ইকবাল হাসানের পাঁচটি কবিতা

কোনো কোনোদিন

কোনো কোনোদিন কে যেন শরীর থেকে সবটুকু রক্ত শুষে নিয়ে যায়
কোনো কোনোদিন ঘুম থেকে উঠে শুধুই কুয়াশা
কোনো কোনোদিন চোখের দৃষ্টি নিয়ে খেলা করে চতুর লেজার
কোনো কোনোদিন সার্জনের ছুরির নীচে এনেসথেশিয়ার ঘোরে
ঝিমিয়ে শরীর
কোনো কোনোদিন কালো কংত্রিুটে বড়ো মর্মান্তিক দুপুর, বেদনাবিধুর
কোনো কোনোদিন রাগ ভৈরবীর কোলে মাথা রেখে অটিষ্টিক
শিশুর মতো হেসে ওঠে ভোরবেলা
কোনো কোনোদিন বড়ো আকস্মিক, দিনের ভেতর দিন নিজেকে হারায়

কোনো কোনোদিন থেকে একটি অনন্য দিন বড়ো অলৌকিক,
মৃদ্যু হেসে দুয়ারে দাঁড়ায়।

হেমিংওয়ের একুশে জুলাই

কিউবান চুরুটের ধোঁয়ায় যখন সন্ধ্যা নামে সুদূর পশ্চিমে,
মায়াবী ও অপার্থিবের আতিশয্যে প্রকৃতির পায়ে
আজো কি ওঠে না বেজে একজোড়া অচেনা ঘুঙুর…
ঘোরের ভেতর, আজো কি ওঠে না জেগে ঘুর্নীস্রোত…
হেমিংওয়ে জানতেন অন্ধকার সমুদ্রের স্বাদ, ক্যারিবিয়ান বেসিন,
লোনা জল, ভাসমান দ্বীপের কুহক। ফিশিংয়ের অভিজ্ঞতা ছিল
কি-ওয়েষ্টের স্রোতে, বিমিনি ও হাভানায় । সেই কবে চুরুটের পাশে
স্বপ্ন, শব্দ-স্রোত ও জলের গন্ধ অমরত্ব দিয়েছিল তাঁকে। সেই কথা
সমুদ্র রেখেছে মনে, একুশে জুলাই, চুরুটের ধোঁয়া আর জলের নুপুর

আমরা গিয়েছি ভুলে ওক পার্ক, ইলিনয়। অন্তিমে আইডাহোর বিষন্ন দুপুর।

গনিতের উল্টোপথে

সবকিছু ব্যাকরন সম্মত হবে আমাদের
চারদিকে এমন উজ্জ্বল সম্ভাবনা ক্ষীন বলে
উপহাসে বিদ্ধ হয় বিনয়ের নমিত গনিত।
বিফল প্রত্যাশাগুলো অর্জুনের লক্ষ্যভ্রষ্ট তিরে
বিদ্ধ আপেলের ন্যায় ঝরে পড়ে, বস্তুত আমরা
নতজানু ধারাপাত ও মুখস্ত নামতার কাছে

প্রতিটি সূর্যের চারপাশ ঘিরে তারারা রয়েছে।
সে হিসেবে অতি তুচ্ছ আমাদের এই গ্রহখানি
বিশাল পৃথিবী বলে যাকে জানি গনিত নিয়মে
সেও কিন্তু কক্ষচ্যুত নয়, ব্যাকরন সম্মত সূর্য
কেন্দ্রমুলে যথাযথ স্থির রয়েছে। আমরা কিন্তু
গনিতের উল্টোপথে চলাতেই অভ্যস্ত হ’য়েছি।

শীতের গল্প

১.
বরফ সমুদ্রে একটি ফুলের মতো ফুটে আছো দূরে
পৃথিবীর সারাপথ ঘুরে ঘুরে
এই দৃশ্য চোখে পড়ে বহুদিন পর
ইচ্ছে হয় যাই, ছুঁয়ে দেখি, আরো কাছে যাই
এই আশ্চর্য সন্ধ্যায়
ইচ্ছে হয়, তুলে এনে পৃথিবীর খোঁপায় পরাই।

২.
এরচে’ অধিক কী আর আমাকে দেবে
যার স্বাদ এখনো পাইনি। অতি দূরে অন্ধকারে
কৃষ্ণচুড়ার মতো জেগে ওঠে তোমার শরীর
বাইরে শীতের শীৎকার, পাতা ঝরে
ওড়ে চিল দূরের আকাশে
সেখানে রাতের ছায়া, শিশিরের চুমু
আর অববাহিকার লোনা জল…
এই শীতে এতোটা পাবার পর, মনে হয়,
তুমি ছাড়া অন্য কিছু কখনো চাইনি।

৩.
তুমি দিলে গ্রীষ্ণের উত্তাপ এই শীতের ভেতরে
ফ্রজেন ভাবনাগুলো একটু একটু করে
ডানা মেলে উড়তে শিখেছে
ঘুমিয়ে পড়েছে চাঁদ দূরের আকাশে
পাতার মর্মরধ্বনি কথা বলে
অজানা অচেনা ছায়াপথে, অরণ্য গভীরে
তোমার শরীর জুড়ে নির্জনতা
একটি নদীর মতো ধীরে বহে চলে।

পথ

পথ ভুলে থাকে পথের ভেতরে সেই পথ দিয়ে হাটি
ইতিহাস বুকে জেগে থাকে রাত ধুলোয় ধূসর মাটি
যদি কভু সেই ভুলে থাকা পথে হঠাৎ তোমাকে দেখি
তারা ভেবে আমি দু’হাত বাড়াবো কখনো হবে না মেকি

বন ডুবে থাকে বনের ভেতরে ঘন সবুজের মাঝে
গানের কথারা গভীর নিশীথে বৃষ্টির মতো বাজে
রবি ঠাকুরের প্রেমের প্রদীপ হৃদয়ে কুসুম কলি
তোমার যুগল চরনে গোপনে দিয়েছি জলাঞ্জলি

মন থাকে শুধু মনের ভেতরে বাইরে কেবল ছায়া
যাকে দেখি অই দূরের আকাশে ধু-ধু মরিচিকা মায়া
তবু যদি অই মায়ার বাঁধন ছিঁড়ে তুমি কভু আসো
রানীর আসন হৃদয়ে পেতেছি ফের যদি ভালোবাসো

এই ভালোবাসা আকাশ-দেবীর চিরায়ত সেই প্রেম
যে পথের কথা শুরুতে বলেছি সে পথেই হারালেম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *