মহির মারুফের কবিতা

অচ্ছুতের মৃত্যু

কীটনাশক খেয়ে মরে যাওয়ার আগে-
সাওতাল মান্ডি কৃষককে উৎসাহী সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিল-
বিষ খয়েছিলেন কেন?
কৃষক ব্যাথাতুর চোখে, নির্লিপ্ত ঠোঁটে জবাব দিয়েছিল-
দুঃখ লাগছিল!
নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের শরীরে আজন্ম লেগে থাকা এই দুঃখ-
গরম পানি ও ডিটারজেন্টে চুবিয়ে রেখেও তোলা যায়নি।
কিংবা কেউ চেষ্টা করেনি।
লেগে থাকা দুঃখের দাগ নিয়ে এরা মরে গিয়েছিল।
খবরের পাতায় এদের নাম এসেছিল।
এদের লেগে থাকা এই দুঃখের ইতিহাস পড়ে-
একদল প্রগতিশীল দেশকে, দশকে গালাগাল দিয়ে-
ধুমায়মান চায়ের কাপে চুমুক ও সিগারেটে টান দিয়ে বলেছিল-
আহারে!

তারপর শহুরে কর্মব্যস্ততা আর নতুন খবরের ভিড়ে-
কিংবা নতুন করে লেগে থাকা দুঃখ নিয়ে মরে যাওয়া কোনো সংবাদে-
আহারে শব্দটি যোগ করে,
নিত্যনৈমিত্তিক জীবনযাপন করে গেছে এখানকার মানুষ।
এদিকে কিছু হিপোক্রেট শব্দবেচা কবি-

যে কিনা রিকশাওয়ালাকে কষিয়ে থাপ্পড় মেরে-
ঠোঁটের কোনে সিগারেট ধরে-
অফিসের বড়কর্তার সামনে হাটু গেড়ে-
সারাটি দিন পার করে-
ঘরে এসে এইসব মরে যাওয়া অচ্ছুতদের নিয়ে দু’এক লাইন লিখে-
মনে মনে ভেবেছে-
যথেষ্ট উদ্ধার হলো।

আজও সাবালর্টানদের শুয়ারেরবাচ্চা বলার পরে-
আপনা থেকে একটি প্রশ্ন মাথায় এসে টোকা দিয়ে জিজ্ঞেস করে-
আসলে শুয়োর শবাকটি কে?

এইসব নোংরা সাবালটার্ন, নাকি আমাদের নোংরামি?
প্রাক্তন প্রেমিকার নষ্টামি, নাকি নষ্ট বদ্বীপের অর্থনৈতিক মানদণ্ড?
দ্রৌপদীর শাড়ি পেচানো সীমাবদ্ধ মগজের কাছে পৌঁছাতে না পেরে-
অদৃশ্যে বয়ে চলা বাতাসে,
আরেকবার শুয়ারেরবাচ্চা বলে খিস্তি করে ঘুমিয়ে যাওয়া-
আদর্শিক মানুষের তাড়া থাকে আগামী দিনের অফিসের জন্য।
মনে ভয় থাকে সুপিরিয়রদের গাল মন্দের জন্য।
যখন উত্থান রহিত ও পতন অনিবার্য-
তখন একটি চিন্তাই মানায়-
একটি সত্যিই তখন ওহী বাণীর মতো অকাট্য-
খেয়ে বেচে থাকা। যেভাবেই হোক বেচে থাকা।

ঘোলাটে মগজ

বিড়ির দোকানী ডুব দিয়েছে গাঁট বাধা তামাকের তলে,
বাজার আজ সয়লাব হয়ে গেছে-
তরমুজ, খরমুজ আর আমড়া ফলে।

গুদারাঘাট থেকে ইস্তাম্বুল-
নেশাখোর যাচ্ছে বকে যা তা,
থোড়াই কেয়ার ঠিক কি ভুল।

হঠাৎ করে একতারা ফেলে কানাই বাউল-
কানে গুঁজে রাখা বিড়ি ধরায়-
কাক কেন জাতীয় পাখি না?
গু খায় তাই বুঝি!
কে বলেছে কাক গু খায়?
এ নিয়ে হট্টগোল! শহর হলো তোলপাড়!
কেউ জানলো না।
জানলো শুধু কানাই বাউল, তার মগজের ভেতর সংসার।

মেঘ করা আকাশ গুড় গুড় করে ডেকে যায়।
আকাশের বোধহয় গ্যাস্ট্রিক হয়েছে!
এন্টাসিড কিনে কানাই দুহাত তুলে দাঁড়ায়!
ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নামে-
বৃষ্টি শুষে খায় ট্যাবলেট।

কানাই বাউল অন্তরীক্ষের সমস্যা সমাধান করে-
খেয়ে বেচে আছে আধপেট।

মরা ইঁদুর মুখে নিয়ে নির্বিকার বিড়াল হেটে যায়।
মোসলেম মিয়ার চায়ের দোকানে-
রিকশাওয়ালা সিধু কাকা দিনে দুইবেলা চা খায়।
ছয় টাকার দুধ চা, দুই টাকার টোস্ট!
সিধু কাকা খিস্তি ছাড়ে-
শালা বড়লোকের ছেনালের ছাওয়াল-
পনেরো টাকার বিড়ি খায়, খায় মুরগীর রোস্ট।
হাগবি তো শালা হলুদই তুই, গোলাপি তো আর না!
খাবি যখন এক কাপ চা আর নেতানো টোস্টই খা!

এই কথা শুনে খানদানি বিড়িখোড় ধোঁয়া ছাড়ে আকাশে।
খ্যাক খ্যাক করে মোসলেম হাসে- খুক খুক করে সিধু কাকা কাশে।
এদিকে কানাইয়ের মাথায় ঢোকে না-
ইলিশ কেন জাতীয় মাছ, তেলাপিয়ার কি দোষ?

কানাইকে দেখে মোসলেম হাঁকে-
ওরে কানাই এদিকে আয়, টুলের উপর বোস!

খানদানি বিড়িখোড় বিদেশি রাজাদের গল্প জুড়ে দেয়।
মোসলেম মিয়া বুঝুক না বুঝুক জোরে জোরে মাথা ঝাকায়-
জে ভাই তারপর কি হইলো?

তারপর
তারপর চলে যায় অনেকক্ষণ!
খানদানি বিড়িখোড় যখন পেতেছে পৃথিবীর ম্যাপ।
সিধু কাকা উঠে দাঁড়ায় ধরতে নতুন খ্যাপ।
টুলে বসে কানাই ঢুলে-
পান চিবায় হাঁটু অবধি লুঙ্গি তুলে।
গাঁদা ফুলে কি ঘ্রাণ কম, জাতীয় ফুল ক্যামনে হলো শাপলা?
খানদানি বিড়িখোড়ের লেকচারে পরে বাধা-
এ কোন গাঁজাখোর, হুর শালা! কথার মধ্যে ঘাপলা!
কানাই দরদ দিয়ে বলে-
আহা গাঁজা কি খারাপ জিনিস। হারবাল লতা পাতা!

হাত তুলে মোসলেম থামায়-
আহা! কি শুরু করলা ছাতার মাথা!

খানদানি বিড়িখোড় চলে যায়।
চলে যায় পাগল বাউল কানাই।
মোসলেম মিয়া মাথা চুলকে ভাবে-
চান্দে মানুষ গেলে আমার কি?
লাল চায়ের দাম তো ঠিকই পাঁচ টাকাই থাকবো!
ঠিকই মানুষ খাইবো বাকি!
ওদিকে পশ্চিমে ইভল্যুশন থিউরি সত্যি কি মিথ্যা তাই নিয়ে হট্টগোল।
মান্ধাতার আমলের সেই মারামারি-
পৃথিবীটা চ্যাপ্টা নাকি গোল।

কনাইয়ের মাথায় এতকিছু ঢোকে না।
লাগে শুধু খটকা-
কোন ইলিশ জাতীয় মাছ?
বড়টা? নাকি জাটকা?

অন্তর্ধান

জলে ডুবে মরে গেছে একটি পানকৌড়ি।
চারিপাশে তাকিয়ে, সবটুকো আলো হাওয়া চোখে মেখে-
সেই যে এক ডুব দিল-
তারপর হেমন্ত পেড়িয়ে বসন্ত এলো-
ঠোঁটের মাঝে রূপোলী মাছ নিয়ে পানকৌড়ি ভেসে উঠলো না।

পানকৌড়ি জলে ডুবে মরে গেছে।
অব্যর্থ নিশানা খাটিয়ে, ট্রিগারে আঙুল চেপে-
এক নিমেষে একজন্ম কাটিয়ে দিলো রিপভ্যান ইউংকেল।
কেবল কালো পালকসমেত মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠলো না পাখি।

পরজন্মে হয়তো কালো পাখি কোরাল মাছ হবে।
হয়তো অন্য কারো ভাতের বাসনে আলু ঝোলের সাথে শোভা পাবে।
কেবল পানকৌড়ির মাংস খাবে বলে,
যে শিকারী এখনও ট্রিগারে আঙুল রেখে-

সজাগ চাহনিতে তাকিয়ে আছে,
সে জানে না-
বায়না দিয়ে রাখা বুলেট ফিরিয়ে নিতে হবে।
পানকৌড়ি জলে ডুবে মরে গেছে।

দেখা হবে?

মদ খেয়ে বমিতে এক কমোডে মাখামাখির সময়ে-
প্রথম চোখাচোখি?
ভদকা নাকি জিন ঐ অবস্থায় বসে ওতটুকুই আলাপ।
আমার গোঁফের রেখায় লেগে থাকা বমির উচ্ছিষ্ট কিছু অংশ।
তার চিবুক বেয়ে পড়া লালা।
আর আমাদের প্রথম চোখাচোখি।

পরিপাটি মানুষ দেখলে আমার মনে হয়-
কফিন দেখছি।
বেদনাহীন মানুষ আর পালিত কুকুরের মধ্যে তফাত কোথায়?

আমাদের কি আরেকবার দেখা হতে পারে?
না, পরিকল্পনা থাক।
হয়তো কোনো এক পানশালায় একসাথে বেসিনে মুখ নামিয়ে বমি-
আয়নায় আবারও চোখাচোখি।

হাতের কাটা দাগ, ফেঁটে যাওয়া ঠোঁট, আর বুকের ভিতরের নিদারুণ ক্ষতে-
যে মাতাল হয়ে থুথু মেখে দিতে জানে-
তাকে ভালোবাসা না গেলেও,
মদের টেবিলে আমন্ত্রণ জানানো যায়,
দেওয়া যায় সিগারেটের দাওয়াত।

তারপর ধোঁয়া ধোঁয়া শহর, আর আমাদের ঘোলাটে চোখ-
নিরর্থক কিছু আলোচনা।
লবিতে টেনে নিয়ে-
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরতেই মদের বাসি গন্ধে আবার ভকভক করে বমি।

এমন সিঁথি করা চুল, কপালে টিপ, শাড়ি পড়া মেয়ে-

রবীন্দ্রনাথের বিছানায় ঘুমিয়ে এসেছে প্রাগৈতিহাসিককালে।
এখন তারা বুর্জোয়ার ঘরে লক্ষ্মী বউ সেজে ভদ্রমহিলা বেশে পায়চারি করে।
তাদের শরীর থেকে কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ, চোখে মাশকারা,
আর বুকভর্তি বেচে থাকার লোভ।

অথচ কেউ একজন। যার মন ভেঙে গেছে। টিপ খসে গেছে।
কিছুদিনের জন্য শরীরের মাংস বিক্রি করে ইস্তফা দিয়েছে।
যার মনে প্রেম বলতে তাচ্ছিল্য ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই,
যাকে কেউ ভালবাসলে ঘেন্নায় বুক ভরে যায়,
ছলনা করলে সহাস্যে টান দেয় সিগারেটে।
ভালোবাসি বললে আরেক পেগ মদ খেয়ে-
মৌসুমি প্রেমিকের শার্ট মাখিয়ে দেয়।
যে নির্ধিদ্বায় অচেনা লোকের বিছানায় শুয়ে পড়ে।
শিৎকার করতে করতে আর্তনাদ করে ওঠে।

চোখ থেকে একফোঁটা জল পড়ে না,
একবিন্দু অপরাধ বোধ জাগে না,

সকাল হলে চলে যায় একটি সিগারেট ধরিয়ে,
ফিরেও তাকায় না, চুমুও খায় না।

কোথায় দেখা হবে আমাদের?

মদের টেবিলে প্রতিটি মানুষের এক একটি গল্প থাকে।
তন্মধ্যে আমি দস্তয়েভস্কির ভাঙাচোরা কোনো এক নায়িকাকে-
বেছে নিতে চাই।
যাকে ভালোবাসতে রুচিবোধ নিচু হয়ে আসবে।
আমায় ভালোবাসতে গিয়েও যে পরক্ষণে ঘেন্না করবে।
তারপর-
মধ্যরাত অবধি মদ্যপান।
ন্যাকামো বাদ দিয়ে মদ খেয়ে হড়বড় করে বমি।
সকালে যে যার গন্তব্যে।
পেছনে ফিরে তাকাবার পিছুটান নেই।
তারপর-
আবার একদিন পানশালার সবুজ বাতির নিচে।

বিরহবিলাস কিংবা অন্যকিছু

মাঝরাতে আমার খুব মদ খেতে ইচ্ছে হয়-
ঠোঁটের বাম পাশে সিগারেট চেপে ধরে-
যখন গ্রিলে শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে দাঁড়াই-
দেখি সারি সারি তারা উড়ে যাচ্ছে দিগ্বিদিক।
আকাশের চাঁদ অধোমুখী হয়ে-
ফিনকি দিয়ে দিয়ে জোৎস্না বিলাচ্ছে।
কে জোৎস্না গায়ে মাখছে, কে হাতে নিয়ে চুমু খাচ্ছে-
কে আবেগে জোৎস্না ছুঁয়ে কেঁদে একাকার হচ্ছে-
তাতে চাঁদের কিচ্ছু যায় আসে না।
এতটা নির্বিকার ভঙ্গিতে আমি কাউকে ঝুলে থাকতে দেখি নি-
লক্ষলক্ষ বছর ধরে মহাকাশের বুকে।
আমি দুচোখ ভরে জোৎস্না পান করি।
আমার বাকযন্ত্র ঘুমিয়ে পড়ে ঠিকই-
আঙুলগুলো জেগে ওঠে তোমার সাথে কথা বলবে বলে।

তবে এই মূহুর্তে আত্মসম্মান অনেক বড় আমার কাছে।
এতকাল ধরে যে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে আমি বড় হয়েছি-
সেটি আমায় শিক্ষা দিয়েছে-
মধ্যরাতে পরপত্নীর সাথে আঙুলের কথোপকথন ধর্ম এবং সমাজের চোখে বিব্রতকর
বটে।
বাস্তবতার নিরেখে প্রচন্ড অবাস্তব।
কিন্তু মধ্যে মধ্যে মনে হয় আমি বাতাসের ভর দিয়ে-
কিংবা শহুরে শালিক-চড়ূই হয়ে গিয়ে বসি তোমার জানালার পাশে।
এই আশ্বিনের জ্যোৎস্নায় আমি পুরনো কথা ভেবে বেদনাবোধ করি-
একটা হিংসে জন্ম নেয় আমার মনে।
তোমাকে আজীবন পাওয়ায় এক আকাঙ্ক্ষা-
আমাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখে।
কিন্তু মধ্যেমধ্যে আমি ভেবেভেবে হয়রান হই-
উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ি-
যদি সত্যিসত্যি তোমাকে পেয়ে যেতাম-
তাহলে আমি কিসের জন্য অপেক্ষা করতাম?
এক তোমাকে আর কতবার, কতদিন ওলট-পালট করে দেখতাম?

কতবার একই দ্বীপে নোঙর গেড়ে কলম্বাস হওয়ার গৌরব বোধ করতাম?
তুমিও কি ক্লান্ত হও না?
এক ঘ্রাণ, এক কণ্ঠস্বর, এক শরীর, এক শিশ্ন-
প্রতিরাত?
আর কত?
প্রতিদিন যেভাবে তুমি ঘুম থেকে ওঠো, ভাত খাও, গোসল কর, কমোডে বসো, ঘুমুতো যাও-
একভাবে একতালে একলয়ে শরীরে শরীর মেশাও, ক্লান্ত হও-
ক্লান্ত লাগে না তোমার? একঘেয়ে লাগে না?
ছকেবাধা ছারপোকার জীবন আমাদের।
এখানে মধ্যে মধ্যে প্রেম পায়-
যেমনি করে খিদা পায়, বাথরুম পায়, ঘুম পায়।
কতকাল প্রেম আসে না?
কতকাল আচমকা আবেগে একাকার হয়ে যাই না?
কতকাল মদের গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে-
তোমার ঠোঁটে মাতাল চুমু খাই না!
যান্ত্রিক চোখে আমি জ্যোৎস্না দেখি-
আমার আঙুল তোমার আঙুলের সাথে কথা বলতে চায়!

এতটুকু ভেবে আনন্দ হয়-
অন্তত আমি পাইনি তোমায়।
এই না পাওয়া যে কতবড় পূর্ণতা আমি টের পাই।
এই বেদনা যে বেচে থাকার রসদ আমি মর্মে মর্মে বুঝতে পারি।
তুমি আমি পাশাপাশি শুয়ে আছি-
তুমি আমি এক টেবিলে খাচ্ছি-
আমার প্লেটে ভাত তুলে দিচ্ছো, কলারের বোতাম লাগিয়ে দিচ্ছো, আহ্লাদী হচ্ছো-
আমি তোমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি, শাড়ির পাড় ঠিক করে দিচ্ছি, আদুরে ছেলেমানুষী
করছি, একখাটে ঘুমোচ্ছি-
তারপর? আর কতদিন?
তোমার আহ্লাদ আমার কাছে আদিখ্যেতা মনে হবে-
আমার ছেলেমানুষী তোমার কাছে কর্তব্যহীনতা ঠেকবে-
আমাদের খুনসুটি বেড়ে বেড়ে-
বড় এক দূরত্ব তৈরি করবে।
আমরা দিনকে দিন একজন আরেকজনের কাছে পুরনো হয়ে যাবো-
আমরা নির্বিকার ভাবে একসাথে আজন্ম কাটিয়ে দিবো-
একখাটে জৈবিক কর্তব্য পালন করবো-

নৃতাত্ত্বিক প্রজননের দায়িত্ব এবং ফসল বয়ে বেড়াবো জীবনভর-
একসাথে থেকেও আমরা যোজন যোজন দূরে সরে যাবো।
এমনটা ভাবতে পারি না আমি।
আতঙ্কিত হয় বারংবার।
বরং এমন আচমকা একদিন মাতাল হয়ে তোমার নাম নিয়ে কান্নাকাটি-
আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বিষন্ন হওয়া-
আর এমন চমৎকার হাহাকার-
এভাবেই তো বেচে থাকে মানুষ!
সবকিছু পেয়ে যাওয়ার মাঝে আমি কেবল বাহুল্যতা দেখি-
প্রেম আচমকা স্ফীত হয়ে ওঠে-
কিছুক্ষণের জন্য বাস্তবতার স্খলন ঘটে-
কুয়াশার মতো জমে ওঠে আবেগ।
মধ্যেমধ্যে মনে হয়-
তুমি যদি থাকতে; কি না কি হয়ে যেত!
মন্দ কি এমন আশ্বিনের জ্যোৎস্নায় এহেন বিরহবিলাস!
মধ্যবিত্ত জীবনে বেচে থাকার-
বেদনা নিয়ে খেলা করবার এইটুকুন বিলাসিতা দেখাতে দোষ কি?
তাও ভালো- তোমাকে পাইনি আমি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *