উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।।এহসান মাহমুদ।।প্রথম পর্ব
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।।এহসান মাহমুদ।।প্রথম পর্ব
- উপন্যাস ।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব দুই
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব তিন
- উপন্যা।।কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব চার
- উপন্যাস।।কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব পাঁচ
- উপন্যাস।।কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ ।। পর্ব ছয়
- উপন্যাস।।কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব সাত
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব আট
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব নয়
- উপন্যাস।। কোকিল অসময়ে ডাকিয়াছিল।। এহসান মাহমুদ।। পর্ব দশ
১
নিউজ এডিটরের রুম থেকে বের হতেই আবার এডিটরের রুমে তলব। বিশাল টেবিলের ওপাশ থেকে একগাদা পেপার আমার সামনে তুলে ধরে বললেন, সব কাগজের ফলোআপ আর আমাদের ফলোআপ দেখছেন? পার্থক্যটা তো চোখে পড়ার মতো। সামনের সোফায় বসতে বসতে কাগজে চোখ রাখি। এক সপ্তাহ আগে ক্ষমতাসীন দলের এক মাঝারি নেতা খুন হয়েছেন। মধ্যরাতে একটি ক্লাব থেকে বের হওয়ার সময় গুলি করে খুন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। আর পুলিশও তদন্তে তেমন সুবিধা করতে পারছে না। নিহত নেতার স্ত্রী বলছেন, পার্টির মধ্যেই কেউ তাকে খুন করেছেন। পদ-পদবি নিয়ে যাদের সাথে বিরোধ ছিল, তাদেরই কেউ খুন করিয়েছে। আবার দলের নেতারা বলছেন, একটি জায়গা দখল নিয়ে কোনো এক ব্যবসায়ী গ্রুপের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন। এর বাইরে আর তেমন কোনো ক্লু পাওয়া যায় না।
তবে আজকের বেশ কয়েকটি পত্রিকা নিউজ করেছে এই খুনের পেছনে রয়েছে পরকীয়া সম্পর্ক। নিহত নেতা ঝুঁকে পড়েছিলেন দলের আরেক নেতার স্ত্রীর দিকে। সেই ঝুঁকে পড়াটাই কাল হয়েছে নেতার। সামনে থাকা পেপার ওলটপালট করতেই একটিতে দেখা গেল এক নারীর ছবিও ছাপা হয়েছে নেতার সাথে। কোনো এক হোটেল থেকে একসাথে বের হয়ে আসছেন নিহত নেতা ও এক নারী। তবে নারীর মুখ পরিষ্কার না বোঝা গেলেও বলা হচ্ছে এই নারীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরেই প্রাণ গেল নেতার। এডিটরের মেজাজ চড়ার কারণটা এতক্ষণে বুঝতে পারলাম। আমাদের কাগজে যে নিউজ ছাপা হয়েছে তা পুলিশের বক্তব্য ছাড়া আর কিছু নয়।
আমার আর কী করার আছে! দুদিন ছুটি কাটিয়ে আজই অফিসে এসেছি। এসেই এমন একটা ইস্যুর মধ্যে পড়ে গেলাম। এখন আজ খোঁজখবর নিয়ে স্পেশাল কিছু একটা করা যায় কি-না তা দেখতে হবে। দৈনিক পত্রিকার এই এক যন্ত্রণা! প্রতিদিন স্পেশাল আইটেম জোগাড় করতে হবে। স্পেশাল আইটেম কি গাছে ধরে! চাইলাম আর ঝাঁকি দিয়ে নামিয়ে দিলাম। কীভাবে আজকের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় সেই চিন্তা করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হতো একটা সিগারেট ধরাতে পারলে। সিগারেটে টান দিতে দিতে নিশ্চয়ই একটা আইডিয়া নাজিল হয়ে যাবে। সিগারেট ধরিয়ে আইডিয়া খোঁজার বিষয়টা শিখেছিলাম রোমেল ভাইয়ের কাছ থেকে। রোমেল আশরাফ, আমরা যখন পত্রিকার লাইনে কেবল ঢুকেছি তখন রোমেল ভাই নিউজ এডিটর। টেবিলের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে মুহূর্তেই দুই আঙুল দিয়ে একটি কাঠি বের করে নিতেন। তারপরে চোখ বন্ধ করে প্রথম টানটা দিতেন। এভাবে পরপর দুবার কি তিনবার টান দেওয়ার পরেই সামনে যারা থাকতেন তাদের দিকে তাকাতেন। তখন তার চোখ জোড়া চশমার বাইরে থেকেও জ¦লজ¦ল করতে দেখা যেত। মুহূর্তেই বলে উঠতেন- পেয়ে গেছি!
এভাবে কত কত নিউজ আইডিয়া যে তার মাথা থেকে নামতে দেখেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্মনিরোধক কনডম বিতরণের টাকা আত্মসাতের আলোচিত নিউজ, শিশুখাদ্যে মেলামাইনের উপস্থিতি, এক পুলিশ সুপারের স্ত্রীর ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকারের খবর এইভাবে হয়ে যেতে দেখেছি। কিন্তু আজকের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।
এমন সময়ে পকেটে থাকা মোবাইল বেজে উঠল। পকেট থেকে বের করে সামনে ধরতেই দেখা গেল- মারিয়া কলিং। মারিয়া এতদিন পরে কল করেছে! কী বলতে চায়? কতদিন কথা হয় না। এই ভর সন্ধ্যায় আমাকে কল করেছে কেন? মোবাইলের দিকে তাকিয়েই টের পাই এডিটর আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখ মেলে তার দিকে তাকাই। চশমার ওপর দিয়ে সত্যি সত্যি আমাকে দেখছেন। আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। বললাম, একটা জরুরি কল। বলেই দ্রুত রুমের বাইরে এলাম। ততক্ষণে মোবাইলের বিপ টোন থেমে এসেছে। এখন আমার কী করা উচিত? কল ব্যাক করব? নাকি অপেক্ষা করব? আমাকে ভাবার জন্য খুব বেশি সময় দিল না মারিয়া। আবার মোবাইল বেজে উঠল। আঙুল টেনে স্ক্রিনের সবুজ জায়গায় রাখতেই মারিয়ার কণ্ঠ ভেসে এলো :
‘রাতুল কই তুমি? আমি মারিয়া।’ মারিয়ার গলা সেই আগেকার দিনের মতো শোনা গেল।
‘বুঝতে পেরেছি মারিয়া। বলো। আমি তো অফিসে।’ আমিও সহজ হওয়ার চেষ্টা করলাম।
‘তুমি কি ব্যস্ত? তোমার অফিস থেকে বের হতে কি দেরি হবে? জরুরি কথা বলা দরকার।’ মারিয়া একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন করে। এতক্ষণে আমি খেয়াল করলাম মারিয়ার কথায় কেমন আতঙ্ক ও অস্থিরতা।
‘না ব্যস্ততা নেই। তুমি বলো।’ আগেকার দিনের মতো অবলীলায় মিথ্যা বলে দিলাম। বলতে পারলাম না, অফিসে মহা চাপে আছি। কতদিন পরে মারিয়া কল করেছে। আমার সাথে কথা বলছে। ও নিজে থেকে কল করেছে। ব্যস্ততার কথা শুনলে যদি ফোন রেখে দেয়! তাই আস্তে করে আবারও বলি :
‘না। তেমন ব্যস্ততা নেই। তুমি বলো।’
‘শোনো, আমি এয়ারপোর্টে। তোমার সাথে দেখা করতে হবে। তুমি কি আমাকে একটু সময় দিতে পারবে?’ কত দিন কত মাস কত বছর পরে মারিয়া আমার নাম ধরে ডেকেছে। মারিয়া আমার কাছে সময় চেয়েছে। আমি ব্যস্ত কি-না জানতে চেয়েছে। কী বলব আমি? আমার মনের অবস্থা তো মারিয়াকে বলতে পারব না। তারচেয়ে বরং চুপ করে থাকি। আমার কোনো প্রতিউত্তর না পেয়ে মারিয়া আবার বলে :
‘আমি এয়ারপোর্ট থেকে বের হব এখন। কক্সবাজার থেকে ফিরলাম। রাতে একটা থাকার জায়গা খুঁজতে হবে। কারও বাসায় থাকতে পারব না। আচ্ছা, ঢাকায় মেয়েরা হোটেলে একা একা রুম ভাড়া চাইলে সমস্যা নেই তো, না?’
‘না। কীসের সমস্যা?’ আমি মারিয়ার পুরো কথার জবাব দিতে পারি না। অল্প করে বলি।
‘আচ্ছা শোনো, আমি আসছি। এয়ারপোর্ট থেকে কীসে আসব? উবার নেব নাকি সিএনজি নিয়েই রওনা দেব?’
‘উবার নিতে পারো। আরামে আসা যাবে।’
‘আর আরাম! কী আছে কপালে!’ মারিয়ার গলায় নিরুত্তাপ আওয়াজ।
আমি কিছুই বলি না। মারিয়া আবারও বলে :
‘আমি সরাসরি পান্থপথে আসব। স্কয়ার হসপিটালে একটু যেতে হবে।’
‘কেন ওখানে কেন! কেউ কি ভর্তি আছেন?’ আমি জানতে চাই।
‘না। কে আর ভর্তি থাকবে! নিজের জন্যই।’
‘কী হয়েছে তোমার?’
‘জানি না এখনো। জানি না বলেই এসেছি। আগে আসি। পরে বিস্তারিত বলা যাবে, যদি বলার মতো কিছু থাকে আর তোমার আগ্রহ থাকে।’ কথা শেষে মারিয়া অল্প করে হাসল। মারিয়ার এই হাসিটা আমার চেনা। কথার মধ্যে যখন একটা রহস্য রেখে কথা শেষ করে তখন মারিয়ার চোখটা নেচে ওঠে। কপালের ডানপাশের চুলগুলো দুলে ওঠে। তাই এখন যখন এভাবে কথা শেষ করল আমি সেই আগেকার দিনের হাসিটুকু দেখতে পেলাম।
আমার কোনো জবাব না পেয়ে মারিয়া আবার বলল :
‘স্কয়ার হসপিটালে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট রাখা আছে। আজ রাত আটটায় দেখাতে হবে। আমি এখান থেকে সরাসরি হসপিটালেই আসছি। তুমি তোমার কাজ শেষ করে ওখানে যেয়ো।’
‘কী হয়েছে তোমার? কোন ডাক্তারকে দেখাবে?’
‘এখন এত কথা বলতে পারব না। তুমি ওখানে এসো। তখন সব জানতে পারবে। এখন রাখি।’ বলেই মারিয়া রেখে দিল। আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না। মারিয়া দেখছি আগের মতোই রয়ে গেছে। কান থেকে মোবাইল নামিয়ে আবার পকেটে রাখি। কথা বলতে বলতে কখন যে রিসিপশনে চলে এসেছি টের পাইনি। এখন দেখি নিউজ রুমের সামনে জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সবাই। নিউজ এডিটর, ডেস্কের মামুন ভাই, রাসেল ও নোমান। সামনে এগিয়ে যেতেই নিউজ এডিটর বললেন :
‘কোনো সমস্যা? কে হাসপাতালে? জরুরি কিছু হলে তুমি যাও, আমরা দেখে নেব।’ তার কথা শেষ হলে বুঝতে পারলাম মোবাইলে কথা বলার সময়ে হাসপাতাল বিষয়ক আলাপ তিনি হয়তো শুনে থাকবেন। নিউজ এডিটরের দিকে তাকিয়ে কিছু বললাম না। নিজের ডেস্কে এসে বসি। হাত ঘড়িতে চোখ রাখি। পাঁচটা চল্লিশ। দুই ঘণ্টা কুড়ি মিনিট সময় আছে এখনো। হাতের কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। পিসি অন করে মেইল চেক করি। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের অ্যাডিশনাল এসপিকে কিছু নিউজের লিংক ও ছবি পাঠাই।
এমন সময় অফিসের ফ্রন্টডেস্ক থেকে ফোন : আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছেন। খুবই বিরক্ত হই। একে তো হাতে অনেক কাজ, তার ওপর হসপিটালে যেতে হবে।
বিরক্তি গোপন করে বলি, ‘একটু বসতে বলেন, আসছি পাঁচ মিনিট পর।’
ইন্টারকমের ফোন রেখেই সামনের মনিটরে চোখ রাখি। ‘গাইবান্ধায় স্ত্রীর পরকীয়ার বলি প্রবাসী’- শিরোনামে নিউজ করেছে একটি অনলাইন। অনলাইনের নিউজগুলোর শিরোনামে এমন সব থাকে, লোকজন ক্লিক করবেই। নিউজটিতে প্রবেশ করি।
রীতিমতো ভয়াবহ খবর। এক সৌদি প্রবাসীকে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যা করেছে তার স্ত্রী। পরে লাশ গোপন করার কাজে সহায়তা করেছে স্ত্রীর প্রেমিক। বিদেশ থেকে পরিবারের সবার জন্য বড় লাগেজ ভরে জিনিসপত্র এনেছিলেন। সেই লাগেজের মধ্যেই তার মৃতদেহ রাখা হয়েছে। শেষ রক্ষা অবশ্য হয়নি। লাশ বাসা থেকে বের করতে গিয়েই ধরা পড়েছে বাড়ির অন্য লোকের কাছে। ওই নারীর সবশেষ ঠিকানা এখন গাইবান্ধা জেলা কারাগার। অপরদিকে প্রেমিক পুরুষ পালিয়েছে। তাকে খুঁজতে পুলিশের অভিযান চলছে। খুবই কমন নিউজ আইটেম। কিন্তু বেচারা প্রবাসীর জন্য মনটা খারাপ হলো। বিদেশ থেকে নিজের কিনে আনা লাগেজেই তার শেষ ঠিকানা হলো। এদিকে সময় তো আর বসে থাকবে না। হাতে থাকা নেতা হত্যার রহস্যের কোনো কূলকিনারা করতে পারছি না। পুলিশের কাছ থেকেও কোনো ক্লু পাচ্ছি না। নিজের কাজে মনোযোগ দেওয়ার আগেই রিসিপশনে একজন অপেক্ষা করছেন তা মনে পড়ল। ডেস্কের একপাশে রাখা অ্যাবসুলেট ভদকার বোতল থেকে ঢকঢক করে কয়েক চুমুক পানি গলায় ঢেলে নিলাম। প্লাস্টিকের বোতলে পানি না রাখার পরামর্শ পেয়েছিলাম বছর দুয়েক আগে। সেই থেকে কাচের বোতলে পানি রাখি। গত দুই বছরে তিনটা পানির বোতল ভেঙেছে। তাই এবার এই ভদকার বোতল। বেশ শক্তপোক্ত আছে।
রিসিপশনে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখে পড়ল একটি মেয়ে বসে আছে। একেবারে দেয়াল ঘেঁষে শেষ সোফাটিতে। মেয়ে না বলে নারী বলাটাই ভালো। বয়স ত্রিশের বেশিও হতে পারে আবার কমও হতে পারে। আগে কখনো দেখা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। সামনে গিয়ে পরিচয় দিতেই দাঁড়িয়ে গেলেন। তাকে বসতে ইশারা করে একটু দূরত্ব রেখে আমিও বসলাম। নিজের পরিচয় জানিয়ে সংক্ষেপে তিনি যা বললেন, তা হচ্ছে- কয়েকদিন আগে ক্ষমতাসীন দলের যে নেতা খুন হয়েছেন, সেই নেতার অফিসের কর্মী তিনি। নেতা খুন হওয়ার পর থেকে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নেতাকে কারা খুন করেছেন তা তিনি জানেন। সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থেকে এ ধরনের অভিজ্ঞতা একেবারেই যে নতুন তা নয়। এর আগেও একবার বড় এক অফিসের লকার চুরির ঘটনার নিউজ করতে গিয়ে এমন অনাকাক্সিক্ষত সাহায্য পেয়েছিলাম।
এইবার আমার কথা একটু বলি। বয়স ত্রিশ পার হয়েছে। এখনো একা। একসময়ে বিয়ের ভাবনা ছিল। সেটা বছর পাঁচেক আগে বিদায় হয়েছে। এখন আর কোনো পরিকল্পনা নেই। বাড়ি থেকে চাপ আসে মাঝেমাঝে। বাবা বলেন বিয়ের জন্য। মা নেই। বাবা বছর খানেক আগে রিটায়ার করেছেন স্কুল শিক্ষকতা থেকে। বাড়িতে ছোট বোন ও বাবা থাকেন। ঢাকায় আমি একাই থাকি। সপ্তাহে ছয়দিন অফিস করি। বাসায় মাঝেমাঝে বন্ধুরা আসে। বন্ধুদের স্ত্রী-সন্তান আসে। সবাই হইচই করে রান্না করে খাওয়া-দাওয়া চলে মাঝরাত পর্যন্ত। একধরনের পিকনিকের মতো চলে যাচ্ছে জীবন। সাংবাদিকতা করছি বছর সাত-আট হবে। সেই ভার্সিটি থেকে অনার্স রেজাল্ট বের হওয়ার পরেই এই পথে যাত্রা শুরু। চাকরি জীবনে এরই মধ্যে দুইবার হাউজ বদলেছি। সাংবাদিক হিসেবে একটু নামডাক হয়েছে। আজকাল অনলাইন আর টিভি সাংবাদিকতার যুগে পত্রিকার সাংবাদিকদের মানুষ সেভাবে চেনে না। তবে আমাদের মুখ দেখে না চিনলেও নামটা মানুষের ঠিকই মনে থাকে। এরইমাঝে সাংবাদিকতার জন্য তিনবার পুরস্কার পেয়েছি। তাই অল্পবিস্তর সুনামও আছে। এখন মাঝেমাঝেই এমনসব লোকজন অফিসে দেখা করতে আসেন যারা মনে করেন তাদের এই সমস্যা নিয়ে একটা নিউজ হওয়া দরকার। আজকের এই নারীকে দেখে প্রথমে তাই ভেবেছিলাম। এখন নিহত নেতার অফিসের কর্মী হিসেবে কিছুটা বাড়তি গুরুত্ব অবশ্যই তার পাওনা। তাকে বললাম, চলেন আপনাকে নিয়ে কফি খেয়ে আসি। প্রথমে দ্বিধা থাকলেও পরে আমাকে অনুসরণ করলেন। রিসিপশনে বলে বেরিয়ে এলাম অফিসের বাইরে। আবার ভেতরে গিয়ে চেয়ার থেকে ল্যাপটপের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে নিলাম। রোমেল ভাই বলতেন, কৃষকের শক্তি হালের গরু। আর রিপোর্টারের শক্তি হলো তার লেখার কলম। আজকাল আমরা যেহেতু কাগজ কলমে আর লিখি না, তাই ল্যাপটপই ভরসা।
লিফটের কাছে এসে দেখলাম তিনি কেমন জড়োসড়ো হয়ে আছেন। তাকে অভয় দিয়ে বললাম, ‘আপনার তো ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আপনি যা বললেন তাতে মনে হয়েছে আপনি অযথা ভয় পাচ্ছেন।’
জবাবে তিনি আমার দিকে একবার চোখ তুলে দেখলেন। কিছু বললেন না। অফিসের ঠিক সামনেই একটি ছোট কফি হাউজ। সেখানেই নিরিবিলি দেখে একটি টেবিলে বসলাম। দুটো ডার্ক চকোলেট আর লাতে কফি অর্ডার দিলাম। এখানকার কফির সাথে আজকাল বিস্কুট দেয় ফ্রিতে। এটা ভালো লাগে। চকোলেট এবং পানির বোতল এলো প্রথমে। লম্বা কাচের গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে তার সাথে কথা শুরু করলাম। তাকে এখন বেশ কিছুটা সহজ মনে হচ্ছে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে একবার সময় দেখে নিলাম। সময় দেখার বাহানায় মোবাইলের রেকর্ডার অন করে পানির গ্লাসের পাশেই রাখলাম। আমি চাই তার সব কথা রেকর্ড করতে। এটুকু তাকে বলা যাবে না। বুঝতেও দেওয়া যাবে না। অনেক সময় দেখেছি, কারও সাক্ষাৎকার নিতে গেলে রেকর্ডার অন করলে তারা আর আগের মতো সহজভাবে কথা বলতে পারেন না। অথচ তিনিও জানেন যে, তার কথা আমি সাক্ষাৎকারের সুবিধার্থে রেকর্ড করেই নেব। ক্যামেরার সামনে যেভাবে লোকজন কথা বলতে কিছুটা নার্ভাস ফিল করে, ঠিক একইরকম রেকর্ডারের সামনেও।
নতুন বা অপরিচিত কারও সাথে কথা বলার সময় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো পক্ষই কথা খুঁজে পায় না। এইসব ক্ষেত্রে কিছু একটা খেতে খেতে কথা বললে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়ানো যায়। যখন কথা বলার কিছু থাকে না কিংবা নতুন কথা ভাবা দরকার তখন মুখে খাবার দেওয়ার অছিলায় খানিক সময় পাওয়া যায়।
আমিই প্রথমে কথা শুরু করি।
‘আপনি কতদিন যাবৎ ওই অফিসে কাজ করেন?’
‘চার বছর।’
‘ঢাকায় আর কে কে থাকে?’
‘জি?’ তার চোখে প্রশ্ন।
‘পরিবারের সাথেই থাকেন, নাকি একা?’
‘আগে বড় বোনের বাসায় থাকতাম। বছরখানেক হলো নিজেই আলাদা বাসা নিয়েছি।’
‘বোনের বাসা ছেড়ে একা বাসায় উঠলেন কেন?’
এই কথার জবাব না দিয়ে এইবার তিনি সামনের পানির গ্লাসে হাত রাখলেন। ছোট্ট এক চুমুক দিলেন। মুখের মধ্যে পানি প্রবেশ করল কি-না ঠিক বোঝা গেল না। তবে তার গলার ওঠানামা দেখে কিছুটা অনুমান করা গেল। হাত থেকে গ্লাস রেখে প্রথমে তিনি কাঁধের ওড়নাটা একবার ঠিক করলেন। তারপরে আস্তে করে কথা শুরু করলেন।
‘আপার বাসায় ঝামেলা হচ্ছিল।’
আলোচনায় নতুন সম্ভাবনা দেখে আমি সামনে ঝুঁকে নড়েচড়ে বসি।
‘আপনার নিজের বোন না? সেখানে কী সমস্যা ছিল?’
প্রথমে একটু ইতস্তত ভাব ফুটে উঠল তার চোখেমুখে। অল্পসময়েই গুছিয়ে নিয়ে বললেন, ‘আসলে আমার আপাও একটা জব করেন। দুলাভাইও জব করেন। আপার অফিস থেকে ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়। আর দুলাভাইয়ের সরকারি ব্যাংকের চাকরি। বিকেলের মধ্যেই বাসায় ফিরতেন। আমিও বাসায় ফিরতাম সন্ধ্যার মধ্যেই। তখন বাসায় আমি আর দুলাভাই থাকতাম। দুলাভাই প্রথম প্রথম কেমন চোখে তাকিয়ে থাকতেন। কিছু বলতেন না।’
‘তাকিয়ে থাকলে সমস্যা কী? একই বাসায় থাকেন, তাকাতেই পারে।’
‘এটা আপনি বুঝবেন না। এটা কেবল মেয়েরাই বুঝবে। কোনো পুরুষ মানুষ মেয়েদের দিকে কোন চোখে তাকায় তা দেখেই বোঝার ক্ষমতা কেবল মেয়েদেরই আছে।’ মেয়েটি বেশ শক্তভাবে কথা শেষ করে।
আমি আবার সোজা হয়ে বসি। ‘তারপর বলুন’ বলে তার দিকে তাকাই।
‘সন্ধ্যায় আমি অফিস থেকে বাসায় ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে চা বানাতাম। কোনোদিন নুডুলস করতাম। অথবা কিচেনে থাকা প্লাস্টিকের কৌটা থেকে টোস্ট বিস্কুট বের করে ড্রয়িং রুমে দুলাভাইয়ের কাছে নিয়ে বসতাম। দুলাভাই বসে বসে টিভি দেখতেন। কোনো চ্যানেলে একটানা থাকতেন না। রিমোট হাতে নিয়ে অনবরত টিপে যেতেন। আমি গিয়ে বসলে তিনি হিন্দি গানের চ্যানেল খুলে বসে থাকতেন। তারপর ধীরে ধীরে চায়ের কাপে মুখ দিতেন। আর মাঝেমাঝে আমার দিকে তাকাতেন। বিকেলে বাসায় ফিরে দুলাভাই লুঙ্গি পরতেন। আমি চা নিয়ে বসার পর থেকেই তিনি মাঝেমাঝে তার শরীরের নিচের দিকে হাত দিতেন। চুলকানোর মতো ভান করতেন। এইভাবে তার পাশে বসে থাকা বেশ অস্বস্তিকর হয়ে পড়ে। এরপর থেকে অফিস থেকে ফিরে চা বানিয়ে দুলাভাইয়ের সামনে রেখে আমি নিজের রুমে চলে যেতাম। এইভাবে কয়েকদিন গেল। একদিন দুলাভাইকে চা বানিয়ে দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে শুয়েছি। সারা দিনের অফিসের খাটাখাটনির পরে হয়তো চোখ বুজে এসেছিল, হঠাৎ টের পেলাম আমার শরীরে কেউ হাত রাখছে। চোখ তুলে তাকাতেই দুলাভাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। ওইদিন আপা বাসায় ফেরার আগ পর্যন্ত রুমের ছিটকিনি লাগিয়ে বসে রইলাম। আর পরের দিন থেকে অফিস শেষ হয়ে গেলেও বাসায় ফিরতাম না সন্ধ্যার আগে। এইভাবে চলতে থাকে বেশ কিছুদিন।’ এতক্ষণ একনাগাড়ে কথা শেষ করে মেয়েটি চোখ তুলে তাকাল।
প্রায় মিনিট বিশেক হলো আমরা একসাথে বসে আছি। এই প্রথম আমি মেয়েটির চোখের দিকে ভালো করে তাকালাম। একটা গভীর বিষাদে ছেয়ে আছে তার মুখ। ফর্সা মুখের মেয়েটির চোখের নিচে কালো দাগ জমেছে। রাত জাগার ফলে এটা হয়েছে বলে মনে হলো। আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু ইতস্তত করে কুঁজো হয়ে বসলেন। ওড়নাটা বুকের সামনে যেখানে ইংরেজি ভি বর্ণের মতো ঝুলে আছে সে জায়গাটা একবার ঠিক করলেন। তারপর আবার কথা বলা শুরু করলেন-
‘একদিন আপা রাতে খাবার টেবিলে জানতে চাইলেন আমি বাসায় দেরি করে ফিরছি কেন? কিছুই বলতে পারলাম না। এদিকে সন্ধ্যার পরে কাজ শেষ হলেও অফিসে থেকে যাওয়ায় অফিসের বসের নজরে পড়ে গেলাম। তিনি একদিন সন্ধ্যার পর তার রুমে ডেকে পাঠালেন। এমনিতে তিনি বেশ রাশভারী লোক। রাজনীতি করেন। সারা দিন মিছিল-মিটিং করেন। সন্ধ্যার পর এই অফিসে এসে বসেন। সেখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা আসেন। আমি কাজ করতাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে। প্রয়োজনীয় ছোটখাটো চিঠি, বিভিন্ন টেন্ডারের ফাইল কম্পোজ করা, দরখাস্ত ঠিক করা এই ধরনের কাজ করতাম। আমাকে কাজ বুঝিয়ে দিতেন তৈয়ব সাহেব। তৈয়ব সাহেবকে আমি আংকেল বলতাম। আমাদের বাবার বয়সী হবেন। মাথায় টুপি পরে থাকেন সবসময়। নামাজ পড়তে পড়তে কপালের সামনের জায়গাটা কালো দাগ পড়েছে। মাঝেমাঝে তাবলিগে যান। প্রতি মাসেই অন্তত তিনদিন মসজিদে মসজিদে থাকেন। সেদিন বসের রুমে যাওয়ার জন্য তৈয়ব আংকেলই খবর দিলেন। আমাদের অফিসের বস যে বাইরে বড় নেতা, সরকারি দলের রাজনীতি করেন এটা অল্পবিস্তর জানতাম। কিন্তু অফিসে তাকে কখনো কারও সাথে খারাপ ব্যবহার করতে দেখিনি। আমি এতদিন সন্ধ্যার আগে আগে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়তাম। কিন্তু বাসায় সমস্যার পর থেকে দেরি করে বের হচ্ছিলাম। তাই এই অফিসে রাতের রূপটা কেমন থাকে জানা ছিল না। এখন অফিসে থেকে যাওয়ায় অফিসের দিনের এবং রাতের দৃশ্য বদলে যাওয়াটাও বুঝতে পারি।’
পানির গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে আমি জানতে চাই, ‘কী ধরনের দৃশ্য দেখতে পেতেন?’
‘দিনের বেলায় এটা একটা কমার্শিয়াল অফিস। কিন্তু রাত হলেই রাজনৈতিক অফিস। আবার মাঝেমাঝে মনে হতো কোনো ক্লাব হাউজ। নানা ধরনের লোক আসত। হইচই আর খাওয়া-দাওয়া।’
একবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলাম।
এবার সরাসরি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আয়নাল হক খুনের বিষয়ে কী জানেন, সেটা বলেন।’
তিনি তার সামনের পানির গ্লাস হতে নিলেন। গ্লাসটি মুখের কাছে তুলে আবার নামিয়ে রাখলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি কখনো আয়নাল স্যারের রুমে যাইনি। একদিন স্যার ডেকেছিলেন সেদিনই প্রথম গিয়েছিলাম। আয়নাল স্যারের কাছে মাঝেমাঝে সন্ধ্যার পরে এক ভদ্রমহিলা আসতেন। তারা একসাথে যখন রুমে থাকতেন তখন অন্য কেউ সেই রুমে প্রবেশ করতেন না। ভদ্রমহিলা বের হয়ে যাওয়ার পরে অফিসের পিওন লোকমানের ডাক পড়ত। লোকমান গিয়ে রুম পরিষ্কার করত তারপরে আবার সবাই ভেতরে যাওয়ার সুযোগ পেত। একদিন সন্ধ্যার পরে ইন্টারকমে আমার ডেস্কে ফোন এলো। ফোন রিসিভ করতেই স্যারের রুমে যাওয়ার নির্দেশ এলো। আমি স্যারের রুমের দরজার সামনে যেতেই দরজা খুলে গেল। স্যার বের হয়ে চলে এলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ভেতরের ম্যাডামকে তার বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে তারপর ছুটি। ভেতরে গিয়ে দেখি কেউ নেই। ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ পাওয়া গেল। আমি দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করতে থাকি। এই রুমে আগে কখনো আসা হয়নি। বাইরের দিক থেকে এই রুমের অবস্থা বোঝার উপায় নেই। ভেতরের দুই দিকের দেয়ালে বিভিন্ন ছবি টানানো। অধিকাংশই রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে আয়নাল স্যারের ছবি। একদিকের দেয়ালে একটা বাঁধাই করা কাচের ফ্রেমে বাঘের চামড়া। তার ঠিক বরাবর উল্টো পাশের দেয়ালে তাজমহলের ছবি। রুমে ঢুকেই প্রথমে চোখে পড়বে বিশাল টেবিল। টেবিলের পেছনে একটা কাঠের চেয়ার। কাঠের চেয়ারটা বেমানান হলেও এটা স্যার রেখেছিলেন তার মেরুদণ্ডের ব্যথার জন্য। দেয়ালের একপাশে একটা মাঝারি ডিভান। ডিভানটির পাশে ফ্লোরে একটি ভ্যানিটি ব্যাগ, মুখ খোলা। ভেতর থেকে এলোমেলো টিস্যু বের হয়ে আছে।’ কথা বলতে বলতে মেয়েটি একবার আমার দিকে তাকাল।
কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি এই মেয়ের নিখুঁত বর্ণনা শুনে। কোনো কিছু আড়াল না করেই তাকে বলি, ‘আপনি এত অল্প সময়ে এতকিছু খেয়াল করলেন কী করে!’
তিনি চমকে গিয়ে আমার দিকে তাকালেন। খানিক পরেই গুছিয়ে নিয়ে বললেন, ‘আমরা মেয়েরা দ্রুত আশপাশের পরিস্থিতি বুঝতে পারি।’ একটু থেমে তিনি আবার শুরু করলেন, ‘সেদিন ওই ম্যাডামকে নিয়ে গুলশানের দিকে গিয়েছিলাম। তার বাসার গেটে নামার সময়ে আমাকে বাসায় চা খেতে বলেছিলেন। প্রথম দিন ভাবলাম ওইটা ভদ্রতা করে বলেছেন। পরে আরও একদিন বললেন। তখন একদিন তার বাসায় গিয়েছিলাম।’
‘তিনি কি নিয়মিতই আপনাদের অফিসে আসতেন?’
‘সপ্তাহে অন্তত দুদিন আসতেন।’
আমি ব্যাগ থেকে কাগজ-কলম বের করি। ‘বাসাটা গুলশানের কোনদিকে বলতে পারবেন?’
‘গুলশান এক নম্বর। পুলিশ প্লাজার ঠিক উল্টো পাশে হবে। নিকেতন পার্কের পাশ দিয়ে যে রোডটা ভেতরে গেছে সেটা দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। শেষ মাথার বাড়িটা। বাড়ির গেইটে একটা পিতলের সিংহ বসানো আছে।’ কথা শেষ করে তিনি একবার ব্যাগে হাত দিলেন। কিছু কাগজ বের করে আমার আমার সামনে রাখলেন। বিমানের টিকিট দুটি, ঢাকার একটি নামি হোটেলের একদিনের রুম ভাড়ার রশিদ এবং একটি চেকবই। আরও কিছু তথ্য টুকে নিয়ে তার মোবাইল নম্বর সেভ করে রেখে তাকে বিদায় জানাই।
মোবাইলের রেকর্ডার অফ করে সময় দেখি। ছয়টা পঁয়ত্রিশ। ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করে দ্রুত লিখতে বসি।
আধাঘণ্টার মধ্যে প্রায় চার শ’ শব্দের একটা রিপোর্ট দাঁড় করাই। দ্রুত মেইল করি অফিসে।
কফিশপে বসেই নিউজ এডিটরকে ফোন করি।
‘ভাই, আমার হসপিটালে যেতে হবে। আর খুনের ঘটনার একটা ভালো কিছু দিতে পারব। আপনাকে মেইল করছি দেখেন।’
‘তুমি কি অফিসে আসবা না?’ নিউজ এডিটরের গলায় উদ্বেগ।
‘বলতে পারছি না ভাই। আমি নিউজ পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর ছবিগুলো আপনারে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেব।’
‘দেইখো ঝামেলায় ফেইলো না আবার।’ তার গলায় আবদার।
‘কোনোদিন ঝামেলায় ফেলছি ভাই? দেখছেন?’
‘আরে চেতো কেন? তোমার ওপর ভরসা আছে। আচ্ছা শোনো, লিড করা যাবে?’
‘যেটা মনে হইতেছে ভাই একটা এক্সক্লুসিভ হবে। অন্য কেউ এখনো এই লাইনে আগায় নাই।’
‘বাহ! তাইলে তো ভালোই। তুমি তাইলে যাও হসপিটালে যাও। সময়মতো দিয়া দিয়ো।’
‘আচ্ছা ভাই, পেয়ে যাবেন।’
‘দশটার বেশি দেরি কইরো না। পরে আবার ফার্স্ট এডিশন ধরানো যাবে না।’
‘চেষ্টা করতেছি ভাই।’
‘ওকে তাইলে।’
‘ওকে।’
ফোন পকেটে রেখে কফিশপ থেকে বের হয়ে আসি। একটা রিকশা ঠিক করি পান্থপথের স্কয়ার হসপিটাল।
(চলবে…. )