খান মুহাম্মদ রুমেল-এর কবিতা

অনন্তে তুমি

একদিন ফেরার হবো উড়ালি এক সন্ধ্যায়
ফিরবো কি না আর, জানিই না!
সন্যাস নয়, হয়তো নেবো বিরহব্রত
চাঁদহীন আকাশের নিচে কাটাবো
বেহিসেবী জীবন মদিরায় বুঁদ!
মুছে দিয়ে জীবনের লেনদেন সবটুকু
হয়ে যাবো শূন্য হাত, কর্পদকহীন
চাইবে না মালিকানা, উত্তপ্ত হৃদয়ের
চোখ রেখে উথালি ঢেউয়ে, রবে না কেউ পথ চেয়ে
নির্জনে ফেলবে না কেউ আঁখিজল এক ফোঁটা!
কোনো আক্ষেপ নেই তাতে বিন্দু সমান!
শুধু হাত নেড়ে বলো ফেরারি সন্ধ্যায়
বন্ধু প্রিয়তমাসু নিয়ো না বিদায়!
ধরে রাখার অনন্ত আক্ষেপেই বেঁচে রয় ভালোবাসা!

তোমার খোঁজ

কোথায় খুঁজিনি তোমায়, বলো?
শেষ বিকেলের নরম আলো আলেয়ায়
শিশির ভেজা ঘাসের ডগায়
শীত সকালের কুয়াশা আবছায়ায়!
চাঁদনি রাতে জোছনার মায়াবী মায়ায়
নদীর জলের কলকল বয়ে যাওয়ায়
শ্রাবণের অঝোর ঝরা বৃষ্টিধারায়!
চামড়া পোড়া তপ্তরোদে পথের কায়ায়
ধান শালিকের উড়ো উড়ো পাখায় পাখায়
বটের তলে ঝিরিঝিরি বাতাস বওয়ায়!
হিমের রাতে আকুল করা ঠাণ্ডা হাওয়ায়
দিন ভাসানো, পাগল করা সুরের দোলায়
ফেলে আসা ছোটবেলার কলার ভেলায়!
সুদূর গাঁয়ের বৈশাখের রঙিণ মেলায়
অলস দুপুর, ঘুঘু ডাকা শনের চালায়
শিউলি ফুলে ছেয়ে থাকা গাছের তলায়!
কোথায় খুঁজিনি তোমায়, বলো?
সকল খুঁজে, খোঁজ মেলে তোমার-
লুকোনো খাতার কবিতায় কবিতায়!
অস্পর্শ এক অমিয় কবিতার লাইন
আমিও বাঁচিয়ে রাখি তোমার জন্য!

দরজায় শালিখ

দরজায় কড়া নাড়ার কথা ছিলো তোমার।
সেই থেকে খিল এঁটে আছি
তোমার দেখা নেই।
বারান্দার অপরাজিতা গাছটাকেও
দেখতে যাই না আর।
পাছে তুমি কড়া নেড়ে চলে যাও
যদি শব্দ শুনতে না পাই!
কাল ভোরে হঠাৎ কড়া নাড়ার শব্দ!
ত্রস্ত পায়ে দরজা খুলে দেখি
একটি শালিখ।
আচ্ছা;
তুমি শালিখ হলে কবে?
আমার যে এখনো পাখা হলো না!

জোছনার অধিকার

সে সব সময় আসে না।
যখন সব ঘুমিয়ে গেলে
পঞ্চমীর চাঁদ একলা
ঝুলে থাকে দখিন আকাশে
তখনই কেবল তার আগমন।
ঠিক তখন যদি ভেসে আসে
এক টুকরো উড়ো মেঘ?
মনটা খিচিয়ে গিয়ে মনেহয়
আকাশ বির্দীন করে দিই।
না পঞ্চমীর চাঁদ না মেঘের আকাশ
কিছুই প্রয়োজন নেই আমার।
আমি তো শুধু চেয়েছিলাম
জোছনা মাখার অধিকার ।
সেখানেও যদি এতো আপত্তি
তবে আকাশটা ভেঙে পড়ুক
পৃথিবীর মাথায়।

আকাশ কেনার ভাবনা

ভেবেছিলাম পুরো আকাশটাই কিনে নেবো।
পরে মনে হলো খোলা আকাশতো আমার মতো
বহু মানুষের আদি ঠিকানা।
আদি ঠিকানা কে বেচতে বলো?
অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করলাম
আকাশ না-
চাঁদটা কিনে নেবো।
শুধু তোমার জন্য।
চাঁদের নরম আলো মেখে
তুমি উর্বরা হবে।
তোমার আমার যৌথ চাষাবাদে
জন্ম নেবে এমন এক পৃথিবী-
যেখানে ফুটবে রাশি রাশি জোনাকি।
তোমার হাসির ছটায়
উজ্জ্বল হবে জোছনার জগত।
কসম করে বলছি
চাঁদটা আমি কিনে নেবো
কেবল তোমার জন্য।
মেঘ বুনছি কেবল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *