ঈদসংখ্যার কবিতা।। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল

দুই মৃত্যুর মাঝখানে

মেয়েগুলো অশ্লীল আড্ডা মারছিলো।
সে রাতে মহিলা হোস্টলে কোথাও অমাবস্যা ছিলো না,
লোডশেডিং-ও না, ছিলো না জলোৎসব।
নিশি কামিনীর সুবাসে মিশে যাচ্ছিলো-
খালি গলার গান।

হোস্টেল তো আর মসজিদ বা বাসররাত নয়
তবু শান্তি নগরের চেয়েও শান্তি ছিলো!

তারপরও
দুই মৃত্যুর মাঝখানে শুয়ে থাকে। একা। একজন।

খুঁত

‘ছালুনে আর একটু নুন লাগতো,
ঝালটা সামান্য কম হলে
আরো ভালো হতো’।
এই সব ত্রুটি সন্ধানী সমালোচকেরা চাঁদে কলঙ্ক ছড়িয়েছে,
দুধের রঙে রঙদোষ শাদা-খুঁত খোঁজে,
পন্ডিত স্যারের মতো চশমার ফাঁকে ভুল বানান ভূল দেখে,
নিউটন-আইনস্টাইনের সূত্রে পোকা খোঁজে!

আমার কবিতায় আর একটু লবন লাগতো,
মরিচটা একটু বেশি!
হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার কবিতায়-
আর একটু ভালোবাসা থাকলে আরো ভালো হতো!
খুতঁখঁতে সন্দেহবাতিক বুদ্ধিজীবীরা-
শাদা কবিতায় ছাপার কালো রঙ নিয়ে বেশ চিন্তিত।

খাদ্য ও ক্ষুধা

যদিও ক্ষুধা আর খাদ্য এক নয়।
তবুও ক্ষুধা আর খাদ্য
একে অপরের পরম বন্ধু,
পরস্পরের পরিপূরক, প্রেরক এবং প্রাপকের মতো।

উপরে উল্লেখিত বাক্যে ক্ষুধার বদলে পুংলিঙ্গ,
খাদ্যের স্থলাভিষিক্ত স্ত্রীলিঙ্গ হলেই একটি কবিতা তৈরি হয়ে যায়
অথবা মুগ্ধ চাঁদ।

যদিও চাঁদগুলো এলোমেলো ছিলো,
যদিও অব্যয় পদে খাদ্য ও ক্ষুধা নেই। আছে- শোভা বর্ধন।

সহজ পাঠ, পাঠ্যপ্রেম

গাছ গাছের বোন, আমাদেরও
আমি নদীর ছোট ভাই; এক সাথে সাঁতার কাটি।
চাঁদ আমার মেজো ফুপু; জোছনা উঠলেই তার কাছে যাই।
ষড়ঋতু আদরের ছোটখালা,
খালার আদরে বড় হই, বেড়ে উঠি।

আমাদের আত্মীয়তা পাখিদের সাথে, এক সাথে গান গাই,
ঋতুবতী মাঠের সাথে গভীর সম্পর্ক, ভালোবাসী চাষী হয়ে।

সকাল, দুপুর, অপরাহ্ন, বিকেলগুলো
মামাতো, ফুপাতো, খালাতো, চাচাতো…
এবং রোদেলা বৃষ্টি প্রিয় সহপাঠী
আমরা এক সাথে পাঠ করি: সহজ পাঠ
প্রেম করি: পাঠ্যপ্রেম।

স্পর্শ

আঙুলের ছাপরেখার ভাঁজে ভাঁজে জমে আছে
তোমাকে ছোঁয়ার স্পর্শসমগ্র।
টাচফোনের মতো স্পর্শ ঘুমিয়ে থাকে ধনুরেখায়
ভাঁজে ভাঁজে আরামে বিশ্রামে থাকে কবিতা।

জ্যোতিষশাস্ত্র, জ্যোতিষবিদ জানেনা হস্তরেখার রহস্য
টিপসই নিজেই একটি ছোটগল্প,
সেই সূত্রে কব্জিহাত প্রবন্ধ-সাহিত্য।

আমিও তোমার ভাঁজে ভাঁজে ফুটে থাকি-
বহু পাতার আড়ালে নীল নাকফুলের মতো,
দৃশ্যে, অদৃশ্যে অথবা স্পর্শে।

ফাপুর

তোমাকে ভালোবাসা মানে নিজেকে ঘৃণা করা,
নিজেকে থুতু দেয়া এবং অসহ্য।

ভালোবাসি বাংলা ভাষার মতো,
ভালোবাসি বাতাসের মতো, ষড়ঋতুর মতো।

ইচ্ছে করে- ঋতুর মতো ছড়িয়ে থাকি,
বাতাসের মতো আর কটা দিন বেঁচে থাকি।

ক্লান্ত। অস্থির। দম আটকে আসছে,
ভীষণ ফাপুর ফাপুর লাগছে।
আসো না, একটু বাংলায় কথা বলি।

বহু বহু বছর আগে, বহু বহু বছর পরে

বহু বহু বছর আগে আমি এক সময় কবিতা লিখতাম,
প্রকাশক ছিলো, বই ছিলো, পাঠক ছিলো।
তারপর আমি কি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম?
নাকি দীর্ঘ ঘুমের ভেতর সব হারিয়ে এসেছি?
মনে পড়ছে না।

বর-পুতুল, কনে-পুতুল; পুতুলের সাথে পুতুলের বিয়ে দেয়ার মতো
শব্দের সাথে শব্দের বন্ধন করে দিতাম; বিবাহ না।
শব্দ থেকে বের করে আনতাম বহু বহু সৌরভ, শব্দার্থ
নান্দনিক বহু বহু নির্যাস।

খুঁজতাম- শীতের সাথে বসন্তের সম্পর্ক,
আবার সম্পর্ক তৈরি করতাম স্বপ্নের সাথে বাস্তবের।
রাত ১২টায় বুধবার থেকে
খুলে নিতাম বৃহস্পতি।
এবং কি যে ভালোবাসতাম মানুষের ইচ্ছেগুলো!

বহু বহু বছর পর কৈশোরের গ্রামের বাড়ি
স্মৃতি থেকে ঝাপসা হয়ে যায়।
বহু বহু বছর পর ফিরে গেলে যৌবনের ঢাকা শহর অচেনা লাগে,
বহু বহু বছর পর আজ কবিতাকেও অচেনা-অচেনা লাগছে!

One thought on “ঈদসংখ্যার কবিতা।। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল

  • এপ্রিল ১৩, ২০২৩ at ১:০০ অপরাহ্ণ
    Permalink

    ১.এ এক অসাধারণ বিস্ময় চিহ্ন! যেন কামনা বাসনার মাঝখানে অসহায় বিবেক।পাঠক তার ভাবনাকে প্রসারিত করতে পারেন আরো বহুদূর। এখানে পাঠক রাজা। সে তার ভাবনার রাজত্বের অধীশ্বর।
    ২.খুঁত ধরা কিছু মানুষের স্বভাব। সেখানে চমৎকার স্যাটায়ার।”সাদা কবিতায় ছাপার কালো রং নিয়ে বেশ চিন্তিত।”
    ৩. খাদ্য ও ক্ষধা। চিরকালীন বাস্তব ছুঁয়ে আছে। কবিতায় কোথাও ক্ষুধার্ত নেই কিন্তু চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে।
    ৪.কিন্তু। সহজ পাঠ সহজ নয়।এ এক জীবন পাঠ। রোদেলা বৃষ্টির মতো। আলোছায়াময়।
    ৫. তেমনি স্পর্শ। আমাদের আকুতির সুষম প্রকাশ।স্পর্শাতুর। স্পর্শের আনন্দ বেদনা পাবার না পাবার।
    ৬.ফাপুর। স্মৃতিসুখ নিয়ে লোফালুফি তার মাঝেই কবিতা এসেছে গুটি গুটি পায়ে আমাদের মনোজগতকে তোলপাড় করে দিয়ে।— যযাতি দেবল,পানাগড় । পশ্চিমবঙ্গ।ভারত।
    ।্

    Reply

Leave a Reply to যযাতি দেবল Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *