ছোটগল্প

ছোটগল্প//করোনায় মানবসেবার কারণে ফিরে এলো সুমনা//রণজিৎ সরকার

বাঁকা চাঁদ দিনে রাতে ঘুরতে ঘুরতে পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদে পরিপূর্ণ হয়। সুমনা আর কাজল সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন রাত্রি একে অপরকে জানা শোনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্কের পূর্ণতা পায়। ভালো সম্পর্ক গড়তে গেলে সততা, বিশ্বস্ততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়নীতি, শিষ্টাচার, ধৈর্য-সহিষ্ণুতা, মায়া-মমতা, ক্ষমা, উদারতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, সদাচরণ আর শ্রদ্ধাবোধের জায়গায় লাগে। তবেই সে সম্পর্ক চিরদিনের সুসম্পর্কে পরিণিত হয়। এত কিছু পরও বিভিন্ন কারণে অনেকের সুসম্পর্ক নষ্ট হয়। আয়না ভেঙে যাওয়ার মতো ভেগে যায় সুসম্পর্ক।
এত গভীর সম্পর্কের পরও সুমনা হঠাৎ কাজলকে অবমূল্যায়ন করতে থাকে। কাজল বুঝতে পারে সুমনা বাটপার টাইপের একটা ছেলের প্রলোভনে ভুল পথে পা দিচ্ছে। ভুল পথ থেকে ফেরানোর জন্য কাজল বুঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু সুমনা কিছুতেই বুঝতে চায় না। বরং বার বার ঝগড়া হচ্ছে। সুমনা অবমূল্যায়ন করছে কাজলকে। তবুও সে কিছু মনে করে না। ভালোবাসার মানুষটাকে তো আর ভুল পথে যেতে দেওয়া যায় না। আর এই ভুল পথের কাঁটা বিঁধলে সে কাঁটা মন থেকে আর কখনোই কোনো ভাবে বের করতে পারবে না। এই কাঁটার আঘাতের যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন। সুমনাকে সে যন্ত্রণা যেন ভোগ করতে না হয় সেজন্য বার বার বোঝানোর চেষ্টা করে কাজল। কিন্তু তবুও সে অপ্রমাণিত হয়। ভীষণ কষ্ট পেতে থাকে কাজল। কাজল ভাবে-আমি জীবিত অবস্থায় সুমনার কষ্ট দেখতে পারব না। তাকে সব সময়ের জন্য সুখী দেখতে চাই। সুমনার কষ্ট দেখার চেয়ে আমি নিজেই আত্মহত্যা করব। তবুও আমি সুমনার দুঃখ কষ্ট জ¦ালা যন্ত্রণা দেখতে পারব না। সুমনার খারাপ আচরণে পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদের মতো পূর্ণাঙ্গ মধুর সম্পর্ক আজ অমাব্যসার অন্ধকার নেমে আসে কাজলের জীবনে।
সুমনা রাগী ও জেদী মেয়ে কিন্তু সে মেধাবী। কাজল ঠিক বিপরীত। সে শান্ত শৃষ্ট ভদ্র বিনয়ী ছেলে। সুমনা খারাপ ছেলের পালায় পড়েছে। সে ছেলে সম্পর্কে ফেসবুকে খারাপ কিছু দিক বলাতে সুমনা রাগের মাথায় কাজলকে আনফ্রেন্ড করে দেয়। কাজল দুঃখে কষ্টে ভাবে যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর। কাজলও অধৈর্য হয়ে রাগের মাথায় সাথে সাথে ব্লক মেরে দেয় সুমনাকে। সে দিন তারিখটা ছিল ১৬ মার্চ ২০২০। বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আগের দিন।
ব্লক মারার পর কাজলের খুব কষ্ট হলো। সে যেন নিজের আবেগের দরজায় তালা দিয়ে রাখন। কাজল মনে মনে ধৈর্য ধারণ করে ভাবছে, সুমনা মোবাইল ফোন কল করে ব্লক খোলার কথা বলবে হয়তো কিন্তু না সুমনা কল করে না। কোনো মাধ্যমেই আর ব্লক খোলার কথা বলে না।
কাজলের নিজের মনের জ্বালা যন্ত্রণার কাছ থেকে বাঁচার জন্য সুমনার খারাপ দিকগুলো মনে করার চেষ্টা করল। মানুষের খারাপ দিকগুলো মনে করলে তার প্রতি এক ধরণের বিরক্ত তৈরি হয়। আর এই বিরক্ত হওয়া থেকে সে মনের দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। কাজল সেটা করার চেষ্টা করল। অন্য সম্পর্কের বেলায় হয়তো এমনটা করতে পারবে কিন্তু সুমনার ক্ষেত্রে হাজার চেষ্টা করেও পারছে না। পারবেও না। কারণ কাজলের ভালোবাসার চুল পরিমাণও খাত ছিল না।
সুমনা যখন টের পেল। কাজল তাকে ব্লক করে দিয়েছে। সুমনা ভাবল-যাক আমি সেটাই চেয়েছিলাম। কাজল ব্লক করে দিক। তার কাছ থেকে দূরে থাকি। আমার মনে বাসনা পূর্ণ হয়েছে। আমি এখন মুক্ত।
কাজল অনেক কিছু ভেবে একটা স্ট্যাস্টাস দিল।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনের আগের দিন। তুমি আমি আজ থেকে থাকব বিচ্ছিন চিরদিন।’
এই স্ট্যাস্টাস দেওয়ার পর বিভিন্ন রকমের কমেন্টেস লেখা শুরু হলো। কারণ মানুষের এখন ফেসবুকের স্ট্যাস্টাস দেখে তার মনের অবস্থা জানা যায়। অনেকেই অনেক কিছু জানার চেষ্টা করছে। কিন্তু কাজলের কাছের বন্ধু নিয়াজ বুঝতে পড়ল সুমনার সাথে তার কিছু একটা হয়েছে। স্ট্যাস্টাস পড়া মাত্র ইনবক্সে নক করে নিয়াজ লিখল, ‘ সুমনার সাথে তোর কিছু হয়েছে? আমাকে খুলে বল।’
কাজল মিথ্যা কথা বলে না। অথচ মানুষ মিথ্যাকে আশ্রয় করে নিজেকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করে। স্বার্থের জন্য সত্যি লুকিয়ে মিথ্যা বলে। কিন্তু কাজল মিথ্যা বলা একদম পছন্দ করে না। তাই কাজল লিখল, ‘হ্যাঁ। অনেক কিছু হয়েছে। আমাদের সম্পর্কের সূর্য আজ থেকে চিরতরে ঢুবে গেছে। এখন আর কিছু বলব নাই। দেখা হলে সব বলব।’
‘আমি তোর সাথে দেখ করতে পারব না কাজল।’
‘কেন নিয়াজ। তুই না আমার ভালো বন্ধু।’
‘তুই কি জানিস না করোনার কারণে সবাই হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে। আমিও কোয়ারেন্টাইনে আছি। বাসা থেকে বের হই না। সতর্কে থাকি। সাবধানে থাকি। নিজের নিরাপদে থাকি। অন্যকে নিরাপদে রাখি। করোনা প্রতিরোধে যা যা করতে হচ্ছে, তা পালন করছি।’
খুব হতাশায় কাজল বলল, বিপদেই প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় মেলে কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হলে কেউ কারও নয়। তাহলে ঘরে থাকাই নিরাপদ, তবেই করোনা মোকাবিলায় থাকবে না কোনো ভয়। তুই ভালো থাক।’
‘রাগ করিস না বন্ধু। তোকে ভার্চুয়াল জগতে সময় দেব। চিন্তা করিস না।’
‘ওকে ভালো থাক।’
‘প্লিজ রাগ করিস না বন্ধু।’
কাজল ফেসবুক লগ আউট করে দিল।
কয়েক দিন যায়। সুমনা ফোন করে না। অপেক্ষায় থাকে কাজল।
কাজলকে নিয়মিত সময় দেয় নিয়াজ। নিয়াজকে ফোন করে কাজল বলে, বন্ধু আয় আমার সাথে একটু দেখি করি। আমি তো আর পারছি না। একাকিত্ব এই মুহূর্তে আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। আমি মনে হয় আত্মহত্যা করে ফেলব। জার্মানিতে হেসে প্রদেশের অর্থমন্ত্রী টমাস শাফের আত্মহত্যা করল করোনার কারণে। আর আমি হয়তো আত্মহত্যা করব সুমনার কারণে।’
‘আত্মহত্যার কথা মাথায় আনবি না কখনো কাজল। কথাটা মনে যেন থাকে। আমি তোকে ইনবক্সে, হোয়াটসঅ্যাপে সময় দিচ্ছি। তুই কোনো চিন্তা করিস না। সমস্যার কথা বল।’
কাজল বাস্তবতার কথা ভেবে আর কোনো কিছু বলল না। সে হতাশায় চুপ হয়ে গেল। মনে মনে সুমনার সাথে মেশার সুখময় দিনগুলোর স্মৃতির কথা ভাবতে লাগল। এমন সময় তার মা কল করলেন। কল রিসিভ করে কাজল হ্যালো বলা মাত্র কাজলের কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারল মা। তার সন্তানের মন খারাপ। ভীষণ মন খারাপ। তাই মা বললেন, ‘কাজল তোমার কি মন খারাপ বাবা?’
কাজল মায়ের কাছে কখনো মিথ্যা কথা বলে না। তাই সে সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘হ্যাঁ মা। আমার মন খারাপ। ভীষণ মন খারাপ।’
সন্তানের মন খারাপের কথা শোনা মাত্র উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় মা বললেন, ‘কী কারণে তোমার মন খারাপ, বলো। করোনা সংক্রান্ত কোনো কিছু!’
‘না মা। আমি সতর্কে আছি। বাসায় আছি। নিরাপদে আছি। অন্যকে নিরাপদে রেখেছি।’
‘তাহলে কী কারণে মন খারাপ হয়েছে বাবা?’
‘মা, তুমি যাকে হবু বউমা হিসেবে জানো। তোমার সেই হবু বউমা সুমনার সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে। আমাকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছে। তোমার বউমা সে হতে চায় না। সুমনাকে লাল শাড়ি পরিয়ে বউ সাজিয়ে ঘরে তুলব। তুমি বউমা হিসেবে গ্রহণ করে নিবে, সে ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারলাম না মনে হয় মা। আমাকে মাফ করে দাও। আমারও তো রক্তে মাংসে গড়া শরীর, আমারও উত্তেজনায় রাগ হয়। তাই রাগের মাথায় তাকে ব্লক মেরে দিয়েছি।’
‘হঠাৎ এমন হলো কেন। তুমি চিন্তা করো না। সুমনা আনফ্রেন্ড করেছে, ভালো করেছে। তুমি আবার তাকে ব্লক মারতে গিয়েছ কেন। ব্লক খুলে দাও। কয়েক দিন যাওয়ার পর দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি তো তার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করোনি। করবেও না কখনো আশা করি। দেখবে আপনা আপনি তোমাকে নক করবে সুমনা । এটা আমার বিশ্বাস। তুমি ধৈর্য ধরো।’
মায়ের কথায় কাজল আশার আলোয় স্বপ্ন দেখতে লাগল। তাই কাজল বলল, ‘সত্যি বলছ মা। সুমনা আমাকে নক করবে।’
‘তোমাকে যদি সত্যি ভালোবাসে তাহলে সুমনা নক করতে বাধ্য। তুমি ব্লক খুলে দাও।’
‘ঠিক আছে মা। আমি এখুনি তোমার কথা মতো ব্লক খুলে দিচ্ছি। আর তাকে ফোলো করছি।’
‘হু, এটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। দেখবে সেও তোমাকে ফোলো করছে।’
‘তাই মা!’
‘হ্যাঁ, আর শোনো, তোমাকে যে জন্য কল করেছি। সেটা হলো করোনা ভাইরাসের কারণে এই লকডাউনে গরীব মানুষ খুব কষ্টে আছে। নিয়মিত তিন বেলা খেতে পারছে না। তুমি এক কাজ করতে পারবে।’
‘কী কাজ মা?’
‘ছিন্নমূল মানুষ কিংবা রিকশাচালকদের সাহায্য করতে পার। এই দুর্দিনে গরীব দুঃখীদের পাশে মানবিক মানুষ হিসেবে দাঁড়ানো দায়িত্ব। তুমি কি তাদের পাশে দাঁড়াবে?’
‘তুমি ঠিক বলেছ মা। অবশ্যই তাদের পাশে সাহায্য নিয়ে দাঁড়াব।’
‘মনের কষ্টের কথা বাদ দিয়ে গরীব দুঃখীদের মুখে হাসিফুটানোর জন্য কাজ করো কাজল।’
‘ঠিক আছে মা। তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমি এই যে ব্লক খুলে দিলাম। আর ভালো কাজ করার জন্য পরিকল্পনা করি। কীভাবে কি করা যায়।’
‘তাই করো। আর কোন রকমের দুশ্চিতা করো না, কেমন।’
‘ঠিক আছে মা। আইডিয়া দেওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।’
কাজল মায়ের কথা শুনে মনের ভেতর একটা পরিবর্তনের চিন্তা উদায় হলো। গরীব দুঃখীদের উপকার করার কথা মনে মনে ভেবে ভাবতে লাগল। কী করে কি করা যায়।
পরদিন কাজল একটা ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দিল-
পৃথিবীর অসুখের কারণ করোনা। কবে শুরু হবে সুখের সূচনা।
এই স্ট্যাস্টাস দেখে সুমনা অবাক হলো। ভাবল, সুখের সূচনা মানে আমাকে নিয়ে ভেবেছে কাজল। সুমনা যার জন্য কাজলকে অবমূল্যান করেছে। তার সাথে স্বার্থে দ্বন্দ্ব বেধেছে। সুমনা বুঝতে পারল নি:স্বার্থভাবে তাকে একমাত্র কাজলই তাকে ভালোবাসে। এবং সব সময়ের জন্য তার ভালো চায়। সুমনার শক্ত মন বরফের মতো গলতে লাগল। আসলে নারীদের মন বরফের মতোই। যখন যার প্রতি দুর্বল হয়ে যায় তখন তার প্রতি ভীষণ ভাবে গলতে থাকে। সুমনার হঠাৎ করে গলতে শুরু করল। মনে মনে ভাবল। এখন তো সব কিছু বন্ধ। কাজলকে অনেক সময় দেওয়া যেত। করোনার দিনগুলো তাকে খুবই মিস করছি। যাক রাগের মাথায় কি যে করলাম। আমি তাকে নক করব না। নক করে ছোট হবে না। আমি এখন আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের ফেসবুক, মোবাইল, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইভার, ইমোতে সময় দিয়ে করোনার কারণে অবসর সময়গুলো কাটাব। আর সবাইকে সচেতনার কথা বলব। তবুও আমি কাজলকে নক করব না। ছোট হব না।
কাজল এবার বন্ধু নিয়াজকে কল করে বলল, ‘নিয়াজ, তোকে আর রাসেলকে নিয়ে একটা ভালো কাজ করতে চাই। সময় কিন্তু দিতেই হবে।’
নিয়াজ বলল, ‘কি ভালো কাজ করবি। করোনার এই সময় দিন আনে দিন খায়। তাদের তো এখন খুব কষ্ট হচ্ছে। তাদের আমার সাধ্যমত সাহায্য করতে চাই। সেজন্য তোমার সহযোগিতা চাই। অর্থ দিয়ে নয়, তুই শুধু পাশে থাকবি।’
কাজলের মানবিকতার আহবান শুনে এবার নিয়াজ আর না করতে পারল না। নিয়াজ প্রস্ততি নিয়ে চলে এলো। এমন সময় কাজল আর আর রাসেল এক সাথে বসে তারা তিন কেজি চাল। এক কেজি ডাল। এক কেজি লবণ। এক কেজি পেঁয়াজ। এক কেজি আটা করে প্যাকেট করল। তারপর শহরের বেশি কিছু জায়গায় রিকশাচালকদের মাঝে এগুলো বিতারণ করল। এর মাঝে পাশপাশে অনেকেই কাজলের মানবসেবা দেখে ভিডিও ও ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে ছবিটা ভাইরাল হয়ে গেল। সে ভিডিও হঠাৎ ফেসবুকে সুমনার চোখে পড়ল।
কাজলের এমন মানবিকতার দেখে সুমনা মনে মনে স্থির করল। আমি এমন মানবিক মানুষকে কষ্ট দিয়ে অন্যর সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখা ভুল করেছি। আসলে এমন করা ঠিক হয়নি। আমি হয় তো ভুল মানুষের কথা শুনে কাজলের মতো ভদ্র, শান্ত শৃষ্ট, বিনয়ী ও মানবিক মানুষকে বাদ দিয়ে রানার সাথে যাওয়া বড় ভুল হবে আমার। আমার রাগ কমিয়ে আমাকে মানবিক হতে হবে। আমি গরীব দুঃখীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব। ঠিক দুই দিন পরে সুমনার এলাকায় যত দিনমজুর আছে। তাদের এক সপ্তাহের খাবার দায়িত্ব নিয়ে ফেল। এটা আবার অনলাইনসহ পত্রিকায় টিভিতে নিউজ হয়ে গেল। সুমনার ছবি ভাইরাল হয়ে গেল। এটা ফেসবুকে কাজলের চোখে পড়ল। কাজল তখন মনে মনে ভাবল। যাক আমি তো আগে করেছি। আমার তা দেখে হয়তো সুমনা করেছে। এখন সুমনাকে নক করলে কেমন হয়।
সুমনাও মনে মনে ভাবছে। কাজল আমাকে আগে নক করুক। তারপর আমি নক করব। ফেসবুকে নক না করে সুমনার মোবাইল একটা এসএমএস দিল কাজল‘তোমার মানবিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে সুমনা। তোমার মানবিকতার জয় হোক।’ এমন এসএমএস দেখে সুমনা মহাখুশি হয়ে এসএমএস দিল ‘ধন্যবাদ, তোমার মানবিকতার জয় হোক।’ সেদিন আর কেউ কোনো এসএমএস দিল না। আর কোনো কথা হলো না।
পরদিন সুমনা ফেসবুকে নক করে বলল, আগের দিনগুলোর মতো দিন কি ফিরে পাব।
কাজল লিখল, মানবিক মানুষ, নক করার জন্য ধন্যবাদ। তবে জানি না, করোনার এই পাদুর্ভাব কত দিন থাকে, ততদিন দূরে থাকতে হবে সবার কাছ থেকে। তবে আশা করি সুদিন ফিরে আসবে।
সুমনা লিখল, করোনার ভাইরাস মুক্ত হওয়ার পর তোমার সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা বলব। তুমি প্রস্তুত থেকো। এখন করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করি সবাই মিলে।
কাজল লিখল-ঠিক আছে। সেদিনের অপেক্ষায় রইল আমি। এখন আমরা সবাই সতর্ক থাকি, সুস্থ থাকি, ঘরে থাকি। নিজে ও অন্যকে নিরাপদে রাখি।
সুমনা লিখল-ভালো থাক কাজল। পরে কথা বলব।
সুমনাকে লাল শাড়ি পরিয়ে বউ সাজিয়ে ঘরে তুলে মায়ের ইচ্ছাপূরণের স্বপ্ন দেখতে লাগল কাজল। আর স্বপ্ন নিয়েই করোনার দিনগুলোতে ভার্চুলায় জগতে সময় কাটাতে লাগল সুমনা আর কাজল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *