শুক্লা গাঙ্গুলি‘র সিরিজ কবিতা // দস্তানা
১
একটু একটু কোরে ভোর নামে বাইরে
তুষারের কুচি শুকনো পাতায় এলোমেলো
কিছুটা হিম শীতল চারপাশ-উষ্ণতা খুঁজি
দুহাত খোঁজে- শৈশব।
মাকে দেখি আল্পনা আঁকে পরম যতেœ
গার্হস্থ্য শুরুর প্রারম্ভিক কোনো অমঙ্গল
যেন না থাকে কোথাও
আমি বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে
অক্ষরে অক্ষরে মিলাই-ছন্দ
যোগ-বিয়োগ গুণ-ভাগ।
জানালার ক্ষয়ে যাওয়া শিকগুলি
হাতের কব্জি বেয়ে- শীতের শুষ্কতা আনে ঘরে
মাছেরা গোত্তা মেরে বুদবুদ বাব্লস ছাড়ে
চারিদিকে বড়শি নিয়ে বসে- ব্যাপারী
মায়ের শুদ্ধ সংসারের রক্ষাকবচ-
চুরি যায়।
আমি ঘুমভাঙা চোখে- বিজ্ঞানে
বুণসেন বার্নারে অক্সিজেন বানাই
২
মৈত্রেয় জাতক আমার বাবা
সরু পাড় ধুতি পাঞ্জাবিতে
সংস্কৃতি খোঁজেন- পরম চাওয়ায়
আত্মজায় মগ্ন হয়ে শোনেন-
ইমন রাগ সব গুণী গাঁওবে-
পঞ্চম বর্ষীয় বালিকার পায়ে তিনিই
নূপুর বাঁধেন- নিক্কনে মখমল
মা বেতারে নাটক শোনেন
স্বপ্ন বোনেন সংসারে-
কিস্তির সেলাই মেশিনের ঘরঘর আওয়াজ
মধ্য দুপুরে ঘু ঘু ডাকে দো-আঁশলা সারমেয়টি
মাথায় তিলক নিয়ে- ঘুমায়
একপাশে ছোড়দা গলিতে মার্বেল
না জিতে-দাঁতে নখ কাটে।
৩
ঘরে এক মস্ত বড় ফ্রেম- চতুষ্কোণ
প্রেম পূজা প্রকৃতি নিয়ে- এক জোড়া সুদীপ্ত চোখ
মধ্য বিন্দুতে- কে ইনি?
বাবা বলেন ইনিই ধ্রুবতারা
ইনিই ঈশ^র-
অগ্রজ একটু একটু করে প্রতিদিনের রসায়নে এনাকে চেনায়
আমি কখনও
বাসবদত্তার নূপুরে সন্যাসীর ঘুম ভাঙাই-
কখন বা ডাকঘরের অমল কিশোরে সুধা হয়ে প্রত্যাশিত চিঠির দিন গুনি-
অপলকে হারিয়ে যাই ঘন সবুজে- আদিগন্ত মাঠে
পলাশ কুড়াই ডালা ভরা অপরাজিতায়
নীল হয়ে থাকি
না বলা- সব বলাই থাকে
অগ্রজের সাথে- কৃষ্ণচূড়া আর কুর্চিতে
বৈশাখের পঁচিশ আসে-
অধীর আগ্রহে।
৪
অগ্রজ তখন কৈশোরপরবর্তী সদ্য যৌবনে
মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ
রাজনীতি কখন বাড়ির বেড়া ভেঙে উঠোনে বাবা রাজতন্ত্রে খানিকটা-
অগ্রজ পাষাণ ভাঙার দলে
সংস্কৃতি হঠাৎ প্রজাপতি হয়ে জাঁকিয়ে
বসেছে বাড়ির সিংহদুয়ারে
নাটকে নৃত্যে সঙ্গীতে
চেহারার ওপর চেহারা
আলোর ওপর আলো-
ভুলায় জীবনের বাউকুড়ানি বাতাস
ভেসে থাকি- সৃষ্টির আনন্দে
৫
পিতা কন্যাকে বেদ শেখান- সংক্ষেপে
হিমালয়ের গূঢ় তত্ত্ব আর নিজের ফেলে
আসা শৈশবকে মাচানে তোলেন-
একটু একটু করে
দর্শন থেকে দর্শনান্তে যান মহর্ষির মতো
ভালোবাসার শহরের প্রথম যৌবন-
হকি আর ঠাকুরবাডির গল্পে-
থিয়েটারের অ্যানালগ মনোলগ-
নেপথ্য চেনান আগ্রহে।
‘আসলে আমরাতো কেউ একা বাঁচি না’
বলার জন্যে শোনার মানুষ- মেলে কই
বলতেই তো চাই- সব বলা দ্বিধাহীনে-
নির্ভিক জীবনের গান শুনি-
বিভাসে মধ্যলয়ে
বাবাকে দেখি কিছুটা আশাহত যেন
যা কিছু চাওয়া- সবই থাকে
এক কাপ চা-
জনতা স্টোভে
৬
রূপে অরূপে এক রাজেন্দ্রানী যেন
মঞ্চ থেকে ডানা মেলে শূন্যে ভেসে
আধো আলো
আধো ছায়া
সহস্র চোখের ময়ুরি ডানা ঝাপটায়
আকাশ জুড়ে মেঘেদের উল্লাস
নীল সবুজে বৃষ্টি নামে
বিদ্যুৎও চমকায় বুঝি!
৭
মেঘ ডাকে কুয়াশা বাড়ায় ধুঁয়াশা
মুখগুলো অচেনা লাগে সব-
ভালোবাসার কি রঙ থাকে কখনও
সবই যেন হরতন আর রুহিতনের খেলা-
দুহাতের তালুতে শৈশবের ওম
দস্তানায় শুধু ঢোকে পাঞ্জা।
শিক্ষাব্রতী পিতামাতার সংস্কৃতির বিশাল পরিমণ্ডলে বড় হয়েছি আমি । সিরিজ কবিতার এমন আবহে আমার ছেলেবেলাও কেটেছে । কবি শুক্লা গাঙ্গুলীর ধারাবাহিক কবিতা পাঠে ফিরে গেলাম আমার স্মৃতিময় দুরন্ত সাংস্কৃতিকমূখর শৈশবে ।
আর ফিরে পাবো না সেই সোনালী অতীত।
ধন্যবাদ অশেষ কবিকে তাঁর কাব্যভূমিতে অনেকের মতো আমাকেও নিয়ে যাবার জন্য ।
। দস্তানা ।
শব্দে চমৎকার স্মৃতি রোমন্হন।
ক্রমশঃ হারিয়ে যাওয়া… সহসা দূর ন্যাপথার গন্ধে ভেসে আসা.. ¡ হারিয়েও হারায়না… নষ্টালজিক… ¡¡
। দস্তানা ।
ঝরঝরে শব্দে চমৎকার স্মৃতি রোমন্হন।
ক্রমশঃ হারিয়ে যাওয়া… সহসা দূর ন্যাপথার গন্ধে ভেসে আসা.. ¡ হারিয়েও হারায়না… নষ্টালজিক… ¡¡