মহির মারুফ এর কবিতা

দৌড়

বন্দুক কেনার মুরোদ নাই বইলা-
হেমিংওয়ে হইতে পারলাম না।
কমলার জুস আর আমার মগজ দিয়া-
ককটেল বানানো হইলো না।
ফাঁসিতে ঝুইলা মরার সাধ আমার কোনদিনও ছিল না।
ছিল না গলায় কিংবা হাতের রগে ছুড়ি চালানোর সাহস।
তয় আমি জানতাম-
বাইচা থাকলে একই সকাল, একই দুপুর আর এমন রাত্তির দেইখা দেইখা-
পূর্ব পুরুষের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে করতে বুড়া হইয়া যামু আমি।
আদি পিতা আদমরেও বা ক্যামনে দোষ দেই।
বউয়ের মন রাখতে গন্ধম খাইলো।
আমি আইসা পড়লাম পৃথিবীর এক কোণায়।
তারপর কত নিয়ম-কানুন আর একই রকম একেকটা দিন।
স্টয়িক ফিলোসফরা কইলো- বাইচা থাকার টেকনিক শিখতে হইবো।
আমি নানান কায়দা কানুন কইরা বাইচা থাকলাম।
নিজের আত্মা কান্ধের উপ্রে উইঠা কইলো-
দৌড়াও মিয়া।
আমিও লাগামছাড়া ঘোড়ার মতো দৌড়াতে থাকলাম।
দৌড় শেষ হইলো কিনা ঠাহর করতে পারলাম না।
আত্মা উড়াল দিল, আমি পইড়া থাকলাম মাঠের মধ্যে।
নিজের সাথে নিজে কী বিটলামিটাই না করলাম!

যদি আরেকবার জন্মাই-
মানুষ হইয়া পৃথিবীর কোণায় আইসা পড়ি-
এই জন্মের দুঃখ কলমে ভইরা কাগজ ভাসাইয়া দিমু।
ক্যানভাসে ব্রাশ দিয়া দুঃখ আঁকমু।
গোলাপ ফুলের মতো নানান রঙের, নানান ঘ্রাণের দুঃখ।
এক জায়গায় দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া নিজের দুঃখের ঘ্রাণ নিজে নিমু।
সাধ কইরা কেউ চাইলে, তারেও একটু দিমু।
দৌড়াদৌড়ির মধ্যে নাই আর আমি।
দৌড়াইয়া লাভ কী?
দৌড় শ্যাষ হবার আগেই খেলা শ্যাষ হইয়া যায়।

গালিবের গ্লাস

যদি গালিবের গ্লাসে মদ হতাম-
ক্ষণকাল পরেই হতাম, গালিবের শিশ্ন থেকে ক্ষরিত পেচ্ছাপ।
আমায় ছড়ানো-ছিটানো দেখে-
নাকে রুমাল চেপে হেঁটে যাওয়া পথিককে উদ্দেশ্য করে বলতাম-
‘বেশ্যার ছেলে, আমি গালিবের গ্লাসে মদ ছিলাম।
আমি গালিবের গ্লাসে মদ ছিলাম।’

জানা উচিত তোমার

এই যে তোমারে শুকনা মুখে বিদায় জানাইলাম।
তুমি হাঁইটা চইলা গেলা।
আমিও বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে ফিরা আসলাম।
মাঝরাত অবধি বন্ধুদের সাথে কলাবাগানের রাস্তায় হাটলাম।
নাজিরা বাজার গিয়া ফালুদা খাইলাম।
শেষরাতে খাটে শরীর রাখতেই-
মারাত্মক সুন্দর এক ঘুম হইলো।
কোনো স্বপ্ন নাই। দুঃস্বপ্ন নাই।
সূচিভেদ্য অন্ধকারের মতো ঘন জমাট বাধা ঘুম।
সকালে উইঠা আর দশদিনের মতো অফিসে গেলাম।
কলিগদের সাথে কাজের কথা কইলাম,
পিঠপিছে আরেকজনের গুষ্টি উদ্ধার করলাম,
দুপুরে খাওয়ার সময় মাছের তরকারি নিয়া রসিকতা করলাম।
রুটিন কইরা খাবার আগে পড়ে সিগারেট খাইলাম।
ফাইলের মধ্যে ডুব দিলাম।
সন্ধ্যায় মদের গ্লাসে ঠোঁট ভিজাইলাম, জিহ্বা ডুবাইলাম।
মাতাল হইয়া সবার সাথে পুরোদমে হাসি-তামাশা করলাম।
পুরা দুনিয়া জানলো- ‘আমার কিচ্ছু হয় নাই।’
নিজেরে জানাইলাম- ‘আমার কিচ্ছু হয় নাই।’
এতোদিন ধইরা আমারে চেনো।
তোমার বোধহয় জানা উচিত ছিল-
আমার ভেতরটা আজীবনের জন্য ফাঁকা হইয়া গেছে।
এই অতল মহাশূন্যের তল খুঁজতেও আমার ভয় লাগতেছে।
তুমি ছাড়া যদ্দূর আমার চোখ যায়-
নির্ভেজাল অন্ধকার দেখি আমি।

কবির কলম

কয়েকটি রাতের বিনিময়ে-
প্রেমের কবিতা হতে চেয়েছিলে।
শরীরে বিনিময়ে চেয়েছিল-
ছন্দোবদ্ধ শব্দ হতে।
প্রিয়তমা,
কবির অস্থানে বীর্যস্খলন হয় বটে-
কলমের স্খলন হয় না।

মানুষ ও কীট

তার লেখা সুইসাইড নোটে বানান ভুল ছিল।
ঠোঁটে লেগে ছিল শুকনো থুতুর গন্ধ।
তার নিচে চাপা পড়ে মরে যাওয়া তেলাপোকা-
এমন নির্বুদ্ধি আচারণে হতবাক হয়ে গিয়েছিল।
সে মরে পরে ছিল-
রাস্তার ওপরে।
আশেপাশে উৎসুক মানুষের জটলা।
মানুষের মায়াকান্না, তার মৃতদেহ।
আর চেপ্টা হয়ে যাওয়া একটি তেলাপোকা।
ভুল করেছে নোংরা কীট দিনের আলো দেখে।
ভুল করেছে ডাস্টবিনের বাইরে হাওয়া খেতে এসে।
ও জানে না,
এই শহরের উঁচু অট্টালিকা থেকে-
যখন তখন ঝাপিয়ে পড়ে রক্তমাংসের মানুষ।
তাদের বুক পকেটে ভুল বানানে লেখা সুইসাইড নোট থাকে।
তাদের আঙুলের ফাঁকে- জমে থাকে জমাট রক্ত।
তাদের মনের খবর জানা নিষ্প্রয়োজন।
তাদের জীবনে একটি খবরই পত্রিকাতে আসে-
লাফিয়ে পড়ে, উঁচু অট্টালিকা থেকে ঝাপিয়ে পড়ে-
মরে গেছে তারা।
এদিকে-
অদ্ভুত খামখেয়ালি মানুষের নিচে পিষ্ট হয়ে-
মরে গেছে সংসারী এক তেলাপোকা।
যার বেচে থাকার বড্ড সাধ ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *