কিশোর কবিতা মীম নোশিন নাওয়াল খান

পুতুল

মায়াবতী কন্যা- সর্বদা হাসে,
খুকি আর দিদিরা বড় ভালোবাসে।
কাঁদে না সে কন্যা, দিলে খুব দুখও,
বকলেও খুব তাকে খোলে না সে মুখও।
মিষ্টি কথাতেও নেই কোনো সুখ,
সারাদিন থাকে তার একই হাসিমুখ।
গায়ে তার টুকটুকে এক লাল শাড়ি,
জানে না সে কোথা ঘর, কোথা তার বাড়ি।
কখনো সে থেকে যায় খুকিদের ঘরে,
দিদিদের সঙ্গেও কত খেলা করে!
গা জুড়ে গয়না, স্বর্ণের হার,
ছোঁয় না সে, তাকায় না ভুলে একবার।
পুরনো হয় শাড়ি, তবু সে তো চায় না,
করে না সে কখনোই নূপুরের বায়না।
গায় না কখনোই ভুলোমনে কোনো গান,
কারো সাথে কন্যার হয় না তো অভিমান।
খাবার না দিলে তারে কখনো সে কাঁদে না,
নিজের জন্য সে একবেলা রাঁধে না।
দিদিরা যে কপালে লাল টিপ আঁকে,
তবুও সে সারাক্ষণ চেয়ে শুধু থাকে।
সারাদিন কন্যা একা শুধু হাসে,
মাটির পুতুল সে- খুকি ভালোবাসে।

ছোটবেলার গল্প শোনাই

ছোটবেলার গল্প শোনাই তোমায় আজকে এসো,
আমার পাশে ঠিক এখানে চুপটি করে বোসো।

ছোটবেলায় দুরন্ত ছিলাম, দুষ্ট ছিলাম ভারি,
পাখি মারতাম, সন্ধ্যে হলে ফিরতাম তবে বাড়ি।

গুটি পায়ে হেঁটেছি প্রথম বাবার দু’হাত ধরে,
নববর্ষে মেলায় যেতাম বাবার কাঁধে চড়ে।

কিন্তু হঠাৎই কী যে হল- শুধুই গোলাগুলি,
বাবা যেন কোথায় গেল, আমায় গেল ভুলি।
আর কোনোদিন ফিরে আসেনি, বাবাটা গেছে হারিয়ে,
তোমার নানাভাই শহিদ মুক্তিযোদ্ধা, বলছি না মা বাড়িয়ে।

বলতে বলতে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছছেন মা,
আজকে শপথ নিলাম- নানাভাই তোমাদের অসম্মান হতে দেব না।

সেই খুকিটা

লক্ষ্মীসোনা কাঁদছে কেন? কে বকেছে তোকে?
ফুলকে আমার কে কাঁদাল? তাকেই দেব বকে।
অমূল্য তুই আমার কাছে, সবার চেয়ে দামি,
তোর কষ্ট, তোর কান্না- সইতে পারি আমি?
এক মুহূর্ত পারি আমি তোকে ছাড়া থাকতে?
তোকে ছাড়া আর পারি না স্বপ্ন কোনো আঁকতে।

দশটা মাস নিজের ভেতর গড়েছি তোকে ধীরে,
স্বপ্ন-আশা সাজিয়েছি, সবই তোকে ঘিরে।
কতদিন দিইনি মুখে একটা দানা ভাত,
তোর জন্য কাটিয়েছি নির্ঘুম সব রাত।
কতদিন পারিনি আমি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে,
পারিনি আর যখন তখন যেথায় সেথায় ছুটতে।
তোকে বড় করব বলে চাকরি দিলাম ছেড়ে,
যুদ্ধ করি তোকে নিয়ে, যাইনি কভু হেরে।

সারাটারাত জেগে থেকেছি, কখন উঠিস জেগে,
কাউকে তোকে দিইনি ছুঁতে, যায় যদি তোর লেগে!
কাঁদিস যদি সেই ভয়েতে নামাইনি কোল থেকে,
কাজ করেছি তোকে আমার বুকে আগলে রেখে।

প্রথম যেদিন মা বলে তুই উঠলি আমায় ডেকে,
আধো সে ডাক আজও দিয়েছি মনের ভেতর রেখে।কী আনন্দ হয়েছিল! চোখের কোলে জল,
বললাম তুই আরেকটিবার “মা” আমাকে বল।

প্রথম যেদিন হাঁটলি তুই টিকটিক দুই পায়ে,
সেই দিনটা আজও আছে আমার মনের নায়ে।
স্পষ্ট দেখি ফুলপরীটা আমার এক হাত ধরে,
হাঁটতে প্রথম, দুই পায়েতে- টিকটিক ভর করে।

সেই পাখিটা কাঁদলে আমার উথালপাথাল লাগে,
যার জন্য সব ছেড়েছি- পরে এবং আগে।
তোর জন্য স্বপ্ন আমার দিলাম বিসর্জন,
তোকে নিয়ে নতুন করে সাজাই আমার মন।
নিজের যত সাধ ছিল- সব ভাসিয়ে দিলাম জলে,
শুধু ভাবি, কখন আমার খুকিটা কী বলে।

সেই খুকিকে কে বকল, খুকির চোখে জল?
কে বলেছে মন্দ তোকে, একবার তুই বল।
তাকে দেখিস দেব আমি আচ্ছা করে বকে,
পুরো পৃথিবীর সঙ্গে লড়ে আগলে রাখব তোকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *