রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দুই
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব আট
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব সাত
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব ছয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব পাঁচ
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব চার
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব তিন
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দুই
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব এক
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব নয়
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব দশ
দুই
প্রতিবেশি কেউ জানে না এই বাড়িতে কেউ নেই। কাশেম ও তার পরিবারহীন এই বাড়ি। পরিত্যক্ত বাবুমিয়ারবাড়ি। কী করে পরিত্যক্ত হলো বাবুমিয়ারবাড়ি তা, কীকরে জানবে! রাতের আধারে চলে গেছে কাশেম ও তার পরিবার। সবাই যখন ঘুমে। ঠিক তখনি সে চলে গেছে। এই বাড়িতে যে কেউ নেই তার কারও খেয়াল নেই। প্রতিবেশিরা যে যার মতো কাজে ব্যস্ত। তখন কে কার খবর রাখে। চোখের আড়াল হওয়া মানেই হারিয়ে যাওয়া। অস্তিত্ব বিলিন হওয়া। এই অস্তিত্ব বিলিনের শুভসুচনা ঠিক তখনি হয়, যখন আড়ালে থেকে যায় কাশেম ও তার পরিবারে কথা। প্রতিবেশিরা কেউ মনে করে না তাদের কথা। বাড়িটি দাঁড়িয়ে থাকে আপন শক্তিতে।
বাড়ির বাহিরে কিছুদিন ঘুরাঘুরি করেছেন কাবলিওলা। কারো কাছে কিছু বলেনি সে। বলেনি কাশেমের কথা। বাড়ির কথা। শুভ সময়ের অপেক্ষায় আছে কাবলিওলা। সুদখোর কাবলিওলা নিজেও বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেনি কখনো। লোক মুখে শুনেছে বাড়ির বর্ণনা। অনেক বড় বাড়ি। ভেতরের কারুকাজ দেখার মতো। চোখ জুড়ানো নকশা। সবুজ অরন্যঘেরা বাড়ি।
চাঁদ আলোতে আলো ছড়ানো পরিবেশ। কাশেম যখন এই বাড়িতে থাকতো তখন কাবলিওলা চাঁদনি রাতে দেখেছে এই বাড়ি। তখন এই বাড়িটি তার মন কেড়েছিল। তখন এই বাড়িটি যেনো কাবলিওলার চোখের মণি হয়ে ওঠে।
চোখের আড়াল যেনো না হয় সেই চেষ্টায় সময় গুণতে থাকে কাবলিওলা।
ওলটপালট খেলায় ভালোই পারদর্শি সে।
দিন যায়। মাস যায়। বছর চলে যায়। বছর চলে যায়। যুগ থেকে যুগ। চলছে তো চলছে। সময় চলে যায়। কোলাহলযুক্তবাড়িটি পরিত্যক্ত বাবুমিয়ারবাড়ি হিসেবে পরিণত করার মূলকারিগড় কে? প্রশ্ন রয়েই যায়। বাড়িটি একাএকা কাঁদে। কীকরে বাড়িটি কাঁদে? কাশেমের জন্য কাঁদে? কাশেমের পরিবারে জন্য কাঁদে?
না, এই বাড়ির ভেতর একজন কাঁদে না। অনেকজন কাঁদে। বাড়ির ভেতরে কেউ কাঁদে কি না তা কান পেতে শুনতে চায় কাবলিওলা।
হ্যা, মরাবাড়ির কান্দার আওয়াজ শুনতে পেল সে। কাবলিওলার মন কেমন যেনো মোচড় দিয়ে ওঠে। জনবসতিহীনবাড়ি! মানুষ এলো কীকরে!
কারা কান্না করছে এই বাড়ির ভেতরে?
বাড়ির ভেতরে তো কেউ নেই। কাশেম চলে গেছে। কাশেমের পরিবার চলে গেছে। অন্য কেউ না জানলেও আমি কাবলিওলা ঠিকই জানি। কাশেম ও তার পরিবার বাড়ি ছেড়ে যখন চলে যায় ঠিক তখনি আমি একাই ছিলাম।
হ্যা, ওরা ঠিকই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। ওরা যখন বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, তখন আমার মনের ভেতর ছিল আনন্দ। আনন্দে অট্টহাসি দিয়েছিলাম। আমি কাবলিওলা। এই বাড়িটি আমার হবে। এই বাড়িটি কাবলিওলার করে নেওয়ার আগেই, একদিন রাতে এই বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছে কাবলিওলা। সে শুনতে পেল
বাড়ির ভেতরে কান্নার আওয়াজ। কোনো বাতি জ্বলছে না। কে জ্বালাবে বাতি? বাড়ির ভেতরে তো কেউ নেই। জনবসতিহীনবাড়ি। সেই বাড়িতে
এত লোক এক সঙ্গে কান্না করছে!
কেনো? আমার কানের কাছে ভেসে আসছে মরাবাড়ির কান্নার আওয়াজ! কাউকে কিছু বলবে, তাও পারেছে না কাবলিওলা। কার কাছে বলবে? বলার মতো বন্ধু নেই। যারা ছিল তাড়াও দেশ চলে গেছে। তাদের বাড়িগুলি নিজের করে ভাবনাই ছিল তার কাজ। এখন প্রকৃতি তার বিরুদ্ধে চলে গেছে।
কাবলিওলা ভয় পেয়ে গেল।
ভয় পেলেতো চলবে না। কেনো, মরাবাড়ির কান্নায় পরিণত হয়েছে তা তাকে জানতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে এর মূল রহস্য। মন শক্ত করে বাড়ির দিকে আসছে এমন সময় আর একটি ফাঁকাবাড়ি দেখে সে। সেই বাড়িটি ছিল সুজনদের। সেই বাড়িটির ভেতরেও মরাবাড়ির কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল
কাবলিওলা।
না, কালও তো এমন আওয়াজ শুনতে পায়নি সে। ভয় যেনো আরো মনের ভেতর বাসা বেধে গেল। কার কাছে বলবে তার মনের কথা। নিকট বন্ধু বলতে কেউ নেই। সবাইকে সে নিজেই তাড়িয়েছে কুটকৌশলে। এই বাড়িগুলো দখল করবে বলে। দখল করার অবৈধ প্রক্রিয়া সব জানা এই কাবলিওলার। সেই পথেই হাঁটছিল সে। এখন তার মনে এ কিসের ভয়! সে তো ভয় পাবার মতো কাবলিওলা নয়। টাকা সুদে খাটানোই তার কাজ। অর্থ ছাড়া সে কিছুই বোঝে না। অর্থের চিন্তা তাকে পাগল করে দিয়েছে। কাশেমের বাড়ি তার
মনে বড় স্বপ্ন। তার পরিকল্পনা মাফিক এগুতে ছিল সে। অনেকের কাছে বলে বেড়িয়েছে কাশেমের বাড়িটি বিক্রি হয়েছে। ক্রেতা সে নিজেই। কিন্তু কাশেম কে খুঁজে পাচ্ছে না। তাই সে এই বাড়ির আসপাশে ঘুরঘুর করে।
এত সাহসী মন অসাহসী হয়ে যাচ্ছে কেনো?
ভয়! মরাবাড়ির কান্নার ভয়। কত মরাবাড়ি গেছে সে কখনো সে ভয় পায়নি।
আজ কেনো এত ভয়। ভয় মানুষকে কুড়েকুড়ে খায়। ভয়, ভীতু হতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কীকরে ভয়কে দূর করবে সে। কোনো ওপায় খুঁজে পায় না।
নিজ ঘরে প্রবেশ করছে আর থরথর করে কাঁপছে। মরাবাড়ির কান্না যেনো তাকে আর ছাড়ছে না। এভাবেই বেশ কয়দিন চলে গেল। পরিত্যক্ত বাবুমিয়ারবাড়ি তার কাছে মনে হতে লাগলো মরাবাড়ির কান্না। বাড়ি ফিরে ঘরও তার কাছে মনে হতে লাগলো মরাবাড়ির কান্না। ভয়ে কুকড়ে যেতে লাগলো সে। আমার বাড়িতে ওরা কারা কান্না করছে। এই কান্নার আওয়াজতো কাশেমের বাড়িতে শুনেছি! এই আওয়াজ আমার বাড়িতে এলো কীকরে? কাবলিওলার চোখ বলছে, আমি লোভি। আমার লোভ এখন কান্নার মরাবাড়িতে পরিণত করেছে। কাশেম কাশেম তোর বাড়িটি দিকে ছিল আমার লোভ। এই ভয় তার জীবনকে আড়াল করে দিল। তার বাড়িটি সত্যিকারের মরাবাড়ির কান্নায় পরিণত হল। মরার সময় সে বলেছিল, কাশেম কাশেম। আমি
কখনো খুন করিনি। খুনের সঙ্গে জড়িতও থাকি না। তবে, কে খুন করেছে সেই ছেলেকে? এই খুনের আড়ালে কে আছে জড়িত?
কাবলিওলার মরার সময় বলে গেল সে ছেলেটাকে মারে নাই, তাহলে ছেলেটাকে মারলো কে ?