কিশোর উপন্যাস

সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।। পর্ব ছয়

সায়েন্স ফিকশন “পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স’’ আহমেদ রিয়াজ


জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে বিছানার উপর চিৎপটাং অবস্থায় দেখতে পেলেন বাবা। ভাগ্যিস রাগের সময় বিছানায় এসে
বসেছিলেন। কথায় আছে, রাগ হলে হাঁটাহাঁটি না করে কোথাও বসা ভালো। আরো বেশি রাগ হলে শুয়ে থাকা উত্তম। রাগ হলে
তিনি সেটাই করার চেষ্টা করেন। তবে সবসময় সে সুযোগ মেলে না। একবার যেমন…
ভাবতে ভাবতে গবেষণাগার থেকে বের হলেন বাবা। তারপর একটা বিশেষ ফোকর গলে বাগানে এলেন।

আসিফ বৃষ্টিতে ভিজছে। ছেলেটা খুব রোমান্টিক হয়েছে। বৃষ্টিতে ভেজা, জ্যোৎস্না খাওয়া, রোদ মেখে বেড়ানো এসব নিয়েই
ব্যস্ত আছে। রোমান্টিকতার একটা মুখোস পরে থাকেন তিনি। তাঁর এই মুখোসটাকে ভালবেসে ফেলেছে আসিফ। যদি সে
একটু জানতো তার বাবা মোটেই আবেগি নয়, সাহিত্যকে ঘৃণা করে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি কমিটি বিজ্ঞান সংস্থার
আইন লংঘন করার অপরাধে চরম শাস্তি দিতে পারে। তাহলেও কি ছেলেটা অমন থাকবে? বাবা সেটাই চান। তিনি চান তাঁর
ছেলেটা বেঁচে থাকুক। মুক্তিকামি মানুষের কাছে বলুক-বাবা তো যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।
ভাবতে ভাবতে তাঁর চোখ দু’টো ভিজে এলো। অবাক হলেন বাবা। ছি:! কান্নাটাকে তো কোনোদিন প্রশ্রয় তো দেনই নি, মন বা
চোখের জানালায় ঘেঁষারও সুযোগ পায়নি। আজ একেবারে অন্দরে এসে ঢোকায় নিজেই লজ্জা পেলেন।

অনেকক্ষণ পর বাবাকে দেখল আসিফ। দেখেই চেঁচিয়ে উঠল, ‘বাবা বৃষ্টিতে ভিজবে?’ বলেই হাত বাড়িয়ে দিল বাবার দিকে।
বাবা প্রত্যাখ্যান করতে পারলেন না। জীবনে কোনোদিন বৃষ্টিতে ভিজেননি। ছেলেবেলায় বাবা-মায়ের কড়া শাসনে মানুষ
হয়েছেন। একটু এদিক ওদিক হলেই উপায় ছিল না কোনো। আর এজন্যই ছত্রিশ বছরের জীবনে কখনো বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি।
আসিফের বাড়িয়ে দেওয়া হাত ধরে বৃষ্টি ফুলের সুবাস নিতে লাগলেন বাবা। এবং ভুলে গেলেন তাঁর প্যান্টের পকেটে কী ছিল।
ভীষণ জরুরি কিছু একটা ছিল।
আসিফ বলল, ‘বাবা তোমাকে মিস এফ এক্স খুঁজছিল।’
বাবা বললেন, ‘পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স টুকু বাদ দিয়েছিস কেন?’
‘লম্বা নাম। কিছুটা ছেঁটে দিয়েছি।’
বাবা আসিফের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।
আসিফ বলল, ‘হাসলে কেন বাবা?’
‘কারোর লম্বা নাম ছোট করে কে ডাকে, জানিস তো!’
লজ্জা পেল আসিফ। তবু ডিফেন্স নিল, ‘কিন্তু ওতো রোবট!’
‘তাতে কি! বস্তু, অবস্তু যে কোনো কিছু যে কোনো মানুষের প্রিয় হতে পারে। পারে না?’
সায় জানাল আসিফ। ‘তা পারে। তবে…’
প্রসঙ্গ পাল্টে ফেললেন বাবা, ‘কবিতা, গল্প কিছু লিখিস নাকি?’

‘হ্যাঁ বাবা। তোমার লেখাগুলো পড়তে পড়তে এমন হয়ে গেছি। তবে তোমার কবিতার ঢঙগুলো বিখ্যাত কবিদের কবিতা থেকে
ধার করা। আমার বন্ধুরা এজন্য তোমাকে নকল কবি বলে ডাকে। আমি অবশ্য বন্ধুদের ওপর রাগ করি না। যারা সত্যি কথা
বলে তাদের ওপর তো রাগ করা যায় না। একটা কথা বলি বাবা? রাগ করবে না তো?’
বাবা বিমর্ষ মুখে বললেন, ‘বল।’
‘তুমি যে কেন কবিতা আর গল্প লেখ আমি জানি। আর এটাও জানি তুমি এটা শুনলে রাগ করবে। প্লিজ বাবা, আমি তোমাকে
সাহায্য করব।’
চমকে উঠলেন বাবা। সরু চোখে তাকালেন আসিফের দিকে। যেন বুঝতে চাইছেন এটা সত্যিকারের আসিফ কি না? আসিফের
চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজতে লাগলেন। আসিফের চোখে কি খুঁজছেন বাবা? কর্নিয়া? নাকি ক্যামেরা?
আসিফের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। বক বক করেই যাচ্ছে, ‘একা একা তুমি কতদিন আর কাজ করবে? তুমি বোধহয় জাননা,
প্রথম শ্রেণির সবগুলো পত্রিকায় আমার কবিতা ছাপা হয়েছে। অবশ্য ছদ্মনামে লিখেছিলাম, না জানারই কথা।’
বাবা বললেন, ‘তা আমাকে এখন কি করতে হবে?’
আসিফ বলল, ‘তুমি শুধু তোমার তথ্যগুলো আমাকে দেবে। আমি সেগুলো থেকে প্রতীকী কবিতা লিখব। কেউ বুঝতে পারবে না।’
‘এরকম কিছু লিখেছ নাকি?’
‘এখনো লিখিনি। লেখার চেষ্টা করছি।’
আসিফের দু’কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘আমার গোপন গবেষণাগারের কথা জানো?’
‘জানি।’
‘গিয়েছ কখনো?’
‘না। কখনোই যাইনি।’
‘কেন?’
‘তুমি যদি রাগ কর। আমি তোমাকে কোনো ব্যাপারেই রাগাতে চাই না। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি বাবা। তবে আমি জানি কে
গিয়েছিল।’
বাবা ভুত দেখার মতো লাফ দিয়ে উঠলেন। প্রচণ্ড ক্রোধে তাঁর চোখ দু’টো জ্বলছে। সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপছে। বৃষ্টিতে
না ক্রোধে বুঝতে পারছে না আসিফ। বাবার গলার স্বরে ক্রোধটুকুর কিছু অংশ প্রকাশ পেল।
‘কে? কে ঢুকেছে?’
আসিফ প্রথমে ভয়ই পেয়েছিল। বুঝল উকেই এসময় মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। তা না হলে চরম বিপদ ওঁত পেতে আছে শিকারি
চিতার মতো। একটু এদিক ওদিক হলেই বাবার কঠিন শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যেভাবেই হোক বাবাকে বাঁচাতে হবে।
আসিফকে চুপ করে থাকতে দেখে বাবা আবার বললেন, ‘কে ঢুকেছে, বলছিস না কেন?’
আসিফ বলল, ‘পরে বলব। এখন বললে তোমার বিপদ হতে পারে। স্পেসশিপ আনিয়ে তুমি চুপচাপ ঘরে গিয়ে শুয়ে থাক।
বাকিটা আমি সামলাচ্ছি।’
এটুকু বলেই আর দেরি করল না ছেলেটা। ভেজা কাপড় নিয়েই নিজের ঘরে ঢুকে পড়ল।

Series Navigation<< সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।। পর্ব পাঁচসায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাস।। পয়েন্ট থ্রি টু সিক্স এফ এক্স।। আহমেদ রিয়াজ।। পর্ব সাত >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *