অচিন্ত্য চয়ন এর কাব্যকথা

১.

তোমার চোখে বিকেলের ছায়া

শহর থেকে পালিয়ে যাচ্ছে
তুমুল অনুভূতির বিকেল-
কিছু সকাল তোমার হাতে খুন হয়েছে।
দু:খ হয় তোমার মত খুনিরা যত্ন করে
বিকেল পুষিয়ে রাখে-
ক্লাসের সুন্দরীরা তোমাদের সরল অংক
আরো সরল করে তোলে টিফিন বক্সে।

শ্রেণির বোকা বালিকার খোঁপায়
গুজিয়ে রাখে সহস্র বালকের প্রেম।

অথচ প্রেমহীন প্রাথমিক পেরিয়ে
তোমার সংসারে গণিতের স্যার!

২.

ভোর

ঘুমের প্রতিবেশী পার হয় দিঘী।
দিঘীর হাতে মৃত্যুর পরোয়ানা,
জেগে থাকে ঘুমহীন পাখির মতো
জেনে নাও খবর পত্রের রাহাজানী;
পৃষ্ঠার বুকে শুয়ে শুয়ে কিভাবে বিরহ গুনছে…।

৩.

সকাল

এবার কোন ক্রমেই বিশ্বাস চুরি হবে না;
চুরি হলেই, নিংড়ানো বিশ্বাসগুলো
যথারীতি হাত রাখবে স্তনের বুকে
তোমার চোখের জমিনে চাষ করবে
মায়ার ফসল- তুমি বিশ্বাস রাখো
এই খুনীকে- যদি খুনের দায়ে বিশ্বাস চুরি হয়;
তবে এবার বিশ্বাসের চোখে ফলাব প্রেমের ফসল;
যার সীমানা যাবে তোমার অধিকারে-
হেঁটে চলবে তোমার রাস্তায়-
মায়ার জমিতে হাত রাখো-
এভাবে চলার নিমগ্নতা,
আমার হাতে তোমার স্তনের সচ্ছতা;

৪.

বোতামের বিকেল রহস্য

চলে যাচ্ছি- তোমাদের খুচরো
আকাশ নিচে নামিয়ে রওনা হয়েছি!
চলে যাওয়া খবরে বৃষ্টি হবে,
গ্রামের মাঠে, মায়ের চোখে।

চলে যাওয়ার রাস্তা তোমার বুক,
বেঁচে থাকার নামতা চোখের পলক।
পলকের ছায়ায় বুকের সীমানা-
দূরে বিকেলের খবরদারি।

দু:খগুলো তোমার ওড়নার ভাজে লুকিয়ে রাখি,
সেই বয়সটাও পাহারা দিচ্ছে তোমার রুপ।
ভুলের রাজ্য রাজা হই সহজে, ভুলতে থাকি
গ্রামের মেঠোপথ- মায়েদের আদর।

সহজ করে ভাবি, ভাবনার বেড়াজালে
জটিলতার বুকপ্রহরী- দুনিয়ার দু:খ
নেমে আসে নাভিমূলে।
সমুদ্রের পাড়ে না পৌঁছতেই শুরু হয়
ঢেউয়ের গল্প, অন্ধকারের সহজপাঠ।

নারীদের সকল বোতাম রহস্য নিয়ে
বেঁধে রাখে ব্লাউজের দুই মুখ।
পাহাড় দেখি, দেখে দেখে
ভুল করি দুইয়ের ঘরের নামতা।

তুমি বেঁচে থাকতে এমন ভুল
দ্রব্যমূল্যের মত বারবার হোক।
গরম হোক বাজার, শূন্য হোক
পকেটের জমিন, লাল হোক
যুগল চোখ-
তুমি যে চোখে রাখো রহস্য।

৫.

দুপুর

সমুদ্রের পাশে গিয়ে তোমার চুলের ঢেউ দেখি;
পুবাল বাতাসে মেঘের শরীর থেকে খসে পড়ে দৃষ্টি শহর;
বাতাসের ডানায় নরম পালক, পানির সঙ্গমে মনোহারা-
সঙ্গম এক কাঞ্চিতলার বউ- এক সময় উম্মোচন করে আলো,
অন্য সময় বিরহ- অতপর সঙ্গম এক বিরহ যাপন;

৬.

বিকেল

যুদ্ধের ময়দানে পিঁপড়ার পাখা দেখে ভয় পেলে চলবেনা।
যুদ্ধ এক বিরহ যাবন-
সময়ের বুকে প্রচ্ছদ ধরে রাখা প্রবল বিশ্বাসের জন্ম।
বিশ্বাস থেকে নীরব দৃশ্যের প্রতিফল;
শুন্যের গভীর থেকে ঝরে পড়ে আলোর ফোয়ারা;
রাত পিঁচলে পড়ে যাওয়ায় মেঘের পেটে জারজ প্রহরী,
অন্ধকার সকাল, এ সকাল কালো চাদরে ঢেকে রাখে জীবিত সম্ভ্রম;
যুদ্ধের বিষয়ে আমাদের কোন গণতন্ত্র নেই;
এক বেলা যুদ্ধ, অন্য বেলা বিরহ- তাই যুদ্ধ এক বিরহ যাপন!

৭.

গল্প হোক আলোর প্রতিবিম্ব

পৃথিবী বেশ বদলে যাচ্ছে- দুটি সকাল সকল অন্ধকারের গল্প বলে।
অন্তত জানা গেল সব সকাল আলোকিত না,
সকালও কোন কোন সময় অন্ধকারের আয়োজন করে।
এসব আয়োজন দূরত্ব নির্মাণ করে।
শুকনো পাতার শব্দ নিজস্ব বিবেচনা মুখস্থ করে।
পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা তোমার পক্ষে যায়।
তুমি নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ কেটে স্বপ্ন বের করো।

নতুন দিনের আলো তোমার চোখে পড়ুক।
বেদনার সকল বাতাস বইয়ে যাক আমার উপরে।

নতুন আলোয়, নতুন সুখ- এসব পলাতক হবে।
সময় চেয়ে থাকে নতুন সুখের দিগন্ত বরাবর!
শুভ কামনা তোমার নতুন বছর, নতুন স্বপ্নের জন্য…

৮.

রাত

ঝড়ের রাতে মেঘ পাহারায় শিশুর কান্না-
চোখে জলের চিহ্ন নেই-
চোখে রান্না হচ্ছে ক্ষুধার্ত মেঘেদের খাবার;
দুনিয়ার নাটক কালো কালির যুগল সন্ধি…
যদি জন্ম প্রহরে শিশুর চোখে জলের সড়ক থাকতো
তবেই কান্নার পৃষ্ঠায় কোমল স্বপ্ন
হেঁটে বেড়াত সময়ের দূরত্ব নিয়ে;
সময় এক বিস্মিত স্বপ্নধারা-
শিশুর চোখে ঘুমও লুকিয়ে থাকে-
সূর্যের বুকে ঘুমানোর স্বপ্ন নিয়ে
মায়ের আঁচল উড়িয়ে দেয়
স্বপ্ন বরাবর তবু মাথায় হাত রেখে
কথা বলে যায় মুগ্ধতার সুরে- সুর।
গন্তব্যহীন পথের দাবি;

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *