নন্দিত অন্ধকার: প্রেম প্রকৃতির মাখামাখি।। আপন অপু

কবির ভাবনা ছিলো আকাশ কেনার। কিন্তু উদার কবি সকলের কথা ভেবে আকাশটা আর কিনলেন না। চাঁদটা কিনে নিতে চাইলেন শুধু তার শ্যামলিমার জন্য। চাঁদের নরম আলোয় উর্বরা করতে চেয়েছেন
শ্যামলিমাকে। শ্যামলিমার সঙ্গে যৌথ চাষাবাদের পরিকল্পনা ছিলো কবির।
কবি লিখেছেন- ‘‘তোমার হাসির ছটায়/ উজ্জ্বল হবে জোছনার জগৎ।/
কসম করে বলছি/ চাঁদটা কিনে নেবো/ কেবল তোমার জন্য।’’ কিন্তু সেই চাঁদের উপর একদিন ভীষণ রাগ হলো কবির। আকাশ থেকে চাঁদটাকে পেড়ে ফালাফালা করে কেটে পাকা তেঁতুল অথবা কচি আমের মতো নুন লঙ্কা মিশিয়ে খেয়ে ফেলতে চায় কবি। কিন্তু কেন? উত্তরে
কবি লিখেছেন- ‘‘জেছনাগুলো তোমার খোঁজ দিতে পারে না আর/ অতএব/ চাঁদের আকাশে ঝুলে থাকার কী দরকার!’’ যেই চাঁদ কবিকে তার শ্যামলিমার খোঁজ দিতে পারে না সেই চাঁদের আকাশে ঝুলে থাকার
প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হতেই পারে। কবির প্রেমিক মন তার শ্যামলিমার সঙ্গে কথা বলতে চায় ফুলের ভাষায়।
শ্যামলিমার মুখোমুখি হলে কবির সব ভাষা হারিয়ে যায়। শব্দরা শিমুল তুলার মতো উড়ে যায়। শ্যামলিমার শরীরের সৌরভ ও বুনো ফুলের সৌরভের ফারাক বুঝতে কবির কষ্ট হয়। কবির মন ভরপুর প্রেমে। কবি তার শ্যামলিমাকে প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে যেমন আনন্দে ভেসেছেন তেমনি ডুবেছেন দুঃখে। কবি আক্ষেপ নিয়ে বলেছেন- “চোখের জলের রঙ হয় না বলেই/ রক্ত দেখো কান্না দেখো না।’’ কবির প্রেমিক মন শ্যামলিমার ব্যথায় ব্যথিত হয়। কবি তখন ডাক্তার হয়ে ওঠেন। চুমুতেই সারাতে চান শ্যামলিমার ব্যথা- ‘‘এক চুমুতেই সারিয়ে দিবো তোমার মাথা ধরা/ ঠোঁটে ঠোঁট লাগলে পরে নিমেষে উধাও ক্লান্তিধারা।’’
কবিকে কখনো কখনো স্মৃতি বেদনায় ভাসতে হয়। কবি ধানি রঙ মাঠ, শিশির ভেজা ঘাস, বর্ষা আকাশ, উদাসী দুপুর, ঝিমধরা নদী, সাদা ভাঁটফুলকে হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করেন।

‘সেই সব ফেলে আসা’
শিরোনামে কবির সেই স্মৃতিদহন ফোটে ওঠেছে। কবিতার শেষ দুটি চরণে কবি তার দীর্ঘশ্বাস মিশিয়ে লিখেছেন- ‘‘সেই যে ছেড়ে এসেছিলাম/ সেই যে ছেড়ে আসতে হলো!’’ ‘অতল অমঙ্গল’
শিরোনামের কবিতায় কবি লিখেছেন- ‘‘শ্যামলিমা,/ আমার সন্ধ্যাগুলো সব চুরি হয়ে যাচ্ছে।/ ক্রমশ অতল অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছি আমি।’’
সেই জন্যই কবি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজেছেন শ্যামলিমার বুকের গহিনে, হৃদয়ের উত্তাপে।
কবির হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কলমের কালি হয়ে খাতায় নেমে এসে শব্দের গাঁথুনিতে যে বইরূপী মালা সাজিয়েছেন তার নাম ‘নন্দিত অন্ধকার’। আর এই আলোচনা খান মোহাম্মদ রুমেল এর লেখা এই
বইটিকে নিয়েই। অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২২ এ প্রকাশ হয়েছে বইটি। ছয় ফর্মার বইটির মুদ্রিত মূল্য দুইশত টাকা। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। বইটির কাভার ডিজাইন, বাঁধাই, কাগজ ও
মুদ্রণ এক কথায় পারফেক্ট। চুরাশিটি কবিতা দিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। কবিতার শিল্পমান বা সাহিত্যমানের বিচারে প্রায় প্রতিটি কবিতাকেই সার্থক বলতে হবে। কবি কবিতার মাঝে তার মনের ভাব
ফুটিয়ে তুলেছেন সার্থকভাবে। কবিতায় সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষা মাধুর্যে কাব্যিক ভাব ফুটে উঠেছে। ছন্দপতন বা খেই হারিয়ে ফেলা কোন ব্যাপার আমার নজরে আসেনি। বইটিতে স্থান পাওয়া কবিতাগুলোয়
কবির প্রেম, বিরহ, প্রকৃতি, ক্ষোভ, দীর্ঘশ্বাস যেন নিপুণ রূপ পেয়েছে। নির্ভুল বানানের বিষয়ে খুব করে লক্ষ্য রাখা হয়েছে বইটিতে। সর্বোপরি আধুনিকধারার কবিতার পাঠকরা বইটি কিনে-পড়ে তার কাব্যক্ষুধা মেটাতে সক্ষম হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *