ঈদসংখ্যার কবিতা।। নাসির আহমেদ

কী আশ্চর্য তবু তুমি

দীর্ঘ অদর্শনে আমি চাপাপড়া হরিৎ ঘাসের বন আজ
সবুজ হারিয়ে দগ্ধ হলুদ বিবর্ণ রঙে উন্মুক্ত যখন
তখন ওঠেনি চাঁদ বাঁশবাগানের ফাঁকে সোনালি মুদ্রার রহস্য ছড়িয়ে, তাই বসন্ত বাতাসে কাঁদে একা আড়বাঁশি।

এখনো ফেরার বুঝি হলো না সময়! এত রুক্ষতার পর
রবীন্দ্রনাথের মতো কী করে বিশ্বাস রাখি তোমার ওপর!
যদি গান হতে তবে হয়তো রিমিক্স পেয়ে যেতাম তোমার,
তাও তো সম্ভব নয়। প্রেম কি রিমিক্স হয়? প্রশ্নে মর্মাহত।

নিঃসঙ্গ স্বপ্নকে বলি, নিরুদ্দেশ নামহীন ফুলের স্বভাবে
নেমে যাও ঘোর ছিঁড়ে বাস্তবের রুক্ষ ধু ধু পথে জলতরঙ্গের মৃদু মুগ্ধতা ছড়ানো নীল রাতে
মেঘের আঁচল বেয়ে নেমে আসা জোৎস্না নেই আজ।

তাহলে কী করে প্রেম কবিতার মাত্রা পাবে শিল্পের দাবিতে, আলোর অধিক তীব্র কী নিবিড় অন্ধকারে ডুবেছি দু’জন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষকে আকাশ করে ভরা পূর্ণিমায়!
মনে পড়ে কবে অবগাহন করেছি? মনে না পড়াই ভালো।

নৈঃশব্দ্যের ছুরি দিয়ে জবাই করেছো কবে প্রগলভ হৃদয়
কী আশ্চর্য তবু তুমি আমার সকল দুঃখে আজো বরাভয়।

মানুষের প্রতিচ্ছবি

নিজেকে অচেনা লাগে। আয়নায় তাকাই :
দেখি প্রতিবিম্বহীন আমি, প্রতিচ্ছায়াহীন
কিছুই পাইনা, শুধু কাচ ও পারদ
দৃশ্যহীন-প্রতিচ্ছবিহীন,আমি সাদা কাচ!

জ্ঞানীর ভঙ্গিমা নিয়ে তাকাই নিজের দিকে
প্রতিধ্বনি পেয়ে যাই ক্বলবে আমার!
যেন স্বচ্ছ নীলাকাশে একখণ্ড কালো মেঘ আমি!
নিজেরই দীণতা দেখে ফেলি অকস্মাৎ।

আপন বিভ্রম নিয়ে মানুষ বিমুগ্ধ নার্সিসাস!
আয়নায় বিম্বিত ছবি হঠাৎ চৌচির ফেটে যায়
মানুষ জানে না তার দেখা যে কতটা কম!
জানা যে কতটা ক্ষুদ্র ! ভুল সবই ভুল।

গবাদি পশুরও কিছু কৃতজ্ঞতা থাকে
বন্যপশু তারও আছে ন্যায়-নীতি আঘাত না পেলে
শুধু মানুষ বোঝে না তার চরম মূর্খতা!
ধ্যানীর ভঙ্গিমা তার সাধক না হয়ে!

অন্ধকারে ডুবে আছো চাই আলো অন্বেষণ
শিশুর সারল্যে তুমি বৃক্ষজ্ঞান ধরো।

দুঃসময়ে কয়েক পঙক্তি

ভন ভন মাছি ওড়ে, কফিনের চারপাশে রাশিরাশি মাছি
হলুদ পাতারা দেখো অবিরাম ঝরঝরঝর
করোনার নীলডুমো মাছির তাণ্ডব আজবাতাসে বাতাসে
পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তরে, মানুষ-পশুতে যেন অসম লড়াই!

বাতাসে কিসের গন্ধ! ভয়াল বিকট
হাজার হাজার কালো ঘেরদেওয়া কফিনে পচেছে লাশ!
সেই গন্ধে এ পৃথিবী যেন আজ বধ্যভূমি!কবরের জায়গা নেই!
প্রবল বাতাস এসে সেই গন্ধ ছড়িয়ে দিয়েছে দিকে দিকে।

বাতাসে দুঃসহ গন্ধ, বাতাসে ঝরছে পাতা
কোনো গাছে পাতা নেই,পাতাখেকো ভয়াল বাতাস
ঝরিয়ে দিয়েছে সব সবুজ, এখন শুধু হলুদে হলুদময়!
কার্পেটের ঢঙে মাটি ঢেকে দিচ্ছে আশা ও আশ্বাস।

তুমি কি এমন ভয়ঙ্কর হাওয়া দেখেশুনে সাগরে ভাসাবে তরী?
সাগর উত্তাল খুব! পৃথিবীর সমস্ত সাগর একাকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *