ঈদসংখ্যার গল্প।। জীবনের মহাসড়ক।। শামস সাইদ

হঠাৎ হঠাৎ মন খারাপের কারণ বহুদিনেও আবিষ্কার করতে পারেনি রাহাত। আজ তার মন ভালো নেই। জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে। কল্পনার রাজ্যে ডুব দিয়ে চলে গেছে যে দিনগুলো সে হারিয়ে ফেলেছে সেখানে। সেই স্মৃতি এলোমেলো করে দিচ্ছে তাকে। আবার হারাতে চায়। মাঝে মাঝেই হারিয়ে যায় জীবনের ফেলে আসা গলিপথে। ওখানে আলো নেই। তবে অন্ধকারটা খুব মোটা না। চলতে পারে। পা ফেলতে পারে পা দেখে। সমস্যা হয় না। আবার কখনও বেখেয়ালি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছাদে দাঁড়িয়ে। তখনো ওই গলিপথ সামনে আসে। এসব আজকাল মনে করতে চায় না সে। তবু মনে পড়ে। কেন? মন কেন হারায় জানে না। কী হবে সেসব দিনের কথা মনে করে ? খুব যে মূল্যবান কিছু তাও না। কিছু পাগলামি আছে। কত বছর আগে হারিয়েছে তাও ভুলতে বসেছে। যাবে না সে খুঁজতে। ঝাপসা হয়ে আসছে স্মৃতিটুকু। তারপর হেঁটেছে হাজারো পথ। কাঁচা মাটির পথ ভেঙে হাঁটতে হাঁটতে একদিন উঠে এসেছিল পাকা সড়কে। পিচ ঢালা কালো পথে দাঁড়িয়ে বিরাট এক নিশ^াস নিয়েছিল। সে পথটাও ছিল নিঃসঙ্গ। কেউ নেই তার পাশে। সে একা দাঁড়িয়ে আছে। পেছন ফিরে তাকায়নি। পেছনেও একটা পথ আছে। এই পথের সাথে মিশে ছুটে গেছে অন্য পথের খোঁজে। হাঁটতে শুরু করল কিছুক্ষণ পরে। হাঁটছে। হাঁটছে। কোথায় যাচ্ছে জানে না। তবে আজ পথ হারায়নি। সে এমনই পথিক যে পথ হারিয়েছে বহুবার। পথ পাল্টেছে কিন্তু পথিক পাল্টায়নি। গন্তব্যহীন হেঁটে চলছে। একটু একটু করে ভেঙে যাচ্ছে। উদ্দেশহীন হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে নিখাদ গ্রাম্য জনপদ ছেড়ে চলে এসেছে শহরে। ওই পথটাই তাকে শহর চিনিয়েছে। সে আর ফিরতে চায় না ফেলে আসা পথে। হাঁটবে নতুন পথে। পথ না পেলে পথ তৈরি করবে। শহরে নতুন ঠিকানা হলো বন্ধুর কাছে ওয়ারীতে। লারমিনি স্ট্রিটের তিন তলা একটা বাড়ির দোতলার সিঙ্গেল কক্ষ। যার সাথে যুক্ত বাথ রুম নেই। রান্নাঘরও না। জানালা আছে দুইটা। বাধরুম নিচের সিঁড়ির ঘরে। এটা বড্ড যন্ত্রণার। সিগারেট টানতে হয় তিন তলার ছাদে। উপর-নিচ করতেই দিনের বড় একটা সময় যায়। খেতে হয় হোটেলে। বেশি সময় আজকাল ছাদেই থাকে রাহাত। নামা ওঠা ভালো লাগে না। ওখানে একটা জগত গড়ে নিয়েছে। সিগারেট টানে। আকাশ দেখে। মাঝে মাঝে আকাশেরও মন খারাপ হয়। সেই মন খারাপরে কারণ সে জানে না। জানতেও চায় না। কী হবে জেনে। কেউ তার মনের খবর রাখে? রাখে না। হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করল নতুন দৃশ্য। পাশের বিল্ডিংয়ে থাকেন হরিপদরবাবু। তার ছোট ঘরের মেয়ে শশি। বয়স সতের। গোসলখানায় ঢুকে গান গায়। সে গানে সুর কম। চেঁচিয়ে মাত করে বাড়ি। গানের কথা ভসে যায় জলের শব্দে। চ্যাচানোটুকুই আসে রাহাতের কানে। তার কাছে এই সুর ক্রমশ মধুর হয়ে উঠতে লাগল। কেন? জানে না। বিরক্ত হওয়ার কথা ছিল। হয়তো শশির কণ্ঠ আছে ওখানে তাই মধুর লাগে। অন্য কেউ হলে পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করত। ওই গান তাকে ফেলে দিয়েছে নতুন পাগলামীতে।

এই গান শুনে শশিকে আবিষ্কার করেছিল চৈত্রের গা পোড়ানো এক দুপুরে। ছাদে দাঁড়িয়ে টানছিল সিগারেট। কবে ওটা খাওয়া শিখছে তা মনে পড়ছে না। তবে এটা না টেনে এখন থাকতে পারে না। তাই টেনেই যাচ্ছে। সুফল দেখছে না। সেই টানের সময় কানে এসে ধাক্কা মারছিল ওই চেঁচানোর শব্দ। শব্দের পথ খুঁজতে গিয়ে দেখল বাথরুম। শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছে শশি। সেই ভেজা মুখ দেখে মনে করেছিল পুরো শরীরটা নগ্ন। চুলগুলো লেপটে আছে মুখে, পিঠে। হঠাৎ এক তরুণির নগ্ন ছকি এঁকে ফেলল তার মন। ঘোর লাগিয়ে দিল। ওখান থেকে চোখ তুলে আনতে পারল না। চেষ্টাও করেনি। তারপর রুটিন কাজ হয়ে গেল দুপুর নামলেই ছাদে যায়। সিগারেট টানে। চোখ পাশের বিল্ডিংয়ের গোসলখানায় সেটে দাঁড়িয়ে থাকে। শাওয়ার ছেড়ে কখন চেঁচিয়ে গান করবে শশি। তার মন একটা নগ্ন ছবির দৃশ্য আঁকবে তখন।

শশির নাম সে জানত না। বাবার নামও না। শশির কথা প্রথম শুনেছে সুমনের মুখে। বাড়িঅলার ছেলে সুমন। লেখাপড়া শেষ করেনি। মাঝ পথে বন্ধ হয়েছে। কী রোগ হয়েছিল জানে না। কাঁপনি দিত। বেহুশ হয়ে পড়ত। কতবার নাকি মৃত্যুর খুব কাছে চলে গিয়েছিল। লড়াই করে ফিরে এসেছে। শরীরটা এখনো লিকলিকে। ছাদে দাঁড়িয়ে সুমন একদিন বলেছিল শশিদের আদ্যপান্ত। ওর বাবা হরিপদ। স্বর্ণের ব্যবসা আছে। প্রথম বউ মারা গেছে। সে মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। হরিপদবাবু নিজেই নাকি মেরেছেন। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল মহল্লায়। তার ছেলেরা আজও বিশ^াস করে যাচ্ছে সেকথা। তারপর শশির মাকে বিয়ে করেছে। শশির ঠকুরমা কাজ করত এই বাসায়। তখন শশির মাও আসত। বাড়ন্ত শরীর ছিল। ওটার লোভে পড়েছিলেন হরিপদবাবু। গোপন সম্পর্কও গড়ে তুলেছিলেন। কিছুদিন পরেই মারা গেলেন তার স্ত্রী। তখন প্রশ্ন ওঠেনি। বিয়ের পরেই যত প্রশ্ন। শশির মাসি এসে উঠল এখানে। হরিপদবাবুর আগের সংসারের মেজ ছেলের সাথে প্রেম হয়ে গেল তার। বাড়ি ছেড়ে পালাল একদিন। ফেরেনি আর। বাপ ছেলে ভায়রা। হরিপদ এখন পারে না। মাঝে মাঝে বউ বাইরে যায়। এসব বলে ফিক করে হেসে উঠল সুমন।

সেদিন রহাত শুনেছিল শশির কথা। শশির যে শৈল্পিক বর্ণনা দিয়েছিল সুমন তখনই প্রেম এসেছিল তার মনে। মনে হচ্ছিল আকাশ থেকে শশি নেমেছে ধুলোর পৃথিবীতে। কিন্তু তার গায়ে ধুলো লাগেনি। সুমনও বারবার ছাদে ওঠে। শিশ বাজায়। ভাঙা কণ্ঠে দু’চার লাইন গান ধরে। সবটাই শশির জন্য। গান শুনে কাক উড়ে গেলেও শশি ফিরে তাকায় না। তা বুঝতে পারছিল রাহাত। এরপর অনেকদিন শশিকে দেখেছে সে। সিগারেট কিনতে গিয়ে রাস্তায় মুখে। তখনো শশিকে নগ্ন মনে হয়েছে। চোখের সামনে ভেসে উঠেছে সেই দৃশ্য। শাওয়ার থেকে পানি পড়ছে। তার নিচে একটা শরীর। সেটা উম্মুক্ত। তারপর কখনো শশিকে কাপড় পরা ভাবতে পারেনি। কেনই যেন সেদিনের পর থেকে শশির গায়ে কাপড় দেখে না সে। ওর মাকে দেখে পাশে। বাইরে যায়। তখন মনে হয় সুমনের কথা। হরিপদবাবু পারেন না। তাই শশির মা বাইরে যায়। অন্য কাজে গেলেও রাহাতের মনে ওটা এসে দাঁড়ায়।

আজকাল রাহাত খুব একটা বাইরে বের হয় না। নিচেও পারতপক্ষে নামে না। প্রায়শই কলেজ বন্ধ করে। টিউশনি নিয়েছিল একটা তাও ছেড়েছে। সময় মতো যেতে পারে না। ঘুমিয়ে থাকে। যেতেও ইচ্ছে করে না। শুধু ছাদে যেতে ইচ্ছে করে। নামতে পারে না ওখান থেকে। একটা অদৃশ্য শক্তি তাকে আটকে রাখে।

রায়হান রাগ করল এক বন্ধের দিনে। সারাদিন রুমেই থাকিস। টিউশনিটা ছেড়ে দিলি। বাবার টাকায় চলতে পারবি? কতরকম খরচ। বলিস বাবা টাকা দেয় না। কলেজেও যাস না। লেখাপড়া তো করিস না।

কোনো উত্তর করেনি রাহাত। তার চোখে ছিল শশির নগ্ন শরীর। কলেজে গেলে দুপুরে ছাদে উঠতে পারে না। শশির নগ্ন শরীর দেখবে। চেঁচানো গান শুনবে। ওটা তার নেশা। আরও একটা নেশায় পেয়ে বসেছে তাকে। এক সন্ধ্যায় সুমন এলো রুমে। হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছে। কথা বলতে পারছে না। কণ্ঠ নামিয়ে বলল, আজ একটা অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য দেখাব। হয়তো কোনোদিন দেখিসনি।

রাহাত ভাবল শশির নগ্ন শরীর দেখাবে। যা গরম পড়েছে রাতেও গোসল করতে পারে। ও দৃশ্য সে প্রতিদিন দেখে। মাতাল হয়। নেশা ধরেছে তার মনে। তাই খুব আগ্রহ দেখাল না। তবু সে যাবে। সুমনও শশির নগ্ন শরীর মাপে? সেটা দেখতে হবে। সন্ধ্যায় সুমনের সাথে ছাদে গেল। সিগারেট টানল। বার বার জানতে চাইল, কী দেখাবি?

সুমনের মুখে লম্বা হাসি। অস্থির হচ্ছিস কেন? ঘটনা না ঘটলে দেখাব কী! আজ বৃহস্পতিবার। অবশ্যই ঘটবে। অপেক্ষা কর কিছুক্ষণ।

রাত বাড়ছে। তারা ছাদ ছাড়ছে না। সেই রাতে পাশের বাসার জানালা থেকে সুমন দেখাল রমণের দৃশ্য। রাহাত এই দৃশ্য আগে দেখেনি। মাথায় ক্লিক ক্লিক করছে। শরীরের ওপর দিয়ে খেলে গেল বিদ্যুতের চমক। তখন মনে হলো শশির কথা। এভাবে কখনো ভাবেনি। শুধু দেখত। দৃষ্টিতে এখন লোভ এসেছে। শশিকে চায় সে। বেপরোয়া হয়ে উঠল মন। কিন্তু যেতে পারে না শশির কাছে। এখন মনে হচ্ছে শশি থাকে আকাশে। অনেক দূরে। সে নামবে এই ধুলোর পৃথিবীতে? না নামবে না। দেখাই যায়। ধরা যাবে না। তার শশি থাকে হাত দুই দূরে। একটা দেয়ালের অপর পাশে। তবু মনে হয় অনেক দূর। শশিকে আপন করে পাবে সে? সব বোধ হারিয়ে গেল। মাতাল হয়ে উঠল রক্ত। কাঁপনি দিচ্ছে শরীর। ওই দৃশ্য তারপর বহুবার দেখেছে সে।

এক রাতে রমণের দৃশ্য দেখতে ছিল রাহাত আর সুমন। হঠাৎ একজোড়া চোখ এসে পড়ল তাদের মুখে। সে চোখ ছিল ওই নারীর। যে রমণে ব্যস্ত। উত্তেজনার কড়াইতে ভাজছিল তার শরীর। কথা ছিল না মুখে। তবু সুমন শুয়ে পড়েছিল ছাদে। রাহাতও। বৃষ্টি নেমে এসেছিল ঝমঝম করে। ধুয়ে দিচ্ছিল তাদের শরীর। কিন্তু ঠান্ডা করতে পারেনি। শীতল হয়নি উষ্ণ শরীর। নামাতে পারেনি দৃষ্টি। নারীও উঠে এসে জানালা বন্ধ করেনি। টেনে দেয়নি পর্দা। তারা যেন আরও বেশি মিলনের উম্মাদনায় হারিয়ে গেল কামের রাজ্যে।

এই দুই দৃশ্য রাহাতকে আটকে ফেলেছিল। মুক্ত হতে পারেনি সে। চেষ্টাও করেনি। কামের যাতনা তৈরি করেছিল তার উঠতি শরীরে। দ্বিতীয় দৃশ্য দেখার পরে সে খুব করে শশিকে পেতে চাইল। তার মনে মিলনের ইচ্ছে জন্মাল। রমণের মাতাল স্বাদ পেতে চায় সে। কিন্তু শশির নাগাল পায় না। সুমনকেও বলতে পারে না। সুমন নিষেধ করেছে। শশির দিকে চোখ দিস না। তোরা আজ আছিস কাল হাওয়া। ঝামেলা পোহাতে হবে আমাদের।

সুমনের কথায় থেমে যায়নি রাহাত। চেষ্টা সে করেছিল কিন্তু কোনোভাবেই নাগাল পাচ্ছে না শশির। তার আবেদন ওই পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে না। এতটা কাছে থেকেও হাজার মাইল দূরে তার অবস্থান। তবু চাতকের মতো তাকিয়ে থাকে। যদি দৃষ্টির ফ্রেমে বেঁধে নিবেদন করতে পারে প্রেম।

বসন্তের মধ্যরাতে অকালবর্ষা পাশের বাড়ির টিনের চালে নৃত্য করছে। যার নীরব দর্শক রাহাত। কক্ষে সে একা। ঘুম ভেঙেছে আরও আগে। তখন মনে হচ্ছে ওই বাসায় রমণ চলছে। এই রাতে শশি গোসল করছে। সে বসে আছে খাটের ওপর। জানালা খোলা। বসন্তের পাগলা বাতাস ফুরফুর করে অনুমতি ছাড়াই ঢুকে পড়ছে। এখন বৃষ্টির ছাট আসছে। বড্ড বেপরোয়া বৃষ্টি। নিয়ন্ত্রণ মানে না। তবু জানালা বন্ধ করার তাড়া নেই। জানালায় চোখ লাগিয়ে সে দেখছে আকাশের মুখে। কেন মধ্যরাতে কাঁদছে আকাশ? দুঃখের জলে সাঁতার কাটছে পৃথিবী। সে এক পথ হারা পথিক। পথের খোঁজে কখনও পথে নামেনি। কতকাল হেঁটেছে পথে। কিন্তু পথ পায়নি। উঠে জানালার গ্রিল ধরে দৃষ্টি বিছিয়ে দিল নিচে শুয়ে থাকা পথের দিকে। তখন আবার মনে পড়ল সেইসব দিনের কথা। যা ফেলে এসেছে শৈশবে। যার কোনো মূল্য নেই। তবু আজ বোহেমিয়ান মন আটকাতে পারল না। বৃষ্টির রিণিঝিনি শব্দ কানে আসছে না। উদসতা ঘিরে রেখেছে।

এই মধ্যরাতে একটা পাখি ডাকছে। প্রবল বৃষ্টিতেও ঘরে ফেরেনি। ফেরার তাড়া নেই হয়তো। কেউ চিন্তা করেনি ওর জন্য। ডেকেই যাচ্ছে পাখিটা। স্বরে ক্লান্তি স্পর্শ করেনি। মনে পড়ল ছাদের চিলেকোঠার পাশে বসে থাকা কাকগুলোর কথা। কা কা করে ডাকে। ওদের খাবার দেয় না সে। কথাও হয় না। চোখে চোখ পড়ে। সেটাও খুব বেশি না। তার চোখ থাকে পাশের বাসার জানালায়। নাহয় গোসল খানায়। কেননা তার দৃষ্টিতে প্রেমের থেকে কামের তীব্রতা বেড়েই চলছে। তাই অন্যকিছু দেখতে পায় না। সব ভুলে যায়। চোরা দৃষ্টি ঝুলিয়ে রাখে জানালার গ্রিলে। যদি দেখতে পায় চাঁদের রুপ মাখা শশি। ওটাই আনন্দ। কাকগুলো নিজেদের মতো থাকে। কর্কশ স্বরে ডাকে, আবার উড়ে যায়। সে চুপচাপ বসে থাকে একটা মুখ দেখার জন্য। একটা নগ্ন শরীরের ছবি আঁকার জন্য। সে মুখটা দেখে সময়-অসময়। তবু কেন যেন মায়া জন্মে না। ভালোবাসা হয় না। একটা আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। সেটা কামের। নেশার। নেশা ওই শরীর দেখার। মায়া হয় কাকদের জন্য। তাড়িয়ে দেয় না। ওরাও তাকে ভয় পায় না। কাছে গেলে উড়ে যায় না। বন্ধু হয়ে উঠেছে হয়তো। কখনো শত্রæ হবে না। এখানে অনেকে আসে। আড্ডা দেয়। তাদের সঙ্গে কথা হয়। এই শহরে অসংখ্য মানুষ থাকে। পথে বের হলে মনে হয় বিকেলের ময়দানের জনসভা ভেঙেছে। অনেকের সাথে কথাও বলে। হাসে। তবু বন্ধুত্ব হয় না। বিশ্বাস জন্মে না। কারণ ওরা মানুষ। বহুদিনের অভিজ্ঞতায় বুঝতে পারল মানুষ তার বন্ধু হবে না। তাহলে কেন মানুষের পাশে পড়ে আছে ? বালু সিমেন্টের সাথে ইটের কত ইস্পাত কঠিন সম্পর্ক। একে অপরকে আটকে রাখে। তাকে আগলে রাখার মতো কেউ নেই। তবু কেন দিনের পর দিন ওই নগ্ন শরীর দেখে নিজের ঘুমন্ত কামকে জাগিয়ে তুলছে? কেন অন্যের রমণের দৃশ্য দেখার নেশায় হারিয়ে যাচ্ছে? এদের ছেড়ে চলে যাবে সে। চলে যাবে এই শহর ছেড়ে। পৃথিবীর নগ্ন স্নান দেখতে দেখতে এসব ভাবছিল রাহাত। এবার সত্যি শহর ছাড়বে। ওই নগ্ন স্নান দেখার নেশা তাকে আটকে রাখতে পারবে না।

দিনের আলো তখনো ফুল হয়ে ফোটেনি। বৃষ্টি চলে গেছে অন্য জগতে। রাহাতের ভাবনা স্থির হলো। মানুষের কাছ থেকে নিজেকে নিয়ে যাবে সে অনেক দূরে। যে মানুষের ওপর থেকে প্রতিদিন হারাচ্ছে তার বিশ্বাস। হচ্ছে না প্রেম। শুধু যন্ত্রণা বাড়ছে। শরীরের ওপর অত্যচার করছে। ক্লান্ত হচ্ছে। সাময়ীক কামের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়ে অর্ধচেতন পড়ে থাকে। শরীর নষ্ট হচ্ছে দিনের পর দিন। তবু ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতে পারে না। ভয়ে সঙ্কোচিত থাকে। মানুষকে ভয়ঙ্কর মনে হয়। মানুষের হাত থেকে নিরাপদ থাকতে মানুষকে পাহারায় রাখে মানুষ। তাদের পাশে বাস করবে না সে। কীভাবে এক মানুষের ওপর থেকে বিশ্বাস তুলে অন্য মানুষের ওপর রাখে? আজব প্রাণী মানুষ। তার প্রতিবেশী হবে কাক। প্রেম হবে প্রকৃতির সাথে। চলে যাবে পাখির দেশে।

সদ্য স্নান করা পৃথিবীর গায়ে সেই সকালে পা রাখল রাহাত। নগ্ন পা। তখন খুব মনে পড়েছিল শশির কথা। কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়েছিল গলির মুখে। শশির মুখটা সরাতে অনেকক্ষণ লাগল। প্রায় যুদ্ধই করতে হলো মনের সাথে। আটকে দিচ্ছিল বারবার। তারপর হাঁটা শুরু করল। এই পথ ধরে সে হেঁটে যাবে কোলাহল মুক্ত নির্জন অরণ্যে। যেখানে মানুষ নেই। কখনও অনুভব করবে না সে মানুষ। বা তার পূর্ব পুরুষ মানুষ ছিল। তার ওপর থেকে কেউ বিশ্বাস হারাবে না। কারো ভয়ে সে মুখ লুকাবে না। কারো শরীর দেখার নেশা থাকবে না। কারো রমণ দেখবে না। প্রেম থাকবে কিন্তু কাম থাকবে না। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো মহাসড়কে। দাঁড়াল সেই বটগাছের নিচে যেখানে বাস দাঁড়ায়। বাসের পেটে ঢুকে পড়ে শহর থেকে পালিয়ে যাবে। খানিক পরে একটা ডাবল ডেকার এসে দাঁড়াল। দোতলায় উঠে পড়ল রাহাত। জানালার পাশের সিটে চুপচাপ বসল। তখন একটা মুখ চোখের সামনে। সে মুখটা শশির। শশি বাসে আছে নাকি? তাহলে শশিকে নিয়ে হারিয়ে যাবে অন্য পৃথিবীতে। কেন শশিকে নিয়ে যাবে? সে তো মানুষ ছেড়ে দূরে চলে যেতে চায়। শশি মানুষ না? ও শুধু প্রেম? না মোহ? না আকর্ষণ? কিছু আলাদা করতে পারছে না। সরাতেও পারছে না ওই মুখ। শশির মুখ সামনে এলে রমণের দৃশ্যটাও আসে। তখন সে মাতাল হয়।

এক খণ্ড আলো এসে ঠিকড়ে পড়েছে রাহাতের চোখে-মুখে। তার সামনে পেছনে বসছে শহরের ব্যস্ত মানুষ। গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়ায় অস্থির যারা। রাহাতের তাড়া নেই। গন্তব্যও নেই। সে হারাতে চায় যেখানে মানুষ নেই সেই অরণ্যে। কোথায় আছে এমন অরণ্য জানে না। মাথাটা এলিয়ে দিল সামনের চেয়ারের পিঠে। দুচোখ ভেঙে পড়ল রাত জাগা ঘুমের ভারে। ঘমুটা বেশ গভীর হয়ে নামল আর তখনই চশমাটা খুলে পড়ল পায়ের নিচে। পিষে গেল দৃষ্টি। সেই শব্দে মাথা তুলল। চোখের সামনে আলো নেই। ঝাপসা দেখছে। কী যেন ভেবে মাথাটা নুইয়ে রাখল। ঘুম নামল গত রাতের বৃষ্টির মতো। বাস চলছে গড় গড় করে। কখনও স্টেশন পেলে দাঁড়াচ্ছে। মানুষ নামছে, নতুন করে ওঠছে। একটা আসন পেতে ছুটছে। কেউ দাঁড়িয়ে আছে গা ঘেঁষে। তাদের বগলের উৎকট গন্ধ বিরক্ত করে তুলছে। রাহাতের স্টেশন নেই। শেষ যেখানে বাস থামবে সেখানে নেমে পড়বে। হাঁটা শুরু করবে অরণ্যের দিকে। কতক্ষণ এভাবে বসেছিল জানে না। এরপর বাসের গায়ে কে যেন থাপ্পড় মেরে ডেকে চলছে। নামুন। নামুন।

মাথা তুলল রাহাত। দেখল সে ছাড়া কেউ নেই। এখন নামতে ইচ্ছে করছে না। খানিক পরেই মানুষ উঠতে শুরু করল। বাসটা ঘুরে হয়তো চলে যাবে ফেলে আসা স্টেশনে। সে ফিরতে পারবে না। তার জীবনের কোনো স্টেশন নেই।

বাস থেকে নেমে পড়ল রাহাত। স্থির পায়ে দাঁড়িয়ে তাকাল বাসটার দিকে। ও ফেলে আসা জীবনে ফিরতে পারছে। সে কেন ফিরতে পারছে না সেই জীবনে ? যে জীবন জুড়ে আছে শশির নগ্ন শরীরের স্নান। পাশের বাসার রমণের দৃশ্য। ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানার আনন্দ। কাকগুলোর কথা খুব মনে পড়ল। মনে পড়ল আর একটা জীবনের কথা। যে জীবনে সে ঘুড়ি হয়ে উড়ে বেড়াত আকাশে। নাবিক হয়ে জাহাজ ভাসাত সমুদ্রে। বাড়ির পেছনে ছোট্ট পুকুরটা ছিল তার সমুদ্র। মেলা থেকে কিনে আনা টিনের নৌকাটাকে জাহাজ ভেবে বাসাত। সেই তার শৈশব। সেই ফেলে আসা পথ। কতবার ফিরতে চেয়েছে সেই মায়ের কাছে যে তাকে আগলে রাখত বুকে। পারেনি ফিরতে। মা এখন অন্যের সংসার সামলায়। বাবার নতুন ঠিকানা হয়েছে। সে কার? এর উত্তর পায়নি আজও। এখন কেউ তাকে আগলে রাখে না। ডাকে না। হাঁটতে শুরু করল ডান দিকে মোড় নিয়ে যে পথটা চলে গেছে সে পথে। এ পথেও মানুষ হাঁটে। তাই বেশিক্ষণ হাঁটবে না সে। তারপর সামনে গিয়ে দেখল নিখাদ অরাণ্যের পেটে ঢুকে পড়েছে একটা পথ। মানুষের পায়ের ছাপ নেই। সেই পথ ধরল। হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল বহুদূরে। পেয়ে গেল সেই নির্জন মানবশূন্য অরণ্য। হাঁটছে আপন মনে। পাখিরা গান করছে। কতরকম ডাক পাখির। মুগ্ধ হয়ে গেল। মনের জানালা খুলে দিল। প্রজাপতি ওড়ছে। সোনালি ডানার চিল তার মাথার উপরের আকাশটা দখল করেছে। হঠাৎ পা থেমে গেল। একটা শব্দ তার ভাবনা ভাঙল। টেনে ধরল লাগাম। দাঁড়িয়ে আছি নিশ্চুপ। শব্দটা আর হচ্ছে না। এই শব্দটা মানুষের। সেটা বুঝতে পারল। তাহলে এখানেও মানুষ আছে। মানুষ নেই কোথায়? সেখানে যাবে। আবার হাঁটতে শুরু করল। মনে হচ্ছে তার পেছনে কেউ হাঁটছে। এবার ফিরে তাকাল। হ্যাঁ, তার পেছন ধরেছে সতের-আঠার বছরের এক কন্যা। দূর থেকে মুখটা অনুমান করতে পারছে না। শশি এসেছে নাকি! আসতে পারে। তা তার পেছনে আসবে কেন? জানবেই বা কী করে সে এই অরণ্যে হারিয়ে যেতে এসেছে। নিশ্চুপ দাঁড়াল কিছুক্ষণ। তরুণি কাছে এলে দেখবে। কিন্তু আসছে না। তার পায়ে পা মিলিয়ে চলছে? ইচ্ছে করেই দূরত্ব রাখছে? তা কোথা থেকে এলো? কেন তার পেছন ধরল? নানা প্রশ্ন মনে। ওখানে আর দাঁড়াল না। হাঁটা শুরু করল। হঠাৎ তার বিষণ্ন মন উৎফুল্ল হয়ে উঠল। চলার গতি কমল। মন চাচ্ছে মেয়েটা আরও কাছে আসুক? পাশে হাঁটুক। মনের খবর সে জানে না। তবে এমন একটা কিছু হচ্ছে। না হয় চলার গতি কমবে কেন! মানুষের কাছ থেকে দূরে এলো। আবার মানুষের জন্য পা থামাল। আশ্চর্য।

বিকেল নেমে পড়েছে অরণ্যের গায়ে। দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলতে বসেছে আলো। সে পুরো অন্ধ হলেই অন্ধকারে ডুবে যাবে অরণ্য। তখনও গন্তব্য জানে না রাহাত। থাকার চিন্তা নেই। খাবারের কথা ভুলে গেছে। ওই তরুণী তার মনে প্রবল আগ্রহ জাগিয়েছে জীবনকে উপভোগ করার। মনে পড়ল শশির কথা। সেই রমণের দৃশ্য ভেসে উঠল চোখে। এসব মনে হলে শরীরটা নিয়ন্ত্রণ হারায়। তবু পেছন ফিরে তাকাল না সে। কিন্তু তরুণী এলো কোথা থেকে, সে চিন্তা নামেনি মাথা থেকে। মন বলছে শশি। এই গহিন অরণ্যে যাচ্ছেই বা কোথায়? তার মতো মানুষ থেকে দূরে সরে যেতে চাচ্ছে নাকি? হতে পারে। আসুক কাছে। হাঁটুক পাশে। সংলাপ নাই হোক, দৃষ্টি বিনিময় তো হবে। কতক্ষণই চুপ করে থাকবে? জানার কৌতূহল তৈরি হবে। তারপরও অনেকক্ষণ হাঁটল। পথ খুব আগাল না। একটা জলাশয়ের সামনে এসে দাঁড়াল। নানা রঙের মাছ সাঁতার কাটছে। সচ্ছজলের নিচে পাথরের কণাগুলো দেখা যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে আছে রাহাত। তরুণী তখনো আসেনি। তা কেন? নিজেকে অবধমন করতে পারছিল না সে। মানুষ ছেড়ে এসে মানুষের খোঁজে ছুটে চলছে। ভাবছে চলে গেল নাকি। কোথায় যাবে এই জঙ্গলে? না কোনো বিপদ হলো? পেছন ফিরে তাকাল। দেখল তার দৃষ্টির শেষ সীমায় লাঠিতে ভর করে ঠুকরে ঠুকরে চলছে এক বৃদ্ধা। চমকে উঠল। কোথায় গেল সেই তরুণী? কোথা থেকে এলো এই বৃদ্ধা? বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কয়েক মিনিটেরই তো ব্যবধান। ওই বৃদ্ধার কাছে যাবে সে। জানতে চাইবে এই রহস্যের নাড়ি নক্ষত্র। বৃদ্ধার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বৃদ্ধা তাকিয়ে আছে স্থির দৃষ্টিতে। রাহাতের খুব চেনা লাগছে। বৃদ্ধা বলল, অবাক হচ্ছ বুঝি! আমি সেই তরুণী যাকে তুমি প্রথম দৃষ্টিতে দেখেছিলে। বিশ্বাস হচ্ছে না? প্রথম দৃষ্টি আর শেষ দৃষ্টির পার্থক্য যান? অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেছে।

তোমাকে আরও আগে দেখেছি আমি। কোথায় দেখেছি সেকথা বলো।

লজ্জায় মুখ লাকুতে চাইল বৃদ্ধা। থাক। ফেলে আশা দিনের কথা মনে করতে নেই। সে কথা সব সময় সুখের হয় না। তাই ভুলে থাকাই ভালো।

      না আমি জানতে চাই। কোথায় দেখেছি বলো।
       সে আমি জানি না। আমার নাম শশি।
      চমকে উঠে থমকে দাঁড়াল রাহাত। শশি। বিশ্বাস হচ্ছে না তার। কিন্তু ভুলও মনে হচ্ছে না। শশির ডান গালে তিলক দেখেছে সে। সেটা আছে। মুখটা ভুলতে পারবে না। তবে শশির এ অবস্থা কেন? তার পিছেই বা হাঁটছে কেন? শশি কী জানত সে তার নগ্ন শরীর দেখার নেশায় পড়েছিল। একটা কথা বলতে এসেছিলাম। ভুল পথে চলছ তুমি। ভুল পথে জীবন নাই। ওখান থেকে ফিরে আসা যায় না। তুমি ওই জলাশয়ের কাছে গিয়ে মুখটা ধুয়ে আস। 

রাহাত জলাশয়ের কাছে গেল। মুখটা নিচু করতেই আতকে উঠল। এক বৃদ্ধর ছবি ডুবে আছে জলে। লম্বা সাদা দাড়ি। কার ছবি। মুখ না ধুয়ে ফিরে এলো।
মুখ না ধুয়ে চলে এলে যে?
জলের ভেতর কার মুখ ডুবে আছে। ভয়ে আতকে উঠে চলে এসেছি।
কার মুখ? চিনতে পারোনি ?
জানি না কার মুখ। কোনো এক বৃদ্ধর মুখ। লম্বা সাদা দাড়ি।
শশি হাসল। নিজেকেই চিনতে পারছ না। ওটা তোমার মুখ। বুড়া হয়ে গেছ তুমি।
বিশ্বাস হচ্ছে না রাহাতের। সে বুড়া হতে পারে না। দেখতে পারছে না নিজের মুখ। আয়না নেই। কাকে জিজ্ঞেস করবে সে বুড়া হয়েছে কিনা। এই বৃদ্ধা ছাড়া কেউ নেই। বিশ্বাস করতেই হবে বৃদ্ধার কথা।
রাহাতের হাত ধরল বৃদ্ধা। জঙ্গলের ভেতর গিয়ে বসল গাছের নিচে। এরপর বলল তার জীবনের গল্প। তোমাকে ভালো লেগেছিল খুব। কিন্তু বলতে পারিনি। না বলতে পারাটা আমাদের এক রোগ। সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার সময় বোবা করে দেয়। আমার শরীরের নেশায় পড়েছিলে তুমি। ওখানে ভালোবাসা ছিল না। ছিল কাম, মোহ। ওটার স্থায়ীত্ব কম। কাম যদিও তৈরি করে প্রেম। তবে শেষ পর্যন্ত কাম পরাস্ত হয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয় প্রেম। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম তোমায়। দেখলাম সব ছেড়ে তুমি চলে যাচ্ছ শহরের বাইরে। তখন নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি। নিজের অজান্তেই পিছু নিলাম। এখানে প্রেম ছিল। আমাকে ভোগের বস্তু বানাতে না পেড়ে অভিমানে তুমি শহর ত্যাগ করলে। আমার প্রতি সেই নেশা, সেই আকর্ষণ আছে এখন তোমার?

রাহাত তাকিয়ে আছে। সে দেখছে অতীতের দৃশ্য। এসব তার কানে যাচ্ছে না। সন্ধ্যা নেমেছে। দেখল তার সামনে পৃথিবী নেই। পাখির গান নেই। ফুলের বাগান নেই। জলাশয় নেই। সেই বৃদ্ধা নেই। চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে অন্ধকারের ঢেউ। যেখানে সে হারিয়ে ফেলেছে জীবনের মহাসড়ক।

One thought on “ঈদসংখ্যার গল্প।। জীবনের মহাসড়ক।। শামস সাইদ

  • এপ্রিল ২০, ২০২৩ at ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ
    Permalink

    অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় জীবন ঘরানার গল্প। কথাসাহিত্যক শামস সাইদ কে অনেক ধন্যবাদ।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *