নাছরিন নাহার-এর কবিতা
আমলা নয়ত কামলা আমি
কামলা আমি নয়ত শ্রমিক নইতো টাকাকড়ি,
আদর সোহাগ যা পেয়েছি রেখেছি বাপুর বাড়ি।
দা বঠি আর খুন্তি কড়াই আমার নিত্য সঙ্গী
হুকুক পালন মর্জি লালন জীবন যেন জঙ্গী।
কাজের পরে কাজটি করি সন্ধ্যে নামাই বুকে,
আলোর মশাল জ্বালিয়ে ফিরি পরিবারের সুখে।
মাথার উপর বৃষ্টি পড়ে রৌদ্র পোঁড়ে গাঁ,
কামলা আমি কাজ করে যাই ঘাম শুকিয়ে গাঁ।
ছোট বড় স্বপ্ন যত ছিলো আপন চোখে
ভাসিয়ে ভেলায় গঙ্গার জলে প্রিয় জনের সুখে।
শক্ত হাতে হাল ধরেছি কাঁধে নিয়ে হাল
সোনার মানুষ গড়বো বলে নিত্য উড়াই পাল।
সারাটিক্ষণ নাটাই ঘুড়ি ফর ফরমায়েস শুনে,
তবুও মন পাইনা করো কাজের হিসাব গুণে।
বাসার খালার বিদায় দিলেও নের্য্য পাওনা গুণে
স্ব-সম্মানে বিদায় হবেন কয়েক বাণী শুনে।
বিনা টাকায় কামলাখাঁটি উনুনে দেই ভাত,
একটু যদি হয়েছে নরম তাবেই যাবে জাত।
গন্ধ কি তা বোঝেনা মন ময়লা পরিষ্কারে
ডাসবিন আর কাপড় কেচে ব্যথায় অবশ হাড়ে।
প্রসাবে পিট দেয়না যেন আদুরে সন্তান
ভেজা কাঁথায় কামলা শুঁয়ে দেয় বুকে স্থান।
ভগ্নদেহে ক্লান্তিতে যখন করবে আয়েশ বেশ,
শুনতে হলো বিনে পয়সার চাকরী এবার শেষ।
সমতার প্রহর
বজ্র ঘাতে বৃষ্টি পরুক
হোকনা তুষার পাত,
চোরাবালির গভীর খাদে
দুঃখ যাক নিপাত।
ঝড়ো হাওয়ার তান্ডব চলুক
টর্নেডো হোক বেগে,
ভাঙ্গুক সকল অট্টালিকা
অহমিকা যাক ভেগে।
সাগর উঠুক গর্জন দিয়ে
উঠুক জলোচ্ছাস,
প্রলায়ণকারী ঘূর্ণিপাকে
কষ্টের হোক বিনাশ।
অগ্নি খড়ায় বালুর ঝড়ে
পুরুক পাপীর ঘর,
বুক উচিয়ে দেখুক মহান
সমতার প্রহর।
মেকি
ঢিলেঢালা লকডাউনে
চলছে সারা দেশ,
রাষ্ট্র বলে কি যায় আসে
দেখছি বসে বেশ।
মানুষ কিবা পশু মরুক
আমার তাতে কী?
আমার আছে রাজ্যসভা
খাচ্ছি বসে ঘি।
গরিব বলে শব্দ কোনো
নেই যে আমার দেশে,
চারিদিকে ছড়িয়ে ধনী
চাউল চোরের বেশে।
গোপন খবর
লকডাউনের পিছে নাটক
জমছে দারুণ বেশ
গুম করছে, মারছে মানুষ
নেই কি তবে শেষ!
কঠিন কঠোর লকডাউনে
মূল ছিল না রোগ
বুঝছি এখন আসল খবর
জ্বলছে হৃদে শোক।
দিন-মজুরের জীবন নিয়ে
করছে যারা খেলা,
বুঝবে ঠিক তুফান এলেই
না, পাবে না ভেলা।
সম্মানী তার সম্মান নিয়ে
করছে যারা নিলা,
খুলবে মুখোশ মরবে অকাল
পড়বে হাতে তালা।
বেহুশ হৃদে হুশ হারিয়ে
নেশার বোতল হাতে
নাস্তিকেরা করছে চিয়ার্স
রাতে কিংবা প্রাতে।
শাস্তি সে কি বুঝতে গেলে
হৃদয় ওঠে কেঁদে,
শয়তানরূপী মানুষ সব
ডুববে পাথর বেঁধে।
প্রিয় হতে প্রিয়
তুমি আমার ভীষণ প্রিয় হৃদয় নদীর তীরে,
তোমায় নিয়ে স্বপ্ন হাজার করছি লালন ধীরে।
তুমি আমার সন্ধ্যে সকাল গভীর রাতের তাঁরা,
নির্জনতায় তোমায় ভেবে পাচ্ছি সুখের ধারা।
বিষণ্যতায় ডুবিয়ে অতল অন্তর ছিলো কালো,
তোমার ছোঁয়ায় অবশ হৃদে জ্বলছে প্রাণে আলো।
দগ্ধ বুকে আগ্নেয়গিরির উত্তাপে পুঁড়ে ছাঁই,
বলার কথা যা ছিল তা বলতেই ভুলে যাই।