করোনাকালে শেষে কবিরা কি বেঁচে থাকবেন! ফারুক আহমেদ

আমাদের কোন রাজ কবি নাই। বোধহয় রাজা নাই বলে রাজ কবিও নাই। ব্রিটেনে রাজা আছেন, রাজকবিও আছেন। আমাদের এখানে মূখ্য সচিব আছেন, প্রধান বিচারপতি আছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য আছেন, কিন্তু প্রধান কবি বলে কিছু নাই। না থাকাই ভালো। ভালো এই অর্থে যে, তখন কবিতার থেকে গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠতে পারে কবিপ্রধান। আমার কথা ওটা না। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এই সময়ের অর্থনীতি সবচেয়ে বেগবান। গণনার অধিক মেগাপ্রজেক্ট পরিচালনা করছে সরকার। আমরা স্বপ্ন দেখছি সিঙ্গাপুর-মালেশিয়ার মতো হয়ে ওঠা দেশের। কিন্তু সিঙ্গাপুর-মালেশিয়া যে স্বপ্নটা দেখতে পারে বাংলাদেশের মতো হওয়ার, সেটা হলো আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি। বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যে এ জন্য গুরুত্পূর্ণ যে, এ ভাষার পুরুষ রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল বা অপরাপর এমন সৃজনশীল মানুষগণ। করোনাকাল আমাদের এমন এক সময়ের ভেতর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যে, সবচেয়ে বিপদে আছে প্রান্তিক আয়ের মানুষ। একইসঙ্গে সৃজনশীল মানুষও। কেননা, যে মানুষটি কবিতা লিখবে বলে এ শহরে এসেছিল, যে মানুষটি গল্প লিখবে বলে বা ছবি আঁকবে বলে এসেছিল। তাঁর ধ্যানজ্ঞান তো অর্থ উপার্জন ছিল না, ছিল একটা জাতির ভাবনা এবং স্বপ্নের জগৎ তৈরি করা। এমন একটা পথের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে ভয়াবহ এক কালের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ফলে সে মানুষগুলো আরো বেশি বিহ্বল হয়ে পড়লো। এ বিহ্বলতা সময়ের ঘাত এবং একইসঙ্গে খেয়ে বেঁচে থাকারও। এই অবস্থাই, এ অবস্থা কেন, আরো আগে থেকেই বাংলা একাডেমি বা শিল্পকলা একাডেমি বা সরকার কিছু মানুষের দিনযাপনের দায়িত্বটুকু তো নিতেই পারে। আমলা, ব্যাংকার, বিচারক এমনসব পেশাজীবী দৃশ্যমান কাজের বিনিময়ে, নিয়মমেনে কাজের বিনিময়ে স্বচ্ছল জীবন-যাপন তো করছে। কিন্তু যাঁরা মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর কাজটা করে, মানুষের কোমলবৃত্তিগুলোকে জিইয়ে রাখার জন্য পানি ঢেলে যাচ্ছে জীবনভর, সেসব মানুষকেও তো রাষ্ট্রের দেখা উচিত। বাংলা একাডেমি নানা প্রজেক্ট-গবেষণার জন্য অর্থ ব্যয় করে, তেমন ১০০ জন কবি-সৃজনশীল মানুষকে মাসের খরচটুকু তো তাঁর অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিতে পারে। তার জন্য মাসে ১/২ কোটি টাকার বেশি তো যাবে না। বছরেও এ অংক দেশের অর্থনিতির তুলনায় খুবই নগন্য। বাংলাদেশের প্রাক্তণ মূখ্যসচিব কামাল চৌধুরী ভাই (বর্তমানেও মুখ্যসচিত মর্যাদাপ্রাপ্ত), যিনি এ সময়ের গুরুত্বপুর্ণ একজন কবি, আছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ভাই। আছেন সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কবি-লেখক। আশা করব এই দুর্যোগের দিনে সৃজনশীল মানুষ, যাদের অন্য আর কোন পেশা নাই, তাঁদের জন্য একটা বিশেষ উদ্যোগ নিতে। নিশ্চুয় এ সরকার সৃজনশীল মানুষদের পাশে থাকবেন, তাঁদের কর্মে পাশে থাকবেন, একইসঙ্গে মেরুদণ্ডেও হাত দিবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *