শেখ ফিরোজ এর একগুচ্ছ কবিতা

চাওয়া না চাওয়া

প্রতিদিন প্রতি ক্ষণে কত কিছু খন্ডিত হয়;

জল খন্ডিত হয়, বল খন্ডিত হয়, দল খন্ডিত হয়।

একদিন প্রচন্ড বিস্ফোরণে খন্ডিত হয়েছিল পৃথিবী।

শুধু দেশ নয় হয়ে গেল মহাদেশ।

আর এখন অবিরত প্লেট টেকটোনিক।

ভালোই তো বটে।

তবে সূর্যটা খন্ডিত হলে কী হবে জানা নেই।

অঙ্কুরিত বীজ খন্ডিত হলে ঘটে প্রাণের উন্মেষ,

নদী খন্ডিত হলে আসে নতুন প্রবাহ প্রাণ।

সৌরভ লুকানো ফুল কলি খন্ডিত হলেই

বিলাতে পারে ঘ্রাণ।

সূর্যটা খন্ডিত হলে কী হবে জানা নেই ।

তা হোক আমি চাই না।

আর চাইনা বোদ্ধার বুদ্ধি খন্ডিত হোক; 

তাতে নেমে আসে শোক, ভয়ানক শোক! 

পথ দেখাতে সম্মুখে ছুটে ছানী পরা চোখ;

আজকাল তবে আশাবাদ কিসের, চাষাবাদ কিসের?

আগুন পিরান

নির্বাক সময় মরণ পথে চেয়ে থাকে অনিমেষ;

পথে পথ মিশে গেছে গলাগলি ধরে।

আবার নতুন পথের জন্ম প্রতিটি পথ থেকে।

ঝর্ণার মত অবিরত ছুটে অজানায় হারায়

নতুন সংকীর্তনে;

শুধু এক পথ হারায় না কোন কালে-

হেঁটে চলি সেই পথে নির্নিমেষ রাত্রির অন্ধকারে।

এঁদো গলি কিংবা জমকালো শহরের প্রশস্ত রাজপথে।

চেনা অচেনা জনপদে অসংখ্য পোশাকের ভিড়ে

খুঁজে ফিরি সহযাত্রী ;

অবারিত বাতাসে উৎকট গন্ধ ভাসে –

পোড়া গন্ধ। তবুও মানুষেরা হাসে সর্বভূক হয়ে

জমকালো পোশাকে।

আসলে পোশাক নেই। শুধু আগুন আর আগুন!

যে আগুনের দম্ভ নিভাতে ব্যস্ত নিপীড়িতের  নেত্র  ভেজা জল ।

রঙচঙে জৌলুস পোশাকের আড়ালে সবাই পরে আছে অদৃশ্য পিরান;

আগুন পিরান।

আর অদূরে হা করে থাকে মির্মম অপিটাফ!

নিখোঁজ সত্তা

একটা বিভৎস অন্ধকারে সময়কে খুঁজে ফিরি অসময়ে 

খুঁজতে খুঁজতে নিটোল অন্ধকারে ডুবে দেখি আলো। খনিজ আলো। মিটিমিটি জ্বলে;

হৃদয়ের গহীন তলে।    

তাই আর বাড়ি ফেরা হয়নি কোনদিনই।

দীঘির জলে জোৎস্নার বৈধ প্রেম দেখে

স্বত্তার তৃষ্ণা মেটাতে উন্মুখ হলে-

হঠাৎ একা হয়ে যাই। বড় একা!

জল থেকে ভেসে ওঠে কঙ্কাবতীর মুখ।

ভেংচি কেটে বলে ওঠে,`দূর হয়ে যা, পরকীয়ামোদী।‘

অতঃপর, স্বীয় সত্তার কঙ্কাল খুঁজি খনিজ আলোর বিপরীতে। নিরেট অন্ধকারে।

যেখানে ঘুমন্ত ঝিঁঝিপোকা স্বপ্ন দেখে পড়ন্ত বিকেলের শেষ চুম্বন দৃশ্য!

প্রতিদিন শৈশব আসে

এক জীবনে প্রতিদিন শৈশব আসে

সময়ের অণুতে, পরমাণুতে অঙ্কুরিত শৈশব।

নিঃশ্বাসে- প্রশ্বাসে, বিশ্বাসে আশ্বাসে,

হামাগুড়ি দেয়; দাঁড়াবার প্রত্যয়ে হাসে।

এক জীবনে প্রতিদিন শৈশব আসে।

একদিন প্রস্তর ফুঁড়ে আকাশের দিকে দেবে উঁকি

প্রাণপণে প্রবারণার বিস্তর ঝুঁকি।

প্রতিটি অস্থিতে নব জোয়ার আনে

বাঁচতে হলে, হাঁটতে হলে,নাচতে হলে, গাইতে হলে

জোয়ার লাগে। তাও সে জানে।

সূর্য সঙ্গমের জন্য কষ্টের ঠোঙাতে নিশ্চুপ হাসে;

কারণে অকারণে-

এক জীবনে প্রতিদিন শৈশব আসে।

যখন যেখানে থমকে গেছে সময়

সেখানে শুরুর অফুরন্ত আভাস ভাসে;

এক জীবনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য

প্রতিদিন শৈশব আসে।

প্রজন্মের প্রতি

প্রতিটি বসন্ত আসবার আগেই বার্তা পাঠাত আমার কাছে;

ফুল ফুটবার আগেই বসন্তকে আবৃত্তি করতাম বারবার।

একদিন বসন্ত এসে খুব ভোরে ডেকে বলত,এখন সময় তোমার !

তুমি ওঠো। ফুল হয়ে ফোটো, ফুলেদের মত।

অথচ, সেই আমি শুধু ফুলগুলোকেই ফুটতে দেখেছি।

সমীরণ হিল্লোলে অকারণে দুলতে দেখেছি।

আর আমি;পকেট ভর্তি ভুল বুক পকেটে নিয়ে চোখ দু’টো বন্ধ করে বদ্ধ ঘরে উড়িয়েছি নিকোটিনের ফানুস।

আমি এখনও জীবন্ত মানুষ।

এখন মগজ ভর্তি অতীতের চিঠি।

আমি পড়ি আর হাসি। সেই সব পাগলের মত-

যারা অনায়াসে ভুলে যায় পৈত্রিক ঠিকানা।

এখনও বসন্ত আসে; তবে অন্য রকম। আমি তাকে মেঘ বসন্ত বলি। হাসতে ঝরে পড়ে অনায়াসে; আবার ওড়ে, আবার হাসে।

বার বার পরিণত হয় বৃষ্টিতে।  

প্রজন্ম, তোমাদের বলি-ফুল বসন্ত হও।

আমার মত মেঘ বসন্ত নয়।

ফুল হয়ে ফোটো, হও অক্ষয়।

হোক জয়, হোক জয়।

এখন আমার বসন্ত মানে- শুধু তোমাদের জয়। আর, আমাদের উদযাপন উৎসব।

এই তো সব, এই আমাদের সব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *