সোহেল আহসান।। কিশোর কবিতা
আমাকে ডেকো না কেউ
প্রকৃতির ডাকে পেরোনো পথের উচ্ছ্বাস দেখি রোজ
হরবোলা এসে শষ্যের খেতে কাহারে করছে খোঁজ
বেত ঝোপ ধরে চুপিচুপি হাঁটে সদ্য ফোটানো ছানা
সোনালি রৌদ্রে কুয়াশার মতো জুবুথুবু ভেজা ডানা।
এইসব কথা লিখতে লিখতে
পুরোবে সময় যেই-
কোথা’ তার মোহ মায়া আর ছায়া
পলকে কিচ্ছু নেই।
আধো ঘুমে ডুবে স্বপ্নে উড়াই মাঠ-ঘাট বন শেষে
আমাকে পেরোয় মেঘের সাবান বাতাসের গায় ভেসে
ছুটে যাই আসি খুঁজেখুঁজে পথ আমাকে হারাবে ইশ্
ঐখানে দেখো মাঠ,গম্বুজ দিগন্ত জোড়া শিরীষ ’-
বাটা হলুদের প্রলেপ মাখানো জলপাই পাতা নড়ে
দিনশেষে আমি পাখি হই আর, ফিরে আসি নিজ ঘরে
সোনাপাতা বলে ঝিরি হতে উঠে পাহাড় ছুঁয়েছি ভাই
তুমি কেন তবে ঘরে বসে রবে, না কি হিম্মত নাই?
চৌকাঠ ছেড়ে যতোবার গেছি
গেঁয়ো মেঠোপথ চষে
ঠিক ততবার আলাদিন যেনো
চেরাগ জ্বেলেছে ঘষে।
পাখিবিল যদি পদ্ম ফোটায় রোদ বিল তুলে ঢেউ
সারাদিন বসে দেখে যাব আমি আমারে ডেকো না কেউ।
ঢেউ
নদী আমার ঘরের পাশে, নদীর পাশে আমি
ডুব দিতে যাই তার বুকে যেই রোদে পুড়ে ঘামি
ভাসি, সাঁতার খেলি আমি কোমল জলের পাকে
তার কাছে পাই চেনা আদল, তার কাছে পাই মাকে।
মায়ে যেমন দুখ্য ভুলায়, আগলে রাখে – কাছে
এখন দেখি মায়ের মতো নদীও আমার আছে
সকাল-দুপুর, টাপুরটুপুর বৃষ্টি যখন আসে
ছলাৎছলাৎ ঢেউয়ের দোলায় মুখ টিপে সে হাসে
মাছরাঙাটিও দেয় জলে ডুব, পুঁটির ঝাঁকে হানা
ডাকছে নদী ডুব দিতে, কেউ করবে না কী মানা!
নদী আমার পড়শি বাড়ি, এবং ঝোপের আড়ে
গন্ধগোকুল, গুঁইসাপেরাই ওৎ পেতে লেজ নাড়ে
সটান করে বুক উঁচিয়ে দাঁড়াই গিয়ে, কূলে
ঝিলিক বাতির ঝলকানি না, মিষ্টি জোনাক ফুলে
অবাক আমি, মুগ্ধ আমার উথালপাতাল মন
নদীর পাশে মন জুড়ানো পাখি উড়ার বন।
দোর খুলে যেই নদী দেখি, আমায় দেখে সেও
আমার চোখে সবচে’ মধুর কলকলানো ঢেউ।
পাখি ওড়া বিল
এখানের রোদ ঝলমলে নাচে, এখানের বন নুয়ে –
পারুল ছাতিম বৃক্ষ দু’খান আকাশ ফেলেছে ছুঁয়ে,
এখানে নদীর আঁচল বিছানো
মেঘমুখী কাশ ফুটে –
কাশের বাগানে আয়েসি দুপুর
পাখিরা নাড়ায় ঠোঁটে।
শামুক শিশুরা গলাগলি করে নদীটি বাড়ায় হাত –
হলুদ বিকেল শান্ত ভীষণ জোনাকি নামায় রাত,
নরম ঘাসের তাঁত বুনে বুনে জোনাকির আলো ঐ
কবরের পাশে মিটিমিটি জ্বলে এ যেনো আলোর বই
আমি তো অবাক গন্ধে আকুল বুনো ফুলেদের বাসে
শিশিরকণার আদর মাখানো মাঠের নরম ঘাসে।
কতো যে শুঁয়েছি মুগ্ধ-মধুর,
কতো যে নিয়েছি পাঠ-
শহর পেরিয়ে নেপিয়ার বন
হিজলতলীর ঘাট।
এখানে আমার শেকড়ের টান এখানেই আসি ফিরে
হস্তীপদের ডাঁটায় ডাঁটায় ডোল পিঁপড়েরা ভীড়ে
তাদের সাথেও সখ্য আমার তাদের সাথেও মিল,
এখানেই আছে জন্মের সুধা আর, পাখি ওড়া বিল।
দিগন্ত জুড়ে ঘোড়াদুবো তার
পাতাটির ছায়া ফেলে –
কেশুর বুনন সন্ধ্যার কাছে ফুলের পাঁপড়ি মেলে।
আমায় ডাকে বন
আমায় পাবে বেতের মাঠে, সূর্য উঠা পুব –
দুপুর হলেই উদাস আমার, মন পাখি দেয় ডুব
আমি তখন যাই মাড়িয়ে, সোহনি ঘাস বন
আচ্ছা বলো ঘর পালাতে উদাস কেন মন?
পায়ের নিচে মেঠো আলের, আহা কী যে তাপ –
ঘুঘুর দুপুর – ডাকছে কেবল, রোদ এঁকে দেয় ছাপ
আমায় পাবে সাধ্যি কারো? উড়ছি আমি যেই
কেউ আমারে ধরতে পারে, মানুষ আমি নেই ;
বনের কোলে শুঁয়ে আছে, ঘাস ফড়িঙের ছা’ও
ধানের পাতার মতোন সবুজ ফড়িং ছানার গা’ও
ইচ্ছে আমার ফড়িং হতে, হাত দু’খানা মেলে
হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ব আমি, পাখির ডানা পেলে।
ঘুরছি আমি খালের পাড়ে, আকাশ দেখি নীল –
ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের’ জলে, রোদের ঝিলিমিল
আমার ভীষণ ভালো লাগে, কাশের উদোম নাচ
আঁকতে প্রজাপতি এবং লতাপাতা, গাছ
ইচ্ছে আমার ঘুরি শুধু, উড়ি আমার মন
মায়ের ডাকে দিই না সাড়া, আমায় ডাকে বন।