কিশোর অনু-উপন্যাস।। উদোম বুড়োর গবেষণা রহস্য।। আশিক মুস্তাফা।। পর্ব এক
- কিশোর অনু-উপন্যাস।। উদোম বুড়োর গবেষণা রহস্য।। আশিক মুস্তাফা।। পর্ব এক
- কিশোর অনু-উপন্যাস ।। উদোম বুড়োর গবেষণা রহস্য।। আশিক মুস্তাফা।। পর্ব দুই
- কিশোর অনু-উপন্যাস ।। উদোম বুড়োর গবেষণা রহস্য।। আশিক মুস্তাফা।। পর্ব তিন
এই সেদিনও উদোম বুড়োকে মেসেজ পাঠিয়েছে ভূত। কী মেসেজ? প্যালিনড্রোম বাক্যে লেখা- ‘চার সের চা’। মেসেজ পাঠিয়েছে রতেভু ভূতের আইডি থেকে। তাহলে মেসেজওতো রতেভু ভূতই পাঠানোর কথা। যে ভূত খুবই ভয়ঙ্কর। থাকবে অনেক অনেক দিন পরও। কতো পর পর্যন্ত থাকবে তারা? যখন আকাশে ভাসমান বিমানবন্দর হবে। পৃথিবী একটা গ্রাম হয়ে যাবে। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া মানুষ এই গ্রামে ঘুরে বেড়াবে। থাকবে না অভাব-অনটন। হৃপকথার দেশের মতো সুন্দর হবে পৃথিবী। ততোদিনে রতেভু ভূতের আকৃতিও ছোট হয়ে যাবে। কত ছোট? লিলিপুটের সাইজ? না, না। চার-সাড়ে চার ফুটের মতো। শরীরের গড়নও হয়ে যাবে বেখাপ্পা। নিজেকে আয়নায় দেখে নিজেই সেন্সলেস হয়ে যাবে। তখন অবশ্য সেন্সলেস হলেও কোনো সমস্যা হবে না। মুহূর্তেই ডাক্তার রোগী সারিয়ে তুলতে পারবে। অসুস্থ্য হলেই শরীরের সঙ্গে থাকা ডিভাইসই সংকেত পাঠাবে।
আর ডাক্তার সংকেত পেয়ে চিকিৎসাসেবা শুরু করবে। সুস্থ্য হয়ে ওঠবে রোগী। তখন আরও অনেক আধুনিক হয়ে যাবে চিকিৎসা পদ্ধতি। সব রোগেরই পথ্য তৈরি হয়ে যাবে, কেবল ভয় রোগ ছাড়া। ভাবছো, রতেভু ভুতের সাইজ এত ছোট হলে মানুষ তাদের ভয় পাবে কেমন করে? সে পাবে। যত কিছুই হোক, আবিষ্কার আর প্রযুক্তি ছোটদের ভেতর থেকে ভয় কেড়ে নিতে পারবে না। বড়রা যখন বড় থেকে ছোট হতে শুরু করবে তাদের শরীরেরও বাসা বাঁধবে ভয়। উঠতে ভয়, বসতে ভয়। বিজ্ঞানও এই ভয় রহস্যের কোনো কূলকিনারা করতে পারবে না। চার সাড়ে চার ফুটের ভূত দেখেও মানুষ কাপড় ভিজিয়ে ফেলবে! আর মানুষের আকৃতিও তখন ছোট হয়ে যাবে। কত ছোট? সে না হয় তখনই দেখে নিও। তবে এটা বলা যায় যে, চার সাড়ে চার ফুট লম্বা ভূত দেখেও মানুষ কপালে হাত ঠেকিয়ে বলবে,
‘কী লম্বা ভূ-ভূ-ভূ-ত।’
তারপর ও মাগো, বাবাগো বলে দৌড়াতে থাকবে। ভূতরা তখন অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করবে। নিজেদের মধ্যে মেসেজ চালাচালি করবে। আর ভয় দেখানোর আগে মানুষকে মেসেজ পাঠাবে। সেই মেসেজের পিরিং পিরিং শব্দ হবে। বলেছিলাম না, এই সেদিনও উদোম বুড়োকে মেসেজ পাঠিয়েছে ভূত। কী মেসেজ? প্যালিনড্রোম বাক্যে লেখা- ‘চার সের চা’। মেসেজ পাঠিয়েছে রতেভু ভূতের আইডি থেকে। এই সেই রতেভু ভূতের কাফ্ফ।
যে ভূত অনেক অনেক দিন পরও থাকবে। বয়স হলে ভূতরাও মরে যায়। মরে কী হয়? মানুষ? সে উত্তরও তুলে রাখলাম। রতেভু ভূতের দিকে যাই। এই জাতের ভূত যেমন মেধাবী, তেমনি ভয়ঙ্কর আর খেয়ালি! ভূত রাজ্যের বড় বড় সব আবিষ্কার হয়েছে এদের হাত ধরেই। এরা যে কোনো বিষয় নিয়ে গভীর গবেষণা করে। যখন যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করে, সে বিষয়টার একেবারে মুফ্ফ ফুপাত করে ছাড়ে!
আবার যে কোনো সময় যে কাউকে নিয়ে মজা করতেও এদের সময় লাগে না। কখনো কাজ না পেলে এরা হেলায় দিন কাটায়। একেবারে বলা যায়, তখন তাদের হেলায় হেলায় যায় বেলা। ইচ্ছে হলো, একটা মানুষ তুলে নিয়ে এলো ভূতপুরে। কয়েক দিন রেখে ভরপেট খাইয়ে তাকে দিয়ে ধোয়ামোছা করালো। ছোট ভূত ছানাদের মানুষ চেনালো। যেসব বুড়ো ভূত বিছানায় পড়ে গেছে, তাদের দিয়ে মানুষটাকে ভয় পাইয়ে দিল। তারপর আবার ফিরিয়ে দিয়ে গেল।
এই তো কদিন হলো উদোম বুড়োর ওপর তাদের নজর পড়েছে। যে কোনো দিন, যে কোনো সময় তাকে তুলে নিয়ে যাবে। তার আগে বুড়োর সঙ্গে খেলছে। এরা খেলতেও ভালোবাসে। মানুষ তাদের খেলায় পড়ে আজব আচরণ করে। উদোম বুড়োও করছে। কী করছে? রাত-দুপুরে চা খাওয়া শুরু করেছেন। আগে চায়ের নাম শুনলেও ওয়াক থু, ওয়াক থু করতেন, আর এখন বাড়ির সামনের হাটখোলার আবুল হোসেনের দোকানের টানা টেবিলে গভীর রাতেও গিয়ে বসে থাকেন।
আবুল হোসেনও একটু ওলটপালট স্বভাবের। বাজারের সবচেয়ে অবহেলিত দোকানটা তার। কেউ নিতান্ত ঠেকায় না পড়লে তার দোকানের দিকে মুখ ফেরায় না। সহজ-সরল এই মানুষটার আবার দয়ার শরীর। দোকানে কাস্টমার এলে ফেরাতে পারেন না- সে দিনে হোক কিংবা গভীর রাতে। এই যেমন এখন গভীর রাতে কাস্টমার পেয়ে হাতের পিঠ দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে কেতলি নিয়ে বটগাছতলা দিয়ে ছেহারিয়া পুকুরের দিকে হাঁটা ধরেছেন। কেতলি মেজে তাতে পানি ভরে দোকানে আসেন। গ্যাসের চুলায় আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন।
কিন্তু ম্যাচের কাঠি জ্বলে না। গ্যাসের ফিস-স্-স্ শব্দ হয়। উদোম বুড়ো বলেন, ‘অই মিয়া, চলে গেলো তো তোমার হাওয়া। চাবি ঘোরাও উল্টো দিকে।’ আবুল হোসেন তাড়াহুড়ো করে গ্যাস বন্ধ করেন। মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলেন, ‘কী যে দিন পড়েছে উদোম কাকু, এ গরমে মানুষের গা পুড়ে পাটকিলে হয়ে যাচ্ছে। অথচ দেখ, ম্যাচ ভিজে জবুথবু।’
উদোম বুড়ো বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে মোবাইলের ডাটা অন করেন।
আবারও পিরিং পিরিং…।
মেসেজ আসে সেই রতেভু ভূতের আইডি থেকে।
লেখা- ‘রমা তো মামা তোমার।’ বাক্যটা উলটেপালটে পড়েন। এটাও তো প্যালিনড্রোম বাক্য। বাম থেকে পড়লে যে বাক্য, উল্টো করে ডান দিক থেকে পড়লেও একই বাক্য। ডাটা অফ করে তিনি হাঁটা ধরেন। কোন দিকে? সকালের দিকে! পেছনে ডাকেন আবুল হোসেন মিয়া। চুলায় আগুন ধরানো গেছে। কথায় কথায় রাত আরও গভীর হয়েছে। একটু পরেই হয়তো ভোরের আলো ফুটবে। কিন্তু এই ভোররাতে কে খাবে তার চা? আবুল হোসেন দোকানে বসে বটগাছের দিকে চেয়ে থাকেন।
[চলবে…]