মধুবন চক্রবর্তী’র কবিতা

বাদামি লিপস্টিক

সাদা কালো ঠোঁট এক আকাশ চুম্বনের প্রতীক্ষা নিয়ে।
কাঙ্খিত চুম্বন আসতে হয়তো অনেকটাই দেরি করে।
আজ মেঘ করেছে বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা।

চৌম্বকীয় আকর্ষণে ধূসর বৃষ্টির বন্যা তেও
বন্য হতে পারে চুম্বন। ঘোড়ার ক্ষুরের মত
শব্দে সে আসবে। সেই ধ্বনির তীব্রতা যেনো নায়াগ্রা

জলপ্রপাতের জলতরঙ্গ। সূর্য রশ্মির নৈঃশব্দ্য

গতিবেগে আসবে সে। মাটির সোঁদা গন্ধ,

নারীর পুড়ে যাওয়া

অনুরাগ ভেজা দাগ, উদগ্র কাম গন্ধ নিয়ে একরাশ

বাদামি লিপস্টিক জীবনটা তোমার অপেক্ষায়।

আজ বিকেলে বৃষ্টি নামবে মনে হয়। আবহাওয়া দপ্তর

জানিয়েছে সন্ধায় সুনামীর সম্ভাবনা।

নতুনের বীজ

নতুন স্বপ্নগুলো পুরনো বইয়ের মলাটের
ভাঁজে ভাঁজে আঠার মতো চর্যাপদ,
গীতগোবিন্দ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন যেমন
দিগন্ত জোড়া পদাবলী আকাশকে
স্বপ্ন দেখিয়েছিল বৈপ্লবিক বঙ্গভাষার।
পুরাতনী টপ্পার প্রতি ভাঁজে ভাঁজে যেমন
নতুন ধানের পৌষ ঘ্রাণ। বিগত হাজার
বছরের সংস্কৃতিতে নতুন মাঘ উৎসবের
আনন্দের সমাচার। কবিগানের অনুভুতির
শীর্ষে যেমন সুরের শ্রুতিতে প্রস্ফুটিত ছন্দের
নবমাত্রার যুগ। নতুনের সংগীত। কেউ কি
ভেবেছিলেন বব ডিলানের সুরের মায়ার জগৎ
তৈরি হবে কোনো বঙ্গ তরুণের কন্ঠ লালিত্যে।
বাংলার নদী মাঠ ঘাসফুল কি ভেবেছিল চিরন্তন
স্রোত ভাব নদীর মত বয়ে যাবে বাংলার হৃদয়ে
জীবনানন্দীয় অনুভূতিতে। শোষণ নিপীড়ন যন্ত্রণা
বঞ্চনার মাটিকে একদিন মুক্ত-বাংলার দিশা
দেখিয়েছিলেন সেই পুরাতনের আলোর ঐতিহ্য
বহনকারী নতুন বঙ্গের জন্মদাতা বঙ্গবন্ধু।

সীতার পাতালে

ক্রমশ পায়ের তলা থেকে খসে পড়ছে মাটি।
গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ঝড়ে পড়ছে কোন এক গহীন
অন্ধকারে। পাতালের অন্দরে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে।
দলা পাকানো কষ্টগুলো শূন্যে ভাসছে। শূন্যে
ভাসছি আমি পাতাল রাজ্যের ধূসর গহবরে।
ঠিক যেনো অগ্নিপরীক্ষা শেষে সতী সাবিত্রী সীতা।
দুঃখের আগুনে পুড়ে সীতার পাতাল ভ্রমণ।
সে এক অপরূপ অনুভূতি। অনেকবার কল্পনা
করেছি, সেই অনুভুতির সাম্রাজ্যক। অলি গলি
পেরিয়ে হারিয়ে গেছে সীতাকে দেখার সেই
কল্পযান। আজ আবার অনেকদিন পর দেখলাম
মহাকাব্যের এক নারীর হৃদয়ের বিদীর্ণ কুটির।
যখন পায়ের তলা থেকে ঝরা পাতার মতো ঝরছে
মাটি, বালি, ইটের টুকরো সিমেন্ট। পুরনো বাড়ির
দেওয়াল ভেঙে যাওয়ার মতো ভেঙে পড়ছে মনের
অলিন্দ। রূপসী বিকেলটাকে যখন গিলে খাচ্ছে
সূর্যাস্ত। কাঁচ ভেঙে পড়ার থেকেও যখন তীব্র শব্দে
ভাঙছে স্বপ্নের উড়োজাহাজ। ভালোবাসার যুদ্ধে
যখন পরাজিত হচ্ছে প্রথম নারী। পুড়ছে
ভালোবাসার আগুনে ভুল বোঝবুঝি। এক চিলতে
মায়াবী রোমান্টিক আলো যখন মরীচিকা।
চাতকের অপেক্ষায় থেকেও যখন কাঁদছে নিশুতি
রাত। ঠিক তখনই যেনো সীতার মতো আমি
পাতালে প্রবেশ করেছি ভগ্ন রাজপ্রাসাদ নিয়ে।
আজ আমার পরাজয়ের যেনো জয় হয়েছে।
অন্ধকারেও যে এত আলো না ডুবলে পেতাম
কি মহা মানবীকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *