শিশুতোষ উপকথা ।।পিচ্চি হাতির কৌতূহল ।।পুনর্লিখন : মোস্তাফিজুল হক
সবাই জানে, হাতির বিশাল লম্বা নাক। তবে বহু বহু আগে হাতির এই নাকটা ছিল খাটো আর মোটা। তখন ওটা ছিল মুখের ওপর ঠিক জুতোর মতো।একবার এক হাতির বাচ্চা হল। জন্মের পর একটু বড় হয়েই সেই পিচ্চি হাতিটা সবকিছু জানতে চায়। সে বনের সব পশুকেই নানান প্রশ্ন করে।পুঁচকে হাতিটা একদিন জিরাফকে বলল, ‘তোমার গলা এত্তো লম্বা কেন, ভাইয়া?’এরপর ভীষণ আগ্রহ নিয়ে গণ্ডারকে বলল, ‘ভাইয়া, তোমার শিংটা এতো ধারালো কেন?’পুঁচকে হাতির জানার আগ্রহ দিনকে দিন বেড়েই চললো। এমনিভাবে জলহস্তী নিয়েও তার আগ্রহের শেষ নেই। সে জলহস্তীকেও বলল, ‘তোমার চোখ দুটো এতো লাল কেন, আপু?’সবশেষে পিচ্চি হাতির কুমির সম্পর্কে জানার আগ্রহও বেড়ে গেল। সে তার মাকে বলল, ‘মা, কুমির রাতের বেলা কী খায়?’মা জবাব দিলেন, ‘কখনও এরকম প্রশ্ন করবে না!’ মায়ের কথায় সে বেশ হতাশ হল। এরপর সে মায়ের নিকট থেকে সরে আসতেই কোত্থেকে একটা কাক ফুড়ুৎ করে তার কাছে এলো। ‘আমাকে অনুসরণ করো। নদীর কাছে নিয়ে যাবো। সেখানে গিয়েই তুমি দেখতে পাবে, কুমির রাতে বেলা কী খায়?’ বলেই কাক আবার উড়তে শুরু করল।পিচ্চি হাতিটা কাককে অনুসরণ করে নিচে নামতে থাকলো। পরে সে নদীর ধারে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। পানির দিকে তাকিয়েও রইল। ‘কিন্তু, কোথায় কুমির?’ মনেমনে বলল।নদীর তীরে বিশাল বড় এক পাথর ছিল। পিচ্চি হাতিটা ওটাকে বলল, ‘এই যে, আপনি কি আমাকে বলতে পারবেন, কুমির রাতের বেলা কী খায়?’ ‘নিশ্চয়ই বলব। তোমাকে নিচু হতে হবে যে! নিচু হলেই দেখতে পাবে।’এবার হাতিটা আরও নিচে নেমে মাথা নিচু করে ঘাড় বাঁকিয়ে পানির দিকে তাকিয়ে রইল।’ঝপাং!’ হঠাৎ করে একটা শব্দ হল। তারপর কুমিরের চোয়ালে পুঁচকে হাতির নাকটা আটকে গেল!এটা দেখে কাকের সে কী আনন্দ! ‘কুমির রাতের খাবার হিসেবে তোকেই খাবে!’ বলতে বলতে দুষ্টু কাক পালিয়ে গেল।পুঁচকে হাতিটা এবার তার শক্ত পায়ে ঘুরে দাঁড়ালো। সে শুধুই টানছে তো টানছেই। তবে কুমিরও যে নাক ছেড়ে দিতে রাজি নয়। পুঁচকে হাতিটার নাক লম্বা থেকে আরও লম্বা হয়ে চললো। একটু পরে একটা শব্দ হল, ‘ঠাস!’ এবার সেই লম্বা নাকটা এসে পুঁচকে হাতির পিঠে পড়লো। কুমিরটা হেরে গিয়ে পানিতে ডুব দিল। খাবারটা হাতছাড়া হওয়ায় ওর কিছুটা রাগও হল।কৌতুহলী সেই পুঁচকে হাতি এবার তার নাকের দিকে তাকালো। ওর নাকটা এখন এতটাই লম্বা যে, শেষটা কোথায় সে দেখতে পাচ্ছে না! নাকটা এতই দীর্ঘ যে, সে উঁচু গাছ থেকেও ফুল ও ফল ছিঁড়ে আনতে পারে। পুঁচকেটা এখন ওর নাক দিয়ে পিঠে পানিও ছেটাতে পারে। এদিকে ঈশ্বরও ওকে আশীর্বাদ করেছেন যে, ওদের পরবর্তী প্রজন্ম সবাই লম্বা নাক তথা শুঁড় নিয়ে জন্মাবে।মূল গল্পকার : জুডিথ বেকার,দক্ষিণ আফ্রিকা, আফ্রিকান স্টোরিবুক।