দুই হাজার পয়তাল্লিশ // ইলিয়াস ফারুকী

শরতের শেষ বিকেলের ঝাল হারানো কিংবা ছাল ছড়ানো সূর্যটার হলুদ আলোর রশ্মিতে একটু অন্যরকম  সৌন্দর্য ছিল। রোদের এই কড়া মিঠা ভাবের কারণে তার সুশ্রী হালকা কালো বর্ণের চেহারাও উজ্জল পীত বর্ণের হয়ে ক্ষণে ক্ষণে চমকাচ্ছিল। ফ্যাসনের জন্য ছাঁটা তার সামনের দুপাশের দুই গোছা ছোট করা চুল ক্ষণে ক্ষণে ওর কপালে হেলে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল সামনে যেন তেজী ঘোড়া দাঁড়ানো। প্রচন্ড জেদে রথি বাড়ির উঠোনের শেষ মাথায় গিয়ে বাম হাত দিয়ে মান্দার গাছের কাঁটাযুক্ত ডালটা চেপে  ধরেছিল। রাগে যেন কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। মান্দার গাছের কাঁটার আঘাত তাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনে। কিন্তু সঙ্গেঁ সঙ্গেঁ রক্তাক্ত হাতটা সরায়নি সে। ভেতরে একটা বোধ কাজ করছিল। হাতটা সরিয়ে নিলে যদি আড়াল থেকে বিদ্রুপের হাসি শুনতে পায়। আড় চোখে চতুর্দিক দেখে যখন নিশ্চিত হলো কেউ তাকে লক্ষ্য করছেনা। তখনি সে ধীরে ধীরে হাতটা সরিয়ে আনল। স্তিমিত হয়ে আসা জেদটা এবার তাকে চিন্তার সুযোগ করে দিল। অন্যায়টাতো সেই করেছে। মার সাথে শুধু শুধু জেদ দেখালো সে।

জেদ রথির জীবনের সবচাইতে বড় প্রতিদন্দি। এই জেদ কখনো তাকে ভাসায়, কখনো ডুবায়। কিন্তু আজ সে স্পষ্টই বুঝতে পারছে তার জেদ ছিল অন্যায়। মা ছিলেন যুক্তিপূর্ণ।

রক্তিমের সাথে ফেসবুকেই তার পরিচয়। বিশ^বিদ্যালয় তৃতীয় বর্ষে উঠতেই সে অনলাইন স্টাডি প্রোগ্রামে রেজিষ্ট্রেশন করিয়ে নিয়েছিল। যেহেতু তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষ অর্থাৎ চূড়ান্ত বর্ষের ব্যবহারিক ক্লাসের সময় তালিকা তাদের দিয়ে দেয়া। তাই তার এমন সিদ্ধান্ত। শুধু ব্যবহারিক ক্লাসগুলোতে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় উপস্থিত থাকবে। বাকি থিওরি ক্লাসগুলো অনলাইনে সেরে নেবে।

যে দু’বছর পার করে এসেছে তাতে করোনা ভীতি সব সময়ই ছিল। ব্যবহারিক ক্লাসগুলো বাদে অন্তত এই দুই বছর করোনা ভীতি থেকে দূরে থাকা যাবে। আবার পরিবারের সান্নিধ্য পাওয়া যাবে। অবশ্য অন্য আরো একটা কারণও তার ছিল।

ঢাকার মেয়ে রথি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের ছাত্রী। তার মুখ্য হলো ডিসাস্টার ম্যানেজমেন্ট এবং সংগত কারণেই করোনা ভাইরাস ম্যানেজমেন্টই তার প্রধান পাঠ্য বিষয়।

অনলাইন ক্লাস এবং পরীক্ষার পর রথির হাতে অনেক সময় থাকে। অবসরের এই সময়টায় সে তার সুপার ডুরো দিয়ে ফেসবুক ওপেন করে। ইদানিং তাকে নতুন নেশায় পেয়েছে। ফেস বুকে বন্ধু খোঁজা। সহজেই সে যে কাউকে বন্ধু করে না।

বন্ধুত্বের জন্য কারো ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিলে প্রথমেই সে তার ’সুপার ডুরো’ দিয়ে তথ্য যাচাই বাছাই করে। অতঃপর সে তার ফেসবুকের ট্রু ট্র্যকিং অপশন খুলে দিয়ে তাকে অনুসরন করে। অর্থাৎ যার সাথে বন্ধুত্বের ইচ্ছে তাকে ট্রু ট্র্যকিং এ রেখে তার কর্মকান্ড লক্ষ্য করে। শুধুমাত্র “সুপার ডুরো” সেট ছাড়া এ ব্যবস্থা সব মোবাইল সেটে নেই । বেশ দামি সেট। এই সেট সংগ্রহের ক্ষেত্রে তার জেদ দারুণ কাজে দিয়েছিল। বড় ভাই ও বাবাকে এই বলে কনভিন্স করেছিল সুপার ডুরো সেট দশ ফুটের মধ্যে করোনা সনাক্ত করতে সক্ষম। একই সাথে ডায়াবেটিস, হাই প্রেসার ও ক্যানসারের মতো রোগের পুর্বাভাস দিতেও সক্ষম। তাদেরকে যুক্তি দিয়েছিল তোমরা কী চাও তোমাদের বাড়ির একমাত্র মেয়ে করোনা বা ক্যনসারে মারা যাক। ভাইকে বলেছিল “ভাইয়া এটা দুই হাজার কুড়ি সাল না, এটা দুই হাজার পয়তাল্লিশ সাল। তোমরা কী চাও যে করোনা ধরুক আর তোমাদের আদরের বোন মারা যাক। আর যদি তোমরা তাই চাও তাহলে আমার আর কিছুই বলার নেই।” দূর্বল স্থানে মোক্ষম আঘাত। এ কথার পর বড় ভাই আর বাবার কিছুই বলার ছিল না। দুই লক্ষ টাকা দামের ইনভিসবল স্ক্রীনের মোবাইল সেট দুইদিন পরই তার হাতে ছিল।

রথি এ পর্যন্ত তার অত্যাধুনিক ডিভাইসের সাহায্যে তার ফেস বুকে দশ জনকে অনুসরন করেছে। ওদের মধ্যে নয়জনের মাঝেই সমস্যা পেয়েছে। কারো ঠিকানা ভুয়া, কারো ছবি কিংবা পেশা ও অন্যান্য। তার সুপার ডুরো তাকে বন্ধু বাছাইতে বেশ সাহায্যে করছে। দশম ব্যক্তির ব্যক্তিগত আনুসঙ্গিকতায় সে সঠিক তথ্য পেয়েছে। কিন্তু সমস্য তার ছবিগুলোতে মুখোস পরা (মাস্ক)। প্রোফাইল ছবির নিচে লেখা মাস্ক হোক আপনার নিত্য সঙ্গি। পুরো প্রোফাইল তার মনোযোগ কেড়ে নিলো।  বেশ ভালো করে যাচাই বাছাই এবং চিন্তা ভাবনা করে তাকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠালো রথি। তিনদিন পর রক্তিমের সাড়া পেলো সে। রক্তিম তার বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহন করেছে। ফেসবুকে রথির খুব বেশী বন্ধু নেই । হাতে গোনা সংখ্যা, মাত্র বাইশ জন। অধিকাংশই মেয়ে। রক্তিমকে নিয়ে ছেলেদের সংখ্যা হলো সাত। ভার্চুয়াল বন্ধুদের নিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ সিমানা আশুলিয়ার দাশুড়িয়াতে রথির সময়ে ভালোই কাটতে থাকলো।

রথির বাবার করা সখের বাড়ী। গাছ গাছালি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিবেষ্টিত লোকমানের সাহেবের স্বপ্নের বাড়ী। অট্টালিকাময় নগর তার কখনোই ভালো লাগত না। তাই বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া খিলগাঁওয়ের বাড়িটা তিনি বিক্রী করে দেন। বছর দশেক হলো তিনি এই বাড়ী করেছেন। যদিও এখানেও আশে পাশে ইট পাথরের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তথাপি তাঁর বাড়ীর আশপাশটা এখনো প্রাকৃতিক শোভা মন্ডিত।

রক্তাক্ত হাতটা ফু দিতে দিতে চিন্তায় মগ্ন ছিল রথি। সে নিজেও বুঝতে পারেনি কখন থেকে সে রক্তিমের আবেগে জড়িয়ে গিয়েছিল। তার কন্ঠস্বরে যেন মদিরার নেশা খুঁজে পেয়েছিল রথি। বন্ধুত্বের ছয় মাসের মাথায় চমকানো শর্ত দিয়ে রথি তাকে অনুরোধ করছিল দেখা করতে। মাস্ক পরা অবস্থায় রক্তিমকে তার সাথে দেখা করতে হবে। এবং তাদের আড্ডা চলাকালে কখনোই কোন কারনে মাস্ক খোলা যাবে না। শর্ত শুনে চমকে ছিল রক্তিম। কিন্তু শর্ত মেনে নিতে ক্ষণ ক্ষেপন করেনি সে। বহুবার রথির মুখে সে তার কন্ঠস্বরের প্রশংসা শুনেছে। বুদ্ধিমান রক্তিমের বুঝতে মোটেই দেরী হলো না।  রথি যে তার কন্ঠস্বর এবং দর্শনের অসামঞ্জস্যতার দ্বিধায় ভুগছে। রক্তিম তার স্বপ্নকে ভাঙ্গঁতে চায় না। তাই তার এই অদ্ভূত প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলো সে। তার ভেতরেও উত্তেজনা। মনে মনে চিন্তা করল থাকুক না এই রহস্যময়তা। সঠিক সময়ই উন্মোচিত হোক তার রূপ রহস্য।

ওদের বন্ধুত্বের দুই বছর পেরিয়ে গেছে। রথি চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রী। শর্ত বহাল রেখে এই দুই বছরে ওদের বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে।

স্বপ্ন বুননে রক্তিমই এগিয়ে থাকতো। এমনকি সন্তান পরিকল্পনায় সে এগিয়ে। তার ইচ্ছে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে থাকবে। আধুনিক বিজ্ঞানের কারণে ’ মাদার ওম্ব ইনকিউবেটর’ প্রক্রিয়ায় সন্তান জন্মানো এখন কোন বিষয় না। প্রায় পুরো পৃথিবী এখন এই প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করছে। কোন মাই নিজেরা সন্তান ধারণে আগ্রহি না। বংশ পরিচয়ের জন্য স্বামী স্ত্রী তাদের স্পার্ম ও ওভাম মাদার ওম্ব ইনকিউবেটর ল্যবে দিয়ে আসে। দম্পতিকে সমস্ত খরচ বহন করতে হয়ে। সন্তান পূর্ণতা লাভ করলে ল্যাব কতৃপক্ষ দম্পতিদের খবর দেন সন্তান ডেলিভারি নেওয়ার জন্য। অনেকে সন্তান নিয়ে নিজেরাই লালন পালন করে। আবার অনেকে কেয়ার সেন্টারে রেখেই লালন পালন করে। রক্তিমও এই পদ্ধতি গ্রহন করতে আগ্রহী। সে চায় এখনি ওদের স্পার্ম ও ওভাম রিজার্ভ ব্যাংকে রাখতে। এবং বিয়ের ছয় মাস পরপরই ’ মাদার ওম্ব ইনকিউবেটরে’ দিয়ে দিতে। কিন্তু রথির স্পষ্ট কথা বিয়ের পুর্বে কিছুই হবেনা। এবং কোন কৃত্তিমতাও নয়্। বিয়ের পর আমরাই হবো বাংলাদেশে পৃথিবীর দ্বিতীয় আদম ও হাওয়া। আমাদের সন্তান আসবে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায়। এরপর যেন আর কখনো রক্তিম এ ধরণের আবদার না করে তাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল রথি। কিন্তু নাছোড় বান্দা রক্তিম তাকে বুঝিয়েছিল, দেখো আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কোথায়। আমাদের মধ্যে যদি কারো কিছু হয়ে অন্তত আমাদের ভালোবাসার উপহার যেন এ পৃথিবীতে আসতে পারে। রক্তিমের এই যুক্তির কাছে আর পারেনি রথি। কিন্তু শর্ত দেয় যদি আমাদের মাঝে কারো কিছু হয় তখনই শুধু মাদার ওম্ব ইনকিউবেটর ব্যবহার করব। কিন্তু আমাদের বিয়ে হলে আমাদের সন্তান আসবে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায়। তখন সন্তানের জন্য রক্ষিত আমাদের ওভাম ও স্পার্মের ব্যাংক রিজার্ভ ধ্বংস করে দিতে হবে। দুজনেই শর্ত মেনে এবং উইল করে ওদের স্পার্ম ও ওভাম ব্যাংকে জমা রেখেছিল। ব্যাংক থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে আবারো রথি রক্তিমকে বলেছিল, এসোনা আমরা দু’জন মিলেই না হয় এই কৃত্তিম পৃথিবীকে আবারো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বদলানোর প্রথম পদক্ষেপ হই। তখন তার কন্ঠে জেদ ছিল না, ছিল অনুনয়। ধ্বংস প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আবারো সবুজ পৃথিবী গড়ার অনুনয়।

 রথির অন্যান্য শর্তে আর কোন হেরফের হয়নি। বৈচিত্রময় আবদারে পরিপূর্ণ ছিল রথি আর রক্তিমের প্রেম। এবং বেশির ভাগ আবদারই ছিল রথির একতরফা। প্রায় ছয় ফুট দীর্ঘ সুঠাম দেহি এবং সুকন্ঠের অধিকারী রক্তিম। রথির পরিস্কার কথা ভালোবেসেছে কন্ঠস্বর শুনে। সুতরাং চেহারা দর্শন আপেক্ষিক বিষয়। একই সাথে দেখা সাক্ষাতের মূর্হুতে খাওয়া দাওয়া বা অন্য কিছুই চলবে না। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। অর্থাৎ রথি রক্তিমকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিল, ”ভালোবাসার ক্ষেত্রে তুমি আমার হৃদয়ের বিশ্বাসের মানুষ। কিন্তু দুই শারিরিক অবস্থান এখনো ভিন্ন স্থানে অবস্থান করে। সুতরাং ওখানের বিশ্বাসটা আপাততঃ দুরত্বেই থাক।” সব হবে তখনি যেদিন দু’জনে গাঁঠছড়া বাঁধবো। আর এই গাঁঠছড়া বাধা নিয়েই যত বিপত্তি। রথির বাবা মা মেয়েকে যতই বোঝান, রথির এক কথা, ভালোবেসেছি প্রথম তার কন্ঠস্বরকে এবং এই স্বর সম্পন্ন মানুষকে। সুতরাং চেহারার সৌন্দর্য বিয়ের কলেমা পড়ে প্রকাশ হবে। বাবা মা ভাই ও রথি যার যার অবস্থানে অনড়। ফলাফল মান্দার কাঁটায় তার রক্তাক্ত হাত।

নিশ্চুপ রথি। ভেতরে ঝড় বইছে দ্বন্দের। উপরে নির্বিকার। বাড়ির সবাই দেখা করতে চায় রক্তিমের সাথে। উন্মুক্ত খোলা মেলা পরিবেশে। যেখানে কারো মুখে কোন মাস্ক থাকবে না। আর এই বিষয়টি নিয়েই যত আপত্তি রথির। এ ধরনের আবদার যে অন্যায় তা মনে মনে স্বীকার করে নিলেও, সে তার খোলা চেহারা এখনই দেখতে নারাজ। কন্ঠস্বরের সৌন্দর্যের মত সে তার কল্পনাকে অটুট রাখতে চায়। তার সুপার ডুরো তাকে রক্তিমের বিষয় নিশ্চিত করেছে। নিজের চিন্তাকে আর প্রশ্রয় দিলো না সে। হঠাৎ মনস্থীর করে ফেললো। সোজা মা বাবার কক্ষে প্রবেশ করেই তাঁদের উদ্দেশ্যে বলল।

‘ঠিক আছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমরা রক্তিমের সাথে দেখা করতে পারো। তবে আমার একটা শর্ত আছে। যাই দেখবে তা তোমাদের মাঝে সিমাবদ্ধ রাখবে। আর কোন অবস্থাতেই ওকে ফিরিয়ে দেয়া চলবে না। আর হ্যাঁ ওর কোন ছবিও আমাকে দেখানোর চেষ্টা করবে না।’

‘তা কী করে হয়রে মা,  যেমনই হোক আমাদেরকে রাজি হতে হবে। এ তুই কী বলিস! প্রত্যেক বাবা মা চান তার মেয়ে সুখে থাকুক ভালো থাকুক। বললেন রথির বাবা।’

‘তোমাদের কথা ঠিক। আমি জানি তোমরা আমাকে খুব ভালোবাসো। কিন্তু আমার ওই এক কথা। রাজি থাকলে যাও দেখো। না হলে বাদ।’

‘ওর গার্জিয়ানের  সাথেও কথা বলতে হবে। তার ব্যবস্থাও করতে হবে।’

‘যা ইচ্ছে করো আমার কোন সমস্যা নেই। আমার কথা একটাই।’

‘ঠিক আছে। তুই রক্তিমকে বল ওর গার্জিয়ান নিয়ে বাসায় আসতে।’

‘উঁহু, তা হবে না। তোমদের দেখা সাক্ষাৎ যা করার কোন হোটেলে আয়োজন করো। বাসায় না।’

‘ঠিক আছে তুই যা বলবি তাই হবে। বলেই আদরের মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন তার মা। রক্তিমকে বল সে যেন দু’একদিনের মধ্যেই তার বাবা মাকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে। আমরা হোটেলের ব্যবস্থা করছি।’

‘তা সম্ভব নয়ে মা। ও কালকে অফিসের কাজে থাইল্যন্ড যাচ্ছে। ফিরতে কয়েকদিন সময় লাগবে তখন আয়োজন করো।’

‘ঠিক আছে মা। রক্তিম দেশে ফিরলেই আমাদের জানাবি।’

এয়ারপোর্টের সকল আনুষ্ঠানিকতা বাসা থেকে অন লাইনে করে রেখেছিল রক্তিম। এয়ারপোর্ট এসে লাগেজ বুক করে সোজা সিটিউরিটি সিস্টেমে প্রবেশ করল। বিমানে উঠতে উঠতেই রথিকে ফোন করল। রথি ফোন রিসিভ করতেই খুব আনন্দের সাথে জানালো, আব্বা আম্মাকে জানিয়েছি। ফিরে এসেই আব্বা আম্মাকে নিয়ে ওনাদের সাথে দেখা করব। বিমান টেক অফ করার পরই দ্বিতীয়বার ফোন পেলো রথি। রাত তখন এগারোটা। র‌্যাপিড ফোর বিমান। থাইল্যান্ড যেতে তিরিশ মিনিট সময় নেয়। রক্তিমের আনন্দ আজ বসন্তের হাওয়া। সিদ্ধান্ত নিলো এই তিরিশ মিনিট রথির সাথে কথা বলে কাটিয়ে দেবে। তৎক্ষণাৎ ফোন করলো সে, কথা বলতে বলতেই তিরিশ মিনিট পার হয়ে গেলো। থাইল্যান্ডের সূবর্ণভুমি এয়ারপোর্টের উপর আসতেই ল্যন্ডিংয়ের স্পষ্ট ঘোষণা শুনতে পেলো রথি। বিদায় নিয়ে ফ্লাইং কিস দিয়ে লাইন কেটে দিলো রক্তিম।

পরদিন সকালের সকল পত্রিকার হেডলাইন ছিল। ‘রাত এগারোটার থাইল্যন্ডের শেষ ফ্লাইটের যাত্রা, সূবর্ণভুমি এয়ারপোর্টে র‌্যাপিড ফোর বিমানের ক্র্যাশ ল্যান্ডিং, অনেক যাত্রির মৃত্যুর আশংকা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *