চিরকুট ।।সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্

প্রিয় রাই,                               

আশা করি ভালো আছো।আমি খুব ভালো আছি।সারাদিন ঘরে থাকি আর টুনির সাথে ঝগড়া করি।বেশ মজা হচ্ছে আমাদের বাসায়!

আজ সকাল থেকেই টিভি ছেড়ে রেখেছি।জাতীয় প্যারেড স্কয়ারের কুচকাওয়াজ দেখলাম।আমাদের স্কুল থেকেও যায় ডিসপ্লে আর কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করতে।করোনার জন্য তো এবার আর যাওয়া হলো না।তবে গেলে ঠিকই পুরস্কার জিতে আসতো আমাদের স্কুল! এদিকে পাড়ার মাইকে দেশাত্মবোধক গান বেজেছে সারাদিন। আমার সবচেয়ে প্রিয় গান কোনটা জানো? “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি”।সকালে আমাদের দেশের বেশ কয়েকটা লাল – সবুজ পতাকা সাজিয়ে রেখেছিলাম বারান্দায়। আমাদের আশেপাশে প্রায় সব বারান্দা আর ছাদেই এরকম।সন্ধ্যার আগে আগে আবার সব পতাকা এনে ঘরেরেখে দিই।স্কুলের সামনে কিনতে পাওয়া যায় এই কাগজের পতাকাগুলো।আমিই বেশি কিনেছি। টুনি ভীষণ কিপটে হয়েছে, পাঁচটার বেশি কিনতেই চাইল না! আরো কী করেছি জানো? বইমেলা বইমেলা খেলেছি। সোফার সব কুশন নামিয়ে খাটে রেখেছি।অন্যদিন এমন করলে আম্মু খুব বকতো।আজ তো ষোলো ডিসেম্বর, তাই আম্মু বকে না।কি মজা না! তারপর চারটা চারটা করে কুশন নিয়ে বক্সের মত বানিয়েছি। আমার আর টুনির দুইটা করে বক্স।ও নিজে কিন্তু একটাও বানায় নি, আমিই করে দিয়েছি।যা আলসে হয়েছে এই মেয়েটা! তারপর আমার আর টুনির যত বই আছে, সব এনে ওই কুশন বক্সে সাজিয়েছি। একদম বইমেলায় যেরকম করে সাজায়, ঠিক ওরকম করে।আব্বু আম্মুকে কত সাধাসাধি করলাম যেন বই কিনে আমাদেরএই মেলা থেকে।বলল, বই কিনব, কিন্তু টাকা দিব না।এ কেমন বই কেনার ধরন বলতো! আচ্ছা, তোমাদের দেশের বইমেলা কেমন হয়? মেলায় যাও? চিঠিতে লিখবে কিন্তু।

খবরে দেখাচ্ছে, কত মানুষ যে যায় স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে! আমারও যেতে ইচ্ছে করে।তবে অনেক মানুষ তো, তাই আব্বু নিয়ে যায় না। বলে, বড় হয়ে যেও।সবাই কত আগ্রহ নিয়ে আসে, ফুল দেয়, অনেক রকম ফুল! দেখতে খুব ভালো লাগে।

আমাদের স্কুলে প্রতি বছর এই দিনে অনুষ্ঠান হয়।আমরা সক্কাল সক্কাল যাই।স্কুলের বিজয় স্তম্ভে ফুল দিই।আমি সবসময় গোলাপ ফুল দিই।ওইদিন অনেক পাওয়া যায়।আব্বু কিনে দেয় স্কুলে যাওয়ার সময়।আর টুনি কিনে লম্বা লাঠির রজনীগন্ধা। ফুল দেয়া শেষে আমরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাই।তারপর আমাদের প্রধান শিক্ষক আজকের এই দিন নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন।টুনি খুব দুষ্টু, সব শুনতে চায় না।তাই তো স্যারের বকা খায়।তারপর শুরু হয় প্রতিযোগিতা।আমি কবিতা আবৃত্তি আর চিত্রাঙ্কনে নাম দিই সবসময়।টুনি আবার খুব ভালো গান গাইতে পারে।ওর গলায় “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যাঁরা, আমরা তোমাদের ভুলব না”গানটা শুনলে চোখে পানি চলে আসে!                                                                                                     প্রতিযোগিতা শেষে একজন মুক্তিযোদ্ধা আসেন আমাদের স্কুলে, যুদ্ধের সময়ের অভিজ্ঞতা বলেন। তখন সবাই চুপ হয়ে যায়।খুব মনোযোগ দিয়ে শুনি আর ভাবতে থাকি, কত ভালোবাসা দিয়ে গড়া আমাদের এই দেশ! সবশেষে মিলাদের আয়োজন করা হয়।তারপর সবাই যার যার বাসায় চলে আসি।এবার তো করোনার জন্য কিছুই হল না।স্কুলই বন্ধ।ইশ, কতদিন যে যাই না! স্কুলের বাগানে আমি চুপচুপ করে একটা ডাল পুঁতে এসেছিলাম।কী গাছ বেরিয়েছে কে জানে! মালি কাকু দেখতে পেলে তাতে ঠিক ঠিক পানি দিবেন আমি জানি।স্কুল খুললেই দেখতে পাব আমার অজানা গাছটাকে। ভাবতেই খুব খুশি খুশি লাগছে!

আজ বিজয় দিবস।অনেক ত্যাগ আর কষ্টের বিনিময়ে পাওয়া এই দিনটা এলেই নিজেকে নিয়ে, নিজের দেশকে নিয়ে ভীষণ গর্ব হয়।আমি প্রত্যেক বিজয় দিবসে একটা করে শপথ নিই।এবার কী নিয়েছি জানো? আমার চারপাশ সবসময় পরিষ্কার রাখব।

তোমাদেরও কি অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে? সারাদিন বাসায় কী কী করে সময় কাটাও? কোন কোন গল্পের বই পড়লে? ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’বইটা পড়েছ?

ইতি, তোমার কলম-বন্ধু বুশরা।

পুনশ্চ : তোমার না একটা বিড়াল আছে, ছবি দাও না কেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *