কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব- দুই
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব- এক
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব- দুই
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম-পর্ব তিন
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব ছয়
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব সাত
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব আট
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব নয়
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব দশ
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব এগারো
২
সন্ধ্যার পর আমাদের ড্রইংরুমে ভাইয়া নীনা আপা আর আমি বসে বসে টিভি দেখছি। মাঝে মাঝে ইনজাম আর তৌফিকের উধাও হওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলছি। নীনা আপা খুব ভিতু, তাই প্রসঙ্গটা ওঠাতে চাচ্ছে না। ভাইয়া আর আমিই আলাপ করছি। নীনাপার ধারণা প্রসঙ্গটা ওঠালে সেই বটগাছের ভূতটা এই ঘরে আসতে পারে। রেগে-মেগে হয়তো আমাদের তিনজনের ভেতর একজনকে নিয়ে যাবে। নীনা আপা সেই ভয়ে একদম জড়োসড়ো হয়ে আমার পাশে বসে আছে। আমি নীনাপাকে ভয় দেখানোর জন্যই বললাম, ভাইয়া আমার কি মনে হয় জানো, ভূতটা আমাদের এই ঘরের আশপাশ দিয়ে বোধহয় ঘোরাঘুরি করছে।
ভাইয়া আমার দুষ্টুমিটা বুঝতে পেরে কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলল, আমার কেন জানি সেরকমই মনে হচ্ছে–বলেই নীনাপার দিকে তাকাল।
নীনাপা এবার একদম আমাকে জড়িয়ে ধরে বসল। বলল, ভাইয়া দেখ বেশি ভালো হবে না কিন্তু।
আচ্ছা যা আর বলব না, তুই আমাদের জন্য চা করে নিয়ে আয় তাহলে। ভাইয়া বলল।
বুয়াকে বলো, আমি পারব না। আমি এখন পাকঘরে যেতেই পারব না।
তুই বানিয়ে আন। নইলে কিন্তু সত্যি সত্যি আবার বটগাছের ভূতটাকে ডেকে আনব।
বাবা ঘরে ঢুকে প্রশ্ন করেন, কি হয়েছে, কে কাকে ডেকে আনবে?
নীনাপা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বাবার কাছে গিয়ে বলল, দেখো বাবা তোমার এই দু’ছেলে আমাকে ভূতের ভয় দেখাচ্ছে।
কিনা? তোরা এ যুগের ছেলেমেয়ে। বিজ্ঞান তোদেরকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে,
আর তোরা ভূত বলে কিছু একটার অস্তিত্ব স্বীকার করে সভ্যতাকে লজ্জা দিচ্ছিস–এটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না।
বাবা তুমি আমাকে আমার ঘরে একটু দিয়ে আসো না প্লিজ, নীনাপা বলল।
কেন, এখানে থাকলে কি সমস্যা? বাবা বললেন।
নীনাপা তার ওড়নার খুট দাঁত দিয়ে কামড়ে বলল, ওরা আমাকে ভয় দেখানোর পাঁয়তারা করছে দেখছ না।
ঠিক আছে, চল তোকে তোর ঘরে দিয়ে আসিÑবলে বাবা নীনাপাকে নিয়ে তার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
নীনাপা চলে যেতেই ভাইয়া হাসতে হাসতে বলল, একেবারে ভিতুর ডিম ।
আচ্ছা ভাইয়া ব্যাপারটা আমার কাছে একটু অন্যরকম ঠেকছে–বললাম আমি।
অন্যরকমটা কি রকম? ভাইয়া প্রশ্ন করল।
ভূতের আড়ালে যে লোকটা দু’জনকে উধাও করল সে আসলে কে হতে পারে?
এ কথাতো আজ দিনের আলোর মতো সত্যি যে ওরা দু’জন আসলে মাস্তান টাইপের ছেলে। চাঁদাবাজিও করতো নিশ্চয়ই। ওদের প্রতিপক্ষ দলের কোনো একজন হয়তো পূর্বশত্রুতার জের হিসেবে কাজটা করেছে।
কিন্তু তা হলে আবার চিঠিতে লিখছে কে ‘ দেখি ওদের ভাল করতে পারি কি না’।
ওটা এমনিতেই কথার কথা লিখেছে।
পুলিশ সেই উধাওকারীকেও খুঁজে পাচ্ছে না-কতদিন হয়ে গেল। আসলে ব্যাপারটা কেমন যেন ঘোলাটে ঘোলাটে মনে হচ্ছে।
তোর কি ঘুমটুম বন্ধ হয়ে গেছে? ভাইয়া প্রশ্ন করল।
হবে না? তুমি কি বল ভাইয়া!
যা যা, নাইনের বই কারো কাছ থেকে এনে পড়াশুনা শুরু করে দে-রেজাল্টাতো মনে হয় দিয়ে দিবে এমাসেই।
ভাইয়া তুমি যে কি বল না-ছুটিটা এবার একদম মাটিই হয়ে গেল, ক্রিকেট খেলা হল না।
তোরা খেলিস না কেন?
আমরা চারজন ছাড়া সবাই ওই বটগাছটার দিকে তাকালেই নাকি ভূতের মতো কিছু একটা দেখতে পায়। তাই খেলাটা বন্ধ।
তোরা চারজন ওদেরকে বোঝাতে পারিস না?
বোঝাইতো, কিন্তু ওদের ঘর থেকে নাকি বারণ করে দিয়েছে ওই বটগাছের আশেপাশে যেন ওরা না যায়।
আচ্ছা ইনজামদের বাড়ির এখন কি অবস্থা রে?
সবাই চুপচাপ। শুধু ইনজামের ছোটভাই ইমরান থানা-পুলিশের কাছে দৌড়াদৌড়ি করে।
আর তৌফিকদের বাড়িতে?
ওরা সবাই ধরেই নিয়েছে কাজটা মানুষের নয়, অন্যকিছুর, কোনো জ্বীন পরী কিংবা ভূতপেত্নীর।
সে জন্য কি কোনোরকম চেষ্টাফেষ্টা করা থেকে বিরত রয়েছে?
না, ওদের দেশের বাড়ির কোনো এক ফকিরের কাছে গিয়েছিল। ফকির নাকি বলেছে তৌফিক দেশেই আছে। ওকে মেরে ফেলা হয়নি। কিসব নিয়মকানুন করতে বলেছে বাড়ির সবাইকে। রাত বিরেতে ঘরের সবাইকে বাইরে বেরুতে না করেছে। আর যেটা বলেছে সেটা হলো বিষয়টা নিয়ে কারো সঙ্গে আলাপ-টালাপ করতে বারণ করেছে। সেই ফকির নাকি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তৌফিকের বর্তমান অবস্থান কোথায় সেটা জানার।
ফকির মিয়া নিশ্চয়ই এ সুযোগে বেশ পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে হ্যাঁ, তা তো নিবেই।
মানুষ কেন যে এই বিজ্ঞানের যুগে ওইসব ফকির-টকির বিশ্বাস করে, বুঝি না।
আচ্ছা ভাইয়া …… এতটুকু বলেই আমি থেমে গেলাম।
কি বলতে চাচ্ছিস বল?
না মানে বলছিলাম কি তুমি তো অনেক বইটই পড়েছো এবং এখনো পড়ো। অ্যাডভেঞ্চার কিংবা গোয়েন্দা টাইপের বইতে একধরনের গোয়েন্দার কথা পড়েছো না, তারা নাকি নানা রকম বেশ ধারণ করে ঘাঁপটি মেরে বসে থাকে মাসের পরে মাস।
হ্যাঁ পড়েছি। কিন্তু তাতে কি?
আমার ভেতর একটা প্রশ্ন খালি উঁকিঝুঁকি মারছে ক’দিন যাবৎ।
সেই প্রশ্নটা কি? ভাইয়া বিরক্তি প্রকাশের মতো বলল।
ওই পাগলটাকে নিয়েই প্রশ্নটা।
কোন পাগলটা?
বটগাছের নিচে শুয়ে থাকে। বাজারে ঘোরাফেরা করে। এর-ওর কাছে চেয়েটেয়ে খায়।
না, আমার তা একেবারে মনে হয়নি। পাগলটাকে আমি দেখেছি, আমিও একদিন দশ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেরকম কিছুতো আমার চোখে পড়েনি।
ধরা পড়েনি মানেইতো হতে পারে খুব নামকরা পাকা গোয়েন্দা। এমন হতে পারে না, বল?
কি জানি, আমি আসলে ব্যাপারটা নিয়ে মোটেও বিচলিত নই।
কেন?
আসলে দেশে যে হারে মাস্তানী, সন্ত্রাসী বেড়ে চলেছে সেজন্য এটা আমার কাছে খুবই সাধারণ একটা ঘটনা মনে হয়েছে। আগামীতে এরচে আরো রহস্যময় ঘটনা হয়তো আমাদের সমাজে ঘটবে। সেটাও দেখবি আমরা মেনে নিব। আমরা আসলে সব কিছুকে মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। কোনো বিষয়েই কারো মাথা ব্যথা নেই। যাদের হাতে আমাদের সমাজের সবকিছু তারাইতো চুপচাপ নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত।
ভাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শেষ বর্ষের ছাত্র। এবং একজন তুখোর বিতার্কিক। তার সঙ্গে কথায় পেরে ওঠা আমার পক্ষে সম্ভব না-তাই আমি চেপে যাই। কারণ তা না হলে সে আমাকে দেশ, সমাজ নিয়ে এমন সব ভারি ভারি কথা বলবে যা আমার এই ছোট মাথায় ধারণ করা সম্ভব হবে না।
কিরে কথা বলছিস না কেন? ভাইয়া বলল।
না ভাইয়া তোমার সঙ্গে পারব না।
পারা না পারার প্রশ্নটা আসছে কেন?
তুমি অনেক জ্ঞান রাখ মাথায়, আমার পক্ষে সেই জ্ঞান নেয়া সম্ভব না।
কেন সম্ভব না? নইলে তো মূর্খই হয়ে থাকবি।
আমি আর কথা বাড়াই না। টিভিতে জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমের একটা সিরিজ দেখাচ্ছে। সেটার দিকেই মনোযোগ দেই।
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে, কি রে অমন চুপ করে থাকা কি ঠিক? তুই না বড় হলে রাজনীতিবিদ হবি বলিস। আমি তোর ভেতরে জুনিয়র রাজনীতিবিদের কোনো লক্ষণ তো দেখছি না, বিষয়টা কি? তুই কি তোর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিস?
আমি একটা কথাও বলি না।