কবিতা।। সৈয়দ নূরুল আলম।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা

ট্রাংকে গচ্ছিত চিঠি

সব ছেড়েছুড়ে ভালই করেছ-
ঠিকানা লেখা খাম, প্রাচীন ডাকটিকিট, সুগন্ধি রুমাল
টিনের ট্রাংকে, আমি ন্যাপথলিন দিই।
কথার পুরনো গন্ধ ভাবায়, মজা দেয়, কষ্টও দেয়।
গচ্ছিত রেখেছি অমৃতকথার মতো।
শেষ কবে চিঠি লিখেছিলে, বাইশ? নাকি তেইশ
বছর আগে! চিঠিগুলো উলটে উলটে, একটা পর একটা
খুলে ফেলি। তীব্রনীল চিঠির শব্দ-কথা, আপনা-আপনি
ছড়িয়ে পড়ে বুকের চাতালে।
চিঠিগুলো পড়তে পড়তে তোমার মুখের আদল
ভেসে ওঠে, যেমন ভেসে ওঠে বিলের স্বচ্ছ জলে
মুখধুতে- মুখোচ্ছবি। এখন এখানে বৈরী বিকেল।
সব ছেড়েছুড়ে ভালই করেছ। এর বেশি ভূমিকা নেই।
বাকি কথা থাক- বুকের আলমারিতে বন্দি।

আয় ঘুম আয়

বিছানায় পাশাপাশি দু’টো বালিশ, নরম-কোমল,অপার্থিব
শিমুলতুলা বা গ্যাস ভরা বালিশ থেকেও আরামদায়ক
জড় নয় জীবন্ত। গোধুলি রঙ, জ্যোৎস্না রঙ, কাঁচা হলুদ রঙ
সব রঙের মিশেল বালিশের পৃষ্ঠদেশ।
একটিতে মাথা রেখে, অন্যটি আঁকড়ে ধরে ঘুমকে খোঁজা,
নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের প্রত্যাশা। কিন্তু ঘুম নেই পোড়া দু’চোখে।

এ-বয়সের মেয়েরা

বিনিপয়সায় কিছু পাওয়া গেলে কি আর করা
চেটেপুটে সবটুকু মাখন খেয়ে নেয় একা-একা
কতরকম ফুর্তি করে আজকাল এ-বয়সের মেয়েরা
জ্বলজ্বল চোখে রড়-বড় অঙ্ক সহজেই দেয় কষে।
লজ্জা জানতে দেয়া তো- আরো বেশি লজ্জা
ভাগ্যিশ ছায়া, আবছায়া, গোপন অন্ধকার।
কু-প্রভাব পথে ঘাটে, পরিবারে, সমাজে
ভুল একই সঙ্গে জ্ঞানের স্বল্পতা হারায় শুদ্ধতা
রুদ্ধ ইচ্ছে মেটাতে বাকি থাকে পাকা কথা।

বহু বছর আগে

বহু বছর আগে অনেক কথা রাখা আছে শাড়ির ভাজে ভাজে
কী দিয়ে কী শুরু করি, ভেতরের সব কথা যায় কি তাকে বলা
ধুলোবালি মাখা, দাঁড়িয়াবাধা, ডেঙগুলি আর গোল্লাছুট খেলা
শিশির ভেজা কচি দুর্বঘাসে নগ্ন পায়ের ছাপ ফেলে রাখা
মায়ের চোখ ফাকি দিয়ে এপাড়া থেকে ওপাড়ায় যাওয়া
পুকুরে মাছ ধরার ছলে বর্শি পেতে অপলক চেয়ে থাকা
এতো বছর পরে যায় কি তাকে এসব কথা অকপটে বলা
সেই যে এক ভরা বর্ষায় ডিঙি নৌকা বেয়ে যায় শহরে চলে
আজ বহু বছর পরে শীতাতপ রেল কামড়ায় মুখোমুখি দুজনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *