ঈদ সংখ্যা ২০২১- এর ছোটগল্প।। বিভ্রম।। মো. রেজাউল করিম

সনাতনী অভিভাবকসুলভ সন্দেহ, আশঙ্কা ও সংশয়ের বেড়াজাল ডিঙিয়ে মিলন ও মিথুন যুগলের মহামিলনের সেহনাই বেজে উঠল।
মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে একসাথে পড়াশোনা করেছে ওরা, পরস্পরকে জেনেছে নিবিড়ভাবে, ঘনিষ্ঠতা থেকে ভালো লাগা, ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা- এভাবেই বারো বছর অতিক্রান্ত করেছে; না, শুধু অতিক্রান্ত বললে ভুল হবে, বরং বলা যেতে পারে- সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ভালো লাগা কবে, কোন শুভলগনে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে, তা ওরা কেউ-ই মনে রাখেনি, প্রয়োজনও বোধ করে না। মাধমিক বিদ্যালয়ে একসাথে দাড়িয়াবান্ধা কিংবা চিবুড়ি খেলেছে, ছুটি হলে সাইকেলে করে গ্রামের দীর্ঘ মেঠো পথ পাড়ি দিয়ে যার যার বাড়িতে গিয়েছে তবে একসাথে নয়, পৃথকভাবে- মেয়েরা এক দলে সাইকেলে প্যাডেল মারত, ছেলেরা আর এক দলে। মাধমিক পাশ করার পরে অনেক মেয়েই লেখাপড়ায় ইস্তফা দিয়েছে, পাশ করতে না পেরে কেউ-বা পরবর্তীবারের জন্য বিদ্যালয়ের খাতায় নাম পুনঃলিপিবদ্ধ করেছে।
কলেজে পড়ার সময় যাত্রাপথ আরও দীর্ঘ হয়েছে, যাওয়া-আসার সময়ও দীর্ঘতর হয়েছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শ্যেনদৃষ্টি তীক্ষè থেকে তীক্ষèতর হয়েছে। ধবল বক পাখি যেমন জলজ আগাছার মধ্যে চোখ মুদে থাকার ভান করে শিকার ধরার জন্য থির হয়ে এক পা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে সমাজের নীতিনৈতিকতা রক্ষকরূপী মানুষগুলো তেমনি ওদের দুজনের দিকে লক্ষ্য রেখেছে। ততদিনে যৌবনধর্ম দুজনেরই চাগাড় দিয়েছে। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একটু কথা বলা, কাছাকাছি হওয়ার জন্য দুজনেরই মন আকুলি-বিকুলি করেছে, কিন্তু ওরা জানে এ-খবর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গেলে মিথুনের লেখাপড়া বন্ধ হবে, বসতে হবে বিয়ের পিঁড়িতে গাঁয়ের কোনো দোকানি কিংবা ধনী কৃষকের বখে যাওয়া ছেলের সাথে।
উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বাবা-মায়ের, বিশেষত মায়ের প্রবলতর আপত্তি সত্ত্বেও বাবার আশকারায় সুদূর পঞ্চগড় থেকে সাধারণ এক মুদি দোকানির মেয়ে মিথুন রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এলো, সাথে মিলনও। গ্রামে দু’কথা হয়েছে, গুঞ্জনও উঠেছে; মেয়েমানুষের এত পড়াশোনার দরকারটা কী তা জানার জন্য গাঁয়ের লোক তার বাবার দোকান পর্যন্ত এসেছে। ওসমান তালুকদার এসেছে তার বখে যাওয়া ছেলের সাথে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে; মিথুনের পাকা গমের মতো গাত্রবর্ণ দশ বছর আগেই নাকি তালুকদারের বউ-এর মনে ধরেছে, তখন সে পড়ত সবে প্রাথমিকে। এসব প্রচেষ্টাই নিষ্ফল হয়েছে লেখাপড়ার প্রতি মিথুনের অনড় অবস্থানে।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে, মহাবিদ্যালয়ে একই ঘরে দুজন ক্লাস করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ঘরে ক্লাস করতে মিথুন-মিলনের দুজনেরই ভিন্ন অনুভূতি। অনেক ছেলেমেয়ের মাঝেও মনে হয় দুজন কাছাকাছি, পাশাপাশি কিংবা মুখোমুখি। তবে গাঁয়ের ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়েও আছে, তাদের দুজনের মেলামেশার খবর সনাতনী চিন্তাভাবনার বাবা-মায়ের কাছে যেন পৌঁছে না যায়, সে-কারণে মনের দরজায় শেকল তুলে কথাবার্তা হয় রাত গভীরে মোবাইল ফোনেই। সেখানেও বিপত্তি, দুজনের কারোরই আর্থিক ভিত্তি এত সবল না যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল ফোনে কথামালার ঝড় তুলবে। মোবাইল ফোনের অর্থ-সংস্থানের জন্য বিকেলের চা-নাস্তা বন্ধ করতে হয়েছে মিথুনকে। এর মধ্যেই দুজন একে অপরের প্রতি অনুরাগ, ভালো লাগা, ভালোবাসা বিনিময় করেছে; স্বপ্ন বুনেছে অনাগত ভবিষ্যতের ঝলমলে রঙিন দিনের। তেমন দিনের স্বপ্নে বিভোর হয়েছে, যেদিন দিন পার করবে একে অপরের প্রতি চেয়ে চেয়ে, আর রাত পার করবে কথামালার সাগরে ডুব দিয়ে।
অনার্স পরীক্ষা দিয়ে ক্লাসের অনেকেই গেল সুদূর কক্সবাজার বেড়াতে। মায়ের অনুমতি মিলবে না, অর্থ-সংস্থানেও বাবা হিমশিম; নানা চিন্তায় মিথুন শুরু থেকেই অনিচ্ছুক। মিলনকে বলল, ‘অন্য কোনো মেয়েও তো যাচ্ছে না, আমি যাচ্ছি না। সময় যখন হবে, তুমিই নিয়ে যেও, তখন শুধুই আমরা দুজন- আর কেউ না। দিনের বেলা ঘুরে বেড়াব সবুজ অরণ্যবেষ্টিত পাহাড়ে, বিকেলে সাগরপাড়ে বসে দূর-দিগন্তে চেয়ে চেয়ে হারিয়ে যাব সীমানাবিহীন জলরাশির অজানা ওপাড়ে, যেখানে সাগর মিশেছে আকাশের গায়। আর রাত্রিতে? হি হি হি। তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ব।’
“সে-কি, কথা বলেই ঘুম?’”
“হুম, গোটা দিন কথা বলে কথার সাগরে আবারও জোয়ার আসতে হবে না? এজন্যই তখন ঘুম, হি হি হি।”
কক্সবাজার থেকে ফেরা পর্যন্ত মিথুন হলেই থাকল মিলনের অপেক্ষায়। মিলন এলো, নিরাপদ জায়গায় দুজন দেখাও করল। কক্সবাজার যাওয়ার আগে মিলনের মধ্যে যে আগ্রহ, উচ্ছ্বাস মিথুন দেখেছিল, ফিরে আসার পরে তা যেন মিইয়ে গিয়েছে। কক্সবাজারের গল্প শুনতে মিথুন যতটা অভিলাষী, মিলন তা বলতে মোটেও তেমনটি না। সাগরের পাড়ে বসে দূর আকাশ দেখতে কেমন, এ-প্রশ্নে মিলন কেমন যেন মৌনতার সাগরে ডুব দেয়, কথামালায় ছেদ টেনে দেয়। মিথুন এ-কথা শুনে বিস্মিত হয় যে, মিলন নাকি সাগরের কাছে যায়নি, স্তম্ভিত হয় সে নাকি সাগরে গোসল দূরের কথা, পানিতে পা-টুকুও ডোবায়নি।
“কেন বলো-তো মিলন?”
মিলন বলে ‘মিথুন, সাগর দেখে আমার মনে হয়েছে, সে আমাকে ডাকছে, তার গভীরে অবগাহন করতে বলছে। প্রথম রাতেই আমি স্বপ্ন দেখেছি আমি সাগরের গভীরে ডুব দিয়েছি; সাগর মন্থনে মত্ত হয়েছি, সেখানে দেখেছি এক তরুণী- শরীরে তার কোনও বস্ত্র নেই, গোটা শরীর রক্তশূন্য ফ্যাকাশে; সাগরের তলদেশে মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ওপরে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টায় রত, কিন্তু কে যেন তাকে আটকে রেখেছে। সে-নাকি বন্ধুদের সাথে সাগরে জলকেলীতে নেমেছিল, উত্তুঙ্গ জোয়ারের পানিতে সাঁতরে সাঁতরে চলে গিয়েছিল অনেক দূরে, কখন সাগরে ভাটার টান পড়েছে কেউ খেয়াল করেনি; শত চেষ্টাতেও সে আর সাগর তীরে ফিরে আসতে পারেনি। আমায় বলল, তাকে সাগরের তল থেকে কাঁধে করে তুলে নিয়ে আসতে। আমি চেষ্টা করলাম কিন্তু কে যেন মেয়েটাকে জাপটে ধরে রেখেছে, আমাকেও টেনে ধরতে চায়। এ-কারণে আমি সাগরের পানিতে নামিনি।’
কিছুদিন আগে সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছিল কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিল। সেই দলের একটি মেয়ে সাগরে ভাটার টানে হারিয়ে গিয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মিথুন সে-কথা মিলনকে মনে করিয়ে দিয়ে বলল, ‘তোমার অবচেতন মনে সে ঘটনাটিই রয়ে গিয়েছে, যা তুমি স্বপ্নে দেখেছ। আর কী দেখেছ বলো-তো? নিশ্চয় সেই মেয়েটির চেহারার সাথে আমার মিল আছে? শেষ কথাটাতে মিলন মিইয়ে গেল। ভাবল মিথুন এটা বুঝল কেমন করে?
“এ-খবর সংবাদপত্রে এসেছে? কই, আমার চোখে পড়েনিতো?” মিথুন সাময়িক বিহ্বলতা কাটিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টালো। সেদিন ওদের কথা আর বেশি এগোয়নি।
দুবছর পার হয়েছে, দুজনই স্নাতকোত্তর পাশ করেছে, মিলন সাধারণ একটা চাকরি জুটিয়ে নিয়েছে। সে মায়ের কাছে বিয়ের কথা, তার পছন্দের পাত্রীর কথা জানিয়ে বিয়ে আয়োজনের কথা বলল। খবর পৌঁছে গেল মিথুনের বাসায়ও। মিলন একই গাঁয়ের ছেলে, তার নামে কোনো খারাপ কথা কেউ কোনোদিন বলেনি। তবুও পূর্ব-প্রজন্মের সনাতনী চিন্তার অভিভাবককুল ছেলে-মেয়ের পারস্পরিক পছন্দকে সন্দেহ করে, মিথুনের বাবা ভাবেন মেয়ে কি সঠিক সিদ্ধান্ত নিল? ওদিকে মিলনের বাবা যেন নৈরাশ্যের অতলে হারিয়ে যান; তিনি ভেবে পান না, ছেলের জন্মদাতা হয়ে এতগুলো বছর তার লেখাপড়ার খরচ দিয়ে সে যখন চাকরি পেল, তখন তার বিয়ের পাত্রী খোঁজার অধিকারটুকু তিনি পেলেন না? একজন দোকানদারের মেয়ের সাথে কিনা তার ছেলের বিয়ে, হোক সে-মেয়ে শিক্ষিত, তার পরিবার তো গরিব। তবে মিথুনের গাত্রবর্ণ, রক্তিম ওষ্ঠ মিলনের মায়ের মনে ধরেছে খুব; মায়ের পছন্দ হয়ে যাওয়ায় মিলনের বাবা জগদ্দল পাথরের মতো ভারী পাথর হৃদয়ের গভীরে দাফন করে বিয়েতে মত দিলেন। কিন্তু গোল বাঁধল মিলনের এক কথায়- বউ-ভাতের খরচ সে দিতে পারবে না। বলা চলে বিয়ের খরচ পুরোটাই মিলনের বাবা দিচ্ছেন, ছেলেকে বলেছিলেন বউ-ভাতের খরচটা দিতে, সেটাও নাকি সে দিতে পারবে না; তাহলে বিয়ে করার দরকার কী এত দ্রুত- চাকরি পাওয়ার সাথে সাথে? একরাশ বিরক্তি নিয়ে সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠেই ছেলেকে ডাকলেন, বললেন, “দুটো টাকা খরচ করতে পারবা না তো, বিয়ে করার শখ হইছে কেন? বক্করচক্কর বাদ দাও, চাকরি করছ, অফিস থেকে লোন নাও, তবুও বউ-ভাত করতে হবে, তা-না হলে আমার ইজ্জত থাকবে না গাঁয়ে। বিয়ের পরে নাকি ঢাকায় বেড়াতে যাবা, টাকা নাই তো ঢাকায় যাবা কেমন করে?” মিলন তো বাড়িতে এখনও বলেইনি যে বিয়ের পরে ওরা কক্সবাজারে বেড়াতে যাবে। মিথুনের হৃদয়গহনে দু’বছর পুষে রাখা ইচ্ছে, কিন্তু মিথুনের দুবছরের অভীপ্সা- দুজনে একত্রে পাহাড় ও সাগর ও অরণ্যের মিলনমেলা কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া- মিলন না করতে পারেনি, যদিও কক্সবাজার মানেই সাগর, আর সাগরের ব্যাপারে তার অনীহা। বিয়ের পরে কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা মিলন বাবার কাছে গোপন রেখেছে, ঢাকায় যাওয়ার পরে জানাবে- এই তার অভিপ্রায়। বেশ খানিকক্ষণ বাবা-পুত্রের মনোস্তাত্ত্বিক লড়াই শেষ হলো মিলনের মায়ের হস্তক্ষেপে। বউ-ভাতের টাকা মা দিবেন। “তুমি টাকা কোথায় পাবা, তুমি যে টাকার কথা বলছ, তা নিশ্চয় আমার কাছ থেকেই সরিয়েছ তুমি।” মিলনের মা এবারে উচ্চকিত হলেন, “না, এটা আমার বাপের জমি বিক্রি করে পাওয়া ভাগের টাকা, এটা তোমার টাকা না।” পরাজিত সৈনিকের মতো মিলনের বাবা লড়াইয়ের ময়দান ত্যাগ করলেন; যাওয়ার সময় বলে গেলেন, “খরচ কিন্তু পঞ্চাশ হাজারের কম না, মা-পুতে কথাটা মনে রেখ।”
বিয়ে হলো, বউ-ভাতও হলো। চেনা মেয়ে, তবুও বিয়ের পরে ছেলের বাড়িতে নতুন বউ দেখার ভিড়, এরপরে নাইওর যাত্রা; এ-বাড়ি, ও-বাড়ি দাওয়াত- এবাবেই কেটে গেল সাত দিন। এ-বাড়ি, ও-বাড়ি দুই জায়গাতেই দিনরাত্রি এত ভিড়, সেজেগুজে বসে থাকা আর এক বেলার খাবার পেটে থাকতেই আবারও খেতে বসা- দুজনেই ক্লান্ত হয়ে পড়ল। দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিল ওরা, এখান থেকে পালাতে হবে। দুজন একান্তে সময় কাটাতে চায়। একান্তে একে অপরকে পেতে চায়- দিনব্যাপী-রাতব্যাপী। উড়ে বেড়াতে মন চায় যেভাবে শরতের আকাশে সাদা মেঘ নেচ নেচে উড়ে চলে— সেভাবে। বাবুই পাখি যেমন তাদের কুটিরে থাকে একাকী, কেউ সেখানে আসে না তাদের দেখতে, সেভাবেই ওরা সময় কাটাতে চায় একাকী-একান্তে। বাইরে যাবে তাও দুজনে, সাগরপাড়ে সবুজ অরণ্যবেষ্টিত পাহাড়ে, পাহাড়ের খাড়াই বেয়ে ওপরে উঠবে, সেখানে নিশ্চয় আছে নাম না-জানা অচেনা-অজানা পাখি, ধ্যানমগ্ন পাহাড়ের নিস্তব্ধতা ভঙ্গকারী পাখিদের কলতানে ওরাও গাইবে। পাহাড়ের ওপরে নিশ্চয় ঝিড়ি রয়েছে, স্বচ্ছ জলধারার ঝিড়ি, ঝিড়ির ঠাণ্ডা জলে পা ডুবিয়ে শুনবে কলকল শব্দ। ওখান থেকে কি সাগর দেখা যাবে? যাবে হয়ত। দেখা না গেলেই-কী? দুপুরে সাগরে নেমে দুজনে হাতে হাত ধরে নাইবে। গাঁয়ের ছেলেমেয়ে, সাঁতার তো শিখেছে গ্যাদাকালেই।
ঢাকায় মিলনের সম্পর্কীয় ভায়ের বাসায় একরাত কাটিয়ে পরদিনই ওরা রওনা দিল কক্সবাজারে। মিথুনের ইচ্ছে শহরের কোলাহল থেকে দূরে সাগরপাড়ের কোনো হোটেলে থাকা, সেভাবেই মিলন ঢাকা থেকে হোটেল বুকিং দিয়ে এসেছে। সেখান থেকে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় সাগর দেখা না গেলেও সাগরের গর্জন নিশ্চয় শোনা যাবে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সূর্য যখন তার নরোম আলো দিয়ে পৃথিবীকে আবেষ্টন করবে সে-সময়ে সাগরের উত্তাল ঢেউগুলোর চূড়ায় চূড়ায় দেখবে সেই আলোর নাচন।

কক্সবাজার যখন ওরা পৌঁছল তখন রাত আটটা। বাস থেকে নামার পরে হোটেলের গাড়ি ওদের এবং আরও একটি পরিবারকে নিয়ে হোটেলে পৌঁছে দিল। পাহাড়ঘেঁষা হোটেলটি প্রথম দর্শনেই মিথুনের ভালো লেগে গেল। অভ্যর্থনা কক্ষে বিশাল ঝাড়বাতির নিচে হাসিমুখে স্যুট পরে দাঁড়িয়ে থাকা স্টাফ সহাস্যে নাম-ঠিকানা লিখতে বলল। নাম-ঠিকানা লিখতেই দেখে দেয়া হয়েছে ওয়েলকাম জুস, ঘরে গিয়ে দেখে বাঁশের ছোট্ট ঝুড়িতে নানা বর্ণের ফল। ঘরের পেছনে পাহাড়ের দিকটায় ছোটো একটা ব্যালকনি। প্রতিটি ঘরেই আছে, কিন্তু দেয়াল দিয়ে এমনভাবে ঢাকা যে, এক ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ দুই হাত পরের ব্যালকনির মানুষকে দেখতে পাবে না। ঘরের সামনের দিকটাতে দীর্ঘ করিডোর। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের চকচকে ওয়াশরুম ফুলতোলা গ্রামের মিথুনের জন্য ঘোর-লাগা বিস্ময়কর ব্যাপার বটে। এসব দেখে মিথুন সারাদিনের পথযাত্রার ক্লান্তি ভুলে কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসায় মিলনের বুকে একরকম ঝাঁপিয়েই পড়ল।
সেদিন ছিল চতুর্দশী। রুফটপ ফ্লোরের রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া করে ছাদে যেতে চাইল ওরা। রাতের বেলায় ছাদে যাওয়ার অনুমতি মিলল না। রেস্টুরেন্টেই সাগরের দিকটায় ওরা বসেছিল, চারপাশে কাচের দেয়াল, পর্যটকরা যেন খাওয়ার সময় প্রকৃতি-দর্শন করতে পারে, সেভাবেই রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা হয়েছে। আরও অনেকক্ষণ বসে থাকল। চতুর্দশীর নরোম আলো গোটা আকাশ থেকে নেমে এসে চরাচরকে এমনভাবে আবেষ্টন করেছে যে, পাহাড়, সাগর, নদী, বনানী সকলেই উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। সাগরের ঢেউ দেখা যায় না, তবে ঢেউ-এর গর্জন শোনা যায়। হঠাৎ দূরে আলো দেখা যায়, হালকা হলুদাভ আলো নিকটবর্তী হতে থাকে- ক্রমেই উজ্জল থেকে উজ্জলতর, তখন স্বল্প জায়গাতেই অনেকগুলো আলো দেখা যায়। মিলন বলে মাছ ধরা বড়ো ট্রলার, হয়ত রেজুখালের সোনারপাড়া ঘাটে আসছে। “সেটা কতদূর এখান থেকে?” মিলন বলল, “কাছেই, জায়গাটা খুব সুন্দর, রেজুখাল ওখানে বাঁক নিয়ে সাগরে মিশেছে। খালের ওপারে ঝাউবন, ডানে কিছুটা দূরে সাগর, রঙ-বেরঙের পতাকাসজ্জিত ছোটো ছোটো অসংখ্য সাম্পান দেখতে পাবা- মনোমুগ্ধকর।”
“সাম্পানে রঙ-বেরঙের পতাকা কেন?” জিজ্ঞেস করল মিথুন।
“তা জানি না। গতবার বেড়াতে এসে টেকনাফ যাওয়ার সময় দেখেছিলাম; কাল তুমি দেখবে।”
“হুম, তবে আমি কিন্তু পাহাড়ে উঠব, পাহাড়শীর্ষ থেকে সাগর দেখব।”
পরদিন খুব সকালে ওরা নাস্তা করে একটা টেম্পোতে করে মেরিন ড্রাইভ ধরে রেজুখাল ঘাটে গেল। মিথুন যেন আজ শিশু হয়ে গেছে। নদীর ওপরের বেইলি ব্রিজের এপারে দাঁড়িয়ে ঝাউবন পেছনে রেখে ছবি তোলে, হেঁটে ব্রিজ পার হয়ে ওপারে গিয়ে দৌড়ে নদীর পাড় বেয়ে নিচে নামে, সাম্পানে উঠে ছবি তোলে। আধা ঘণ্টা ওখানে কাটিয়ে ইনানীর কাছে চলে যায় ওরা। ওখানে পথের ধারে ছোটো একটা টঙ দোকানে ডাবের পানি খায়, কিছুক্ষণ দৌড়াদৌড়ির পর ডাবের পানি খেয়ে শরীর জুড়িয়ে যায়। এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশের বিট আছে দেখে আশ্বস্ত হয়। মিলন আগের বার হয়ত খেয়াল করেনি, হয়ত-বা ছিলও না; এখন বর্ষাকাল, তাই হয়ত এখানে এক পাহাড়শীর্ষ থেকে একটি ঝিড়ির স্বচ্ছ পানি ঝরঝর শব্দ তুলে বিরামহীন নিচে পড়ছে। মিথুন এখানেই পাহাড়ে উঠতে চাইল। পাহাড় মাটির দেখা গেলেও ওপরে নিশ্চয় পাথরের অস্তিত্ব রয়েছে, তা-না হলে পানি এত স্বচ্ছ হবে কেন? এখানে পাহাড়ে ওঠার কোনো নির্দেশনা নেই, ওরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়েই দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে এগিয়ে চলল ওপরে ওঠার রাস্তার সন্ধানে। বিশ কিছুটা হাঁটার পরে পাহাড়ে ওঠার মতো ঢাল পেয়ে গেল। দুজন হাত ধরাধরি করে ওপরে উঠতে লাগল। নিচ থেকে মনে হয়েছিল, নব্বুই কী একশ ফুট হবে। কিন্তু ট্রেকিং-এ অনভ্যস্ত দুজনই কিছুক্ষণের মধ্যে বুঝতে পারল পাহাড়ে ওঠা এত সহজ নয়। অদম্য ইচ্ছা, তারুণ্য আর মোহগ্রস্ত ওরা কখনো দুজন এক অপরকে ধরে, কখনো গাছের কা- ধরে ওপরে উঠতে থাকল। একসময় পাহাড়ের ওপরে উঠে পড়ল, ততক্ষণে বেশ ক্লান্ত দুজনেই। দাঁড়িয়েই বিশ্রাম নিল। মিলন বলল, “মিথুন, কেউ তো নেই এখানে। বেশিক্ষণ থাকাটা কি নিরাপদ হবে?” কিশোরী বালিকার মতো উচ্ছল-উচ্ছসিত মিথুন বলল, “আমি মোটেও ভয় পাচ্ছি না, তুমি তো আছই। আর কেউ যেহেতু এখানে নেই, সমস্যা কী? দেখ দেখ, বলেছিলাম না, ওপরে পাথর আছে। পানি দেখ পাথরের মধ্য দিয়ে গড়িয়ে আসছে। আচ্ছা, পানি কোথা থেকে আসছে?”
“তাতো জানি না, মনে হয় দূরে আরও বড়ো পাহাড় আছে, সেখানে পাহাড়ের গায়ে ঝরনা থেকে।”
“আহা, ঐ জায়গাটা যদি দেখতে পেতাম!”
“মিথুন, এখন নামা উচিত। এখানে দাঁড়িয়ে সাগর দেখে নাও।”
নামার সময় আর পথ ঠাহর করতে পারে না ওরা। অনেকক্ষণ হেঁটেও দেখে গভীর জঙ্গল। না- এ-পথে তো ওরা আসেনি। মাঝবয়সী একজনকে হেঁটে আসতে দেখে, হাতে তার হাঁসুয়া, মিলন বেশ ভয় পায়। লোকটির যদি বদ মতলব থাকে তাহলে সে ঐ হাঁসুয়াধারীর সাথে পেরে উঠবে না। এখানে তার সাথে মিথুন ছাড়া কেউ নেই। শত চিৎকারও কারোর কানে পৌঁছবে না। মিথুনও ভয় পেয়েছে, দুজনই যেন একে অপরকে জাপটে ধরে আসন্ন বিপদের জন্য অপেক্ষা করছে। মানুষটি ততক্ষণে কাছে এসে পড়েছে। দৌড়ে যাওয়াটাও বেমানান, সে যদি ভালো মানুষ হয়ে থাকে তাহলে তো সন্দেহ করে পুলিশের কাছে গিয়ে ওদের দৌড়ের কথা বলবে- তখন একটা হুল্লোড় হবে, জেরার মুখোমুখি হতে হবে, সাংবাদিক এখন দেশের গ্রামে-গঞ্জে, হয়ত খবরের কাগজেও নানা রসালো গল্প ফেঁদে বসবে তারা। লোকটা ততক্ষণে ওদের তিন হাত দূরে, স্মিত হাসি মুখে, “পথ হারিয়ে ফেলেছেন? আমি কাঠুরে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এখানে এসে জঙ্গল থেকে গাছের ডালপালা কেটে গোপন পথে নেমে বাজারে বিক্রি করি। আপনারা উল্টো পথে হাঁটছেন, ওদিকে জঙ্গল, এই দিক দিয়ে নামেন। সেগুন গাছ পেলে বামে নামার ঢাল পাবেন।”
ওনার কথায় আশ্বস্ত হলো ওরা। তার নির্দেশিত পথে নির্বিবাদেই নেমে এলো। দুজনেই খুব ক্লান্ত তখন, আবারও একটা টঙ দোকানে চিপস ও ডাবের পানি খেলো। ততক্ষণে সূর্য মাথায় চড়েছে। শ্রাবণ মাসের গরম, সূর্য মধ্যগগনে, প্রায় এক ঘণ্টা পাহাড়ে ওঠানামা- সব মিলিয়ে ক্লান্ত। মিলন হোটেলে ফিরতে চায়। কিন্তু মিথুন এক পায়ে খাড়া, সাগরে পা ডুবিয়ে তবেই হোটেলে ফিরে গোসল করবে। এ জায়গাটাতে সাগর সৈকতে কোনো ভিড় নেই। দুজনে সাগরের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু মিথুন অনেক বলেও মিলনকে সাগরে নামাতে পারল না। মিথুন তখন সাগরে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে মিলনের দিকে পানি ছিটোচ্ছে। মিলন পানিতে ততটুকু নেমেছে যতটুকু নামলে পায়ের গোড়ালি ভিজে। সে বারবার মিথুনকে উঠে আসতে বলছে, আর মিথুন ডাকছে পানিতে নামার জন্য। মিথুন একসময় রণে ভঙ্গ দিয়ে উঠে এলো। কায়দা করে একত্রে পানিতে বসে এমনভাবে ফটো তুললো যেন দুজনই পানিতে জলক্রীড়ায় মত্ত। মিথুন মিলনের পা-ুর বর্ণ ধারণ করা মখম-ল দেখে আর জোরাজুরি করল না, অথচ সে জানে মিলন গাঁয়ের ছেলে, গ্রীষ্মের কাঠফাটা দুপুরে সাঁতরে ওদের বাড়ির পুকুরটা এপার-ওপার করে দুবার।
হোটেলে ফিরে গোসল করে রুফটপ রেস্টুরেন্টে যখন খেতে বসল তখন মিলন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, তার মুখম-লে ভীতি কিংবা উৎকণ্ঠার চিহ্নমাত্র নেই। পরিকল্পনা হলো সন্ধ্যায় শহরে যাবে বার্মিজ মার্কেট দেখতে, কাল যাবে টেকনাফ। খাওয়াদাওয়া শেষে সাগরকে সামনে নিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকল। ঘরে এসে শীতাতপ-নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটা অন করে বিছানায় গা এলিয়ে ক্লান্তিতে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে। বিকেলে টেম্পোতে চেপে শহরে পৌঁছে ঘোরাঘুরি করল। বার্মিজ মার্কেটে মিলন তিন জোড়া মুক্তোর মালা কিনে মিথুনের হাতে দিয়ে বলল- একটা তোমার, আর দুটো আমাদের মায়েদের। হোটেলে যখন পৌঁছল তখন রাত আটটা। আবারও চেনা রেস্টুরেন্ট। ঘরে ফিরল যখন, রাত তখন দশটা। মিলন ওয়াশরুমে ঢুকল, আবারও শাওয়ার নিবে। মিথুন ঘরের পেছনের দিককার ব্যালকনিতে গিয়ে দরজাটা আলতো করে ভিড়িয়ে দিল। হোটেলের পেছনে পাহাড়ের গায়ে জঙ্গল তখন পূর্ণিমার আলোতে আবেষ্টিত। গাছের ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো যেন মাটি ছোঁয়ার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় রত; চাঁদের আলো গাছের পাতায় পিছলে যেন মাটিকে রাঙিয়ে তুলছে। মিথুন ভাবল খুব ভালো সময়ে ওরা বেড়াতে এসেছে। অমাবস্যা হলে দেখতে হতো ঘোর তমিস্রা। পূর্ণিমার আলো জঙ্গলে যে আলো-আঁধারির মায়াবী এক কোমল, কমনীয় সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে তা হৃদয়-গহনে উপলব্ধি করার মতো। মিলনের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মিথুনের হৃদয় আপ্লুত হয়ে উঠল। ভাবল, মিলন শাওয়ার নিয়ে বের হলেই ওকে ডাকবে এখানে। ও যেহেতু সাগরের প্রতি খুব আহ্লাদিত না, দুজনে চাঁদনী রাতের জঙ্গল দেখবে একানে বসে বসে। আধা রাত পার করবে এখানে বসে গল্পে গল্পে মাতোয়ারা হয়ে।
মিলন শাওয়ার নিয়ে ঘরে কাউকে না দেখে সামনের করিডোরে উঁকি দিল। না, মিথুনতো সেখানে নেই। কী হলো মিথুনের- তার মনে হলো, মিথুন নিশ্চয় সাগরপাড়ে গিয়েছে। একা এত রাতে? পাগলিটা তা করতে পারে- সাগর বলতেই ওর মাথায় নাচন উঠে। মিলন দ্রুত নিচ তলায় নেমে শুনল মিথুন তাকে ডাকছে। সে মিথুনের গলা দূর থেকে শুনতে পেলো- মিলন, মিলন…। মিলন প্রায় দৌড়ে রাস্তা পেরিয়ে সাগর সৈকতে। বেশ দেরি হওয়ায় মিথুন ঘরে ঢুকে দেখে ওয়াশরুমের দরজা খোলা, ঘরের মূল দরজাও খোলা। করিডোরে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট এক মানবাবয়ব দেখতে পায়- মিলন, হাঁ মিলনই তো, ও রাস্তা পার হয়ে কোথায় যাচ্ছে? মিথুন দ্রুত করিডোর পেরিয়ে নিচের লনে নেমে মিলনেকে ডেকেই চলল। লন পেরিয়ে হোটেলের মূল ফটক, সেখানে গার্ড দাঁড়িয়ে। গার্ড বলল, “ছারে বাহিরে গেছে, বোধ হয় দোকানে।” মিথুন মেরিন-ড্রাইভ পেরিয়ে দ্রুত সৈকতে নেমে পড়ল; মিলন তখন হাঁটু পানিতে। মিথুনের চিৎকার তার কানে কি পৌঁছল? মিলন সাগরের উত্তাল বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল, মিথুনও দৌড় দেয়, মিলন যে জায়গায় ঝাঁপ দিয়েছে, সেখানে সে-ও ঝাঁপ দেয়, সাথে সাথে ভাটার নিম্নগামী ঢেউ তাকে টেনে নিয়ে যায় সাগরের অতলে।
মিলন ততক্ষণে জলের নিচে মিথুনকে দেখে তার শরীর বস্ত্রহীন, ফ্যাকাশে, বোধ হয় কোনও মাছ ঠুকরে ঠুকরে ওর চোখ দুটো খেয়ে ফেলছে, তবু সে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে।

লেখক পরিচিতি: কথাসাহিত্যিক মো. রেজাউল করিম ১৯৬৪ সালে কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণি নিয়ে স্নাতকোত্তর পর্ব শেষ করেন। ১৯৮৯-এ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মজীবন শুরু করেন। তাঁর ১৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা ৪টি উপন্যাস, ২টি শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ, ২টি কিশোর গল্পগ্রন্থ, ও ২টি ভ্রমণভিত্তিক ছোটো গল্পের বই ও ১টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

৬ thoughts on “ঈদ সংখ্যা ২০২১- এর ছোটগল্প।। বিভ্রম।। মো. রেজাউল করিম

  • মে ৫, ২০২১ at ১০:৩০ অপরাহ্ণ
    Permalink

    ভালো লাগলো গল্পটি।সুন্দর বিন্যাস।

    Reply
    • মে ৬, ২০২১ at ৭:৩২ অপরাহ্ণ
      Permalink

      গল্পটি পড়া ও মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

      Reply
  • মে ৫, ২০২১ at ১১:৪৮ অপরাহ্ণ
    Permalink

    অসাধারণ লেগেছে আমার কাছে ছোটগল্পটি।
    সত্যিই বিভ্রম।

    Reply
    • মে ৬, ২০২১ at ৭:৩৩ অপরাহ্ণ
      Permalink

      ভালো লেগেছে জেনে সত্যিই আনন্দিত

      Reply
      • মে ৭, ২০২১ at ২:৪৫ অপরাহ্ণ
        Permalink

        পড়লাম। ভালো লাগল।

        Reply
        • মে ১২, ২০২১ at ৯:৪০ অপরাহ্ণ
          Permalink

          জেনে খুব আনন্দিত হলাম। ধন্যবাদ অভি ভাই।

          Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *