রফিকুল নাজিম এর কবিতাগুচ্ছ
প্রিয়তম সেই মুখের মত মানুষ একা
মানুষ স্বভাবতই একা
মায়ের গর্ভ, কবর কিংবা চিতায়
মানুষ একা- বড্ড একা
কবি যেমন থাকে তাঁর অপ্রকাশিত কবিতায়।
কাম ও ঘামের প্রবল তাণ্ডবলীলা শেষে
পাশ ফিরে শুয়ে থাকা প্রিয়তম সেই মুখের মত- মানুষ একা
তুমুল ঝড় শেষে বিধ্বস্ত ঠোঁটের মত- মানুষ একা!
এবং আমার মতও মানুষগুলো ভীষণ একা।
মানুষে গিজগিজ করা শহরে চাকরি প্রার্থী সেই তরুণের মত
প্রেমিকের হাতে হাত গুঁজে বসে থাকা সেই প্রেমিকার মত
আহা! মানুষগুলো ভেতরে ভেতরে কত্তো একা।
মিছিলে ঢেউ তোলা সেই স্লোগানের মত;
সমাজতন্ত্রের জন্য মুখিয়ে থাকা সেই বিপ্লবীর মত-
মানুষ একা।
মেট্রোরেল, সিটি বাস, লক্কর ঝক্কর লেগুনা ও গণপরিবহনে
শত-শত যাত্রীকে টেনে নেয়ে সেই চালকের মত মানুষ একা।
শহুরে রাজপথ, এভিনিউ, রমনা পার্ক, শিখা চিরন্তনী কিংবা
সড়কে দাঁড়ানো রাজু ভাস্কর্যের মত মানুষ একা; বড্ড একা।
অভাবের ভেতর ফুটন্ত ফুলের মত আমাদের সংসদ ভবন
মানিক মিয়া এভিনিউ, ভাসানী হকি স্টেডিয়াম, স্মৃতিসৌধের মত
মানুষ একা; প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে- মানুষ বড্ড একা।
প্রেমের ও অপ্রেমের মত কিংবা মায়া ও ঘৃণার মত
মানুষ বড্ড একা, একা এবং একা।
বিধ্বংসী ঠোঁট ও একটি খুন
আমাকে খুন করার জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের প্রয়োজন নেই
এমন কী প্রয়োজন নেই ধারালো ছোঁড়া
কিংবা নীল বিষের পেয়ালা…
এমন কালো মেঘের বুক ঠেলে বের হয়ে আসা চাঁদ
রূপোলী আলোর বিচ্ছুরণ
এবং হাতের তালুতে হাত রেখে
আচমকা আমার বাম গালের ওপর
তোমার হন্তারক ঠোঁটের সশস্ত্র হামলা…
ব্যস- হয়ে গেল…
জন্মান্তরীণ গলে যাওয়া এই আমার ইতিহাস!
জলতেষ্টা
একগ্লাস জলের তৃষ্ণায় মানুষ মরে
অথচ সাত সাগরের জলতেষ্টায় আমি মরি না,
কোনো জলতেষ্টাই যেনতেন নয়,
এই জলতেষ্টায় আমারও বিভৎস যন্ত্রণা হয়
কিছু কিছু জলতেষ্টা আছে; মুমূর্ষু বুকেও পোষা যায়
তোমাকে দেখার তৃষ্ণা- আমি বুকে পুষি
সুখের যন্ত্রণায়!
কতোদিন তোমাকে দেখি না!
কথার মানুষ কথা না বললে
একবার ভাবুন তো-
আপনার চারপাশে কোনো অক্সিজেন নেই
কোথাও কোনো বৃক্ষ নেই
সবুজ পাতা গুল্মলতা নেই
কোথাও কোনো ছায়া নেই
কোথাও কোনো মায়া নেই।
বলুন ত- কেমন লাগবে আপনার?
জানেন-
এখন আমার ক্ষেত্রে এমনই হচ্ছে।
প্রিয় মানুষের কথার অভাবে
আমার চারপাশের অক্সিজেন উধাও হয়ে যাচ্ছে
এইযে আমি আর শ্বাস নিতে পারছি না…
কথার মানুষ কথা না বললে
এই আমিটা খুব নিরবে নাই হয়ে যায়।
বিষদাঁত
সাপকে মানুষ বড্ড ভয় পায়
আতংকিত মানুষ সাপ দেখলেই
হাতে তুলে নেয় লাঠি
সাপকে পেটায়
লাঠির আঘাতে জাত সাপও সোজা হয়ে যায়।
আমার হাতেও লাঠি ছিল
অথচ আমি নির্বিঘ্নে চলে যেতে দিয়েছি!
টের পাচ্ছি
নীল বিষ ছড়িয়ে পড়ছে আমার রক্তে- শিরা-উপশিরায়।
শূন্যের ধারণা ও প্রেমাংক
একদিন তোমাকে অংক বুঝাতে গিয়ে বলেছিলাম,
ধরো- আমার কাছে একটা হীরা আছে।
সেই হীরাকে কোনো ভগ্নাংশে ভাগ না করে তোমাকে দিলাম।
বলো তো- আমার কাছে আর কয়টি হীরা অবশিষ্ট আছে?
তুমি চটজলদি উত্তরে বলেছিলে, ‘নাই। অবশিষ্ট কিছু নাই।’
তারপর থেকে আমি আর তোমার অংকে কখনোই অবশিষ্ট থাকি না,
তোমার কাছে আমি কেবলই শূন্যের ধারণা মাত্র।
শুনেছি- তুমি এখন আরেকজনের কাছে
জাবেদা ও খতিয়ান শিখতে যাও।