বিমল গুহ-এর বৃষ্টির কবিতা
বৃষ্টি
তুমি কি আমার নামে বদনাম
রটাও প্রত্যহ!
দেখেছো কি ধারাজল প্রবল বর্ষণে
কি লিখেছে তোমার শিয়রে গতকাল?
উঠোনের হাঁটুজল ভেঙে
মিথ্যাচার রটাও কি করে!
দেখো- গতরাতে বৃষ্টিতে
ধুয়ে গেছে তোমাদের সকল গরিমা।
বেনোজল পাড় ভাঙে দ্রম্নত, দূরে খরস্রোত
ভেঙে দেয় হিংসার আকাশ, প্রবল বৃষ্টিতে
ধারাজল মানুষের বংশলতিকা লেখে
ক্রমে, পালাক্রমে।
ধারাজল
ধারাজল কলকল প্রবাহের নাম;
পরিশুদ্ধ ধারাজলে ডুব দেই রোজ
বোধিমূল হেসে ওঠে
হেসে ওঠে অভ্যন্তরে জমে-থাকা ফেনা,
অন্তর্প্রবাহে নিত্য নিমজ্জিত হই
তবুও কি ধারাজল আমাকে চেনে না?
জলের সঙ্গী হয় পরিশুদ্ধ হাওয়া
স্মৃতি হয়ে ভেসে ওঠে মেঘের আস্তিন;
অবিশ্রান্ত ধারাজল বলে বার বার- আজ
আষাঢ়ের দিন!
ধারাজল কলকল প্রবাহের নাম;
জলের গভীরে যাই- দিতে চাই সব
চোরাস্রোত যতটুকু
পারে তুলে নিতে,
খুলে যায় বল্কল
জোছনা ছলকে ওঠে অবাধ্য শ্রোণিতে।
বাহ্যত মিহিঢেউ অভ্যন্তরে লুব্ধস্রোতেধারা,
স্মৃতিমেঘ কিছু বোঝে আর বোঝে নক্ষত্রমন্ডল
এই ঝরঝর বৃষ্টির প্রকৃত ইশারা।
বৃষ্টির সন্তান
আকাশের তারাগুলো ঝুলে আছে মেঘে
অঝোর ধারায় বৃষ্টি
ঝড়োবেগে ছুটেছে তুফানমেল ঢাকা-চট্টগ্রাম
এই ঘোর বরষার দিনে
বৃষ্টিভেজা কদমের ডালে
সারি সারি কাক বসে ঝিমোয় নিভৃতে।
দূরে মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি বাজে
মানুষের দীর্ঘশ্বাসে ট্রেনের গতি বাড়ে আরো
বৃষ্টির বন্দনা করে মরাডালে বসে লক্ষ্ণীপেঁচা
কবিতার অনুষঙ্গ নিয়ে সেও তর্ক জুড়ে
তর্ক জুড়ে রাতের পাখিরা।
রাতভর তির্যক ভ্রূকুটি, রাতভর
সন্ধ্যাতারা দূরে কম্পমান
কৃপণ আলোর কাছে ভিক্ষা মাগে
অর্ধস্ফুট বৃষ্টির সন্তান।