কবিতা

সুমন বনিক-এর কবিতা

মেতে উঠি নবান্নে

নীল আকাশে পাখির মতো উড়ছে রঙিন ঘুড়ি
এই নবান্নে পাখনা মেলে ওদের সঙ্গে উড়ি!
ধানের শীষে শিশির দোলে ছড়ায় মুক্তো মালা
সারাটা গ্রাম মাতিয়ে তোলে গীতমহুয়ার পালা।
পিঠা-পুলির মিষ্টি সুবাস পাড়ায়-পাড়ায় ছড়ায়
নতুন দিনে কী আনন্দের জোয়ার বইছে ধরায়!
উঠোনজুড়ে শিউলি ফুলের নকশি বুনন কাঁথা
পিদিম জ্বেলে শুনছে সবাই মন-মলুয়ার গাথা।
বাজল কোথায় মোহন বাঁশি, ঘটাং ঘটাং কাঁসর
রাত-বিরেতে মাতোয়ারা কবি গানের আসর।
এই নবান্নে রং ছড়াতে সুখের প্রহর গুনি
দুঃখ ভুলে প্রাণটা খুলে স্বপ্ন-মায়া বুনি।
নতুন চালের মধুর সুবাস সাঁঝের হাওয়ায় ভাসে
সোহাগমাখা কিষানির মন খল-খলিয়ে হাসে।
শরতের মেঘ যায় যে সরে হেমন্তে নীল আকাশ
চারিদিকে রঙ লেগেছে মনটা রঙে মাখাস।

শুধুই পড়ি প্যাঁচে

এক বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে দাঁড়াই সুরমা তীরে
সন্ধে নামে পাখ-পাখালি ফিরে আপন নীড়ে।
আবাক হয়ে সাঝের আকাশ দেখছি নয়ন ভরে
হঠাৎ দেখি পেছন থেকে পকেটটা কে ধরে?
বাজার থেকে ফিরছি একদিন ইলিশ মাছটা নিয়ে
আয়েস করে ভোজন করবো সর্ষেবাটা দিয়ে।
ভাবতে ভাবতে পড়ে গেলাম ম্যানহোলের এক গর্তে
মরতে মরতে ফিরে এলাম কী সুন্দর এই মর্ত্যে!
অফিসের এক বড়ো কর্তা আমায় বলেন ডেকে
ফাইলটা নাকি ছাড়তে হবে,ঝুলছে যে-টা রেকে
কথা শুনে মেজাজ আমার হলো যে ফোর ফোর্টি
মনে ভাবি দেবো নাকি হেভি ওয়েট চড়টি!
যেদিন আমি সাপোর্ট করি বাংলাদেশের ম্যাচে
টিম টাইগার্স সেদিন খেলে গু-হারার সেই ধাঁচে।
হট ফেবারিট বাংলাদেশের নামটা কি আর বাঁচে
অপোজিশন ড্রেসিংরুমে প্রলয় নাচন নাচে!!
চলতে পথে হোঁচট খেয়ে পা কেটে যায় কাচে
জীবন চলার বাঁকে বাঁকে শুধুই পড়ি প্যাঁচে !!

বুকের গহিনে শেখ মুজিব

আবেগমাখা মনটি নিয়ে তাকাই নদীর জলে
শেখ মুজিবের মুখটি ভাসে,চোখে জল ছল-ছলে।
উদাস মনে নীল আকাশে যখন চোখটি পড়ে
শেখ মুজিবের সেই হাসিটি সোনার রোদে ঝরে।
পাকা ধানের খেতে যখন বাতাস এসে দোলে
শেখ মুজিবের স্বপ্ন-ঝাঁপি মন-বাগানে খোলে।
ভোরের দোয়েল শিস দিয়ে কয় নতুন দিনের কথা
শেখ মুজিবের সোনার বাংলার স্বপ্ন ছিলো যথা।
ষড়ঋতু বাংলাদেশে কতো রূপে আসে!
শেখ মুজিবের নামটি নিয়ে ফুল-পাখিরা হাসে।
কৃষক শ্রমিক আম-জনতার গহিন বুকে আঁকা
শেখ মুজিবের অমর কীর্তি আদর-যত্নে রাখা।

ফুলের হাসিতে রাঙা সকাল

এই যে আমার উঠোন জুড়ে তরুলতা দোলে
আবছা আলোর আঁধার নিয়ে সন্ধ্যা যখন ঝুলে।
জবা টগর জুঁই চামেলির কী যে রঙিন হাসি !
মনটা তখন হাওয়ায় ভাসে পুলক রাশি রাশি।
রাত-বিরেতে হাস্নাহেনার উদাস করা গন্ধে
মনটা তখন নেচে উঠে ময়ূর নাচের ছন্দে।
জুঁই চামেলি কাঁঠালচাপার মিষটি হাসি দেখে
সকালটা যে হচ্ছে রাঙা ওদের রেণু মেখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *