কিশোর উপন্যাস

কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব এগারো

১১.

ঘুম থেকে উঠেছি অনেক আগে। আবু আমাকে ব্যায়াম করতে ডেকে শেষে একা চলে গেছে। বাবা অফিসে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছেন। নীনাপা তার ঘরে বসে জয়াপার সঙ্গে গল্প করছে। এত সকালে জয়াপার আমাদের বাসায় আসার কারণটা ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে আমার মাথায় কেবলই গতকালের ঘটনাটা ঘুরপাক খাচ্ছে। ‘অলিখোপ’ শব্দটা আমরা চারজনই শুনেছি। রাতভর চিন্তা করে বের করতে পারিনি ‘অলিখোপ’ শব্দটা কে উচ্চারণ করতে পারে।
খবর জানিস লিন্টু। নীনাপা আমার ঘরে এসে বলল। তার সঙ্গে জয়াপাও এল।
কি খবররে? অবাক হয়ে বললাম।
কাল রাতে নাকি ওই বটগাছ থেকে চারটা ভূত নেমে মাঠ দিয়ে হেঁটে আমাদের পাড়ায় ঢুকেছে।
কে বলল?
জয়াপা বলল, ইতিরা ওদের চারতলা থেকে দেখেছে।
আমি কি বলব বুঝে উঠতে পারছি না। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে নীনাপা বলল, তোর ভয় করছে না? এরপরেও কি বলবি ভূত বলে কিছু নেই?
ইতিপা তো ভুলও দেখতে পারে। বললাম।
না না ভুল দেখেনি ও দেখেছে চারটা ছোট ছোট ভূত ওই বটগাছ থেকে নেমে মাঠের ওপর দিয়ে আমাদের পাড়ায় ঢুকেছে।
কি জানি হতেও পারে–ওই প্রসঙ্গ থেকে বাঁচার জন্যে বাধ্য হয়ে কথাটা বললাম। ভেবেছিলাম বেঁচে যাব, কিন্তু না সে উপায় নেই–জয়াপা বলল, তুই নাকি সন্ধ্যার পর অপুদের বাসায় গিয়েছিলি তোর চোখে সেরকম কিছু পড়েছে?
না তো।
তোর সাহস আছে রে ভাই। জানিস ইনজাম আর তৌফিক উধাও হবার পর থেকে সন্ধ্যার পর বাইরে বের হওয়া তো দূরের কথা আমার ঘর থেকে মার ঘরে যেতে হলে বুয়াকে সঙ্গে নিয়ে যাই।
তোমরা দু বান্ধবী আসলে ভিতুর ডিম।
থাক থাক বেশি সাহস দেখানো ভাল না। জয়াপা বলল।
ভাইয়া আমার ঘরে ঢুকতেই জয়াপা একদম চুপ হয়ে গেল। আমি বললাম, খবর জানো ভাইয়া?
কি রে?
কাল নাকি চারটা ভূত বটগাছ থেকে নেমে আমাদের পাড়ায় ঢুকেছে।
কে বলল?
জয়াপা।
তোর জয়াপাকে বল ঘরে গিয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে। ঘর থেকে বেরুলে ঘাড় মটকে দেবে।
জয়াপা রাগি রাগি চোখে ভাইয়ার দিকে তাকাল।
আমি কি খারাপ কিছু বলেছি? ভাইয়া বলল।
জয়াপা ভাইয়াকে ভেংচি কেটে নীনাপাকে নিয়ে চলে গেল আমার ঘর থেকে। ভাইয়াও তার ঘরে চলে গেল। ওরা সবাই চলে যেতেই বেশ মজা লাগল। এই চার ভূতের খবর নিশ্চয়ই আজ পাড়াময় রটে যাবে। গুজব তো বাতাসের আগে ছড়ায়। আর আমাদের পাড়ায় এখন যেই অবস্থা। আবু ঘরে এসে বলল, ছোট মামা পল্টু মামা আইছে।
কোথায় এখন?
বাইরে দাঁড়াইয়া আছে।
তুই ওকে নিয়ে আয় আমার ঘরে।
আবু চলে গেল একদৌড়ে।
পল্টু ঘরে ঢুকেই বলল, খবর জানিস?
কি খবর চার ভূত?
ও জেনে গেছিস এরই মধ্যে।
মানুষ ভূত বানিয়ে দিল আমাদের।
হ্যাঁ।
এভাবেই মনে হয় ভূতের গল্প প্রচলিত হয়েছে।
আমারও তাই মনে হয়। এখন জানিস আমার ভেতরে আর ভূতটূত বলে কোনো ভয় নেই। পল্টু বলল।
তাই?
হ্যাঁ।
আবু আবার ঘরে ঢুকে বলল, অপু আর খোকা মামা আইছে।
পল্টুকে বললাম চল বাইরে যাই। ঘরে এসব আলাপ করলে কোন সময় কিসব কথা মুখ ফসকে বেরিয়ে যাবে ঠিক নেই।
হ্যাঁ চল–পল্টু বলল।
আমরা দুজন গেটের কাছে আসতেই ওরা দুজন এগিয়ে এসে বলল, খবর জানিস?
হ্যাঁ।
দারুণ থ্রিলিং না? অপু বলল।
হ্যাঁ। বললাম।
আরো থ্রিলিং খবর আছে। চল আমাদের আড্ডায় যাই।
আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায় আরো থ্রিলিং খবর আছে–কথাটা শুনে। তড়িৎ গতিতে পা চালিয়ে স্কুলের পেছনে চলে আসি চারজন।
অপু কোমর সমান উঁচু দেয়ালের উপর বসে ওর শার্টের পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে পড়তে থাকে– তোমরা চারজনই খুব সাহসী বলতেই হবে। কাল বটগাছের গায়ে যে চিঠিটা গেথে রেখেছো সেটা আমি পেয়েছি। চিঠিটা যে লিখেছে তাঁর হাতের লেখা খুবই সুন্দর। কাল রাত আটটার সময় আমি বটগাছের নিচে থাকব। তোমরা অবশ্যই আসবে। আর যদি না আসো তা হলে আমি তোমাদের চারজনের বাসার সামনে যাব। লাল রঙের একটা গাড়ি আমি ড্রাইভ করব। মনে রেখো লাল রঙের একটা টয়োটা–ইরকিটি কিরকিটি ভূতং চৌধুরী, অস্থায়ী বাসিন্দা, বটবৃক্ষ।
পল্টু বলল, দোস্ত কোথায় পেলি এটা?
আমার জানালার গ্রীলে। অপু বলল।
কখন পেলি?
সকালে ঘুম থেকে উঠে।
আমরা কি তার সঙ্গে সত্যি সত্যি দেখা করছি তাহলে? বললাম।
অপু বলল, অবশ্যই।
ঘর থেকে বেরুবো কি বলে? পল্টু বলল।
চাপা মারতে হবে ঘরে। আমরা ঘরে বলব, অমুকের বাবা মা বেড়াতে গেছে তাই ওদের বাসায় থাকতে হবে। এমন একটা ব্যাপারে না হয় মিথ্যেই বললাম ।
যদি যেতে না দিল। খোকা বলল।
যেভাবেই হোক ম্যানেজ করে সন্ধ্যার আগেই আমরা চারজন ঘর থেকে বেরুবো। অপু বলল।
আচ্ছা ওই ভূতটা যদি আমাদের নিয়ে মেরে ফেলে–পল্টু বলল।
আরে না না ওরকম কিছু হবে না, অপু বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে কথাটা বলল।
ভূত আবার লাল গাড়ি চালায় কিভাবে? খোকা বলল।
আরে দেখিস না কত যে থ্রিলিং হবে ব্যাপারটা–অপু বলল।

Series Navigation<< কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব দশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *