ঈদসংখ্যার কবিতা।। বিমল গুহ

ঘুণপোকা

কানকথা কানে বাজে
কানকথা হাঁটে দ্রুতলয়,
‘রুচির দুর্ভিক্ষ‘ এই শব্দ দুটি
আজো কেনো কানকথা হয়?

কানকথা মনের অসুখ
কেনো তোলো অনভ্যস্ত কানে,
ঘুণপোকা সমাজের মাথা কুরে খায়-
মানুষ কি জানে?

আখ্যান

সূর্যোদয়ের লাল দেখেছিলো যারা একদিন
তারা নানাভাবে আমাদের রঙের মাহাত্ম্য শিখিয়েছে;
কেউ কেউ বলেছিলো বস্তু-রং যৌবন-বন্দনা;
দীর্ঘ বালিয়াড়ির ভেতর কাঁকড়া যেমন
সূর্যের লাল রঙে ন্যুব্জ হয়ে থাকে- ঠিক তেমনিই
মানুষ কি জানে-
মোহমুগ্ধ কাঁকড়াও কান পেতে ঢেউয়ের আখ্যান শুনে কাঁদে!

মানুষ কি জেনেছে কখনো
কূলের সীমান্ত ছুঁয়ে আছড়ে-পড়া ঢেউগুলি এতকাল
কী বার্তা দিয়েছে আমাদের!
দীর্ঘ বালিয়াড়ির ভেতর উটপাখির মতন
আমরা কি থাকবো নীরবে মুখ গুঁজে চিরকাল?
সূর্যাস্তের রং দেখে খুশিতে মেতেছে যারা
তারা কেউ- সূর্যের বেগুনিরশ্মির প্রভাবে দৃষ্টি হারিয়ে বসে আছে;
বুদ্ধির ফারাক তো মানুষের বোঝা দরকার;
তখুনি বুঝতো তারা উপকূলে আচড়ে-পড়া ঢেউয়ের আখ্যান!

আমি চাই মেঘমালা পরিবৃত বর্ণিল আকাশ

মানুষের শুভবোধ মন থেকে ধীরে ধীরে পেয়ে গেছে লোপ
বোধহীন দরিদ্র ও স্বার্থপর হয়েছে সমাজ দিনদিন
হিংস্রতাও পেয়ে গেছে ঠাঁই এই মানব-সমাজে।
সমাজ কি মুখ থুবড়ে পড়েছে রাস্তায়
মানুষের বিবেচনাবোধ ধ্যানজ্ঞান দূষিত-ক্লীব-জড়-মানবতাহীন।

শিক্ষার এত যে প্রসার- খুব কি এগিয়েছে আমার সমাজ
তবে কি বিশাল ক্ষত রয়েছে কোথাও আমাদের?
আমরা বিজ্ঞান পড়ি, দর্শন পড়ি না;
দর্শনহীন বিজ্ঞান অকল্যাণ ডেকে আনে মানব-সমাজে সহসাই।
আমরা প্রকৃতি পড়ি, কবিতা পড়ি না;
কাব্যবোধ ব্যতীত প্রকৃতিজ্ঞান মানুষের শুভবোধ জাগাতে পারে না।
আমরা আকাশ পড়ি তারাদের ইতিহাস পড়ি, শিল্প পড়ি না;
শিল্পজ্ঞান ব্যতীত আকাশ-পাঠ চিন্তার বিকাশ আনে না।
আমরা সুরের তালে দুলে উঠি, সংগীতের রাগিনী বুঝি না;
সংগীতের মর্মবাণী সুরের লহরী হয়ে হৃদয় না ছুঁলে
মনের কর্কশ-রূপ মুছবে না, মুছবে না কোনোকালে।
আমি চাই শিল্পবোধসম্পন্ন সমাজ
আমি চাই মেঘমালা পরিবৃত বর্ণিল আমার আকাশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *