তমসা অরণ্য-এর কবিতা

বাড়ির অন্যতম সমার্থক শব্দের নাম- আম্মা

মায়ের কাছেই
আমি শিখেছি প্রকৃতির প্রথম পাঠ।
জীবনেরও।
যাপন এবং উদযাপনেরও!
পাখিদের কথা, ফুলেদের ব্যথা, প্রকৃতির
তথাগত বুদ্ধ থেকে
দেয়ালে পিঠ ঠেকনেয়াল পাল্টা আক্রমণকারী
হয়ে উঠবার আলাপ ইত্যাদি ইত্যাদিও।
শিখছি অঢেল। শেখাটা পরিভ্রমণ করেছে তাঁর থেকে আমার
নিজ পা অবধি, এমনকী যখন হেঁটেছি ক্রাচেও!
ষড়ঋতুর দেশ আজ ত্রয়ীঋতুর দেশ, তায় আবার
গ্রীষ্মের একাধিপত্য। আম্মা এইটা জানতেন, জানাইছেন
পরেরটাও। বরাবর তিনিই আমার
জীবন রক্ষাকারী ডাক্তার, ওষুধ এবং পথ্য।
খুব সম্ভবত এখানে মরুভূমি হলে কিংবা
যদি তুষারপাত মেলে, সেই তথ্যটাও আম্মাই
জানিয়ে যাবেন; যাচ্ছেন।
এত যে সরস শেকড়, এত যে বিস্তৃত ডাল,
এত যে মজবুত ঢাল- আজ তা হাসপাতালের বেডে
আমার সমস্ত সকালকে কাল এবং কালো
করে দিয়ে পড়ে আছেন।
আজকাল বাড়িকে আমার
হাস্যকর রকমভাবে হাসপাতাল বলে মনে হয়।
আআর নির্জন হাসপাতালকেই বাড়ি ঠাউরে বসে থাকি।
কারণ- এইখানে আমার দম প্রদায়ক প্রকৃতি
আমার আম্মা আছেন।

হে কুকুর, তুমিই আপাত হুর পৃথিবীস্বর্গে

একটা কুশ্রী কুকুর জীবন বয়ে বেড়াবার দায় নিয়ে
সময়ের ঘিয়ে
দম ভেজে তোলে কেউ কেউ।
যদি একবার সোজা হয়ে আসে লেজ!
যদি একবার ফেলতে পারে উদ্ধত কদম!
কিন্তু ফুরিয়ে যাবার আগে
একটি “ঘেউ” মাত্র করে না তারা।
সারাজীবন জুজুর ভয়;
আমৃত্যু অস্থিরতা-
‘এই বুঝি লেগে আছে ফেউ!’
দেখে-শুনে বুঝলাম—
হে নির্বিবাদ কুকুর, তুমিই আপাত হুর পৃথিবীস্বর্গে!

আসুন, ভূগোল বুঝি পেঁয়াজে

পৃথিবীটা গোল;
চ্যাপ্টা কিংবা কমলালেবু।
বাংলাদেশ— আপাতত পেঁয়াজ।
ভাঁজ খুলতে গেলেই
কান্নার রোল।

মানুষমুখার দল ও তার কুকুর স্বভাব

কবিটা কবিতা খোঁজে,
অনেক না হোক, অন্তত একটা।
কবিতাও রোজ করে খোঁজ করে কবির।
কবিদের আবার বিভিন্ন নাম— আবির, দবির অথবা প্রবীর।
মানুষ আর মানুষের ভেতরেও মানুষ খোঁজে না, খোঁজে কুকুর।
আর কুকুরের ভেতরে খুব খোঁজে মানুষ।
কুকুর পুরোপুরি কুকুর, মানুষ পুরোপুরি মানুষ তো?
মানুষের মননে-চেহারায় কুকুর কুকুর দাঁত খেঁকানি, কুকুর কুকুর
লেজ নাড়ানি, কুকুর কুকুর কুতমাড়ানি সকাল-বিকাল-দুপুর।
তবু কুকুরেরা মানুষ নয়, মানুষ বরাবরই কুকুর।
আমরা দুঃস্বপ্ন দেখতেই পারি-
একদিন ‘মানসী আমার’ মতো কুকুরী আমার বলে
সম্বোধিত হবে প্রেয়সী।
‘অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা’র ন্যায়
অর্ধেক কুকুরী তুমি অর্ধেক জলাতঙ্ক?
না, না, এ হবারই নয়।
কবি আর কবিতার পারস্পরিক খোঁজাখুঁজির ভেতর
গালির কুকুর-গলির কুকুর কী করে ঠাঁই করে নিলো?
কে ঠেলে দিলো?
কুকুর কুকুর মুখ করে মানুষের মানব ভাব।
মানুষ মুখ করে এ মানুষেরই কুকুর স্বভাব!
যুগে যুগে অন্তর কুশ্রীময়।
মানুষই কুকুরাধম, কুকুরই তা নয়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *