কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম-পর্ব তিন
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব- এক
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব- দুই
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম-পর্ব তিন
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব ছয়
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব সাত
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব আট
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব নয়
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব দশ
- কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব এগারো
৩
মাঝরাতে নীনাপার চিৎকারে বাড়ির সবার ঘুম ভেঙে গেল। সবাই দৌড়ে গিয়ে দেখল বিছানার এককোণায় উপুড় হয়ে শুয়ে নীনাপা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মা-বাবা বিছানায় উঠে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করছে। নীনাপা কিছুই বলছে না। কেবলই কাঁদছে।
আমি ভাইয়ার দিকে তাকালাম। দেখলাম চোখ দুটো বড় বড় করে নীনাপার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বলছে না। আমিও তার মতো চুপচাপ থাকলাম।
বাবা একসময় নীনাপাকে শোয়া থেকে উঠিয়ে বসান।
ভয়ে নীনাপার মুখ চোখ কেমন যেন হয়ে গেছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে বারবার কপালের সামনে এসে পড়ছে।
ভাইয়া বলল, নীনা কি হয়েছে রে আপু?
নীনাপা ভাইয়ার দিকে এই প্রথম তাকাল। আমিও এবার ভাইয়ার সঙ্গে যোগ করলাম, কি হয়েছে?
সেইটা ঘরে এসেছিল-নীনাপার অস্ফুট উত্তর।
মা বললেন, কোনটা?
সেইটা।
বাবা বললেন কোনটা?
নীনাপা বলতে পারল না। মুখটা দু’হাতের চেটো দিয়ে ঢেকে ফেলল।
মা এবার নীনাপার দু’হাত মুখ থেকে সরিয়ে বললেন, মা রে বল না কোনটা?
ভূতটা… অস্ফুট উত্তর।
ভাইয়া বলল, আমি মনে মনে যা ভেবেছি।
আমিও ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভারিক্কি চালে বললাম, আমারও একবার তাই মনে হয়েছিল।
বাবা এবার বললেন, আচ্ছা নীনা তুই কি লিন্টুর চেয়েও ছোট হয়ে গেছিস? তোকে কতদিন বলেছি ওসব ভূতটূত কিছু নেই।
বাবার কথা শুনে আমার বুক খানিকটা গর্বে উঁচু হয়ে গেল। ভাবলাম এবার একটু বড়দের মতো কথা বললে মানিয়ে যাবে হয়তো, বললাম, নীনাপা তোকে আর আধুনিক মানুষ বানাতে পারলাম না। তুই এখনো ওইসব ভূতটূতেই বিশ্বাস করে বসে আছিস। তুই কি জানিস আমাদের আবুও ভয় পায় না ভূতকে। কদিন আগেও রাতে মা কিছু আনতে দিলে ও ঘর থেকে বের হতো না। সে এখন হন হন করে বেরিয়ে যায় রাতের বেলা।
আবুর মা পাশেই দাঁড়িয়েছিল। সে বলল, হ আফা আমাগো আবুরে লিন্টু ভাইয়ে সাহস দিছে দেইখাই অহন আর ভূতের ভয় পায় না।
নীনাপা কোনো কথা বলছে না। আবুর মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল।
তুই কি দেখলি বলতো আপু? ভাইয়া নীনাপার বিছানায় বসে মাথায় হাত রেখে বলল।
আমি ঘুমিয়ে আছি। পায়ের কাছে প্রথমে এসে বসল ।
তুই কি তোর চোখ দিয়ে দেখেছিস?
হ্যাঁ।
তুই না বললি ঘুমিয়েছিলি?
পায়ের কাছে বসার পর ঘুম ভেঙে গেছে।
তুই কি রকম দেখলি সেটাকে? মানুষের মতো দেখতে?
নীনাপা কোনো কথা বলছে না। ভাইয়ার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।
কি রে বলত কেমন দেখতে ওটা?
অতো মনে নেই।
ভাইয়া হেসে বলল, আহা ঠিক আছে বল, তারপর কি হল?
একসময় তার লম্বা দুটো হাত আমার দিকে বাড়িয়ে এগিয়ে এল।
হায় হায় কয় কি? আবুর মা পাশ থেকে বলে উঠল।
ভাইয়া বলল, আবুর মা তুমি চুপ করো। হ্যাঁ বল তারপর?
আমার দিকে হাত বাড়াতেই চিৎকার দেই। কিন্তু ওটা আমার মুখ চেপে ধরে এক হাত দিয়ে।
তারপর? ভাইয়া বলল।
তারপর আর মনে নেই।
শোন আপু তুই যা বললি পুরোটাই মনের কল্পনাভূত বুঝলি?
আমি নিজের চোখে দেখলাম তো।
কি দেখলি তুই?
ওটাকে।
তুই কি করে বুঝলি তোর পায়ের কাছে কে বসল?
টের পেলাম পায়ের কাছে কেউ বসল। পায়ে সুড়সুড়ি লেগেছে তো।
তোর আদরের টুসকি বিড়াল তোর বিছানায় প্রায়ই ঘুমায়, ঠিক আছে?
হ্যাঁ।
এটা তোর পায়ের কাছে ঘুমিয়েছিল। তুই একটু সুড়সুড়ি অনুভব করেছিস। আর পরের ঘটনা পুরোটাই তোর মনের কল্পনাভ‚ত। এ ছাড়া আর কিছু না।
নীনাপা আর একটা কথাও বলতে পারছে না।
বাবা বললেন, হ্যাঁ, পিন্টু ঠিক বলেছে। তুই সারাদিন ওই ভূতটূত নিয়ে আলাপ করেছিস, এটাই তোর মনের ভেতর রয়ে গেছে। এছাড়া কিছু নাÑঠিক আছে এখন ঘুমিয়ে পড়। তোর মা তোর সঙ্গে আজ ঘুমাবে–আর শোনো বুয়া এখন থেকে তুমি রাতে নীনার ঘরে ঘুমাবে। তোমার আবু ওই পাকঘরেই ঘুমাবে। ওকি আবার ভয়টয় পাবে নাকি?
না খালুজান, আমার আবুরে লিন্টু ভাই সাহস দিছে। ওর আর ভূতের ভয় নাই।
ঠিক আছে কাল থেকে তুমি এখানে শোবে। বাবার কথার পর আমরা যে যার ঘরে চলে যাই।