শিহাব শাহরিয়ার এর কবিতা

খোলা কৈশোর

যেন প্রত্নতাত্ত্বিক গ্রাম থেকে খুঁজতে আসে আমার কৈশোর। এ কী শুধুই বেলুনখেলা? আমি কী বায়োস্কপের বাতাসে ভুলে যাবো আমার নৈশবিদ্যা? আমার ডানামেলা শেষ হলে পাখিরা বসত ছেড়ে দেয়। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ হবে এমন প্রচারে ঋতুবতীরা মাঠে নেমে আসে। এই মাঠ আর এই দেয়াল কোনো কোনো বৃষ্টির সুরে মত্ত হয়ে উঠত। আমরা জাদুবিদ্যা শিখতে কখনো জাদুঘরে যাইনি। আমরা কখনো সাদা কাগজে লেপ্টে দেয়নি পর্ণের ঘ্রাণ। ঋতুরা নীরবে এসে থেমে যেতো কোনো কোনো কাজল চোখে।

খোলা হাত

রেখে দিই খসড়া খাতা। খাতায় পড়ে থাকে অভিমানের পাতা। পাতার পাঠে চাঁদ নেই । চাঁদে ভাঙে নক্ষতের হাত। হাত বাড়াতে বেড় যায় রাত। রাতে বাজে সমুদ্র বাঁশি। বাঁশিতে নজরুল নেই। নেই রবীন্দ্রনাথের নাগর নদ। নদে ভাসে হাঁস ভাসে সবুজ বাতাস। বাতাস আসে উত্তরের নওগাঁ থেকে। থেকে থেকে রোদের ঝিলিক লাগে চোখে। চোখ, কার চোখ! চোখ, তোমার চোখে নেশা নেই। নেশার ফাঁদে পড়ে আমি কাঁদি একা। একা এই পথ, এই সিঁড়ি, এই রোদ মেঘে মেঘে চলে যাই নতুন ভিন্ন এক প্রান্তে প্রান্তের। প্রান্তরে কোনো এক সকালে খসড়া খাতা হাতে হেঁটে গেছেন সুধীন্দ্রনাথ দত্ত।

খোলা প্রেম

ওয়েব ক্যামেরায় বাঁকা হয়ে আছে বালকবেলা। কতগুলো তরমুজ পাতা বালির ঘ্রাণ নিচ্ছে। মগের ভিতর চিৎকার করছে কয়েকটি লাল পিঁপড়া। এই সকাল বনেদি সকাল। কেউ যদি ঘুম শেষ করে নাফ নদীর দিকে যেতে চায়, তাহলে সেন্টমার্টিন ঘাম ঝরাবে পর্যটকদের ঘাড়ে। একটি জলপোকার জন্যে মাছেরা হাহাকার করে নদী তীরে। আমাকে কে যেন বৈসয়িক হতে বলেছিল কিন্তু আমি ঝিঝি পোকার হাত ধরে লিপিদের ঘরের বারান্দা ছুঁয়েছিলাম। গল্প পাঠের আনন্দ পড়ে আছে হারিকেনাশ্রিত কাজল দানের পিঠে। চুনিয়া কটেজের পাশে ছুটেছিল আশেক মাহমুদ কলেজের প্রথম বর্ষের ক্লাস।

খোলা ঘর

বালিকাকে সুন্দর করে তুলেছিল তিল, অথচ তিলের রং কালো। কালো কালিজিরা প্রতিদিন সকালের খালিপেটকে তাজা করে। আহমদ ছফাও সারাদিন খালি গায়ে থাকতেন। কালিজিরার মতো ছফারও তেজ ছিল। দুপুরের রোদে যে তেজ থাকে। আমের কচি পাতার মতো তোমার গালের রস আর আমি পাখি পাখি উড়াল নিয়ে রাতের নদী পার হয়েছি। গঞ্জের সুখ একদিন আবেগ তাড়িত হয়েছিল আমাদের হাতে। আমাদের একটি খোলা সিঁড়ি দরকার-আমরা তবে ক্রমশ ছাদের শরীর হবো। জলছাদ বাড়িওয়ালাকে ছায়াসুখ দেয়। আমাদের ছায়াসুখ উড়ে গেছে তেতাল্লিশের খোলা ঘরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *