নুসরাত সুলতানার কবিতা
প্রেম ও বিপ্লব
শুধু একবার চুম্বনে চুম্বনে আহত করে দেখ,
আমিও কতটা রমনী।
একবার দুহাত প্রসারিত করে-
জড়াও আলিঙ্গনে –
তারপর দেখ আদর আর স্পর্শের জাদু
ঝরে যাবে সব দ্রোহ, আমিও তোমার কোলে
বসে কেমন বেড়ালের মতো মিউ মিউ করি!
যে হাত স্লোগানে বজ্রমুষ্ঠি করতে জানে।
সেই হাত প্রেমিকের কণ্ঠদেশও জড়িয়ে ধরতে জানে।
মূলত প্রেম আর বিল্পব
বিশুদ্ধতম উপলব্ধির দুটি ভিন্ন রুপ।
প্রেম যদি ঝর্ণা হয়, বিপ্লব হল নদী।
হুরুম
আমার রক্ত শুষে হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে যে সভ্যতা।
আমি তার ধ্বংসের প্রার্থনারত।
আমার ভাষা,সংস্কৃতি আর সঙ্গীতকে গলা টিপে হত্যা করে যে বিশ্বায়ন নিজের অস্তিত্বকে জোরদার করে
আমি তাকে নগ্ন নিতম্ব দেখাই।
যে প্রতিষ্ঠা পাড়ায়, পাড়ায় বৃদ্ধাশ্রম খোলে
আমি তার নিকুচি করি।
আমি চিনি- মাছ, ভাত, মায়ের কোমল পেট
আর শীতকালে খেজুরের রসের সাথে
সদ্যভাজা গরম হুরুম।
শব্দহীন
আকাশ, বাতাস, পাহাড়, সমুদ্র, নদী
সবাই জানে তোমাকে ভালোবাসি।
খুব বুঝে গেছে ওরা যে তুমি আমার,
তুমি আমার উপলব্ধি তে পাওয়া,
সাত রাজার ধন।
জানো না কেবল তুমি
কারণ তুমি মানুষ যে।
মানুষ বিশ্বাসের ও অধিক
প্রশ্রয় দিয়েছে অবিশ্বাস কে।
প্রেমের অধিক সমাজকে।
আমি নক্ষত্র নক্ষত্রে রটিয়ে দেবো
আমার প্রেমের অমরত্বের গান।
বলবো না কেবল তোমাকে।
তুমি যদি চোখের জলকে অনুবাদ করতে
না পারো, চুমুকেও অনুবাদ করতে পারবে না।
তাই নিঃশব্দের চাহনি, গভীর দীর্ঘশ্বাস
যা বোঝাতে পারেনি-
এক পৃথিবী শব্দেরও সাধ্য নেই তা বোঝায়!
যদি
তুমি যেদিন আমাকে ভালোবাসবে
হরিয়াল পাখি কুর্নিশ করে বলবে -তোমাকে স্যালুট মহীয়সী।
তুমি আজ সবচেয়ে ঐশ্বর্যবান।
দোলনচাঁপা লজ্জিত হয়ে বলবে-
এত সুগন্ধ তোমার চুলে?
কার স্পর্শ মেখেছ তুমি নন্দিনী?
প্রস্ফুটিত গোলাপ আমার হাসি দেখে বলবে-
বড় বেশি হিংসা হয় তোমাকে দেখে!
কীর্তনখোলা ম্রিয়মাণ হয়ে বলবে-
কী যে দুরন্ত, চঞ্চলা হরিণী তুমি!
কেবল আমিই ধন্দে পড়ে যাই-
কখনো, কোনোদিন তোমার ভালোবাসা পাব তো?
পুরুষ আজ অব্দি শিখেছে ভালোবাসতে!
স্থিরচিত্র
একদল খচ্চর মিলিত হল
শিল্প-সাহিত্যে স্মরণকালের
উল্লেখযোগ্য বিল্পব ঘটাবে বলে।
অতঃপর একজন বল্ল-
আমি জলপাইয়ের আচার আর দেশী মসলা নিয়ে কাজ করছি।
অন্যজন – আমি কাজ করছি দেশীয় পোশাক নিয়ে
এরই ভেতর আরেকজন বলে উঠল- আপ্নের কবিতা
যেমুন সোন্দর, গানের গলাও মাশাল্লাহ।
জনৈক কথাসাহিত্যিকের পোস্টে লাইক পড়েছে হাজার বিশেক। তিনি গল্পে মায়ের সাথে অবিবাহিত চাচার পরকীয়া ঘটিয়েছেন।
তিনি আসতেই কয়েকজন দৌড়ে গেলেন সেল্ফি তুলতে।
অতঃপর তারা শিল্প-সাহিত্যকে পূণঃপূণ ধর্ষণ করে চললেন আর দাঁত কেলিয়ে স্থিরচিত্রের সংখ্যা বাড়াতে লাগলেন।
উত্তরাধুনিক
পূর্ণ চাঁদকে নদী ডেকে বলল-
গয়না দিবা আট আনা
সোহাগ দিবা চার আনা,
ভালোবাসা দু’আনা আর..
চাঁদের চোখ ছানাবড়া।
ঘোর বিষ্ময়ে চাঁদ বলে-
আমার আবির্ভাবেই ফুলে ওঠে তোমার বুক।
তুমি হয়ে ওঠ উর্বশী রূপসী।
প্রেমের অধিক বড় সম্পদ আর কী আছে!
খিলখিলিয়ে হেসে নদী বলে-
শোনো মশাই এটা উত্তরাধুনিক যুগ।
প্রাগৈতিহাসিক প্রেম আর চলে না বাবু!
প্রেমে এখন সবার আগে টাকা চাই, তারপর শরীর
আর অইসব হৃদয়- টিদয় বড় বড্ড বাতিল মাল!
অই হৃদয় তোমার কাছেই রাখো-
আমাকে বুঝিয়ে দাও বাকিটা।
আমিও দ্বিধাহীন খুলে দেব বুক!