উপন্যাস// আমাদের আগুনবিহীন কাল// জাকির তালুকদার// সপ্তম পর্ব
- উপন্যাস// আমাদের আগুনবিহীন কাল//জাকির তালুকদার//প্রথম পর্ব//
- ধারাবাহিক উপন্যাস // আমাদের আগুনবিহীন কাল // জাকির তালুকদার // দ্বিতীয় পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস / আমাদের আগুনবিহীন কাল / জাকির তালুকদার / তৃতীয় পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস /আমাদের আগুনবিহীন কাল /জাকির তালুকদার /চতুর্থ পর্ব
- ধারাবাহিক উপন্যাস // আমাদের আগুনবিহীন কাল // জাকির তালুকদার // পঞ্চম পর্ব
- উপন্যাস // আমাদের আগুনবিহীন কাল // জাকির তালুকদার // ষষ্ঠ পর্ব
- উপন্যাস// আমাদের আগুনবিহীন কাল// জাকির তালুকদার// সপ্তম পর্ব
- উপন্যাস// আমাদের আগুনবিহীন কাল// জাকির তালুকদার// পর্ব আট
- উপন্যাস // আমাদের আগুনবিহীন কাল // জাকির তালুকদার // পর্ব নয়
- উপন্যাস // আমাদের আগুনবিহীন কাল // জাকির তালুকদার // পর্ব দশ
- উপন্যাস।। আমাদের আগুনবিহীন কাল।। জাকির তালুকদার।। পর্ব এগারো
‘আমরা ব্রিটিশ-ভারতীয় সরকারের নামে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক হুকুমনামা জারি করিয়াছিলাম। এরূপ খাজনা বন্ধ করা অবৈধ। জমিদারগণ ইংরেজ সরকারের প্রতিনিধিস্বরূপ প্রজাদের নিকট হইতে খাজনা আদায় করিয়া থাকেন। তাহাদের খাজনা বন্ধ করার অর্থ হইতেছে মহারানি ভিক্টোরিয়ার সনদকে অবজ্ঞা করা। ইহা কিছুতেই হইতে পারে না। প্রজাদিগের যদি কোনো বক্তব্য থাকে, তাহা হইলে তাহারা প্রতিনিধি প্রেরণ করিতে পারে। আমরা তাহাদের বক্তব্য শুনিয়া ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করিয়া দিতে পারি। কিন্তু তাহারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা গ্রহণ করিবে, ইহা ঘোর অনাচার! তাহা ছাড়া জমিদারদিগের বিরুদ্ধে অভিযোগের কিছুই থাকিতে পারে না। তাহারা প্রজাদিগকে পুত্রবৎ স্নেহ করিয়া থাকেন। এই ব্যাপারে সবার অপেক্ষা বড় সাক্ষী বাঙ্গালার লেখক শিরোমণি শ্রী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্বয়ং। তিনি লিখিয়াছেন, এই প্রদেশের যাহা কিছু ভালো, সবকিছুই বাঙ্গালার জমিদারদিগের দান। তবু মাননীয় কালেক্টর সাহেব চলনবিল অঞ্চলের প্রজাদিগকে তাহাদের বক্তব্য সম্বলিত দরখাস্ত তাঁহার দপ্তরে জমা দিতে অনুমতি দিয়াছিলেন। কিন্তু তাহারা যাহা লিখিয়াছিল, তাহাতে সত্যের লেশমাত্র ছিল না। পরন্তু জমিদারদের পাশাপাশি স্বয়ং ইংরেজ গভরমেন্টকেও তাহারা প্রত্যক্ষ দোষারোপ করিয়াছিল। তখন কালেক্টর হইতে হুকুম আসিল, বিদ্রোহীদের নেতা ছইরউদ্দিনকে সশরীরে গ্রেপ্তার করিয়া মহামান্য আদালতে সোপর্দ করা হউক। এই ছইরউদ্দিন এক ভয়ঙ্কর দস্যু। পুরো চলনবিল অঞ্চল তাহার ভয়ে কম্পমান থাকে। নিয়তির কী পরিহাস! এই ব্যক্তি একদা বাংলা প্রদেশের পুলিশ বিভাগে সেপাই হিসাবে কর্মরত ছিল। সে পুলিশে থাকাকালীন যে সমস্ত ট্রেনিং পাইয়াছিল, সেই ট্রেনিংয়ের জোরেই একটি বিরাট দস্যু দল সংগঠিত করিয়াছে। তাহারা এতই দুর্ধর্ষ যে, চলনবিল অঞ্চলকে নিজেদের স্বশাসিত এলাকা ঘোষণা করিতে চায়।’
‘তো আমি কালেক্টরের নির্দেশ মোতাবেক চলনবিলের হাটে হাটে দফাদার মারফত নোটিশ টাঙাইয়া দেওয়াইলাম। চৌকিদার মারফত ঢোল সহরত করিলাম। সপ্তদিবস সময়ের মধ্যে ছইরউদ্দিন যেন মহামান্য কালেক্টর অফিস অথবা পুলিশ চৌকিতে আসিয়া হাজির হয়। কিন্তু বৃথা! সে আসিল না। তখন তাহাকে গ্রেপ্তারের জন্য ছোট ছোট পুলিশ দল প্রেরিত হইল। কেহই তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে পারিল না। একবার প্রায় সে ধরা পড়িয়াই গিয়াছিল। পুলিশের দল তাহাকে বেষ্টন করিয়া ফেলিয়াছিল। কিন্তু তাহার সঙ্গীরা তাহাকে ছিনাইয়া লইয়া চলিয়া যায়। এই ঘটনায় চারিজন কনস্টেবলকে সাসপেনড করা হইয়াছিল। কিন্তু আমি জানি যে তাহারা নিরুপায় ছিল। বিপুল প্রশিক্ষিত দস্যু দলের সামনে চারিজন মাত্র সেপাই কী আর করিতে পারে!’