জন্যে গোল্ডের তৈরি স্ক্রু ব্যবহার করব?’
‘জ্বী স্যার। অনেকটা তাই।’
এল টুর ঝনঝন শব্দে এমনিতেই কান ঝালাপালা। তার ওপর মাথা গরম করা কথা বলছে। ফিলফিল আর সহ্য করতে পারলেন না। প্রচণ্ড এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন এল টু’র ফোমের তৈরি গালে। ও এম জাতের রোবটদের গালদুটোই শুধু মেটালের উপর ফোমের তৈরি মোটা আস্তর থাকে, যাতে চড়-থাপ্পড় দিলে হাতে ব্যথা না লাগে। ফোমের নিচে পাতলা আবরণের মতো সেনসেটিভ প্লেট আছে। এজন্যে থাপ্পড় খেয়ে রোবটদের আই স্ক্রিন দিয়ে পানি বের হয়। অর্থাৎ রোবটরা কাঁদে। কিন্তু এল টু থাপ্পড় খেয়ে ড্রামের দ্রিম দ্রিম শব্দে হাসতে লাগল। জীবনে প্রথম কাউকে ড্রামের মতো করে হাসতে দেখলেন ফিলফিল। এল টু কে সারাতে হবে। তাঁর নিজেকেই সারাতে হবে। ও এম জাতের রোবটগুলো সব তার নিজের প্ল্যানে করা। অন্য কেউ ঠিক করতে পারবে না। তাঁর মনে হল এল টুর ভেতরে অনেক বড় রকমের সমস্যা আছে। শুধু হাইড্রোজেন তৈরির যন্ত্রটা

নষ্ট হয়নি। আরো কিছু নষ্ট হয়েছে। তিনি এবার এল টুর পেছনের পুরো অংশটা খোলার জন্যে বড় স্ক্রু ড্রাইভার হাতে
নিলেন। এন আর সিক্স তবু দাঁড়িয়ে রইল। এছাড়া ওর আর কিছু করার নেই। এন আর রোবটদের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই এটা। নিউজ ডেলিভারি না দেওয়া পর্যন্ত অন্য কোনো কাজ করতে পারে না ওরা। ওদের এই বৈশিষ্ট্যটাও ফিলফিলের ডিম্বাকৃতির মাথা থেকে তৈরি করা। নিজেকে শক্তিশালী বিজ্ঞানী হিসেবে জাহির করার কোনো ফাঁক ফোকরই তিনি রাখেননি। এল টুর পেছনের ডালাটা খুলতেই ভেতরের যান্ত্রিক নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে এলো। এর আর সিক্স এর দিকে তাকিয়ে ফিলফিল আবার বললেন, ‘তালগাছের মতো একপায়ে দাঁড়িয়ে থেক না। অন্য কাজ কর, যাও।’
এন আর সিক্স তবু দাঁড়িয়ে থাকে। খবরটা না দেওয়া পর্যন্ত ওর যান্ত্রিক পাগুলো নড়াচড়া করবে না। ফিলফিল আবার বললেন, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থার অন্যতম বিজ্ঞানী মাননীয় ফিলফিল তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছি আরো খবর যোগাড় কর। সবগুলো খবর আমি একসঙ্গে শুনবো। এগিয়ে যাও এন আর সিক্স। আমি এখন ব্যস্ত।’
এন আর সিক্স এর মধ্যে নড়াচড়ার কোনো লক্ষণই প্রকাশ পেল না। ফিলফিলের মাথা ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল। রোবটগুলোর হল কি! এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন এগুলো?
প্রচণ্ড রাগে ফেটে পড়লেন ফিলফিল। ‘মোটা মাথার রোবট, তোমাকে মাননীয় ফিলফিল কমান্ড করছি- বের হয়ে যাও আমার ঘর থেকে। আমি যখন ডাকব তখনই শুধু আসবে। ঠিক আছে?’
নড়াচড়া না করে এন আর সিক্স জানান দিল ঠিক নেই। এন আর সিক্সের গালে থাপ্পড় বসাতে গিয়েও বসালেন না ফিলফিল। ক্ষতির কথা চিন্তা করে অনেক কষ্টে রাগটাকে পানি করলেন। মাথা গরম করলে অসুবিধা আছে। এন আর রোবটগুলো হারামির একশেষ। রাগ দেখাতে গেলে উল্টো পাল্টা খবর দেওয়া শুরু করবে হয়ত। অথবা কয়েকদিন খবর দেওয়াও বন্ধ করতে পারে। দরকার কি রাগ দেখিয়ে। দাঁড়িয়ে আছে থাকুক। তার তো অসুবিধে হচ্ছে না। প্রচণ্ড রাগে ঘাম ছুটে গেল ফিলফিলের রক্তমাংসের শরীরে। ঘাম মুছে এল টুর পেছনেই সময়টা কাজে লাগাতে লাগলেন। কিন্তু ফিলফিল ততক্ষণেও বুঝতে পারেননি এন আর সিক্স এর মধ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে!

Series Navigation<< সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।। পর্ব আট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *