পাখি মারুফা আক্তার-এর কবিতা

অরুনিমা আর শুভংকর

(মেসেঞ্জারে টুং করে শব্দ)
=কী! আজ দু’দিন হলো কোন শব্দ নাই যে?
—ও তাহলে খেয়াল করেছো আমি দু’দিন ধরে কথা বলছিনা যে!
= আচ্ছা! এবার বুঝেছি চারদিক এত অন্ধকার কেনো! কালো মেঘে ছেয়ে আছে। তোমার মনের আকাশে মেঘ জমেছে তাই। তাহলে একটু অপেক্ষা করি বৃষ্টি হয়ে ঝড়লেই তোমার মনের আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে।
—উহু! এত সহজে না।
= তাহলে কী করতে হবে আমাকে?
—আজ বিকেলে বাইরে থেকে চিংড়ি মাছের চপ নিয়ে আসবে, বেলকনিতে বসে চায়ের সাথে খাব।আর শোন. সাথে বেলীফুলের মালা।
=আচ্ছা, এ তো অনেক সহজ, তা কোন রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় চিংড়ি চপ?
—উহু! রেস্টুরেন্টে না, ফুটপাতে।
= কী বলছো! কোন দিকের ফুটপাতে খুঁজবো?
—এটাই তো তোমার শাস্তি।
= আর বেলীফুল দিয়ে কী করবে? কোথায় যাবে?
—না, তুমি আসবে যে তাই সাদা শাড়ির সাথে খোপায় বেলীফুল পরবো।

অরুনিমা আর শুভংকর-২

—হ্যালো… শুনছো অরুনিমা?
=হে বলো, শুনছি
—অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে, বোঝনি এখনো?
=কী বুঝবো? তুমি কী বলছ?
—আরে বর্ষা এসে গেছে শুভংকর ।
=বর্ষা কে? তোমার কোন কাজিন?
—আরে না! বর্ষা কালের কথা বলছি।
বর্ষা কাল এসে গেছে মানে আষাঢ় মাস শুরু হয়েছে, আর তুমি এখানো আমাকে কদম ফুল এনে দিলে না।
=ও তাই বলো, আচ্ছা ঠিক আছে, কাল আমাদের বিবাহবার্ষিকী, কাল তোমায় কদমফুল এনে দেবো।
—শোন… এবার কিন্তু ১ টা ফুল বেশি এনো। জানোতো প্রত্যেক বছরই এক বছর করে বাড়ে বিয়ের বয়স, তাই কদম ফুলও একটা করে বাড়ে।

=আমার মনে আছে, ঠিক আছে আনবো, আজ অফিস থেকে তারাতাড়ি ফিরবো, তোমার হাতের সেই স্পেশাল চা বানিয়ে রেখো, আদা, এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা, লং দিয়ে কড়া লিকারে দুধ বেশি আর চিনি কম দিয়ে যে চা টা বানাও। তোমার হাতের এই চায়ের জন্য যুগ যুগ ভালবাসতে ইচ্ছা করে তোমায় হা হা হা

—বাব্বাহ এত পছন্দ তোমার আমার হাতের এই মসলা চা? আগে কখনো বলনিতো শুভংকর।
=এই তো বললাম, আর শোন… তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
বিকেলে এসে দেবো অরুনিমা।

—কী? বিকেল গিয়ে সন্ধ্যা হলো, এখন তোমার আসার সময় হলো!
=তোমাকে যে সারপ্রাইজ দেবো বলেছি সেটা খুজতেই তো সন্ধ্যা হয়ে গেলো। ওই নাও, সাদা শাড়ি আর বেলীফুলের মালা। জানি তোমার খুব পছন্দ। তুমি তো পারলে পুরো বর্ষাই সাদা শাড়ি পর। কাল তুমি আমার জন্য পরবে।
—তুমি জানো! তোমার এই ছোট ছোট ভালবাসা গুলোর জন্য আরও অনেক বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে।

অরুনিমা আর শুভংকর-৩

ফোনটা রেখেই দরজার দিকে দৌড়ালো অরুনিমা আর চিৎকার করে বলল
… ড্রাইভার গাড়ি বের কর…
…ড্রাইভার বললো আপা কোথায় যাবেন? কী হয়েছে।
অরুনিমা বললো ঢাকা মেডিকেল চল…

হাসপাতালে পৌছাতেই ওয়ার্ড বয় বলল…
আপনি অরুনিমা?
অরুনিমা মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দিলো সে-ই অরুনিমা, চোখ ছল ছল করছে অজানা আশংকায়।

ওয়ার্ড বয় কতগুলো কদম ফুল হাতে দিয়ে বলল, স্যার অজ্ঞান হওয়ার আগে এগুলো আপনাকে দিতে বলেছে। এক্সিডেন্ট করে উনি যখন রাস্তায় পড়ে ছিল তখন ফুল গুলো ওনার হাতে ছিল, কিছুটা দুমড়ে মুচড়ে গেছে, কিছুতেই ওনার হাত থেকে ফুলটা ছাড়াতে পারিনি।

আজ অরুনিমা আর শুভংকরের বিবাহবার্ষিকী, বলেছিল আজ বাসায় ফেরার পথে কদমফুল নিয়ে আসবে।

অরুনিমা ফুল গুলো হাতে নিয়ে সোফায় বসে পড়ে।
অরুনিমা আজ খুব করে সেজেছে, নীল শাড়ি, নীল চুড়ি আর নীল টিপ, খোপায় বেলীফুলের মালা, আজ ওদের নৌকায় ঘুরতে যাবার পরিকল্পনা ছিল, খাবার নিয়ে গিয়ে নৌকায় বসেই খাবার খাবে।
অরুনিমা বাতাসে তার আঁচল ছড়িয়ে দেবে, শুভংকর সেই আঁচলের নিচে তার মুখ লুকাবে, তখন জোরে বাতাস এসে নৌকায় লাগলে অরুনিমা ভয়ে শুভংকরের বুকে এসে আশ্রয় নেবে।

এমন সময় নার্স এসে বলল, ম্যাডাম..
স্যারের পালস পাওয়া যাচ্ছেনা।
অরুনিমা দৌড়ে এসে শুভংকরের হাত ধরে বসে পরলো, মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরা, মনিটরের দিকে তাকাতেই ইসিজির রেখা গুলোকে শান্ত সমুদ্রের হালকা ঢেউয়ের মত লাগছিল। আর অরুনিমা সেই ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছিল আর মনে মনে বলছিল খুব ভালোবাসি শুভংকর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *