রুমা পণ্ডিতের কবিতা
রুমা পন্ডিত। বাবার নাম শিশির ব্যানার্জি, মা মুক্তা ব্যানার্জি। ৭ই মার্চ জন্ম দুর্গাপুর শহরেই। পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা সবই এই দুর্গাপুর শহরে। ছোট থেকেই বাংলা সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ। লেখার প্রচেষ্টাও ছোট থেকেই। ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত হচ্ছে। প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই ‘দে উড়ান’। এরপর, আরো দুটি বই, ‘ইচ্ছে শিমুল’ ও ‘সময়ের স্বরলিপি’ প্রকাশিত হয়। কবিতার পাশাপাশি গানও লিখে থাকেন। বেশ কয়েকটি গান মিউজিক এলবামে প্রকাশিত হয়েছে।
নিমগ্ন
বিকেলের শেষ আলোর মতো
মুছে যাচ্ছে বাস্তব উপস্থিতি
মননের গিরিখাত ধরে
পায়ে পায়ে এগিয়ে চলেছে মন,
গভীর, আরো গভীর মগ্নতা
ঘন হচ্ছে মাথার কোষে।
চিন্তার সুক্ষ্ম বুনটে
ঢেকে আছে আধবোজা চোখ,
ভাবনার রঙ ছায়া ফেলেছে অস্তিত্বে।
চিবুক আগলে রাখা হাত
গাল ছুঁয়ে থাকা আঙুলও
ভুলে গেছে নিজেদের পরিচয়।
স্বপ্ন বিলাস
নোনা ধরা দেয়ালে
চাঁদের আলো পড়তেই
গুণগুণ করে ওঠে
থোকা থোকা মাধবীলতা।
ছাদ আর মেঝের ফাটল দিয়ে
গড়িয়ে আসে মায়াবী ঝিলিক।
ঘুণ ধরা জানলার
সস্তা ফুলছাপ পর্দাগুলো
হাওয়ায় দুলে দুলে সুর খোঁজে
দক্ষ বেহালাবাদকের মতো।
স্বপ্নে, কোনো এক জাদুর ছোঁয়ায়
দুয়ে দুয়ে চার হয়ে যায়
সমস্ত কঠিন অংকগুলো।
গন্তব্য
সাগরের পশ্চিম প্রান্তে
একা দাঁড়িয়ে আছে সূর্য,
সারাদিনের ছড়িয়ে থাকা আলোগুলো
নোনা জলে ভিজে
মেঘলা ছোপের নীল চাদর বুনেছে,
পালকে রোদের উষ্ণতা আর ক্লান্তি নিয়ে
পাখিরা ফিরছে
খড়কুটোয় বোনা মায়াটানে।
আর কিছুক্ষণ
তারপর সাগরের পাতালঘরে
বিশ্রামে যাবে সূর্য।
দামিনী
মৃদু হাওয়া আমার খোলা চুলে
কবিতা লিখতে এলে
তাকে ঝড় হওয়ার মন্ত্র শেখাতে পারি,
বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ
আমার আঁচল ছুঁলেই
তাকে বজ্র গম্ভীর মেঘে
ঠিকানা বলে দিতে পারি,
আদুরে মনখারাপগুলো
আমাকে দখল করতে এলেই
তাদের শিমুল ডানা দিতে পারি,
চৌকাঠে রক্ত চোখ শাসন এসে দাঁড়ালে
গন্তব্যকে সরিয়ে দিতে পারি
নিষেধ রেখার ওপারে,
আমার কোমলতায়
আঁচড়ের দাগ পড়লে
ঘন ধূসর মেঘ ছিঁড়ে
আমি তখন দামিনী।
আমি যখন অভিমানী
ঢেকে যাচ্ছি লৌকিকতায়
দু’পায়ে নাগাড়ে বেজে চলেছে
ব্যস্ততার ছন্দ,
রীতিনীতির রঙিন সুতোয় বোনা
রাশভারী জাল
জড়িয়ে রেখেছে স্বভাব সুলভ আবেগে,
নৈতিকতার ছোপ ধরা কাচের আড়ালে
হারিয়ে যাচ্ছে আমার আমি।
একটা চোখ মাঝে মাঝে
সুতো ছেঁড়া অবাধ্য ঘুড়ির মতো
আকাশে দাগ কেটে আসে
আর উদাসী ঠোঁট তখন ছুঁয়ে ফেলে
অভিমানী রোদ্দুর।
সুন্দর
ঢেকে যাচ্ছি লৌকিকতায় —- সব কবিতাগুলোই ভালো লাগলো।
পড়ার মতো কবিতার মায়াবি পংতিমালা