মুজতাহিদ ফারুকীর কবিতা

কোনও কষ্ট নেই

আমার কোনও কষ্ট নেই, জানো? দামি দামি কষ্টগুলো

ছিপি এঁটে রেখেছি বোতলে, লাল নীল

হামদর্দের খাঁটি পঞ্চতিক্ত ঘৃতের আদলে উঁচু তাকে

ওরা খুব সুখে আছে, দীর্ঘ কালঘুমে, যুগে যুগে লুপ্ত প্রত্ন আলো।

যেখানে সবুজ ক্রমে মেলায় ধূসরে, যেখানে আকাশ

নেমে আসে গুটিয়ে শরীর, সেইখানে ভুসুকুর সুরাহি কিম্ভূত

গোপনে রেখেছি ভরে কষ্টের সোনালি আরকে

সেই থেকে এঁকেবেঁকে যতো নদী ছুঁয়ে গেছে জাদুর আঙুল

যতো গান বয়ে গেছে হেমন্তের কুয়াশা-প্রান্তর, বসন্তের সুবর্ণ ফাল্গুন

নিপুণ সেতারে তার উঠেছে গুঞ্জন, মনের মানুষ ভেবে

লালনের একতারা হয়েছে উন্মন; দয়াল, দয়াল বলে

শিমুল তুলার মতো উড়ে গেছে আবদুল করিমের প্রাণ,

তার সাথে আমারও ক্ষুদ্র দুঃখবীজ দিয়েছে উড়ান

কোনও এক অলৌকিক অরূপ নগরে।

বুক খোলা সফেদ জামায় দেখ কোনও দাগ নাই।

নহবৎ বাজিও শেষ বেলা

আমার নামে কখনও কোথাও কোনও বাজনা বাজেনি

কী করে বাজবে? থাকিনি কখনও কারোও

সামনে পেছনে কিংবা সাতে-পাঁচে।

প্যাচপ্যাচে বৃষ্টির দিন ঘুমিয়ে করেছি পার

ঘেমেছি গ্রীষ্মের রাত কাঠফাটা বোশেখি দুপুরে

ধরতে পারিনি মুঠোভরে তুফানের ঢেউ

চড়তে পারিনি এভারেস্ট, কিলিমাঞ্জারো।

যে হেঁটেছে চিরকাল মিছিলের পিছে তার নামে,

কেন কেউ বাজাবে ট্রাম্ফেট?

বাজারের ভিড় ঠেলে হেঁটে যেতে যেতে হাতে রাখা থলে

হাতে থেকে গেছে, কেনাকাটা ভুলে অবাক দেখেছি

ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে চলেছে ক্লিকক্লক ক্লিকক্লক কাহাঞ্চি টমটম,

মনোরম আচকান পাগড়ি পরে ভেতরে খৎনার নওশা বসে আছে।

অকপটে বলি, তখন লোকগুলোকে মনে হতো বিশ্ব বেহায়া।

সে কথা এখন থাক, পেরিয়েছে অনেক সময়।

আজ কেন মন চায়, একবার আমার নামেও ঢাকে

উঠুক আওয়াজ, কান ঝালাপালা করে কিছুক্ষণ

নাহয় বাজুক তাকাদুম, তুমুল দামামা, ভেরি, কার্টুন ড্রাম।

কেন যে এমন ভাবি জানা নেই, শুধু মনে হয়, হয়তো তাহলে

মনে হবে একদিন, হোক পিছে, মিছিলে তো আমিও ছিলাম!

এখন না হোক, সব বক ফিরে গেলে হাওয়া কাঁপা নীড়ে

যখন শোয়াবে শেষ বেলার গোসলে

আতর লোবান মেখে পরাবে নতুন সাজ সফেদ আনকোরা

তখন তো নওশা আমি, নাকি বলো, ভাই, ভাতিজারা!

জানাজার শেষে অন্তত মিনিট দশেক তোমরা কি বাজাবে নহবৎ

পুরনো নফরত ভুলে, সব প্রথা ভেঙ্গে?

গানটা না হয় রেখো ঠিকঠাক আগের মতই, “মিনহা খালাকনাকুম,

ওয়া ফিহা নুঈদুকুম, ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম, তারাতান উখরা।”

‘অক্ষম পিঁচুটি’ চোখে, মসিভাঙ্গা কবি অতিশয়,

এর চেয়ে ছন্দময় বিদায় সঙ্গীত,

আমার তো সাধ্য নেই লিখে রেখে যাই!

প্রাণের ক্বাসিদা

কবি তরজমা করে হৃদয় চেতনা বোধ দ্বিধা

আমি মেধাহীন, উর্ণাজালে ফেঁসে যাওয়া গঙ্গাফড়িং

ফুলকলিদের বনে ঘোরাঘুরি বৃথা হয়ে গেলে

প্রতিদিন ঘুম ভেঙে ঘাসের ডিভানে

হয়ে যাই মস্ত চংঘুড়ি

আকাশ বিহারে গাই সারগম,

ঘুড়ির ছিলায় কাঁপা বাতাসের সুরে চেনা বোলে

কড়ি ও কোমলে ভাজি আলাপের শুদ্ধ মুসাবিদা

একা উড়ে উড়ে দূর নীলে

চিলের চোখের কোলে রঙ তুলি টেনে লিখে ফেলি

কাঁচা মেহেদীর রঙে আটপৌরে প্রাণের ক্বাসিদা।

ফুটো

দাবার ঘুটিতে আছে হাতি, আছে ঘোড়া কিন্তু গরু নেই

অথচ গরুর রচনা মুখস্থ করতে করতে আমি কখন

ঢুকে পড়েছি জীবনের দাবা বোর্ডে। একটাও চাল দিতে পারিনি কখনও

খেলাটা বুঝে উঠতে উঠতেই বেঁধে দেয়া সময় শেষ।

প্রতিপক্ষ ঠোঁট তেরসা করে উঠে গেলে আমিও

ফেরার বাহানা খুঁজি, তার আগে কোমরে গোঁজা শার্ট

বের করে চারপাশে পালিশ করে নামিয়ে দিই,

প্যান্টের পেছনে ঠিক নিতম্বের ওপর ঢাউস ফুটোটা

ঢেকে রাখার আর কোনও বিকল্প পাচ্ছি না।

#

Description: C:\Users\Mujtahid Billah\Desktop\Faruqui\mujtahid-faruki.jpg

One thought on “মুজতাহিদ ফারুকীর কবিতা

  • ডিসেম্বর ৯, ২০২০ at ৮:৫৪ অপরাহ্ণ
    Permalink

    ভালো লাগলো কবিতাগুলো।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *