কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব দশ
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব- এক
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব- দুই
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম-পর্ব তিন
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব ছয়
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব সাত
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব আট
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব নয়
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব দশ
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব এগারো
১০.
ইনজাম আর তৌফিক উধাও হবার পর আজই প্রথম সন্ধ্যার পর বাসা থেকে বেরিয়েছি। মা-তো আসতেই দেবে না। নীনাপাকে অনেক পটিয়ে পরে বের হতে হয়েছে, বলেছি অপুর কাছ থেকে একটা গল্পের বই আনতে যাব।
অনেকদিন পর আমাদের পাড়ার সন্ধ্যার পরের দৃশ্যটা দেখছি। গার্মেন্টস ছুটি হয়েছে বোধহয় কিছুক্ষণ আগে। রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে যেন। টিফিন ক্যারিয়ার কারো হাতে, কারো হাতে আবার পলিথিনের পোটলা। মেইন রাস্তার দু’পাশে নানা রকম দোকানিরা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছে। পল্টু আর খোকাকে নিয়ে অপুর বাসার সামনে গিয়ে ‘অলিখোপ’ শব্দটা উচ্চারণ করতেই অপু চলে আসে। আমরা চারজনই গল্পের বই আনার নাম করে বেরিয়েছি।
অপু বলল, তাড়াতাড়ি চল বাইরে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না, বাসায় খোঁজাখুঁজি শুরু করবে।
আমরা দ্রুত পায়ে মাঠের কাছে চলে এলাম। এখন অমাবস্যা চলছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। এদিকটায় সন্ধ্যার পর কেউ আর আসে না। তাই একদম কেমন যেন একটা ভুতুড়ে ভুতুড়ে ভাব বিরাজ করছে।
খোকা বলল, অপু আমাদের সবার যাবার কোনো প্রয়োজন আছে?
হ্যাঁ প্রয়োজন আছে। অপু আস্তে করে বলল।
খোকা দাঁড়িয়ে গেল। বলল, আমি যাব না, তোরা যা।
পল্টুও সঙ্গে যোগ দিল, আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।
আমি খোকার পাশে দাঁড়িয়ে বটগাছটার দিকে তাকিয়ে থাকি। কতগুলো ডালপালা একেবারে পুকুরের দিকে নুয়ে আছে। কেমন যেন আতঙ্ক অনুভব করলাম ওদের দুজনের কথা শুনে।
অপু আমাকে বলল, শোন তোরা যদি এমনই করবি তবে কেন বলেছিলি আমরা চারজন একসঙ্গে পাগলের পেছনে লাগব। তোদের আসলে পুঁটি মাছের যেমন সাহস তেমন সাহস। তাই এমনটা করছিস।
আমার খুব প্রেস্টিজে লাগল অপুর কথা শুনে।
পল্টু বলল, পাগলের পেছনে ছোটাটাই ভালো। খামাখা ওই ভূতের কথা পালন করার কোনো মানে নেই।
চল চল দেরি করিস না, বাসায় চিন্তা করবে–বলে অপু এগিয়ে যায়। আমরা তিনজন ওর পেছনে পেছনে এগিয়ে যাই, ধীর পায়ে। বটগাছের কাছে যেতেই আমার বাঁ’হাত শক্ত করে ধরে খোকা বলল, ওটা কে?
আমি দেখলাম একজন লোক বটগাছের নিচ থেকে উঠে হাঁটতে হাঁটতে দক্ষিণ দিকে রওনা দিল। আমার মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না ভয়ে। অপু সোজা এগিয়ে গিয়ে বটগাছের গায়ে চিঠিটা পেরেক দিয়ে গেঁথে হাতুড়ি হাতে করে চলে এল। আমরা বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে লোকটার চলে যাওয়া দেখলাম। অপু আমাদের কাছে এসে বলল, লোকটাকে চিনতে পারলি?
পল্টু বললো, না।
পাগলটা–অপু বলল।
আমার পা যেন আর চলতে চায় না ভয়ে। ঠিক সে সময় একটা কাক বটগাছের মগডালে বসে কা কা শুরু করল। রাতের বেলা কাকের ডাক মানে অমঙ্গলের লক্ষণ।
খোকা বলল, অপু আমাদের চলে যাওয়া উচিত।
আমরা তো যাবই–চল যাই, অপু বলল।
অনেক কষ্টে আমি পা চালিয়ে মাঠ পেরুলাম। মাঠ পার হবার পর অপু বলল, পাগলটা এখানে কি করছিল বুঝতে পারলাম না।
আমার মনে হয় ওই পাগলটাই আসলে ভূত। খোকা বলল।
তবে একটা জিনিস আমার মনে হয় নিশ্চিত যে আমরা সাকসেস হবই। অপু বলল।
কি করে বুঝলি, পল্টু বলল।
আমার মন বলছে। ভূতবাবাজি আমাদের সঙ্গে আগে দেখা করুক।
আমার কেবলই মনে হচ্ছে বটগাছ থেকে নিশ্চয়ই আমাদেরকে কোনো না কোনো অদৃশ্য শক্তি ফলো করছে। ভ‚ত বিশ্বাস করি না, কিন্তু তারপরেও কেন জানি মনে হচ্ছে অশরীরী কোনো শক্তি হয়তো পৃথিবীতে আছে।
আমরা যখন মাঠ থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছি ঠিক তখনই শুনতে পেলাম বটগাছের ওইদিক থেকে কেউ একজন ডেকে উঠল ‘অলিখোপ’। চারজনই ঘুরে পেছনে তাকালাম বটগাছটার দিকে। বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল। ‘অলিখোপ’ কোড নেমটা কেউতো জানে না, তবে কে ডাকল? কে জানল আমাদের ব্যাপারটা?