ফারুক আফিনদীর কবিতা

ছায়া

একবার- পৃথিবীতে এসে

হিজল গাছের নিচে এক পুকুরের

পানির মতো-কিছু ছায়া দেখে গেছি-

এই… কিনারে-

ওই! ছাতিমের ফুল একটা পড়ে গেছে, পুরনো কুয়ার ভেতর, শূন্য-পাতালে

গন্ধ জমে- করুণ হাওয়ার সাথে আসছে তার শৈশবিক আত্মা

একবার, একবার- পৃথিবীতে…

এসেছিলাম কিনা? উঠিনি কি পৃথিবীর এই পাটাতনে- জলের গানের আসরে, বিসিক্ত হাওয়ার তলে? মা হাওয়া- বাবা হাওয়া বয় তীরে তীরে-, আর এক দুরন্ত উলঙ্গ শিশুর মতো- খাওয়াহীন নাওয়াহীন- হাওয়া। এই হাওয়ার মতো কিছু ছায়া দেখে গেছি। লুপ্ত সে ভুবন আজো গায়ে ঘেঁষে থাকে, ছায়ার মতো কিছু ধূসর বাতাস, সুরসুরি দিয়ে পালিয়ে পালিয়ে যায়। সেই ছায়ায় সাঁতরেছি- সোনালি শোলের পোনার ঝাঁকে।

আজ যখন পৌঁছেছি এসে মৃত রোদের রাস্তায়, দেখে গেছি ততা মাটির তাওয়ায় যেন পা, আগুনের ফালতা এসে বিঁধে গায়-। হাতরে, সাঁতরে ওই এক ছবি খুঁজে পাই- ঘরের কোণে, পেছনে ডুমুরের তলে।

পাটের সিঁকায় তোলা দইয়ের পাতিল ছিল ছায়াটুকু বুঝি। সাক্ষী টুনটুনি চড়ুই।

আমি

উঁচু উঁচু বাঁশে

সাদা কাপড়ে মোড়ানো মাথা

ঝোলানো

কয়টি বক বসে আছে! কয়টি উড়েছে!

জিংলায় লাল তেলাকুচা… হৃদয়

কয়টি ঝুলে আছে!

নিঃসঙ্গতার গান শোনাও, আর

দেখাও সেতারের নির্জনতা

ধোঁয়াচ্ছন্ন! নাকি নীলাভ রোদ

দেখাও দেখাও- সে জোছনা-

ফিনফিনে জোছনার কাপড়ের ভেতর

খুলে খুলে দেখি নিজেরে

শাড়ি খুলে লাল ছায়া খুলে-

পাটে পাটে। পটে আঁকা অতিশয় কমনীয় নুড

এই ছবি

দেখি ভোরের সুন্দর একাকীত্ব- একা ঠাণ্ডা নদী-নেমে পড়ি- সেও ফিনফিনে নীল-

দেখি, দেখি! তার ভেতরে ডুবে দেখে সে-

অনেক দূরে এক ছায়া ছায়া আরো ছায়া

গোল হয়ে ঘুরছে শুধু

তাদের হাতে হাত চোখে চোখ মাংসের ওপর মাংসের ভার। মাথার ওপরে মাথা ঘুমিয়ে আছে সাদা স্বপ্নের বরফে- পড়ে থাকা পাখি, সাদা সাদা পালক-

কবে যে আসবে কাছে, এ ভিনদেশে

কবে আসব আমি? কবে এসেছি!

আমি আমি। আর কে? নিজেতে নিজে মগ্ন যে, আমাতেই ভোরের অভিভূত একাকীত্বের মতো।

এভাবে দুপুরের ব্যতিব্যস্ত স্বর একবার, একদিন-

ক্রমশ বিকেল- সন্ধ্যার ঘুমিয়ে থাকা ঝাড়

ধোয়া কাপড়ে ফোটা ফোটা জমেছে যে চুইয়ে পড়া রস- রক্ত- হৃদয়

বেশি কিছু নয়

এইটুকুই দিয়েছ মন

চিনিনি তোমারে- কোথায় বাড়ি, কিভাবে ফুটলে বনে, বাগানে-

হামুখ ছানার মতো বেরিয়ে রয়েছে শুধু কালো কালো চোখ

লাল সর

পশ্চিমে, বাতাসে ওড়ে… মওলানার মাথার রুমাল

রঙে রঙে সূর্যের সাথে মাখামাখি

মওলানা মেঘ আঁকে

মাথার ওপর

রোদ-ছায়া রোদ-ছায়া

রৌদ্র-ছায়ায়

ভাসতেছে…

কী  চিকচিক!

দুধের সর

নিচে

হা করে আছে উনুন

২.

গাঙিনার পাড়ে

কাইসের ডাটা কাটছিল

শরফুল

রৌদ্র-ছায়ার সর, সাদা কাশ ফুল- এর চেয়ে

চুলায় অগ্নির সৌন্দর্য বেশ

দাউ দাউ…

আনন্দ, আগুন সুন্দর

জ্বলে…

গাঢ় দুধের লাল সর

শিষহীন একটা পাখি

দুজন কী তিন জন

ভাগ করে নেয়

সরোয়ার্দীর ঘাস

পত্র পল্লব

একজন

বিবর্ণ ডালের দিকে চেয়ে

অবসন্ন পায়ে হেঁটে যায়

মর্মর করে ওঠে শুকনো ঝরাপাতা

একটা পাখি এ ডাল ও ডাল করছে

শিষহীন

আষাঢ়ের জল

ডুবেছে ঘাট, বাগান

পিঁপড়েরা উঠেছে গাছে

কিছু পিঁপড়ের জাঙ্গাল ভাসে

এ গাছ থেকে ও গাছে।

গহীনে ঠাণ্ডা ঘন ছায়া, ছমছম-

আর দুপুর গড়ালে নিরিবিলি ¯স্নানে…

লাল অন্তর্বাস ঝুলে আছে ডালে, নির্জনে পিঁপড়া হাঁটে

জল খসেছে আষাঢ়ের বানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *