নীপা আকন্দ-এর কবিতা
বিরহ বিষাদ
সেই কবে আমাদের দেখা হয়েছিল
ঠিকঠাক মনেও পড়ে না তো!
সেই মায়া ভরা হাসি মাখা প্রিয় মুখ
সবিনয়ে কবিতার মনমাত পাঠ!
ভুলিনি কিছুই! মনে পড়ে বার বার-
নিজেরে নিজে প্রবোধ দিই
অসময় শেষ হলে দেখা হবে ঠিক
দেখা হবে কোনো একদিন
জমানো কথার ডালি নিয়ে
কৌতুহলী জিজ্ঞাসায় ব্যস্ত হব আমরা
যদি বেঁচে বর্তে থাকি-
অথবা হয়তো দেখাই হবে না আর
হয়তো মনেও পড়বে না আমার কথা-
ভাবনার চাকা সুখের স্মৃতির পথ মাড়িয়ে শেষে
বিষাদী আকাশ ছুঁতে থাকে
যত আনন্দ বিরহে রূপ নিতে থাকে
অনুভূতির শহরে ঝুম বৃষ্টি নামে
পাঁজরের খাঁজে খাঁজে দুঃখের বাতাস
বিকট গর্জনে বুনো ঝড় ওঠে বুকের গহিনে-
আগুন তাতানো জ্বালা ধরে অনুভবে
উথাল পাথাল কষ্টে দিকভ্রান্ত চেতনা-
দাঁতে দাঁত চেপে কষ্ট গিলতে গিলতে বলি
‘তোকে ছাড়া যে কেমন আছি
একবার দেখে যাস’…
বিবশ বুকের কোটর
রোজকার সেই গৎবাঁধা ভোর ভালো ছিল
ঘুমঘুম চোখে ব্যস্ততা ছোটাছুটি বেশ ভালো ছিল
রাত ভোর হতে না হতেই হাতা খুন্তি নাড়াচাড়া ভালো ছিল
উৎকট গাড়ির হর্ণ সড়কে বিচ্ছিরি খিস্তি খেউড় ভালোই তো ছিল-
সরল নিয়মে বাঁধা ঘড়ি ধরে চলা ভালো ছিল
ক্ষণে ক্ষণে স্বপ্ন ভাঙা কষ্ট ভালো ছিল
সরল অংকে চালিত জীবন ভালোই তো ছিল-
অফিস শেষে বাদুর ঝোলা ঝুলে বাড়ি ফিরে আসা
সন্ধ্যা সন্ধ্যা ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের কাপে একান্ত আড্ডায়
অকারণ তর্ক অভিযোগ বেশ ভালোই তো ছিল
স্পর্শের আয়ত্তে প্রিয় বন্ধু প্রিয় জন
সবই বেশ ভালো ছিল-
দূরত্বে জীবন ভালো কাটে কতটুকু?
অনিয়মের চক্করে বিবশ বুকের কোটর…
ভালোবাসা ও ঘৃণা
ভালো না বাসলে কী ঘৃণা জন্মায় গহিনে?
তাই বলি, যত প্রেম ততটুকু ঘৃণা
এই যেমন তোমার প্রতি আমার!
মনের ভেতর মন পড়তে না জানলে কী
ঈর্ষার উৎপত্তি হয়? তুমিই বলো না-
ভালোবাসা যতটাই গভীর ঈর্ষাও ততটাই প্রকট, জেনো-
যতই বলি না কেন আঁধার অসহ্য
প্রেম কিন্তু যুগে যুগে পূর্ণতা পেয়েছে রাতের আঁধারেই-
নদীর যেমন উৎপত্তি ঝর্ণায় তেমনি
প্রেমেরও শেকড় কিন্তু ঈর্ষায় প্রোথিত…
ঘোর দুর্দিনে
কেউ বলে না আজকাল
এসো বসি কিছুক্ষণ মুখোমুখি,
মনের আকাশে জমে থাকা মেঘে
ঝরছে অঝোর বাদল ধারা!
মনের উঠোনে উবু হয়ে বসে থাকা
মন খারাপের একলা দুপুর
দিনরাত্রি একলা অনুভবে থাকা
উদাসী হাওয়ার এলোমেলো উঁকিঝুঁকি
না বলা কথার শব্দমালার ছটফট কষ্ট
এসো আজ ভাগ করে নিই দুজনে—
কেউ বলে না আজকাল
এসো দুজনের গুপ্ত আকাঙ্ক্ষা
মনের দেরাজে লুকিয়ে না রেখে
পরস্পরের কাছে তুলে ধরি—
চলো আজ হারিয়ে যাই
হাজার বছর স্বপ্নে দেখা সেই
ময়ূরপঙ্খী ভিড়ানো সাত সাগরের পাড়ে—
হৃদয়ের কূলে কূলে বেঁধে রাখা
ডিঙি নৌকা ভাসিয়ে চলো চলে যাই
অজানা কোনো স্রোতের জোয়ারে—
স্বপ্নে দেখা অদেখা
মনের যখন খুব নিঃসঙ্গ যাপন
দম বন্ধ প্রতিবেশে নিশ্বাস নিতে বেদম কষ্ট
কূলকিনারাহীন শূন্যতায় ডুবে থাকা রিক্ত মন
ছুটে চলে যায় সেই শ্যাওলা জমা আর
কচুরিপানায় পরিপূর্ণ স্মৃতিময়
প্রাচীন দিঘির পাড়ে-
ওখানে বাতাসে শিষ দিয়ে সুর তোলে
মাঠের সবুজ আর বেতসলতার ঝাঁড়
ওখানে দস্যি দামাল শৈশব কৈশোর
নীল আকাশে মেঘের ফাঁকে চোরপলান্তি খেলে নিঃশব্দে
ওখানে রুদ্র তারুণ্য ভালোবাসাময়!
ওখানে পারিজাতের কেশরে মধু খোঁজে ভ্রোমর
ধ্রুপদী সুরের মূর্ছনায় জাগে রাত্রি!
মন হারায় দূরের কোনো জনপদে
স্বপ্নে দেখা কোলাহলশূন্য নগরী নিশ্চিন্তপুরে…