তানজিন তামান্না অর্ণা’র

কংকাল সময়

অতীত ঘর ছাড়া বেসামাল হাওয়া
ভেঙে যাওয়া অসংখ্য গল্পের লাইনচ্যুত ঘটনা
বিবর্ণ মুহূর্তের সাদা কালো গোমড়া মুখচ্ছবি
ভুল করে খেয়ালের বিপরীতে গিয়ে মনে রাখার বাহানা

অভিমান অভিযোগের খেরোখাতায় কোজাগরী কবিতা
লবন ধরা দীর্ঘশ্বাসের দেয়ালে দুঃস্বপ্নের উৎকন্ঠা
তৃপ্তি অতৃপ্তির শোকে গাঁথা মিথ বিস্ময়
নিভে যাওয়া প্রদীপের সলতে পোড়া ধোয়ার বলয়

জীবনের যোগবিয়োগে কাটাকুটি সমীকরণ
হাত ছেড়ে চলে যাওয়া সেকেন্ড
বিস্মৃতির পেন্ডুলামে কংকাল সময়ের বন্দী রসায়ন…!!

নদী তুমি যৌবনময়ী নারী

নদী তুমি বইতে বইতে নারী হয়ে যাও
স্বচ্ছ ঢেউয়ের চুনড়িতলে লাস্যময়ী যৌবন লুকাও

ভোরের আলোয় স্নান করে কপাল সাজাও
রবির সিঁদুরে টিপ দিয়ে
সারাদিন রোদের ঝিকিমিকি কিরণে
ঝিলমিলি শাড়ী জড়িয়ে রাখো শরীরে
উত্তাল যৌবনে ডেউয়ে ঢেউয়ে আছড়ে পড়ো মাটির বুকে
খুঁজে ফেরো প্রেম অশান্ত মনকে শান্ত করবার আশে
অপরাহ্ন শেষে গোধূলি লগ্নে সূর্যের সিঁদুর রঙে
সিঁথির শিথান রাঙাও লাজুক মুখে
নিজেকে আরো যৌবনাময়ী করতে আঁধার রাতে
চাঁদের টিপ পরো কপালে মুচকি হেসে
কুলুকুলু ধ্বনিতে গান গেয়ে যাও রাতভর বাতাসের সাথে
মোহিত করে রাখো চারপাশ তোমার সৌন্দর্যের অলৌকিক মোহে

নদী তুমি বইতে বইতে নারী হয়ে ওঠো
প্রকৃতির খেয়ালে তুমি রূপেগুণে সরস হয়ে যাও
তোমার ভরা যৌবন নিয়ে…!!

লাজুক কবিতা

আকাশের স্কন্ধে কবিতাগুলো মেলে দিয়েছি খোলামেলা অবয়বে
ভাবনাগুলো খুঁটে খুঁটে পাখি হয়ে উড়ে বসুক
কবিতার শরীরে
বাতাসের শিহরণে কবিতাগুলো যদি প্রাণ ফিরে পায়
তবে বৃষ্টি ঝরবে অঝরে লেখনীর গা চুইয়ে
শব্দের সাথে শব্দের মিলনে
ঝিকিমিকি করবে তারাদের শর্মা জরি
চাঁদের হাসি বর্ণমালার বিনি সুতোর মালা গাঁথবে জোছনার নরম রজনী
মেঘকন্যারা দলবেঁধে এসে দোলা দিয়ে যাবে কবিতার সারিবদ্ধ লাইনে
খিলখিলিয়ে হেসে উঠবে কবিতা লাজুক চাহুনি ঝুকিয়ে

রহমতের বালা

দিন গুনে গুনে হারিয়ে যায় পাতায়
শুকনো হোগলায় বুনে যাওয়া স্বপ্ন
চুইয়ে পড়ে চোখের কাজলে
লোনা ধরা আঁচলে দারিদ্র বাসা বাঁধে
কুঁচকে যাওয়া চামড়ায় চিন্তা বিলি কাটে
দুমুঠো ভাতের যোগানে

উনুনে জলকেলি
সাঁতার কাটে ছাইয়ের বংশধর
একটু আগুনের উষ্ণতা পেতে
সে কী হাহাকার
রহমতের বৃষ্টি
অভিশাপের সিনা ধরে নেমে আসে
খুধার বাক্সে সাদা সাদা দানার খোয়াবে
ছোট্ট মুখে চিৎকারের সাইরেন বেজে চলে
রহমতের বালায় হাপুর কাটে জীবন গাড়ি…!!

অশুভ অথবা অন্ধত্ব

শুভ যা আছে
সবই অ উপসর্গ যোগে
কু ডেকে ওঠে

অন্ধ গলির
বিদীপ্তা বেগানা সীমানা
হেরে যায়
আঁধারের পদাঘাতে

মোহাচ্ছন্ন দলিল
নিংড়ে নেয়
সকল স্বাদের লেহন

ভুঁই আগলে
বসে থাকা কাক
সাদাকালো রং বদলে
ময়ূর হতে চায়

অপারগ

ওহে কৃষ্ণকলি
তোমার চোখের সংস্কৃতি বুঝতে গিয়ে
আমি বারবার ডুবে গেছি অসীমে
ঐ কাজল কালো ধারাপাত আউড়ে
আমি অকৃতকার্য
সাদাকালো স্বপ্নের সমীকরণ মেলাতে
আজও পাইনি নিষ্কৃতি
ঐ মায়ার গুগলি থেকে
কী চেয়েছিল, কতটা চেয়েছিল
সব পলকের আড়ালেই থেকে গেল নীরবে
সুখদুঃখের ঐ দাবার চালে
চাহনির ঐ গোলকধাঁধায়
কতটা প্রেম চুইয়ে পড়ে

ওহে কৃষ্ণকলি
কপালের আয়াতে যে ঘামের লুকোচুরি
চিকচিক করে কাছে ডাকার বাহানায় লিপ্ত
সেখানে কতটুকু উত্তেজনা ভালোবাসার
আমি তলিয়ে যাই
সেই ঘর্মাক্ত লবন সাগরে
হারিয়ে ফেলি তোমাকে
তুমি মায়াবী আঁধার
বারংবার পড়তে গিয়ে থমকে গেছি
অসহায় চিত্তে

ওহে কৃষ্ণকলি
কী বলতে চেয়েছিলে ঐ চোখের চাহনি দিয়ে
আমি আজও বুঝিনি…!!

শাপিত সুখ

সাপের মতো ফণা তুলে
আজীবন পিছে ধাওয়া করে গেছে শাপ
সুখের সংজ্ঞায় বদদোয়ার লেলিহান বাণী মিশ্রিত
সুখের শরীর নীল বিষে বিষাক্ত
হলাহলের নির্যাস মেশানো ছুঁড়ে দেওয়া কথার বাণ
তীব্র গতিতে বিঁধেছে সুখের বুকে
লোবানের ধোঁয়াতে মিশে গেছে সুখের আত্মা
পোড়ামুখী সুখ সবার কপালের চাতালে
সোনামুখী ধান ঝাড়েও না
শাপিত জীবন একচিমটি সুখের খোঁজে মন্দীভূত
শাপের সৌহার্দ্যে গোটা জীবন অবশেষে হলো ভস্মীভূত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *