উপন্যাস

কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। শেষ পর্ব

১৫.

দিন কেটে গেছে ম্যালা।
আমরা চারজনেই নাইনে উঠেছি ভালোভাবে পাশ করে। ইনজাম আর তৌফিক আগের মতো নেই। একেবারে শান্ত হয়ে গেছে। দু’জনেই পড়াশুনায় মন দিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে বহু চেষ্টা করেও তাদের মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে পারিনি। ওই রাতের ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত কেউ আমরা ওই পাগলকে পাড়ায় দেখিনি। পাড়ার অনেকেই পাগলের উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে নানারকম কেচ্ছা কাহিনি তৈরি করেছে। বলেছে ভ‚তটাই পাগলের রূপ ধরে পাড়ায় ঘোরাফেরা করতো।
আমাদের সেই রাতের কথা মনে হলে আজও রোমাঞ্চ লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় সে রাতে আমরা আসলেই কি একটা লাল গাড়িতে চড়ে একজন অচেনা লোকের সঙ্গে লং ড্রাইভে গিয়েছিলাম? নাকি পুরো ব্যাপারটাই কল্পনা? কারণ চিনি না জানি না একজন অপরিচিত লোকের সঙ্গে আমরা কেন যাব?
ভ‚তের দেওয়া সেই চিঠি দুটো আমরা রেখে দিয়েছি। প্রায়ই স্কুলের পেছনে আড্ডায় চিঠি দুটো নেড়ে চেড়ে দেখি আর রোমাঞ্চিত হই। রাস্তায় কখনো লাল রঙা টয়োটা দেখলেই তাকাই, ড্রাইভারকে লক্ষ্য করি, কিন্তু তখনই মনে পড়ে সেই লোকটার চেহারা আমরা দেখতে পারিনি।

মাঝে মাঝে স্বপ্নের ভেতর সেই লাল গাড়িটা দেখি– কুয়াশাচ্ছন্ন রাত, আমরা চারজন বটগাছের সামনে যেতেই একজন লোক ‘এসো’ বলেই সামনে এগিয়ে গেল। আমরা তাকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাই। লোকটা ড্রাইভিং সিটে বসে আমাদের ‘এসো’ বলে ডাকলো গাড়িতে ওঠার জন্য। আমরা গাড়িতে উঠলাম। কুয়াশা কেটে গাড়ি ছুটছে, কোথায় যাচ্ছি আমরা কেউই জানি না। এই স্বপ্নটা দেখার পর আমার ভেতর সন্দেহ জেগেছে আসলেই কি আমরা সেদিন বাস্তবে লাল গাড়িতে চড়েছিলাম? নাকি ঘোরের ভেতর থাকতে থাকতে স্কুলের পেছনে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!
স্বপ্নের কথাটা এবং সন্দেহের কথাটা পল্টু, খোকা আর অপুকে বলিনি। বললে হয়তো ওরা হাসবে। নাকি ওরাও আমার মতোই সন্দেহ করে এমনটাই ভাবছে। কিন্তু কেউ কাউকে বলছি না।
কে জানে! কে জানে!

Series Navigation<< কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব এগারোকিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। তেরো >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *