মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী’র কবিতা
হেমন্তের অস্তিত্বে সাজে মনের গহীন
হেমন্তের হিম-বাতাসে দোলে মাঠের সবুজ
দোয়েলের শিসে নিস্তব্ধ দুপুর ফিরে উচ্ছ্বল শৈশব
নতুন ধানের গন্ধে ব্যাকুল মনের চারিদিক
উচাটন মন সোনালি ধানের শীষের ছোঁয়ায়
নবান্নের অনাগত উৎসবের আশে;
আমার উদাসী মন হারায় তন্দ্রাঘোরে।
পড়ন্ত বিকেলে সূর্য ডোবার মোহনীয় দৃশ্যে
পাখিরা দেহ ধুয়ে কলরবে মাতে সুরমার স্বচ্ছ জলে
দূরন্তপনায় মেতে ওঠে পাতিহাঁস, বুনোহাঁস, সাদা বক
কিশোরী নারীর মতন সাঁতার কাটে ভাবনার ভীড়ে
মন-পোড়া পৃথিবীর আকাঙ্ক্ষার হাওড়
জলাশয়ের বুকে নামে অন্ধকার
ঘনকুয়াশা মাড়িয়ে হেমন্তের সোনা ঝরা দিনের
বাউল নির্জন হয় একতারাতে;
শিশির ভেজা সবুজ পাতারা ছুঁয় —
পঞ্চদশীর চাঁদ
অতঃপর: অভিমানী বৃক্ষেরা শান্তি খোঁজে
নিশ্চুপ সন্ধ্যায়—হাসনাহেনার ঘ্রাণে
সুরের মূর্ছনা জাগায় ঘুঘুর বহর
শীত ছুঁয়ে পরাণ গহীনে নামে আপন আলো ।
মোহান্ধ জীবনের ধান্দা
পাখিরা ওড়ে ক্ষুব্ধ শহরে
আর ডানাঝাপটায়—ভালোবাসার অসীম তৃষ্ণায়
দৌড়ায় সুভাষিণীর নেশাকাতর চোখ
ছোটে মোহান্ধ জীবনের ধান্দায়
আমার উদাসীন মন থাকে উচাটন
বিনিদ্র রাতে তারাদের হাত ছুঁয়ে
পেতে চায় কাঙ্ক্ষিত কবিতার স্পর্শানুভব।
মুখোমুখি হও বসন্ত যৌবনে
থেকো না তুমি আর অতোটা বেশী দূরে
অনুক্ত বেদনার দীর্ঘশ্বাস ফেলে
অবলা মৃত্তিকা—ফিরো এসো প্রেমময় ঘাস
ফিরে এসো তুমি আকাশ ছোঁয়া হৃদয় চোখে
এইখানে রুপালি গল্পেরা আগুন ঝরায়
পূবালী হাওয়ায় হাতড়ে চলে নৈশ নদীর ঢেউ
নিরাশার শোক কাটিয়ে, সবুজ পাতার শব্দে
বসন্ত বাতাসে মিশে যায় ফেরারি বাউলের সুর
স্বপ্ন ভাঙা পাখি উছলে উঠে নতুন মকুলের ঘ্রাণে
ফেলে আসা সময়ের হাত ধরে ফিরে এসো আবার
বসন্ত যৌবনে মুখোমুখি হও
সাজো কৃষ্ণচূড়ার রঙে—একাকী মনের শয্যায়।
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী কবি ও সাংবাদিক। সম্পাদক: শিল্প ও সাহিত্যের ছোটোকাগজ ‘বাঁশতলা’। প্রকাশিত গ্রন্থ ৫ টি। লেখালেখি ঘিরেই কবির যাপনকাল। জন্ম: দোয়ারাবাজার সুনামগঞ্জ, বাংলাদেশ।