কবিতা

খান মুহাম্মদ রুমেল─এর কবিতা

স্মৃতির বৃক্ষ

সেই অদিম বটবৃক্ষ ছায়াময়
কেটেছে যেখানে সোনালী সময়
বহু তর্ক বহু রাগ অভিমান
লুকোনো ব্যথা উল্লাস অভিযান
সব জমা আছে যার পায়ের কাছে-
কোনো এক জোছনা রাতে
বসে ছিলাম সেখানে হাত রেখে হাতে।
ধুপ জ্বলা আলোয় দেখেছিলাম–
রূপ তোমার বিলাসী ভাবনাতে!
শিশির সকাল কতো রোদের দুপুর
স্নিগ্ধ বিকেল কতো আয়েশি সন্ধ্যা
রহস্য রজনী কতো কুয়াশা ভোর
কেটেছে এই বটের তলায় বিরামহীন।
তেজী যৌবনের সাহসী সাক্ষী
বৃক্ষটি এই কতোটা মায়ায় ভরা–
কোথাও লেখা নেই সেই ইতিহাস।
জানে কিছুটা গাছের পাতা আর ঘাস।
কেউ হয়েছে বড় অনেক
মাথা তুলেছে ছাড়িয়ে বৃক্ষটি আরো
কেউ এখানেই হয়েছে বিলীন গাঢ়।
সেইখানে আমি বসেছিলাম একবারও
হাতে নিয়ে তোমার হাত তৃষ্ণা আবারও।
এ যে আমার স্মৃতির বৃক্ষ সাহসেরও!
তুমি যে আমার স্মৃতির মানুষ ভালোবাসারও!

আপনি বীর হলে আমিও…

আপনি রেখে গেলেন ধ্বংসের তাণ্ডব চিহ্ন কতো-
সাম্রাজ্য ছড়ানোর ঠুনকো নেশায়
চেঙ্গিস খান!
জয়ের নেশায় ধ্বংস নিশান ওড়ালেন
পৃথিবী দিলো বীরের তকমা!
অথচ কি ট্র্যাজেডি দেখেন
ভালোবেসে একটু বুনো হলো প্রেমিক
রাখলো না হয় চিহ্ন কিছু গোপনে কোথাও–
প্রেমিকার শরীর এবং মনে!
তাতেই সে দস্যু হলো- বীর বলে না কেউ।
হৃদয়ের জয়ের যুদ্ধে মেতে ছুঁলো না হয় দেহ
তাই বলে কি দস্যুতাই বড় হলো-
জয়ের নেশার চেয়েও?
চেঙ্গিস আপনি বীর হলে-
তৈমুর আপনি বীর হলে-
বখতিয়ার আপনি বীর হলে-
প্রেমিক আরো বড় বীর!
আপনারা যুদ্ধ করেছেন জয়ের নেশায়
প্রেমিকের যুদ্ধ একটি গোলাপ ফোঁটানোর জন্য–
অবরুদ্ধ ভালোবাসায়।
আগামী দিনের ইতিহাস লেখা হবে নতুন করে–
পদ্মের অক্ষরে ফুটবে প্রেমিকের নাম!
ইতিহাস সবাইকে প্রাপ্য দেয়
কার্পণ্যহীন জিইয়ে রাখে সব।
দেখে নিয়েন একদিন।

কান পাতো

শাঁ শাঁ ধাবমান এগিয়ে যাওয়া
পেছনে চলে যাচ্ছে ক্রমশ
গাছ টেলিগ্রাফের তার পুকুরের জল-
এমনকি বাড়িঘর দোকানপাট সব
সিনেমার রিলের মতো গতি দ্রুত !
কী আশ্চর্য আচানক দৌড়।
বহু পরিচিত এই দৌড় চেনা-
হাতের তালুর মতো, গোপন জন্মদাগের মতো!
কোথায় হারালো গতি এইবেলা
স্রোতহীন জলে বিরতিহীন আটকে থাকা–
একেকটি সম্ভাবনার করুণ মৃত্যু হয় প্রতিদিন-
খুব নীরবে।
প্রতিবাদহীন কেটে যায় দিন মাস বছর
সম্ভাবনার অকাল মৃত্যুর শোক বয়ে–
একদিন জাগবে সুন্দর।
মৃত্যুর উৎসবই শেষ কথা নয়
বেদনার বেনো জলে ফুটবে ফুল একদিন–
লাল সাদা নীল বেগুনি
সুন্দর আসছে, কান পাতো শ্যামলিমা!

মণিদীপ্ত

শনশন শব্দে মাতাল বাঁশবাগান
দূরে কোথাও ডেকেই যাচ্ছে-
একটা ঘুঘু অবিরাম।
ফসলের মাঠে পিছলে পড়ছে দুপুর
একটা গাভী চড়ছে মাঠে অলস।
কি সমৃদ্ধ কি মণিময় একটা দুপুর।
পথের ধারে বিশ্রামে কিষাণ-
কিষাণ বধূঁর হাতে জলের গেলাস।
দুরন্ত কিশোরদলের প্রানন্ত হট্টগোল-
দূরে কোথাও পুকুরের জলে।
মুখর কলকাকলি দুর্বা মাড়ানো পথে
পাঠশালা ফেরত বালকদলের!
দাওয়ায় অপেক্ষায় মা দুধভাত
টিনের চালে শুকনো বড়ই জিভে জল!
ফিল্মের রিল যেন সরে সরে যায় দূরে।
আহারে জীবন
একটা মণিদীপ্ত জীবন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *