কিশোর উপন্যাস

কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব নয়

৯.

দুপুরে খেয়ে শুয়েছিলাম। পল্টুর ডাক শুনে ধড়মড়িয়ে এইমাত্র উঠেছি─কি হয়েছে রে পল্টু?
সর্বনাশ হয়েছে─পল্টু হাঁপাতে হাঁপাতে বলল।
বিছানা থেকে নেমে পল্টুর দু’কাঁধ ঝাঁকি দিয়ে বলি, কি সর্বনাশ রে?
পল্টু ওর প্যান্টের বা পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করে আমার হাতে দিল। অজানা আতঙ্কে আমার বুকটা কেমন করে উঠল। কাগজটা খুলে পড়তে থাকি─স্নেহের চার বন্ধু, তোমরা আমার শুভেচ্ছা নিও। আশা করি খুব টেনশনে আছো। থাকারই কথা। তবে তোমরা যাকে সন্দেহ করে ফলো করছো আসলে সে নিতান্তই পাগল। তাই অযথা পাগলটাকে সন্দেহ না করে আমার সঙ্গে দেখা করো। তোমাদের সব সমস্যা, রহস্য সম্পর্কে জানতে পারবে। তোমরা কি আমার সঙ্গে দেখা করতে চাও? যদি চাও তবে আজ রাত আটটার ভেতর আমার অস্থায়ী নিবাস বটগাছের গাঁয়ে একটা চিরকুট পেরেক দিয়ে গেঁথে রেখে আসবে। ইরকিটি কিরকিটি ভূতং চৌধুরী, অস্থায়ী বাঁসিন্দা, বটবৃক্ষ।
চিঠিটা পড়ার পর আমার সারা শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যায়। চাপা উত্তেজনায় ঘাম বেরুতে থাকে লোমকূপ দিয়ে। এটাও কি সম্ভব। আমরা সেই পাগলটাকে ফলো করেছি সেটা ভূতটা জানলো কি করে। ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেলে আমাদের চারজনকেই মা বাবারা আর ঘর থেকে বেরুতে দেবে না─তাই চিঠির ব্যাপারটা গোপন রাখতে হবে। পল্টুকে বললাম, কোথায় পেলি এটা?
আমার ঘরের জানালায়, সুতা দিয়ে বাধা ছিল।
বলিস কি?
কেউ দেখেছে আর?
না
অপু আর খোকাকে বলেছিস?
না।
চল বাইরে চল। ঘরে এ ব্যাপারে আর আলাপ করা যাবে না─কেউ শুনে ফেললে আমাকে ঘর থেকে বেরুতেই দেবে না। বলেই আমি পল্টুকে নিয়ে ঘর থেকে বের হই।
গেট দিয়ে বেরুতেই পল্টু বলল, ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেল না?
তাতো হলোই কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না ওই ভূতের সঙ্গে পাগলের কি সম্পর্ক?
কথা বলতে বলতে আমরা অপু আর খোকাদের বাসার সামনে চলে আসি। ওদের দু’জনকে নিয়ে আমাদের স্কুলের পেছনের খালি জায়গাটায় এসে বসি। এখান থেকে সেই বটগাছটা দেখা যায়। অপু আর খোকা ব্যাপারটা শুনে এবং চিঠিটা পড়ে সেই যে চুপ হয়েছে এখন পর্যন্ত কোনো কথা বলছে না।
পল্টু বলল, অপু কথা বলছিস না কেন? বোবা হয়ে গেলি নাকি?
আমার মাথায় একটা জিনিস পরিষ্কার হচ্ছে, বুঝলি? অপু এই প্রথম বেশ জ্ঞানবানের মতো কথা বলে উঠল।
কি রকম? আমরা তিনজন সমস্বরে বললাম।
দুটা জিনিস পরিষ্কার যে ওই পাগলকে আমরা যা সন্দেহ করে এগুচ্ছি তা একেবারেই ফেলনা বা উড়িয়ে দেবার নয়, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে─ ভূত বাবাজি পাগলের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো এক ব্যক্তি।
তা হলে আমাদের এখন কি করা উচিত? খোকা বলল।
ভূতের এই চিঠি পেয়ে মোটেও ঘাবড়ানো উচিত নয়। আমরা তার সঙ্গে দেখা করতে চাই─এই বলে আজ রাতে একটা চিঠি ওই বটগাছের গায়ে পেরেক দিয়ে গেঁথে আসব।
আমি যাবো না─খোকা বলল।
আমরা চারজনই যাবো─অপু বলল।
পল্টু বলল, অপু তুই একা যাস।
অপু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কিরে তোরওকি ওদের মতো ভয় করছে যেতে?
না, যাবো-তুই গেলে অবশ্যই যাব।
আমরা সবাই যাব। অপু বলল।
তার সঙ্গে দেখা করে কি হবে আমাদের? খোকা বলল।
ভূতবাবাজি যেহেতু নিজের থেকে অফারটা দিয়েছে তা হলে আমাদের দেখা করতে সমস্যা কোথায়? অপু বলল।
যদি আমাদের ঘাড় মটকে রক্ত খায়? পল্টু বলল।
তুই কি ভূতে বিশ্বাস করিস?
পল্টু চুপ হয়ে যায়।
সোজা কথা হচ্ছে আমরা দেখে নিব ওই ভূতটা আসলে কে? পাগলটাই বা কে?
আচ্ছা আমরা তো আজ চিঠি গেঁথে আসব। কিন্তু সে কোথায় কখন দেখা করবে সেটা জানব কি করে─ বললাম।
আরে বোকা ওই ভূতবাবাজি দেখবি জানিয়ে দেবে সব। তোদের কিছু ভাবতে হবে না─
আচ্ছা আমাদের সঙ্গে কেউ আবার মজা করছে নাতো? বললাম।
আরে না কেউ কি জানে আমরা পাগলের পেছনে লেগেছি। জানলেও কেউ এই মজাটা করবে না। পাড়ার সবাই ভয়ে আছে। আতঙ্কে আছে। অপু বলল।
চিঠিটা কখন লিখবি─খোকা বলল।
আমি লিখে আনবো─তোরা আমার বাসায় আসবি। ঠিক সাড়ে সাতটায় বাসার সামনে এসে ‘অলিখোপ’ বলে আওয়াজ করবি। অপু বলল।
আমরা কি খালি হাতে যাব বটগাছের নিচে─পল্টু বলল।
খালি হাতে মানে? অপু বলল।                       
না মানে কোনো লাঠিসোটা নিব?
কেন, আমরা কি মারামারি করতে যাচ্ছি নাকি?
যদি ভূতটা আমাদের ভয়টয় দেখায়।
ভয় দেখাবে না।
খোকা বলল, অপু আমি মোমবাতি আর দিয়াশলাই নিয়ে যাব─শুনেছি আগুনের সামনে ভূত আসে না।
আচ্ছা আচ্ছা নিস─অপু বলল।

Series Navigation<< কিশোর উপন্যাস।। রহস্যময় লোকটা।। সারওয়ার-উল-ইসলাম।। পর্ব আট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *